‘কুড়ির ফুল হেলায় শুকালে
বাসি ফুলে হয়নাকো পুজো,
ঠাকুর, বিসর্জনেই মিলনের সুখ খোঁজো।’
আফরোজা হীরা ! একাধারে কবি ও উপন্যাসিক। সত্যি বলতে সাহিত্যের সব শাখায়ই তার বিচরণ অত্যন্ত বিচক্ষণতায়। কবিতা দিয়ে তার সাথে আলাপ হলেও তার প্রবন্ধ, রাজনৈতিক সমালোচনা, ধর্মীয় অনুভুতির লেখাগুলো আমাকে টেনেছে ভীষণভাবে। তারপর যখন হাতে এলো তার উপন্যাস বাংলার ঘরে গরে প্রতিটি নারী এক একটা জীবন্ত ইতিহাস বইটি। তখন রীতিমত বিস্মিত হলাম বইটির ভূমিকা পড়ে।
ভূমিকায় তিনি লিখেছেন : ‘আমি এক গণ্ড মূর্খ মেয়ে মানুষ, অন্য আর পাঁচজনের মতো ভারী ভারী সার্টিফিকেট আমার নেই। কখনো মনেই হয়নি শিক্ষিত বা মানুষ হওয়ার জন্য সার্টিফিকেট অনেক জরুরী কিছু। আমার ভিতর প্রকৃত শিক্ষা বলে যদি কিছু থাকে তার সবটুকু আমি প্রকৃতি থেকে নিয়েছি। আমার অনুসন্ধানী চোখ সর্বত্র খুঁজে ফেরে সৃষ্টির রহস্য, নষ্ট সমাজের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসঙ্গতিগুলো।’
আসলেই তাই উপন্যাসিক আফরোজা হীরা তার বিশাল নামের উপন্যাসটিতে তুলে এনেছেন সেই সমাজেরই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসঙ্গতিকে। ছাবিনা আর জয়তুন চরিত্রের নোনা পানি পান, কলিম আর সুন্দরবনের বাঘ, রহিমা, ছলিমের ২য় বিয়ে, ইত্যাদি গ্রাম বাংলার খুটিনাটি চিত্রকে একত্রিত করে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গাটাকে স্পষ্ট করে তুলেছেন বাংলার ঘরে গরে প্রতিটি নারী এক একটা জীবন্ত ইতিহাস – নামের গ্রন্থে।
ফেসবুকে প্রথম তার লেখা স্মৃতি ঝড়ের মূর্ছনা
এটা তো জানাই ছিল
সময়ের স্রোতে একদিন ধুয়ে যাবে
আঠারো বছরের সেই কাঁচা হলুদ রং।
প্রতিটা ঢেউয়ের ধাক্কায়, একটু একটু করে
দূরে সরে যাবে প্রিয় সব মুখ গুলো
যেমনি করে আজ আমি একেবারেই
হারিয়ে ফেলেছি-
ছোট্ট বেলার প্রিয় সেই লাল রঙের ফ্রগ
আর, পুতুলের বাক্সটা।
পার্বতী পারু ছদ্মনামের এই কবিতা পড়েই তার সাথে আলাপ । কবিতার দুর্বোধ্যতায় নয় বরং সহজবোধ্যতার মুগ্ধতা নিয়ে সাহিত্য বাজার ডট কমে তার প্রথম কবিতার প্রকাশ হয়েছিল ২০১৪ সালের জানুয়ারীতে মাসে । লাইক সংখ্যা -৪২৩ (এ লেখাটির সময়ে)।
জানুয়ারী ২৯, ২০১৪ – পদাবলী, সাহিত্য – 424 বার পঠিত
ফেসবুকে তার অগনিত ভক্তের লাইক পড়েছিল মূবুর্তেই ।
সেই থেকে তার কবিতার প্রতি সাহিত্য বাজারেরও একটা দুর্বলতা স্পষ্ট । যার প্রমাণে এই সেরা সাহিত্যকর্মীর পুরস্কার তালিকায় তাকে যুক্ত করে আমাদের এই আনন্দ প্রকাশ এবং গর্বিত হওয়া ।
ষড়বিন্দু – ৬ জন কবির কবিতা নিয়ে সম্মৃদ্ধ একটি কাব্যগ্রন্থ, যেখানে আফরোজা হীরার কবিতা দিয়েই বইটির সূচনা । মোট ৫৩ টি কবিতায় কবির জীবন ও চেতনার দৃষ্টিভঙ্গী পরিস্কার হয়ে ওঠে ।
খুলনার মোংলাতে পশুর নদীর জল বাওয়া গায়ে মেখে বেড়ে ওঠা বলেই তিনি সিডর, আইলার মত বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগকে দেখেছেন খুব কাছ থেকে। তার কবিতায় প্রেম ভালবাসা ছাপিয়ে তাই জেগে ওঠে এক প্রতিবাদী উচ্ছাস ।
‘…টাকার নাম বদলে ডলার রাখলেই সে স্বর্ণমুদ্রা হয় না ।…
সোনালী টুপি মাথায় পড়লেই, হুজুর ডাকি না
আর কুত্তাকে আজও কুত্তাই বলি ।’