পর্ব ১ক.
প্রাচীন বৃক্ষের কাছে নতজানু হই। দু’হাত বাড়িয়ে নেয় নিজের বিবরে।
চারিদিকে খেদ, ক্লেদ, যন্ত্রণারা কখনো শিশুর মতো, কখনো বা রুক্ষ,
মেজাজী শৃগাল—খেলা করে, ফুঁসে ওঠে—দুরন্ত দুপুরে ছোড়ে নিরন্তর থুথু।
আর আমি বৃক্ষের ভেতরে বসে বাড়াই বয়স। গজ ফিতা দিয়ে মাপি
হৃদয়ের বেড়। দৈর্ঘ্য প্রস্থ দেখে কখনো অবাক; কখনো আবার কেটে
ভাগ করি তাকে। তবুও জড়িয়ে রাখে, শরীরের চারিদিকে লেগে থাকে
নিয়মিত অভিজ্ঞতার নিদারুণ দাগ। শব্দ কেটে কেটে কথা বলে। শব্দের
বাহুতে চড়ে হুড়মুড়—পড়ে, ওঠে, পড়ে—যখন ছড়ায় তার আবেশী সোহাগ।
আমিও বৃক্ষ হই—শাখা প্রশাখায় করি যথাযথ বাতাসের উর্বর আবাদ।
খ
তবে ওইসব কথা সে আমাকে কখনো বলে না। বলে না সে কবে
কোথায়, কখন তার শরীর একদা ভেঙেছিলো। কবে কোথায় কিভাবে
সাগর পেরিয়ে জীবনের খানাখন্দ খুলে সবল দাঁড়িয়েছিলো—
বলে না সে, কার হাত ধরে একদা এখানে বয়সের জমিন পেরিয়ে
উঠে বসেছিলো ট্রেনে বা বিশুদ্ধ বাসে। ঋতুর মতন বদলাতে
গিয়ে কবে কখন কোথায় বাকলের ধার ঘেঁষে ফেড়ে চিরে হয়েছিলো একাকার।
২ক
যুদ্ধের বিমান আমাদের ঘরে এসে নামে। আতঙ্কিত হই আমরা সবাই।
থরথর কাঁপতে কাঁপতে দেয়ালে ঠেকাই মাথা। ঢকঢক পানি গিলি। আর মৃত
মানুষের মতো ফ্যালফ্যাল অদূরে তাকাই। মৃত শরীরে দাঁড়িয়ে মৃত স্মৃতির ভেতর
খুঁজি অতিরিক্ত সুখের সম্ভার, যদিও তারাও আমাদের মতো করে হাঁসফাঁস।
সন্তানের মুখ চেপে স্ত্রীকে দেই কিছুটা সান্ত্বনা। বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের
ধ্বংস যজ্ঞের মতন উড়ে যায় খাতা, কলম, লেখার পেনসিল, ছেলের খেলনা
মেয়েদের লুকানো পুতুল। আসমানী গ্রন্থাবলী উল্টে পড়ে থাকে এখানে সেখানে।
পড়ে থাকে কবিতার বই। কী-বোর্ড জানলা দিয়ে উড়ে যেতে যেতে সুদীর্ঘ ‘বিদায়’
লিখে যায় শূন্যতার অসহায় ডালে—একে একে উড়ে যায় সফট্ওয়ারগুলো।
খ
আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়। আমরা যুদ্ধের বিমানের সাথেই বন্ধুতা
করে পাশাপাশি থাকি। মনে হয়, ওরা আমাদের অস্তিত্বের প্রয়োজনেই
দোলায় পাখনা, শব্দ করে, আর বোমা ফেলে পোড়ায় যতোটা দরকার।
ছেলেরাও বিমানের পাখায় বুলিয়ে দেয় হাত, যেনো ওদের একান্ত
খেলনা ওগুলো। স্ত্রীও খুশি হন। সভ্যতার আশর্বাদে পড়েন দরুদ।
সিলিকন ভেলিতে আমরা প্রতিদিন তৈরী করি লাখ লাখ যুদ্ধের বিমান। (চলবে)