শুধু অবাক নয়, মুগ্ধতায় ছেয়ে গেল মন। দোলক নামের একটি সাহিত্য কাগজের দু’টি সংখ্যা হাতে নিয়ে আমার এই বিস্ময়। বিস্ময় কারণ এটি সম্পূর্ণ রঙিন এবং আর্ট পেপাওে মুদ্রিত। আর মুগ্ধতার কারণ এটির সাজসজ্জা ও বিশেষ অতিথি শিরোনামে তরুণ লেখকদের নিয়ে বিশেষ আয়োজনটি দেখে। প্রবন্ধ, কবিতাপর্ব, বিশেষ অতিথি ও গল্প এভাবেই সাজানো দোলক এর অভ্যন্তরীণ গাঁথুনী। দুঃসাহসী এই প্রচেষ্টার জন্য শুধু ধন্যবাদ নয় লম্বা সালাম জানাতে হয় সম্পাদক আমিনা শেলীকে। দোলক সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি মহান সৃষ্টিকর্তার অসীম দয়া ও রহমত বর্ষিত হোক। দীর্ঘায়ু হোক দোলক।
দোলক । সাহিত্য ও সংস্কৃতি কথন। বর্ষ ১, সংখ্যা ৩ ও ৪, মুল্য ২৫ টাকা আমার হাতে এখন। আশালয় প্রকাশন বাড়ি নং ক-৫/বি, ৩য় তলা, বসুন্ধরা মেইন রোড, বারিধারা, ঢাকা থেকে প্রকাশিত ৩২ পৃষ্ঠার দোলক সাহিত্যমনা পাঠকের দৃষ্টি কাড়বে অনায়াসে এ কথা নিশ্চিত বলা যায়। তবে পাঠকের কাছে দোলকের গ্রহণযোগ্যতার জন্য আরো বেশি লেখার গাঁথুনী প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে শিশুতোষ ও আরো অনুবাদ সাহিত্য এবং গ্রন্থ সংবাদ এতে যুক্ত হলে মান বাড়বে বৈ কমবে না। দোলক সংখ্যা ৩ ও ৪ এর বিশেষ আয়োজনে কবি আলফ্রেড খোকন এবং কবি শিবলী মোকতাদির সম্পর্কে যে তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়, তাদের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার আগ্রহ কবিতার পাঠকের। কবিতার পরিবর্তে তাদের গ্রন্থের উপর আলোচনা থাকলে বেশি ভালো লাগতো।
সংখ্যা ৩ এ কবিতার বাছাই অবশ্যই প্রসংশার দাবিদার। ভালো লেগেছে শাহরিয়ার সোহেল লেখিত সাহিত্যের নারীবাদ কণ্ঠস্বর : অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকা শীর্ষক প্রবন্ধটি। গল্পে এখনো অসারতা কাটেনি বাঙালীর। তাই ৩ ও ৪ এর ৫টি গল্প-ই মনে হচ্ছে অসার, অর্থাৎ পাঠকের পড়ার আগ্রহকে ধরে রাখতে বা টানতে পারছেনা। বলা যায়, ধারাবাহিকতার গতিহীনতাই এ জন্য দায়ী। কী লিখবেন? লেখক নিজেই যখন খেই হারিয়ে ফেলেন, তখন পাঠককে কি করে টানবে সেই গল্প।
সাহিত্য ও সংস্কৃতি কথন বলা হলেও সংস্কৃতি নিয়ে তেমন একটা আয়োজন খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদিও সংস্কৃতি কি এ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। সাহিত্য আগে না সংস্কৃতি আগে এমন প্রশ্নের মুখোমুখিও হতে হয়েছে সাহিত্য বাজার পত্রিকায় কাজ করতে যেয়ে। কারণ সাহিত্য বাজারের একটি শ্লোগান হচ্ছে – যে দেশের সাহিত্য সম্মৃদ্ধ নয়, সে দেশের সংস্কৃতি সম্মৃদ্ধ হতে পাওে না। – এ শ্লোগানটি নিয়ে-ই এমন প্রশ্ন এসেিেছল। উত্তরে সম্পাদক আরিফ আহমেদ বলেছিলেন, আমাদের চালচলন, কথাবার্তা, আচার অনুষ্ঠান এ সবই আমাদেও সংস্কৃতি। সংস্কৃতি আগে এটা ঠিক, তবে এই সংস্কৃতির উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে আমাদেও সাহিত্যের প্রভাবে। সাহিত্য যত উন্নত ও মানসম্পন্ন হয়েছে, সংস্কৃতি ততই আধুনিক ও সম্মৃদ্ধ হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ একাই আমাদের সংস্কৃতিকে অমুল বদলে দিয়েছেন। রাজা রামমোহন রায়, ইশ্বরচন্দ্র প্রমুখদেও প্রভাব কি অস্বীকার করার উপায় আছে? তা না হলে বাল্য বিবাহ, সতীদাহ প্রথা যে আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্দ অংশ হয়ে থাকতো আজো। তাই না? তবে দোলক সংখ্যা ৩ এ বাঙালি সংস্কৃতির সংকট সমূহ নামের শিমুল আজাদের একটি প্রবন্ধ রয়েছে। ভারী প্রবন্ধ মানেই কি পত্রিকার উৎকর্ষ সাধিত হলো? রবী ঠাকুর নিয়ে এতো বড় প্রবন্ধ অযথাই পত্রিকার পৃষ্ঠা নষ্ট বৈ অন্য কিছু নয়।