কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।’
কিম্বা
নিজেকে যে বড় বলে বড় সে নয়,
লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়।
ছোট বড় সকলের জানা এই কবিতার পঙ্তিমালা। বিশেষ করে আমাদের শিক্ষিত সুশিল সমাজের কাছে এই পঙ্তির বহু ব্যবহারও কম নয়। অন্তত টেলিভিশন টক শো’তে এটার ব্যবহার অনেকেই করেন যার যার সুবিধা মত। তবে নিজের ক্ষেত্রে কেউ এটার মর্মকথা পালন করেন কিনা তা সন্দেহের তালিকায় আছে ও থাকবে।
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই পঙ্তিদ্বয় আজ অবশ্যই পূণঃস্মরণীয়। সাথে যুক্ত করতে হবে আরো দুটি বহু ব্যবহৃত প্রবাদ বাক্য — ‘পরের জন্য কুয়ো খুদলে সেই কুয়োয় নিজেকেই পড়তে হয়’ আর ‘সত্য হচ্ছে আগুন। আগুন কখনো চেপে রাখা যায় না’।
কবি কামিনী রায়ের লেখা ঐ পঙ্তিটি কবি তখন কোন প্রেক্ষাপটে কেন লিখেছিলেন তা স্পষ্ট না হলেও আজ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবলোকন মাত্রই কথাটির মর্ম স্পষ্ট হযে ওঠে। আমাদের সরকার ও বিরোধী দলের দ্বী-মুখী নীতি ও আচারণ আমাদের বার বার মনে করিয়ে দেয় উপরের সবগুলো পঙতি ও প্রবাদ বাক্যকে। বিগত ১৯৯১ থেকে তারা পাল্টাপাল্টি ক্ষমতা ভোগ করে আসছে। একই মুদ্রার এপিট আর ওপিট এই দুটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসিন হওয়া মাত্রই ভুলে যাচ্ছে তাদের অতীত কর্মকাণ্ড। পরষ্পরের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ তাদের এতোটাই যে, আজ আর কেউ কারো মুখও দেখতে রাজী না। তাদের এই ঘৃণা ও বিদ্বেষে পুড়ছে আজ ৫৬ হাজার বর্গমাইল। সাধারণ মানুষের আজ ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি দশা।
গত ২৮ মে ২০১৩ রাত ১০টায় সময় টেলিভিশনের সম্পাদকীয়তে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতার আচারণে সঞ্চালক মোরশেদুল ইসলামের বিব্রতকর অবস্থা যারা দেখেছেন, কিম্বা রাত ১টায় চ্যানেল আইতে তৃতীয় মাত্রায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের বক্তব্য যারা শুনেছেন, তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে দুটি দলের নেতারাই আত্মবড়াইয়ে মশগুল। তারা নিজেদের সবচেয়ে বড় মনে করছেন। তাদের উভয়ের কাছেই দেশের চেয়ে, দেশের মানুষের চেয়ে দল এবং দলের প্রধান শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া-ই হচ্ছেন সবচেয়ে বড়। তাদের বক্তব্যই শেষ কথা।
সরকারে যারা আছেন, তাদের প্রতিটি নেতা নেত্রীর আচারণে ঔদ্ধ্যত্ব অহংকার সীমাহীন। অন্যদিকে বিরোধীপক্ষেরও আচরণেও রয়েছে স্পষ্ট নির্লজ্জতা। যার প্রমাণ তাদের বক্তব্যে। তারেক রহমান ও হাওয়া ভবন প্রশ্নে বিএনপি ধোয়া তুলসি পাতা। অতীতের ভরাডুবি থেকে তাদের মধ্যে কোনো শিক্ষাই আসেনি বরং এটা যেন খুবই স্বাভাবিক বিষয়। আওয়ামী লীগ ১০ বছর দেশ চালাচ্ছে, এখন আগামী ১০ বছর তাদের চালাতে দিতে হবে, এটাই যেন নিয়ম।
ক্ষমতাসীন আওয়ামি লীগতো এই বিষয়ে আরো দু’কদম এগিয়ে। তাদের আচরণ ও কথাবার্তায় এটা স্পষ্ট যে, বিনা নির্বাচনে সরকার হলেও জনগণ আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাদেরই অনুমোদন দিয়েছে। টিভি টক শো’তে তাদের এক নেতা তো স্পষ্ট বলেই দিলেন- পারলে আওয়ামি লীগ ও বিএনপিরন বাইরে একটা বিকল্প দল এনে দেখান।
এই যদি অবস্থা হয় তখন এই দেশে আর অযথা নির্বাচন কি প্রয়োজন? কেন কোটি কোটি টাকার অপচয় করে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর ভাবে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা ? আমরা চুক্তি করে দিলেই তো পারি, যে ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আওযামী লীগই দেশ চালাবে। এমনিতেই আওযামি লীগ ২০২১ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন কর্মসূচি টার্গেট করেই রেখেছে। যেখানে জনমানুষের উন্নয়ন কখনো হবে না, তবে সমর্থকদের কিছুটা হতে পারে। তারউপর তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেইতো রাজাকার বানিয়ে দিচ্ছে। যদিও দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর রায় ঘোষণার পর এখন আঢ়ালে আবডালে তাদেরকেই লোকে জামায়াতে আওয়ামী লীগ বলে ব্যঙ্গ করছে।