আবারও টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)সহ ১৮ দলীয় জোট। সোমবার (৪ নভেম্বর ২০১৩) ভোর ৬টা থেকে বুধবার (৬ নভেম্বর ২০১৩) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে এ হরতাল কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছে দলটি। নির্বাচনকালীন সরকারের জন্য সংলাপের বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শনিবার এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবারে ডাকা এই হরতাল উপলক্ষে রবিবার বেলা ১২টা-১টার মধ্যে রাজধানীর কাঁটাবন মোড়ে আনোয়ার নামে একজন বোমা বহনকারী (পুলিশের ভাষ্য মতে) নিজ বোমার বিস্ফোরণে মারাত্মক জখম হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।রাত পর্যন্ত কতজন এভাবে মরবে, কত যানবাহন ভাঙবে, পুড়বে তার কোনো ইয়াত্তা নেই।
এদিকে রবিবার (৩ নভেম্বর ২০১৩) বিকালে শাহবাগ এলাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করছে সরকার সমর্থিত মহাজোট। এ উপলক্ষে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকায় তৈরি হয়েছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী। চলছে জোর তল্লাশী। সৃষ্টি হয়েছে যানজট।এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুদিন আগে আওয়ামী লীগের মায়া চৌধুরী বলেছেন – ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এ সমাবেশের পরে পবিত্র হবে‘। অর্থাৎ এর আগে গত ২৫ অক্টোবর এখানে সমাবেশ করে বিএনপি এটাকে অপবিত্র করেছে? একজন নেতা কতটা ভদ্রলোক হলে এ জাতীয় মন্তব্য করতে পারেন, তা সাধারণ মানুষের বুঝতে খুব কি কষ্ট হবে?
মজার বিষয় হচ্ছে দেশের এই চলমান জলন্ত সমস্যা নিয়ে আমাদের সুশীল সমাজ, নাগরিক সমাজ, পরিষদ ইত্যাদি ভদ্রলোকরা নিরাপদ দুরত্বে থেকে শুধুমাত্র টেলিভিশন টকশো‘তে মধ্যরাতে ঝড় তুলছেন। অথচ বারবার অনুরোধ ও আহ্বান জানিয়ে সাহিত্য বাজার ও প্রথম আলো ব্লগে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হচ্ছে – ‘আসুন, আমরা সবাই একসাথে হাতে হাত রেখে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়াই ও এই দুইনেত্রী আপোষ বা বিদায় না হওযা পর্যন্ত অনশন ধর্মঘট চালিয়ে যাই।‘ এটা যেন তাদের চোখেই পড়ে না।হয়ত এ লেখাটাও তাদের চোখে পড়বে না। কারণ তারা টেলিভিশনের পর্দায় কথা বলবেন, এতে উল্টো পয়সা পাবেন। শরীরের কোনো ক্ষতিতো হবে না।মাপ করবেন স্যারেরা, আপনার শরীর বা মনের ক্ষতি না হলেও, এভাবে এই দুইনেত্রীর আপোষহীন ঝগড়ায় সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হলে ভবিষ্যতে যে আপনার সন্তানেরা ক্ষতির শিকার হবেন, তা কেউ ঠেকাতে পারবে না।
বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোটের ডাকা বিগত ৬০ দিনের হরতালে নিহত প্রায় ২০জন।আহত প্রায় সহস্রাধিক। আর জান-মালের ক্ষতিপূরণ বিষয়ে আর হিসেব কে রাখে। চাচা আপন পরাণ বাঁচা নীতিতে সে হিসেব তো দূরে থাক রবিবার বিকালে এ প্রতিবেদন তৈরি সময়ে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা ও মানুষের আনাগোনার সীমিতাবস্থা দেখে বলা যায় যে, দেশে এখন অলিখিত কার্ফু চলছে। প্রতিবারই হরতাল শুরুর আগের দিনই মূলত হরতাল কর্মসূচি পালন করে রাজনৈতিক দলগুলো। নিরিহ মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করতে পারাটাই যেন তাদের হরতালের সার্থকতা।বাসে-ট্রেনে আটকা পরে সাধারণ মানুষ বা দলীয়কর্মীরা মারা গেলে তাদের কি বা আসে যায়? আজ পর্যন্ত দলীয় কোনো বড় নেতা কি হরতালের সহিংশতায় মারা গেছে? কোনো দলের কি সে রেকর্ড আছে?
প্রতিবার হরতাল হয়।একদল হরতাল করে, একদল হরতাল থামাতে ব্যস্ত হয়ে মারমূখী অবস্থান নেয়। ফলে মূর্খ অন্ধ দলীয় কর্মীরা ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি করে মরে, আর নেতা-নেত্রীদের সন্তানেরা, ভাইয়েরা নিরাপদে দূরে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখে বা বিদেশে পড়াশুনার জন্য পাড়ি জমায়। কয়টা নেতা আছে, যার সন্তান বা ভাই দেশে বসে সাধারণ স্কুল কলেজে পড়াশুনা করছে?
বিএনপির ৬০ ঘণ্টার হরতালে এবারো কমবেশি মানুষ মরবে। অলরেডি মরতে শুরু করেছে।এই হরতাল বিএনপিকে কিছু দিক আর না দিক, দেশটাকে যে আরো দু‘শো বছর পিছিয়ে দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।দেশের মানুষ ও মানুষের জান-মালের প্রতি শ্রদ্ধা যার নেই সে আর যা-ই হোক দেশনেত্রী হতে পারেন না।
একইকথা বলা যায় সরকারী দল আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে। বিএনপিরা হরতাল ডাকলেই তাদের প্রতিহত করতে মাঠে নামা- এটা কোন ধরনের নীতি। সরকারে যেয়েই নিজের অতীত ভুলে গেছে যে দল, সে দলটি কি করে অতীতের বিচার করে? অথচ এই অতীতের বিষয় তুলেই কিন্তু তারা আবারও ক্ষমতা ফিরে পেয়েছিল। তবে তাদের আচার আচরণে এটা পরিস্কার যে আগামী ২৫ বছরের জন্য তারা পুনরায় এ দেশ থেকে বিতারিত হতে যাচ্ছে। বিশেষ করে তাদের নেতাদের কথোপকথনে এটা খুবই পরিস্কার যে, আত্ম-অহমিকায় তারা এখন ভাল-মন্দ বোধ বিচার হারিয়েছে। দলকানা আর রাতকানাদের সাথে নিয়ে ক্ষণিকের জন্য স্বৈরাচারী শাসক হওয়া যায়, গণতন্ত্রের মানসকন্যা হওয়া যায় না।