‘বাংলা আমার – বাঙালি আমি
মহাকালের সন্তান
মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাস আমার
পিতা শেখ মুজিবুর রহমান’
একজন কবি। ভিজিটিং কার্ডে তার ছবির উপর ছাপা আছে এই ছড়াটি। ছোটো খাট মানুষটিকে সবাই একনামে চেনেন। তিনি যতটা না কবি, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি একজন সংগঠক ও একজন মুজিব সৈনিক। বর্তমান আওয়ামী লীগ নয়, তিনি মুজীববাদী একজন সৈনিক-এই কথা অকপটে স্বীকার করেন কবি নিজেই। তার আরো একটি কবিতায় তিনি লিখেছেন-
জন্ম নিয়েই প্রথম আমি
বলেছিলাম মাগো
মুজিব আমায় বলতে শেখায়
বাঙ্গালীরা জাগো
আমার ভিতর সাহস জোগায়
সেই সে কণ্ঠস্বর
স্বাধীনতার ইতিহাসে
মহান মুজিবুর।
হ্যাঃ আমরা ঢাকাইয়া কবি, বাংলাদেশ জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছড়াকার আসলাম সানীর কথা বলছি। তাকে চেনে না এমন লোকের সংখ্যা অন্তত সাহিত্য সাংস্কৃতির অঙ্গনে খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। সবসময় উৎফুল্ল, হাসি- চঞ্চল মানুষটিকে ছুটে বেড়াতে দেখা যায় লালবাগ থেকে টিএসসি, আজিজ মার্মেট শাহবাগ থেকে সচিবালয়, শিল্পকলা কিম্বা শিশু একাডেমী প্রাঙ্গণের এমন কোনো উৎসব, সভা, সমাবেশ নেই যেথানে কবি আসলাম সানী নেই। কাঁধে ব্যাগ, ব্যাগের ভিতর কবিতার খাতা, বিভিন্ন পেপারে প্রকাশিত কবিতার ফটোকপি ইত্যাদি। বেশির ভাগ সময়েই তার পরনে থাকে রং-চংয়া শার্ট। এটা তার তারুণ্যের প্রতীক। দীর্ঘসময় তিনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছুটে বেড়াচ্ছেন।
সেই ১৯৫৮ সালের ৫ জানুয়ারী ঢাকার লালবাগের একটি বাড়িতে জন্ম গ্রহণের পর প্রথম হাটিহাটি বয়সটা পার করেই তিনি ছুটে বেড়াতে শুরু করেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটাতে। সেই সময় বাবা আলহাজ্ব মোহাম্মদ সামিউল্লাহ’র হাত ধরে তিনি প্রায়ই যেতেন শেখ মুজিবের কাছে। সেই থেকে তার ভেতর ছায়া ফেলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাই তার কবিতা, ছড়া , তার লেখনী জুড়ে মুজিবের জয়গান।
তার সমসাময়িক অনেকেই যখন আওয়ামী লীগের বড় বড় পদ দখল করে বিভিন্ন সুবিধা গ্রহণ করে গাড়ি বাড়ির মালিক হয়েছেন। তিনি তখন ছড়াকার আর লেখক হয়ে ছুটে বেড়ান সাংস্কৃতিক বিভিন্ন আয়োজনে। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ কিম্বা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সবখানেই প্রয়োজন কবি আসলাম সানীর। অথচ পৈত্বিক ২ কাঠার বাড়িটাতে ততদিনে অংশিদার অনেক বেড়েছে। আয়ে রোজগারের রাস্তাটা হয়েছে অনেক কঠিন। নিজের জন্য নয়, মানুষের উপকারে জন্য তিনি সচিবালয়ে ছুটে বেড়ান। দরিদ্র কোনো মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সাহায্যে কিম্বা বৃদ্ধা হয়ে পরে থাকা অসহায় কোনো মায়ের চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন নিয়ে ছুটে যান তিনি। তার সহধর্মীনি নুসরাত জাহান রেগে মেগে বলেন- এত এত মানুষের জন্য চাও, নিজের জন্য চাইতে পার না কিছু।
কবি আসলাম সানী হেসে বলেন, তোমাকে চেয়ে এনেছি, এইতো যথেষ্ট, আর কি চাই আমার। তিন মেয়েকে নিয়ে বেশতো চলছে সংসার।
হ্যাং বেশ চলছে। মেয়ের স্কুলের বেতন দিতে পারেনি বলে ২বার নোটিশ এসেছে স্কুল থেকে। তারাতারি ধার দেনা করে আজো চলছে সংসার। অথচ তিনি দেশের সবচেয়ে বড় সংগঠন জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।
কি হাস্যকর তাইনা? তিনি বলেন, দেখ বাবা তোমরা সাংবাদিকরা আমার ব্যক্তি জীবন নিয়ে টানা হেঁচড়া না করে জাতীয় কবিতা পরিষদ নিয়ে একটু লেখ। সামনে ডিসেম্বর আসছে, বিজয়ের মাস, জাতীয় কবিতা পরিষদে এই মাসে উৎসব আয়োজ হওয়া জরুরী। অন্যান্যবারের তুলনায় এই উৎসব আরো বেশি প্রাণবন্ত করে তুলতে চাই।
প্রসঙ্গ বদলে যায়। জীবন কথা থেকে বেড়িয়ে আসেন কবি কবিতার কথায়।
জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি আসলাম সানী পরিষদের দারিদ্রাবস্থা সম্পর্কে বলেন, আসলে কবিতা পরিষদ কোন রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বা সেবামূলক কোন সংগঠন নয়। এর জন্ম রাজনৈতিক বিরুপ পরিস্থিতিতে- তাই এর চরিত্র একটু প্রতিবাদী। কবিরা সাধারণত সাংগঠনিক হয় না বা হতে পারে না। তাহলে কবিদের সৃজনসত্তাই বিলুপ্ত হবে। কারণ সৃষ্টিশীল মানুষ- মানে কবি নিজেই একটি সংগঠন বা ইনস্টিটিউশন। সংগঠন করলে তার মৌলিক চিন্তাশীলতার জায়গায় বিপত্তি ঘটবে। তখন সে আর লিখতে পারবে না। তারপরও সমাজের আর দশজন মানুষের মতই সে লিখেই তার দায়িত্ব শেষ করে না, কবিও রাজপথে নামে, মিছিলে- শ্লোগানে অংশ নেয়, প্রতিবাদ করে, লড়াই করে। এখানে কবিতা পরিষদ আরো কিছু ভূমিকা রাখতে পারতো, কিন্তু সেদিক থেকে গত দুয়েকটি নেতৃত্ব সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এটা আমি স্বীকার করছি। আমার স্বপ্ন বা প্রতিজ্ঞা হচ্ছে- আগামীতে কবিতার উৎকর্ষ সাধনের জন্য কাজ করা, নিয়মিত কবিতার আসর, আলোচনা, জেলা পর্যায়ে কবিতার কর্মশালার আয়োজন, নিয়মিত প্রকাশনা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য কিছু কাজের বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
বহুমাত্রিক পরিচয়ের লেখক ছড়াকার কবি আসলাম সানীর নানা বিষয়ে সম্মৃদ্ধ গ্রন্থ সংখ্যা শতাধিক। স্বাধীনতার সূর্যোদয়, তুই রাজাকার, সহি মুজিবনামা, রাজাকার নামা, এই আলো এই ছায়া, শিকারী ও লোভী মানুষ, গণতন্ত্রেও মানসকন্যা শেখ হাসিনা, শত মুক্তিযোদ্ধার কথা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।