শিরীনা ইয়াসমিন এর একগুচ্ছ কবিতা
ভোর থেকে হাঁটছি
কেবল এলাম সালনা ব্রিজ
মাথার ওপর সূর্য গনগনে আগুন টগবগিয়ে ফুটছে
শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হেলেদুলে হাঁটছি
মানুষের বিষ পানে মাতাল আমি
চিৎকার ভেসে এলো গাড়ি চাপা পড়বেন তো!
ধীরপায়ে হেঁটে বনের ভেতর চলে এলাম
এখনো আমি বেঁচে থাকতে চাই?
হ্যাঁ এখনো বাঁচি মায়ায়!
৪৩ ডিগ্রি
ষাটোর্ধ বৃদ্ধের কপালে তাজা সূর্য
পেটে মরণক্ষুধা রিকশায় প্যাডেল মারছে
ঘাম ফুটছে ৪৩ ডিগ্রি তাপে নিভু নিভু বাতি
ঠোসা পড়ার ভয়ে ঘাম মুছতে পারিনি? নাকি শ্রেণিভেদ?
ভাঁজ পড়া কপালের ঘামের দাম দিতে পারিনি, দিতে পারিনি সম্মান
তাহলে কি আমিও মানুষ হতে পারিনি?
শ্রমের ঘামের দাম পৃথিবীতে সবচেয়ে কম কেন?
আলোকিত পৃথিবী
আলো ছড়াতে চাই ফোটে আঁধারের ফুল
তাইতো করে এসেছি যুগে যুগে সীমাহীন ভুল
বাহ্যিক অবয়বে আলো খুঁজে হয়রান তুমি
মহৎ চিন্তা নিয়ে অন্তরের আলোয় ডুবতে শিখ
আবিস্কার করবে নতুন পৃথিবী সৃষ্টির মহত্ত্ব
প্রতিটি অবয়বে খুঁজে পাবে ঝকঝকে তকতকে
শব্দে সাজানো মায়াময় প্রেমের খোলা চিঠি
অন্তর্দৃষ্টি ছাড়া সৃষ্টিকুলের সৌন্দর্য দেখা অসম্ভব
কুৎসিত বেঁটে অবয়বে সৃষ্টির জেল্লা দেখা সহজ?
বাহ্যিক আলোয় আকৃষ্ট হয়ে তাইতো পতঙ্গ মরে
আঁধার উপলব্ধির সামর্থ্য সৃষ্টিকুলে যার আছে
বাসযোগ্য আলোকিত পৃথিবী তারাই গড়েছে
অণু কবিতা
এক
একটি বসন্তও বৃথা যেতে দিইনি
আমার মত করে আমার করেছি
হ্যাঁ, তুমি থাকলে হয়তো ক্যাকটাসে ফুল ফুটত খুব দামি
আমি ফোটাই অর্কিড আম জামের ডালে
একটা বসন্তও ব্যর্থ হতে দিইনি
দেবও না
দুই
পাখি ফুল হয়ে ফোটে, গাছ পাখি হয়ে ওড়ে কেবল আমার বসন্তে
দখিনা বাতাস শয্যা পাতে তুলে নেয় আমাকে
মেঘের খুব কাছে যেয়ে বলি বৃষ্টি দাও
বৃষ্টি জলে ভেতর বাহির সিক্ত যখন
ভেজা বসনে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে চলে যাই
হিজল ঘেরা গ্রামে
শুকনো খটখটে বিল,ঝুরঝুরে মাটির আইল, ফসল কাটা নিঃসঙ্গ ফাটল ধরা খাঁ খাঁ প্রান্তর নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে,
সেই আইল ধরে চলে যাই শৈশবে
আমার মায়ের কোলে।
তিন
মান্দার কাদাজলে খুঁজি
ডানকিনের ভেঙে যাওয়া সংসার
চোখে পড়ে শুধু জলহীন ধু ধু প্রান্তর
মুক্ত আকাশে উড়ে চলে চিল
ডেকে যায় একটানা জল দাও জল দাও
মাটির তৃষ্ণা মেটাও বাঁচাও সবুজ
চার
সারাগায়ে আঁচলের গন্ধ মেখে
মায়ের সিঁথির মত আঁকাবাঁকা পথ ধরে
চলে যাই বঁউচি বনে
কাঁটার আঁচড়ে কপালে রক্ত দানা বাঁধে ঘামের মত
যেন এইমাত্র কেউ এঁকে দিয়েছে থালার মত অস্তগামী সূর্য
ডাহুকের ডাকে চমকে উঠি সন্ধ্যা ঘনায়
অন্ধকার ঘন হয়ে আসে
জৈষ্ঠের খরতাপে ঘাম ঝরে গোপন বাঁকে শিশিরের মত নিঃশব্দে
বঁউচি ফল সযন্তে রয় কোঁচড়ে