গত ১৬ই নভেম্বর ২০১৫ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি, সাহিত্যের বাচিক চর্চা ও শাহবাগ ঢাকায় প্রসার প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলন প্রশিক্ষক বাকশিল্পাচার্য অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস-এর জন্ম দিবসে নরেন বিশ্বাস স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কণ্ঠশীলন। অনুষ্ঠানের শুরুতে নরেন বিশ্বাসকে নিবেদন করে বিশিষ্ট শিল্পী ফাহিমা সামাদ সঙ্গীত এবং আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অধ্যাপক নরেন বিশ্বাসের জীবন ও কর্ম নিয়ে স্মারক বক্তৃতা প্রদান করেন অধ্যাপন নিরঞ্জন অধিকারী।
স্মারক বক্তৃতা ও আলোচনায় বক্তারা বলেন, অধ্যাপক নরেন বিশ্বাসের আজীবন বাংলা ভাষা নিয়ে কাজ করার যে পরিক্রমা তা বর্ণনা করেন। বাংলা ভাষার প্রমিত উচ্চারিত রূপের জন্য তাঁর আত্মত্যাগ, নিরলস কর্ম পরিচালনা, সকলকিছু ভুলে গিয়ে শুধু ভাষা নিয়েই তাঁর নিবিড় গবেষণা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, প্রতি শুক্রবারের কণ্ঠশীলনের ক্লাস, বিভিন্ন আবৃত্তি ও নাটকের দলের ক্লাস-এ তার কোনো বিরতি ছিলো না। একসময় তিনি চোখের দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেন। প্রায় অন্ধ চোখে অন্যের হাত ধ’রে চট্টগ্রাম পর্যন্ত চলে যেতেন উচ্চারণের ক্লাস নিতে। দেশে আর কোন উচ্চারণ বিশারদ ছিল না? কাঠ-কাঠ ক্লাসটিকে মধুর করে শিক্ষার্থীর হৃদয় পর্যন্ত নেয়ার কাজটি হয়ত অনেকে করতে পারতেন না। সেটি পারতেন কেবল নরেন বিশ্বাস। তাঁর ক্লাশে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা এবং আনন্দ দুটোই গ্রহণ করতেন। এত সহজ-সরল-নির্মল নির্মাণের উচ্চারণ বিধান মুখে মুখে ফোটাতে আর কে পারে? এই বুদ্ধির জগতে সকলে যখন ইমারত-লালসায় উন্মুখ তখন কথা বলতে যেয়ে কার উচ্চারণের কী হল তার খবর কে রাখে? আর সেই সূত্রাবলীর পর্বত-অক্ষর জ্ঞানই বা অর্জনের কী মানেÑ যদি অন্য সবকিছু দিয়ে এই ভুল ঢেকে দেয়া যায়। সব প্রশ্ন উল্টোবাণে নিস্তব্ধ নিথর হয়ে পড়ে যখন নরেন বিশ্বাস তাঁর ঐশ্বর্যময় স্বরের দ্বার খুলতে আরম্ভ করতেন এক এক করে।
এই বিস্ময়কর সৃষ্টির ফল এই সমাজ এখন বহন করছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাষ্ট্রিক সুরুচি প্রকাশের মাধ্যম এই ভাষাটির প্রকাশ আজ আন্তরিক হয়েছে এবং প্রেমময়Ñ যাঁদের কারণে তাঁদেরই অন্যতম প্রধান অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস।
আরও আলোচনা ও অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কণ্ঠশীলন প্রশিক্ষক, নির্দেশক মীর বরকত ও প্রশিক্ষক, নির্দেশক, আবৃত্তিশিল্পী গোলাম সারোয়ার। অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় ছিলেন কণ্ঠশীলনের শিল্প, সংস্কৃতি ও অনুষ্ঠান সম্পাদক নমিতা খান।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্রথিতযশা আবৃত্তিশিল্পীরা একক আবৃত্তি করেন। আবৃত্তিশিল্পীরা হলেন অধ্যাপক কাজী মদিনা, আশরাফুল আলম, রূপা চক্রবর্তী, বেলায়েত হোসেন, রফিকুল ইসলাম, রেজিনা ওয়ালী লীনা, শিমুল মুস্তাফা, ইকবাল খোরশেদ, পারভেজ চৌধুরী, মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, মাহফুজ মাসুম, ড. শাহাদৎ হোসেন নিপু, মাহিদুল ইসলাম, ফয়জুল আলম পাপ্পু, নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি, ফয়জুল্লাহ সাঈদ, শহিদুল ইসলাম নাজু, তামান্না তিথি, শামসুদ্দোহা, মজুমদার বিপ্লব, আহসান তমাল, মাসুম আজিজুল বাসার, জি এম মোর্শেদ ও কবি এ এফ আকরাম হোসেন।
সবশেষে বাকশিল্পাচার্য নরেন বিশ্বাসের জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।