‘সীমানা পেরিয়ে: আস্থার ও মিলনে’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে রাজধানী ঢাকার জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে দুই দিনের সার্ক সাহিত্য উৎসব উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি দারিদ্র্যকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শত্রু উল্লেখ করে এ অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠায় সার্কভুক্ত দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। একই ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সাহিত্য অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারে। ‘আমি বিশ্বাস করি প্রকৃত জীবনমুখী সাহিত্যই পারে মানুষকে হিংস তা ও হানাহানির অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে। সাহিত্য মানব ইতিহাসের মহাসড়ক। এ মহাসড়ক ধরেই পৃথিবীর এক প্রান্তের মানুষের সঙ্গে অন্য প্রান্তের মানুষের যোগাযোগ ঘটে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি-ভাষা বিবেচনায় সার্কভুক্ত দেশগুলো একই সূত্রে গাঁথা। ভৌগোলিক সীমারেখা আমাদের ভূখণ্ডগুলোকে আলাদা করলেও এ অঞ্চলের মানুষ মনন ও মানসিকতায় প্রায় একই রকমের। তিনি বলেন, ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বাংলায় বক্তৃতা দিয়ে আবারও এ ভাষাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে তার সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত হওয়ার নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিশ্বের ১৯৩টি দেশে আজ একুশে মাতৃভাষার রক্ষা ও উন্নয়নের অনুপ্রেরণা হিসেবে পালিত হচ্ছে। এ সময় তিনি প্রবাসী বাঙালি রফিক ও সালামের অসাধারণ উদ্যোগের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাত্র ৯টা পর্যন্ত ফাউন্ডেশন অব সার্ক রাইটারস অ্যান্ড লিটারেচারের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার রাইট ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক এবং ফাউন্ডেশন অব সার্ক রাইটারস অ্যান্ড লিটারেচারের সভাপতি অজিত কাউর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে জাতি সাহিত্যচর্চা, ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে সে জাতিকে কখনো দাবিয়ে রাখা যায় না। একে অপরের সৃষ্টিশীল কার্যক্রম আদান-প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতি পরস্পরের সহায়তায় উন্নয়ন করতে পারে।
বাংলার বাউল, কবিয়াল, সাধক, বয়াতিরাও আমাদের সাহিত্য-সংগীতকে সমৃদ্ধ করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলার কামার-কুমার-সুতারগণও একেকজন সৃষ্টিশীল শিল্পী। সেকালের ফকির লালন শাহ, সিরাজ সাঁই বা একালের আবদুল করিম, রাধারমণ দত্ত প্রমুখ আমাদের মনোজগতকে শাণিত করেছেন।’
সার্ক সাহিত্য উত্সবে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানের খ্যাতনামা ৩০ জন ও স্বাগতিক বাংলাদেশের ৩৮ জন লেখক, কবি ও সাহিত্যিক অংশ নিচ্ছেন।
এতে স্বাগত বক্তব্য দেন সেলিনা হোসেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন রুবানা হক। অনুষ্ঠানের শুরুতে কবি শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতা আবৃত্তি করেন বাংলায় ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও ইংরেজিতে ডালিয়া রহমান। এবারের উত্সবের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘সীমানা পেরিয়ে: আস্থার ও মিলনে’।