কবিতা সহে না দানব-যাতনা….. পদক পেলেন মোহাম্মদ রফিক
কবিতা সহে না দানব-যাতনা….. কবি মোহাম্মদ সামাদের এ পংতি নিয়েই এবারের কবিতা উৎসব শেষ হলো। সমাপনি পর্বে কবি রফিক আযাদ গোষণা দিয়ে জানালেন, প্রতি দুইবছর পরপর কবিতা পরিষদ প্রদত্ত কবিতা পরুস্কার ২০১৪ পাচ্ছেন কবি মোহাম্মদ রফিক। আগামী বছর উৎসবের মঞ্চে কবির হাতে তুলে দেয়া হবে এই পুরস্কার ও পদক।
দেশবরেণ্য কবিদের পাশাপাশি ৩৩ জন বিদেশী কবির উপস্থিতি ছিল এ উৎসবে। কবি নির্মলেন্দু গুন, সৈয়দ হক, আসাদ চৌধুরী, কাজী রোজী, তারিক সুজাতসহ পরিচিত সব কবিদের কবিতা পাঠের মুগ্ধ প্রহর কেটেছে শেষ দিনের শেষ প্রহরে। তেমনি উৎসবের সূচনা লগ্ন থেকে কবিতা পরেছেন তরুণ কবিরা। ফয়জুল আলম পাপ্পু, তারেক মাহমুদ, প্রত্যয় জসিম, মানস বিশ্বাস, ক্যামেলিয়া আহমেদ, সাদিয়া স্বাতী, আফরোজা পারভীন, আফরোজা সোমা প্রমূখ জানা-অজানা প্রায় শ’দুয়েক তরুন কবির পদচারনায় মুখরিত ছিল কবিতা পরিষদের এই বাৎসরিক আয়োজন।
পহেলা ফেব্রুয়ারি সকালে সব্যসাচী কবি সৈয়দ শামসুল হক এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এবারই প্রথম কবিতা পরিষদের এ আযোজনে সরকারি সহযোগিতা ছিল। তবে প্রশ্ন ওঠে কবিতা পরিষদের শ্লোগানটি ও নেতাদের বক্তব্য নিয়ে।
যে দানবীয় শক্তিকে রুখতে (এরশাদ) কবিতা পরিষদের জন্ম হয়েছিল আজ সেই দানব সরকারের বন্ধু ও তথ্যদূত। স্বৈরাচার বিরোধী কবিতা পরিষদ আজ বিনা বাক্যে মেনে নিলো আরেক স্বৈরাচারকে। বর্তমান সরকার বিনা নির্বাচনে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় আসীন হয়ে কি অন্যায় করছে না? জাতীয় কবিতা পরিষদ বিএনপি ও জামায়াতের বিরুদ্ধে বিষোদগার করল বটে কিন্তু সরকারের অন্যায় আচারণের কোনো প্রতিবাদই তারা করল না। জামায়াত দানব, তবে এই দানবকে রুখতে কবিতা পরিষদ হয়নি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতেই কবিতা পরিষদ। তাহলে কবিতা পরিষদ কি নির্দিষ্ট দলের মুখপাত্র? তাহলে এ উৎসব কি করে জাতীয় উৎসব হয়?
যাইহোক, কবিতা ও কবিরা সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সোহরাওয়ার্দীর বইমেলা : দর্শক নেই, আছে মিডিয়া
‘দোলনা থেকে থেকে কবর পর্যন্ত একমাত্র সাথী জ্ঞান
এ কথা কলেছেন প্রিয় নবী মোহাম্মদ (সাঃ)।’ আর এ জ্ঞান অর্জনের অন্যতম উপাদান হচ্ছে বই, বই, আর বই। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির যুগে মানুষের জ্ঞান অর্জনের উপাদান কি আসলেই বই? তাহলে এখন আর বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখা যায় না কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে সূধীজনেরা বলেন, যারা পড়ার তারা বই পড়বেই। তবে বইয়ের দামটাও যেন ধরাছোয়ার মধ্যে থাকে। কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেন, বইয়ের দাম বেশি হলে পাঠকের আগ্রহ কমে যাবে। তাই প্রকাশকদের উচিত গায়ের মূল্যটা কমিয়ে লেখা।
এ বছর বইয়ের মূল্য নির্ধারণ রয়েছে প্রতি ১৬ পৃষ্ঠার জন্য ৩০ টাকা। অর্থাৎ ৬৪ পৃষ্ঠার একটি বই বিক্রি হবে ১২০ টাকায়। মেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি নিজস্ব স্টলে ৩০ বাগ ছাড়ে এবং প্রকাশকদের ২৫ ভাগ ছাড় ধার্য করেছেন বটে, এতে করে প্রকাশকদের ৬৪ পৃষ্ঠার বইটির দাম হবে ৯০ টাকা।
এই হিসেবে ২০০ বা ৩০০ পৃষ্টার বই ক্রয় কি সাধারণ পাঠকের জন্য সহজলভ্য? তাহলে পাঠক বাড়বে কি করে? (এ নিয়ে প্রতিবেদন দেখুন আগামি সংখ্যায়)
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আযোজিত অমর একুশে বইমেলায় রবিবার সন্ধ্রায় দর্শক খুব একটা ছিলনা, পাঠকতো আরো নাই, ছিল শুধু সাংবাদিক আর টেলিভিশন মিডিয়ার ক্যামেরা। তবে এখানের প্রতিটি স্টল-ই ছিল সুশৃঙ্খল সাজানো গোছানো। প্রবেশপথেই বাংলা একাডেমির নিজস্ব স্টলটি দৃষ্টি কাড়ে। আগামী, অন্যপ্রকাশ, অনন্য, প্রথমা, শিরিন পাবরিশার্স, পূর্বা প্রকাশনী ইত্যাদি প্রায় ৩০০টি স্টল এখানে। অন্যপ্রকাশের সামনের সেই দীর্ঘ লাইন আর নেই। হুমায়ুন আহমেদ জানালায় বসে এখানে স্টাচু হয়ে আছেন। নতুন বইয়ের কোনো তালিকা তারা দিতে পারেননি।
আগামী প্রকাশনীর ওসমান গণি ও শিরিন পাবলিশার্সের মামুন সাহেব ব্যস্ত ছিলেন বিভিন্ন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে। নতুন বইয়ের তালিকায় তারা দুজনেই মার্ক করে দিলেন ১৪টি নতুন বই। ওসমান গনি জানালেন, তসলিমা নাসরিনের নতুন বই নিষিদ্ধ বাজারে এনেছেন তিনি। মেলায় ভিড় কম হলেও তিনি খুব আনন্দিত এই জন্য যে, মুক্তভাবে এখানে নিজের স্টলের সামনে দাঁড়িয়েই সাক্ষাৎকার দিতে পারছেন চ্যানেলগুলোকে। খুব গর্ব করে এটা জানালেনও নিউজ ২৪ কে।
এদিকে সেবা প্রকাশনীর মাসুদ রানা সিরিজে পাঠকের কিছুটা আগ্রহ দেখা গেল। পুরো মেলায় এখানে একটু ভিড় লক্ষ্যনীয় ছিল।
প্রথমা স্টলে বসেছিলেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। কেমন আছেন, কেমন লাগছে নতুন স্থানের এই পরিবেশ?
উত্তরে স্বভাবজাত হাসলেন মিঠু ভাই। চমৎকার। খুবই নিরিবিলি পরিবেশ। দর্শক পাঠকের ভিড় নেই। বেশ ভালো লাগছে। তবে মাত্রই ২য় দিনতো, আস্তে আস্তে জমে উঠবে।
মিঠু ভাই বা আনিসুল হকের মতই আশাবাদী যায়যায়দিনের মুজাহিদ, প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক ওয়াহিদুল হক রাজা, সমকালের নজরুল এবং গাজী টিভির উসনিস চক্রবর্তীও। মেলার ছবি নিতে এসে দর্শক বা পাঠক না পেয়ে সাংবাদিক বন্ধুরা ঘুরছিলেন একসাথে। মুজাহিদ জানালেন, এবারের মেলায় প্রাণ নেই বন্ধু। আরেকজন বললেন, বাথরুমটাও খুঁজে পেরাম না এখানে, যাই একাডেমি প্রাঙ্গনে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা আছে।