সাহিত্য বাজার পদক, সম্মাননা ও সেরা সাহিত্যকর্ম পুরুস্কার প্রাপ্তদের জীবনবৃত্তান্ত নিয়েই সম্মৃদ্ধ হবে আমাদের উৎসব সংখ্যাটি। তার আগে নিয়মিত তাদের সম্পর্কে জানতে পারবেন এই অনলাইন পত্রিকায়। নাসরীন জাহানকে নিয়ে ইতিপূর্বেই বহুবার লেখা হয়েছে এখানে। এবার বিকল্প বায়োডাটার কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনকে নিয়ে লিখেছেন আরেক কবি – কবি কাজী রোজী
যার সাইকেলের ক্রিং ক্রিং বেলের শব্দ আনেকের দারুণ পরিচিত ছিল। কেউ তার বন্ধু, কেউ স্বজন, কেউবা চোখের কথন বোঝা পরিচিত মানুষ। যশোরের নলভাঙা গ্রামের তরুণ যুবক । আকর্ষণীয় চেহারাÑসৌমকান্তি অবয়ব নান্দনিক বাচনভঙ্গি, প্রকাশ প্রক্ষেপণ ঘিরে শৈল্পিক আবহ তৈরি করে রাখে। জানি না তার সুঠাম বাহুতে স্বপ্নের মাদুলি আটা ছিল কিনা। তবে সুখের ঝাঁপি খুলতে খুলতে তরুণ যুবক তার চলমান বৈঠা অনেক দূর বেয়ে নিয়ে যেতে পারবে সেটা বোঝা যায়। ওর নাম রেজাউদ্দিন স্টালিন। আত্মীয়-পরিজন বন্ধু-স্বজন কবিতার স্বপ্নীল শব্দ জোয়ার সৃষ্টিকারী মানুষটিকে ওই নামেই ডাকে। আমি ওকে যুবরাজ বলি। কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন তার নিজস্ব জগৎ নিয়ে অবসর বিনোদন নয়Ñকর্মযোগ্যতা নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ততার পরিম-লে নিয়োজিত। খড়-কুঁটো দিয়ে নয়, কবিতার ঘরবাড়ি সাজায় শব্দের অসীম অটুট বন্ধন দিয়ে।
কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন ভাব, ভাষা এবং পরিকল্পনার পৃথক মাত্রা দিয়ে সুদিন আসবে বলে ভাবতে চায়। একটা আশাবাদী ভুবনের বাসিন্দা হতে সাধ তার। ‘সোনামুখী ধানশীষ পূর্ণপ্রাণ যাবো’ কবিতার শেষ লাইনে যখন সে উচ্চারণ করে‘-তারপর একদিন বৃষ্টিধারায় স্নাত বধ্যভূমিতে/ বৃক্ষের দিন আসে ব্রহ্মপুত্র/ পত্রালির নৌকা ভাসে সবুজ বাতাসে/ আমি সব কান্না সব মৃত্যু মুছে ফেলে সেই বৃক্ষময় দিনের কাছে যাবো/ তার ফসলিম ফুল ও গন্ধময় আশ্চর্যের কাছে/ তার ধানশীষ ডালপালা নুয়ে থাকে সম্পদের ভারে/ আমি এক সোনামুখী ধানশীষ পূর্ণপ্রাণ যাবো’ এ রকম আশাবাদী ভবিষ্যতের হিরন্ময় স্বপ্নের কথা রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতার পরতে পরতে। ওর প্রথম বই ‘ফিরিনি অবাধ্য-আমি’ প্রকাশের পরপরই সে প্রথম সারির কবিদের কাতারে উঠে আসে। ঐ প্রন্থের প্রায় সব কটি কবিতায় দুর্দান্ত সব উচ্চারণ আর চিন্তার নতুন দিগন্তে রংধনু দেখতে পেয়েছিলো পাঠকরা। স্টালিন নিজেকে বদলেছেন বারবার। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতায় আলোচনা করতে গিয়ে কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের যথার্থ উচ্চারণ করেছেনÑএক. রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতায় একটা গল্প থাকে। দুই. একটি কবিতা অন্যটির মতো নয়। তিন. স্টালিন ক্রিয়াপদের ব্যবহারকে নান্দনিক এবং রসগ্রাহ্য করেছে। চার. তার কবিতায় পরাভবের প্রতি অসম্মতির প্রকাশ আছে। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর আলোচনার সাথে আমি ঐক্যমত্য পোষণ করি। স্টালিনের কবিতায় ক্ষোভ আছে দ্রোহ আছে সময়ের প্রাসঙ্গিক উচ্চারণ আছে যা কল্পনার সমার্থক। সূচনাপর্ব কবিতার কয়েকটি লাইন যদি বলি তবে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে –
‘আমার সময় গো-ক্ষুধের মতো বিভাজিত
মুহূর্তগুলো কালো কৃষকের পায়ের মতো ফাটা
আমার জন্ম কোনো সময়কে ইঙ্গিত করে না
এমনকি ঘটনাগুলো মুহূর্তের শৃঙ্খল মুক্ত
যখন পৃথিবীতে কিছুই ঘটছে না
তখন সময় কি জজ্ঞাসা চিহ্নের মতো থিতু
আমি কি শুধু মৃত্যুর ভয়ে সময়কে সনাক্ত করতে চাই ?
আমাদের প্রতিপ¦ার্শ আর সময়কে এমন জ্যামিতিক মাত্রায় কেও ব্যবচ্ছেদ করেনি। রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতায় হাইপার রিয়েলিটি এবং এ্যাবসেন্ট রিয়েলিটির উপস্থিতি দেখে ভাবি, ও সত্যিই উত্তরাধুনিক চিন্তাকে অনেক দূর নিয়ে গেছে। মানব পরিচয়ের যে সারাৎসার সেখানে প্রবেশ করতে চেয়েছে। তথাকথির রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত কাঠামোর মধ্যে মানুষের মৌলিকত্ব বিকাশে বাঁধা কোথায় স্টালিন জানে। একজন মানুষের প্রকৃত পরিচয় সে জানে এই জন্যে রেজাউদ্দিন স্টালিন আমাদের কালের এক অসামান্য কবি প্রতিভা। যুবরাজ বলে তাকে ডাকি আসলে সে কবিতার রাজপুত্র। নতুন আঙ্গিক আর উৎপ্রেক্ষা দিয়ে বাংলা কবিতার অবয়বে আন্তর্জাতিক তিলক আঁকতে তৎপর এই কবির অগ্রগমন অপ্রতিহত। প্রচলিত বায়োডাটার বিরুদ্ধে সে তৈরি করতে চায় কবিতার বিকল্প জীবনবৃত্তান্ত। বায়োডাটার গভীরে প্রবেশ করে সারকার্রামার মতো সব দিক তার নিজস্ব দিক বলে ভাবতে চায়। বাতাসের গতিবেগ অবলোকন করতে করতে মেঘের ডম্বরু বাজায় এবং রনাঙ্গণ পার হয়ে অসীম সকালের দিকে নিয়ে যায়।
কবির জন্মদিন। যুবরাজের জন্মদিন। খুলে যাক ওর সমস্ত আনন্দের ঝাঁপি। প্যা-োরা বাক্সের মুখ বন্ধ হোক চিরতরে। অসম্ভব সুন্দর প্রত্যাশায় আয়ুষ্কাল ওর বেড়ে যাকÑসমাজের বায়োডাটা পরিবর্তনের চাকায় বেঁধে দিক স্বপ্ন। চাকা চলুক তার ইচ্ছেমতো, বধূ সন্তান বন্ধু পরিবার নিয়ে। কবিতার মলাট বদলাতে বদলাতে যে উথান তার যে আগমন ও কবিতা জয় করার বাসনা; তাÑহোক দীর্ঘজীবী এই আশীর্বাদ রেখে ভালবাসার একটা বায়োডাটা দিলাম ওর করতলে।
কবি যখন বলেÑচেয়েছি আলাদা হতে মর্মমূল ছিঁড়ে, ফিরতে চেয়েছি নীড়ে, তখন ভিন্ন ডানায় উদ্ভাসÑতাকে নিয়ে যায় অসীমতার প্রান্ত ছুঁয়ে কাব্য সীমাকে খুঁজতে। নির্মম নাগরিকত্ব ওর ভাললাগে না তবে কোন স্বপ্ননগর কবি খুঁজে ফেরে ? কবি বলেছে মানুষ হতে চায় অলৌকিকÑতাহলে মানুষের জীবনবৃত্তান্ত কি লেখা হবে সেতো আগামীর সোনালি সকাল বলতে পারবে, র্যাবো যেমন পৌঁছুতে চেয়েছিলো এক সুন্দর আশ্চর্য সকালে। জ্ঞানের গহ্বরে পতিত মন ইমেলে খোঁজ করে উন্নয়ন, কবি জানে কিন্তু জানায় না। সিদ্ধান্ত যদি হয় নতুন একটি চাবুক তাহলে পরিষ্কার করে কবি বলে, এরকম নির্মম প্রভুর প্রয়োজন নেই। এই দাসত্ব ও শৃঙ্খলের বিরুদ্ধে কবি আজীবন সংগ্রামশীল । কবিতাতো আদিতে ছিল গান। কবিতা ফেলে এসেছে সুর, গল্প কত কিছু এখন একাকী পথ চলছে সে; এই তো তার দুঃসাহস। সব জানানোর দরকার নেই কবিতা কিছুটা রহস্যের। সেখানে লোক দেখানো শোভাযাত্রা কবির ভাললাগে না। তাই ইচ্ছার বিরুদ্ধে কবি উদরে রাখে হেমলকÑপ্রয়োজনের অপেক্ষাতে। কবির চোখে মাতৃক্রোড় এক অপূর্ব ঠিকানাÑসেখানে শিশুটি অদৃষ্টের ছায়ার ভেতরে থাকে, বনসাই হয়েÑথাকে না। প্রতিবেশ তাকে বনসাই বানাতে চায়।
রেজাউদ্দিন স্টালিন অদ্ভুত অভিন্নতায় নিজেকে ধরে রাখেন। তার স্বকীয়তা, সততা ও বিশ^াসের ভিত রচনা করতে সহায়তা করেছে তার মানবিক মূল্যবোধ ও আদর্শ। ‘বায়োডাটা’ নামের যে বিকল্প সামাজিক দলিল কবি তৈরী করতে চান তা’ পৃথিবীর সব মানুষের আকাক্সক্ষার সাথে সংগতিপূর্ণ। তার নিজস্ব ঠিকানার চৌহদ্দি থেকে তাকে অন্যভুবনে টেনে নিয়ে যায় জীবিকা। সে বুঝিয়ে দেয় যে মানুষের কাংখিত জীবনবৃত্তান্ত থেকে, যে অসাধারণ অলিগলি পথ তৈরী হয়েছে তা আগামী প্রজন্মকে দূর সুদূর সভ্যতার দেয়াল অতিক্রম করার সাহস যোগাবে। কখনো হুলুস্থূল কা- ঘটিয়ে বলে দেবেÑপথে নামো, তবেই না পথ খুঁজে পাবে। পুরানো নাম ঠিকানার তথ্য সমাচার দিয়ে এগোনো যায় না। আমুল বদলে নিয়ে বাড়ি-ঘর-রাস্তাগুলো অন্য নামকরণে সিলমোহর ব্যবহার করতে হয়। কবি তার বায়োডাটা অর্থাৎ জীবনবৃত্তান্তে সমাজের সৌখিন অবস্থানের বিপরীতে পরিবর্তমানতাকে বারবার আয়নার মতো তুলে ধরেছে।
রেজাউদ্দিন স্টালিন আমাদের কালের এক অসামান্য কবি প্রতিভা। যুবরাজ বলে তাকে ডাকি আসলে সে কবিতার রাজপুত্র। নতুন আঙ্গিক আর উৎপ্রেক্ষা দিয়ে বাংলা কবিতার অবয়বে আন্তর্জাতিক তিলক আঁকতে তৎপর এই কবির অগ্রগমন হোক অপ্রতিহত, প্রচলিত বায়োডাটার বিরুদ্ধে তৈরী করুক বিকল্প জীবনবৃত্তান্ত। বিকল্প বায়োডাটার কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন
কাজী রোজী
যার সাইকেলের ক্রিং ক্রিং বেলের শব্দ আনেকের দারুণ পরিচিত ছিল। কেউ তার বন্ধু, কেউ স্বজন, কেউবা চোখের কথন বোঝা পরিচিত মানুষ। যশোরের নলভাঙা গ্রামের তরুণ যুবক । আকর্ষণীয় চেহারা-সৌমকান্তি অবয়ব নান্দনিক বাচনভঙ্গি, প্রকাশ প্রক্ষেপণ ঘিরে শৈল্পিক আবহ তৈরি করে রাখে। জানি না তার সুঠাম বাহুতে স্বপ্নের মাদুলি আটা ছিল কিনা। তবে সুখের ঝাঁপি খুলতে খুলতে তরুণ যুবক তার চলমান বৈঠা অনেক দূর বেয়ে নিয়ে যেতে পারবে সেটা বোঝা যায়। ওর নাম রেজাউদ্দিন স্টালিন। আত্মীয়-পরিজন বন্ধু-স্বজন কবিতার স্বপ্নীল শব্দ জোয়ার সৃষ্টিকারী মানুষটিকে ওই নামেই ডাকে। আমি ওকে যুবরাজ বলি। কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন তার নিজস্ব জগৎ নিয়ে অবসর বিনোদন নয়Ñকর্মযোগ্যতা নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ততার পরিম-লে নিয়োজিত। খড়-কুঁটো দিয়ে নয়, কবিতার ঘরবাড়ি সাজায় শব্দের অসীম অটুট বন্ধন দিয়ে।
কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন ভাব, ভাষা এবং পরিকল্পনার পৃথক মাত্রা দিয়ে সুদিন আসবে বলে ভাবতে চায়। একটা আশাবাদী ভুবনের বাসিন্দা হতে সাধ তার। ‘সোনামুখী ধানশীষ পূর্ণপ্রাণ যাবো’ কবিতার শেষ লাইনে যখন সে উচ্চারণ করে‘-তারপর একদিন বৃষ্টিধারায় স্নাত বধ্যভূমিতে/ বৃক্ষের দিন আসে ব্রহ্মপুত্র/ পত্রালির নৌকা ভাসে সবুজ বাতাসে/ আমি সব কান্না সব মৃত্যু মুছে ফেলে সেই বৃক্ষময় দিনের কাছে যাবো/ তার ফসলিম ফুল ও গন্ধময় আশ্চর্যের কাছে/ তার ধানশীষ ডালপালা নুয়ে থাকে সম্পদের ভারে/ আমি এক সোনামুখী ধানশীষ পূর্ণপ্রাণ যাবো’ এ রকম আশাবাদী ভবিষ্যতের হিরন্ময় স্বপ্নের কথা রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতার পরতে পরতে। ওর প্রথম বই ‘ফিরিনি অবাধ্য-আমি’ প্রকাশের পরপরই সে প্রথম সারির কবিদের কাতারে উঠে আসে। ঐ প্রন্থের প্রায় সব কটি কবিতায় দুর্দান্ত সব উচ্চারণ আর চিন্তার নতুন দিগন্তে রংধনু দেখতে পেয়েছিলো পাঠকরা। স্টালিন নিজেকে বদলেছেন বারবার। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতায় আলোচনা করতে গিয়ে কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের যথার্থ উচ্চারণ করেছেনÑএক. রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতায় একটা গল্প থাকে। দুই. একটি কবিতা অন্যটির মতো নয়। তিন. স্টালিন ক্রিয়াপদের ব্যবহারকে নান্দনিক এবং রসগ্রাহ্য করেছে। চার. তার কবিতায় পরাভবের প্রতি অসম্মতির প্রকাশ আছে। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর আলোচনার সাথে আমি ঐক্যমত্য পোষণ করি। স্টালিনের কবিতায় ক্ষোভ আছে দ্রোহ আছে সময়ের প্রাসঙ্গিক উচ্চারণ আছে যা কল্পনার সমার্থক। সূচনাপর্ব কবিতার কয়েকটি লাইন যদি বলি তবে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে-
‘আমার সময় গো-ক্ষুধের মতো বিভাজিত
মুহূর্তগুলো কালো কৃষকের পায়ের মতো ফাটা
আমার জন্ম কোনো সময়কে ইঙ্গিত করে না
এমনকি ঘটনাগুলো মুহূর্তের শৃঙ্খল মুক্ত
যখন পৃথিবীতে কিছুই ঘটছে না
তখন সময় কি জজ্ঞাসা চিহ্নের মতো থিতু
আমি কি শুধু মৃত্যুর ভয়ে সময়কে সনাক্ত করতে চাই ?
আমাদের প্রতিপ¦ার্শ আর সময়কে এমন জ্যামিতিক মাত্রায় কেও ব্যবচ্ছেদ করেনি। রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতায় হাইপার রিয়েলিটি এবং এ্যাবসেন্ট রিয়েলিটির উপস্থিতি দেখে ভাবি, ও সত্যিই উত্তরাধুনিক চিন্তাকে অনেক দূর নিয়ে গেছে। মানব পরিচয়ের যে সারাৎসার সেখানে প্রবেশ করতে চেয়েছে। তথাকথির রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত কাঠামোর মধ্যে মানুষের মৌলিকত্ব বিকাশে বাঁধা কোথায় স্টালিন জানে। একজন মানুষের প্রকৃত পরিচয় সে জানে এই জন্যে রেজাউদ্দিন স্টালিন আমাদের কালের এক অসামান্য কবি প্রতিভা। যুবরাজ বলে তাকে ডাকি আসলে সে কবিতার রাজপুত্র। নতুন আঙ্গিক আর উৎপ্রেক্ষা দিয়ে বাংলা কবিতার অবয়বে আন্তর্জাতিক তিলক আঁকতে তৎপর এই কবির অগ্রগমন অপ্রতিহত। প্রচলিত বায়োডাটার বিরুদ্ধে সে তৈরি করতে চায় কবিতার বিকল্প জীবনবৃত্তান্ত। বায়োডাটার গভীরে প্রবেশ করে সারকার্রামার মতো সব দিক তার নিজস্ব দিক বলে ভাবতে চায়। বাতাসের গতিবেগ অবলোকন করতে করতে মেঘের ডম্বরু বাজায় এবং রনাঙ্গণ পার হয়ে অসীম সকালের দিকে নিয়ে যায়।
কবির জন্মদিন। যুবরাজের জন্মদিন। খুলে যাক ওর সমস্ত আনন্দের ঝাঁপি। প্যা-োরা বাক্সের মুখ বন্ধ হোক চিরতরে। অসম্ভব সুন্দর প্রত্যাশায় আয়ুষ্কাল ওর বেড়ে যাক-সমাজের বায়োডাটা পরিবর্তনের চাকায় বেঁধে দিক স্বপ্ন। চাকা চলুক তার ইচ্ছেমতো, বধূ সন্তান বন্ধু পরিবার নিয়ে। কবিতার মলাট বদলাতে বদলাতে যে উথান তার যে আগমন ও কবিতা জয় করার বাসনা; তা-হোক দীর্ঘজীবী এই আশীর্বাদ রেখে ভালবাসার একটা বায়োডাটা দিলাম ওর করতলে।
কবি যখন বলে-চেয়েছি আলাদা হতে মর্মমূল ছিঁড়ে, ফিরতে চেয়েছি নীড়ে, তখন ভিন্ন ডানায় উদ্ভাস-তাকে নিয়ে যায় অসীমতার প্রান্ত ছুঁয়ে কাব্য সীমাকে খুঁজতে। নির্মম নাগরিকত্ব ওর ভাললাগে না তবে কোন স্বপ্ননগর কবি খুঁজে ফেরে ? কবি বলেছে মানুষ হতে চায় অলৌকিক-তাহলে মানুষের জীবনবৃত্তান্ত কি লেখা হবে সেতো আগামীর সোনালি সকাল বলতে পারবে, র্যাবো যেমন পৌঁছুতে চেয়েছিলো এক সুন্দর আশ্চর্য সকালে। জ্ঞানের গহ্বরে পতিত মন ইমেলে খোঁজ করে উন্নয়ন, কবি জানে কিন্তু জানায় না। সিদ্ধান্ত যদি হয় নতুন একটি চাবুক তাহলে পরিষ্কার করে কবি বলে, এরকম নির্মম প্রভুর প্রয়োজন নেই। এই দাসত্ব ও শৃঙ্খলের বিরুদ্ধে কবি আজীবন সংগ্রামশীল । কবিতাতো আদিতে ছিল গান। কবিতা ফেলে এসেছে সুর, গল্প কত কিছু এখন একাকী পথ চলছে সে; এই তো তার দুঃসাহস। সব জানানোর দরকার নেই কবিতা কিছুটা রহস্যের। সেখানে লোক দেখানো শোভাযাত্রা কবির ভাললাগে না। তাই ইচ্ছার বিরুদ্ধে কবি উদরে রাখে হেমলক-প্রয়োজনের অপেক্ষাতে। কবির চোখে মাতৃক্রোড় এক অপূর্ব ঠিকানা-সেখানে শিশুটি অদৃষ্টের ছায়ার ভেতরে থাকে, বনসাই হয়ে-থাকে না। প্রতিবেশ তাকে বনসাই বানাতে চায়।
রেজাউদ্দিন স্টালিন অদ্ভুত অভিন্নতায় নিজেকে ধরে রাখেন। তার স্বকীয়তা, সততা ও বিশ্বাসের ভিত রচনা করতে সহায়তা করেছে তার মানবিক মূল্যবোধ ও আদর্শ। ‘বায়োডাটা’ নামের যে বিকল্প সামাজিক দলিল কবি তৈরী করতে চান তা’ পৃথিবীর সব মানুষের আকাক্সক্ষার সাথে সংগতিপূর্ণ। তার নিজস্ব ঠিকানার চৌহদ্দি থেকে তাকে অন্যভুবনে টেনে নিয়ে যায় জীবিকা। সে বুঝিয়ে দেয় যে মানুষের কাংখিত জীবনবৃত্তান্ত থেকে, যে অসাধারণ অলিগলি পথ তৈরী হয়েছে তা আগামী প্রজন্মকে দূর সুদূর সভ্যতার দেয়াল অতিক্রম করার সাহস যোগাবে। কখনো হুলুস্থূল কা- ঘটিয়ে বলে দেবেÑপথে নামো, তবেই না পথ খুঁজে পাবে। পুরানো নাম ঠিকানার তথ্য সমাচার দিয়ে এগোনো যায় না। আমুল বদলে নিয়ে বাড়ি-ঘর-রাস্তাগুলো অন্য নামকরণে সিলমোহর ব্যবহার করতে হয়। কবি তার বায়োডাটা অর্থাৎ জীবনবৃত্তান্তে সমাজের সৌখিন অবস্থানের বিপরীতে পরিবর্তমানতাকে বারবার আয়নার মতো তুলে ধরেছে।
রেজাউদ্দিন স্টালিন আমাদের কালের এক অসামান্য কবি প্রতিভা। যুবরাজ বলে তাকে ডাকি আসলে সে কবিতার রাজপুত্র। নতুন আঙ্গিক আর উৎপ্রেক্ষা দিয়ে বাংলা কবিতার অবয়বে আন্তর্জাতিক তিলক আঁকতে তৎপর এই কবির অগ্রগমন হোক অপ্রতিহত, প্রচলিত বায়োডাটার বিরুদ্ধে তৈরী করুক বিকল্প জীবনবৃত্তান্ত।