অজয় দাশগুপ্ত এর কবিতা
ওল্ডহোমের জননী আমার
রেলিং ধরে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েছিলে একা
আকাশজুড়ে থমথমে মেঘ? নাকি, মুখের বলিরেখা?
তোমার মুখে মায়ের মুখ তোমার ঠোঁটে ব্যঙ্গ
সন্ধ্যা যখন পায়ের কাছে তখন ই নি:সঙ্গ
একদা এক রাজকন্যা রাজপুত্তর সাথে
তুমি ও হাত রেখেছিলে হাজার তারার হাতে
তোমার চোখে প্রসন্নতা তোমার মুখে লজ্জা
উছলে ওঠা জীবন ছিল মধুর ফুল শয্যা
মানুষটাও প্রেমিক ছিল কম কি তোমার চেয়ে?
বছর ঘুরতে কোলে এলো চাঁদের ছেলে মেয়ে
খোকা ঘুমায় পাড়া জুড়ায় খুকী ও হল বড়
তোমার জীবন বিলিয়ে তুমি তাদের জীবন গড়ো
বিয়ের রাতে পরিয়ে দেয়া সোনার বালা খুলে
ছেলে গেল বিদেশ বি্ভুঁই মেয়েটি ইসকুলে
চাকরী জমি সহায় যত কি হয় ওসব দিয়ে?
তুচ্ছ করে বড় ঘরেই দিলে মেয়ের বিয়ে
মেয়ে জামাই সুখে আছে ওদের সুখের ঘর
ওখানে কি ঠািঁ আছে মা? তুমি ওদের পর
ছেলে আছে অনেক দূরে আপদে সংকটে
আসা কি আর এত ই সহজ? ডলার পাঠায় বটে
আত্মীয়রা বড় যারা সূর্য গেছে পাটে
মানুষটা ও বিগত আজ একলা তুমি খাটে
কে দেখবে ? কে থাকবে ? চিন্তা জমে জমে
সবাই মিলে পাঠালো তাই তোমাকে ওল্ড হোমে
দায় দায়িত্ব নেয়া না কেউ? ছি! ছি! বলা ভুল
তোমার মাথার পাশেই আছে থ্যাংকু কার্ড আর ফুল
আমি যখন দেখি তোমায় দাঁড়িয়ে আছ একা
চোখের জলে আকাশে কি হচ্ছে কিছু লেখা?
বিদায় বেলায় একলা তুমি জায়গা হলো না?
ওল্ড হোমেতে একলা জাগা আমার দু:খী মা।
কবি কাজী নজরুল ইমলাম স্মরণে
বড়প্রয়োজন
আজিম আকাশ
(কাজী নজরুল ইসলাম পরম শ্রদ্ধেয়)
এখন বড় প্রয়োজন বিদ্রোহী কবির
সেই আগুন ঝরা শাণিত বাণী,
চারিদিকে দিকবিদিক ঘোর অন্ধকার
আঁধারের আবর্তেই সকলের পথচলা,
চলছে দুর্বার-দুর্দম-অপ্রতিরোধ্য গতিতে
প্রভাত-দুপুর-সান্ধ্য কিংবা নিস্তব্ধ নিশিতে।
কার হস্তে আছে গোটা দেশ আলোকিত
করার সঠিক আলোর সুবর্ণবর্তিকা,
কে করবে ঘোর অন্ধকার থেকে জাতির
কলঙ্ক লেপনের ঋজু পথ উন্মোচন;
তাই বার বার কেন যেন মনে হয়
তোমাকেই জাতির বড় প্রয়েয়োজন।
কত দু:খ-যাতনা, কত গঞ্জনা সয়েছ
তুমি জাতির তরে-কবিতার তরে,
দারিদ্রের সাথে করেছ আপোসহীন যুঝি
সত্যকে চিরপ্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় প্রত্যয়ে;
অনাচার ব্যধি সমাজ থেকে নির্মূলের তরে
অবরুদ্ধ ছিলে কারাগারে সৌষ্ঠবে-নির্ভয়ে।
জাতির বিবেক আজ মাথা ঠুকে মরে
ডিজিটাল ছোঁয়ায় প্রযুক্তির দেয়ালে,
সভ্যতার ক্রমবিবর্তনে শিল্পের আকাশ জুড়ে
আজ অগণিত নক্ষত্র তথা কলম সৈনিক,
তবু মমহৃদয় যাচে হাজার সৈনিকের ভিড়ে
একটি ক্ষুরধার সৈনিকের নিষ্কন্টক সাদর উপস্থিতি;
যা বদলে দিতে পারে রুগ্ন জাতির গোটা পরিস্থিতি।
আরিফ আহমেদ এর কবিতা
নারী তুমি চির স্বাধীন
ওহে নারী
আধুনিকতার নামে তুমি
করনা বারাবারি
স্বাধীনতা স্বাধীনতা বলে আর
করনা আাহাজারী।
আধুনিকতার লোভনীয় ফাঁদে
নারী স্বাধীনতা মুলো ঝুলিয়ে পাতে
জেগেছে যে শ্লোগান…
তোমাকে পথে নামাবার
কর্পোরেট বাজারীদের কাছে
এটা অতি উন্নত প্লান।
তোমার কাপড় দিনকে দিন
হচ্ছে ছোটো যত
ঘরে বাইরে সম্মানটাও
কমছে তোমার তত।
শুধু চড়া দামে বিকোয় এখন
তোমার বাড়ন্ত যৌবন।
চল্লিশ পেরোলেই দেখ
তোমাকে আর খোঁজেনা কেউ বোন।।
শোনো তবে বলি…
বাবাকে দেখেছি
মায়ের কথায় চলেছে সারাজীবন,
মায়ের স্নেহ-ছায়া ছাড়া
বড় হয়েছে কবে কোন সন্তান?
বোনের কাছে ভাই যে অতি বড় স্বজন
বউয়ের আদেশে চলে স্বামী হারায় আপনজন।
ওহে নারী
তারপরও কি তুমি বুঝবে না?
এ ধরায় তুমিই সব,
তোমাকে ঘীরেই পুরুষের যত আস্ফালন,
যত অহং।
পড়ে দেখ তবে ইতিহাস,
আদম হাওয়ার জীবন
তোমার জন্যই পৃথিবী
গড়েছেন বিধাতা সয়ং।।