আগুনমুখার অগ্নি কবি হাসান মাহমুদ ঃ জীবনমুখী কবিতাজুড়ে প্রতিবাদী ডাক।।
আরিফ আহমেদ
ও আমার স্নেহসদয়, মন জুড়ানো কাব্যনদী
নতুন ভোরে হঠাৎ করে জেগে যদি
বলা যেত এস নদী শিশির দেখ স্নিগ্ধ কেমন
বলতে হেসে… দু’চোখ দিয়ে দেখছি যেমন…!
কবি হাসান মাহমুদ এর কবিতায় যতটা না প্রেম তার চেয়ে অনেক বেশি জীবনমুখী দ্রোহ খুঁজে পাবেন পাঠক।
ও হিরন্ময় জগত!
আরো, আরো সনাতন হও।
সময় যেমন হউক মানুষতো সারথী…?
দাস ও নরক পাড়া আমার আবাস
দহনপুরের দিকে সবার নজর!
তবু কেন এই গান, এমন আচার!
তাকাও–
দিগন্ত জুড়ে এখনো তারার আকাশ…
তাই আগুনমুখো নদীর সাথেই কবি হাসান মাহমুদ এর মিতালী খুঁজে পাই আমি। আগুনমুখা – মুলতঃ কবির আপন নিবাস জন্মস্থান ভোলার খ্যাতনামা একটি বড় নদী। পদ্মা আর সমুদ্রের সাথে যার শখ্্যতা রোজ। কবির কবিতাও তাই অগ্নিঝরা প্রতিবাদী ডাক।
নদী আর সাগরের মতোই কখনো উদারপন্থী আবার কখনো সবকিছু ভেঙেচুরে ছারখার করার রাগ নিয়েই হাসান মাহমুদের কবিতা ও গানের বিস্তার।
ওহ উইডিবি!
খুব তো গড়েছ সংসার
পিতার লাশের পাশে
কবর-আঁধার…
গোছালো আলনা আর
খাটের বালিশ
কেন করে প্রত্যহ
এমন নালিশ!
কবি হাসান মাহমুদ! মানুষটির সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল আজকের কাগজ পত্রিকার অফিসে। সেটা আমার কিশোরবেলার গল্প। কবিতা আর গল্প নিয়ে তখন ছুটে বেড়াতাম জাতীয় প্রায় সব দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকের দুয়ারে। খুব সম্ভব ঐ সময় মঈনুল আহসান সাবের ভাই আজকের কাগজের সাহিত্য দেখতেন। যথারীতি অবহেলিত মন নিয়ে ফিরে যাবার সময় অন্য এক টেবিলে বসা ধূসর পাঞ্জাবী গায়ের সুদর্শন একজন তরুন আমাকে ডাকলেন – এই ছেলে এদিকে আসো, কি নাম তোমার, বরিশালে কোথায় বাড়ি?
আমার কণ্ঠে শুনেই তিনি বুঝেছিলেন আমি বরিশালের। আর এখানেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন আত্মার ঘ্রাণ।
সেই যে আলাপ, তারপর কখন যে বড়ভাইয়ের আসনে বসে গেছেন তিনি তা টের পায় শুধু আত্মিক হৃদয়।।
আগুনমুখার ভালোবাসা ভরা মন নিয়ে হাসান মাহমুদ ভাই এভাবেই বরিশাল বিভাগের সকলের প্রতি আত্মিক হয়ে ওঠেন সবসময়। ভোলা তখন অবশ্য মাত্রই বরিশাল থেকে পৃথক হয়েছিলো। তাই বরিশাল আর ভোলা আলাদাভাবে চিন্তা করাটাও কঠিন ছিল আমাদের সময়।
- “তুমিতো দহন কালের সাক্ষী
আনন্দ-কালের কৃতদাস
মগজে মনসার ফনা
চিতার পাশেই করো বাস…”
প্রথম থেকেই ঢাকার
মিরপুরে কাছাকাছি এলাকায় আমাদের বসবাস।
কিশোরবেলা পার হয়ে আমি এখন পৌঢ় হবার পথে, বয়সে পাঁচ বছরের বড় তিনি। কিছুদিন আগে তাকে নিয়ে ৫০তম জন্মোৎসব করেছেন বন্ধুরা তার। এরই মাঝে কেটেছে জীবনের অনেক উত্তাল পাতাল।
কবি হাসান মাহমুদ ভাই সাংবাদিক আবার কখনো অধ্যাপক, কখনো উপস্থাপক, কখনো আবার সুকণ্ঠ গায়ক। পূর্বাপর পত্রিকার সম্পাদক হবার পর তিনি উৎফুল্ল চিত্তে বললেন – আজ পূর্নতা পেলাম জীবনের।।
‘এই নমনীয় রাত; একলা আকাশ
কত সহজেই বিলায় প্রণয়! সাথে
প্রশ্নহীন লেখাপড়া, চিত্রকলা, চারু উদ্যান!
শুধু আহাজারি করে কিছু বৃষ্টির আলাপ। সাথে দৃশ্যহীন গুঞ্জন!’
এরপর ভোরের কাগজের কলিগ ও বন্ধু প্রয়াত কিশোর এর মাধ্যমে খুঁজে পেলাম সংগঠক হাসান মাহমুদকে। স্বপ্নকুঁড়ি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসবে ঐ ছিল কিশোরের সাথে শেষ দেখা।।
বন্ধু কিশোর নেই। আমরা আজো আছি। কবি ও কণ্ঠশিল্পী হাসান মাহমুদ এর পাশে অনেকটা ছায়ার মতোই আমরা আমরা আছি কতিপয় স্নেহ কাঙাল। ৫০ উর্ধ্বের তরুণ হাসান মাহমুদ ছুটে বেড়ান দেশ দেশান্তরে। কণ্ঠ আর কলম চালিয়েই যার জীবীকার সন্ধান, সেকি থেমে থাকতে পারে?
রাগে ক্ষোবে কখনো কখনো সহকর্মীদের উপর ভাষাতীত বাক্যবাণ ব্যবহার, কখনো আবার অতি বিনয়ে শুনিয়ে কষ্টের সেতার।।
মেঘ, তুমি আরও, আরও সদালাপী হও…
পৃথিবী সজাগ।
“বিবস্ত্র রজনীর গান” কবি হাসান মাহমুদ এর প্রথম কাব্য গ্রন্থ। এরপর একে একে বইবাজারে স্থান করে নেয় যেদিকে তাকাই উপকুল ও চোখের মতো চিহ্নগুলো কাব্যগ্রন্থ। জাতীয় প্রায় সব পত্রিকার নিয়মিত লেখক কবি হাসান মাহমুদ এর বর্তমানটা কাটছে বিটিভিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও মঞ্চে উপস্থাপনার অংশীদার হয়ে। পাশাপাশি সংগীত ও প্রাণপ্রিয় সংগঠন স্বপ্নকুঁড়ি তো জীবন তাঁর।