২০ ডিসেম্বর শুক্রবার বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গুটিকয়েক লোকের সমন্বিত শ্লোগান চলছিল। শ্লোগানের ভাষা ছিল ভিন্ন- সহিংশতা আর নয়/শান্তির জন্য ঐক্য গড়ুন। জাতীয় ইস্যুতে সব দলের ঐক্য চাই/তা না হলে দুই নেত্রী পদত্যাগ করুন। দলমত নির্বিশেষে পাকিস্তানের অন্যায় আচারণের প্রতিবাদ করুন। সমঝোতায় আসুন/গণতন্ত্র রক্ষা করুন। আর নয় প্রতিহিংসা/ এবার চাই একতা। আমজনতা ঐক্য গড়ুন/নতুন দল গড়ে তুলুন।
শান্তির স্বপক্ষে আয়োজিত মানববন্ধনে এভাবেই শ্লোগান দিচ্ছিলেন মাত্র ৬ জন যুবক। তাদরে হাতে মাউথপিস আর একটি রিক্সার সাথে বাঁধা ছিল একটি মাত্র মাইক। আর যাদের নেতৃত্বে ছিলেন একজন পুস্তক বিক্রেতা বা হকার আনোয়ার হোসেন। তিনি জানালেন, এ সমাবেশে ইলিয়াস কাঞ্চন ও মাহমুদুর রহমান মান্না থাকবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তাকে। অথচ তাদের কেউ এলেনই না।
১৯ ডিসেম্বর বেলা তিনটায় ফার্মগেট থেকে শনিআখড়া গামী মোহাম্মদপুরের একটি বাসে আনোয়ার নামের যুবকটির সাথে আলাপ। আনোয়ার বাসের ভিতর তিনটি বই ১০ টাকা মূল্যে বিক্রির চেষ্টা করছিল। নিউজপ্রিন্টের কাগজে ২০ পৃষ্ঠার একটি করে মোট তিনটি বই – গোপাল ভাড়ের হাসির গল্প, কালিদাসের শ্লোক এবং তথ্য কনিকা নামের এ বই যে-ই কিনছিল তার হাতে ধরিয়ে দিচ্ছিল একটি লিফলেট। লিফলেটটিতে লেখা – আর নয় সহিংশতা, শান্তির জন্য ঐক্য চেয়ে শান্তিকামী জনতার মানববন্ধন। স্থান জাতীয় প্রেসক্লাব, সময় ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার, বেলা ২টা। প্রধান অতিথি- নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সভাপতি অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন।
বিষয়টা ভালো লাগলো। আনোয়ারকে কথা দিলাম যাবো এই সমাবেশে। শুধু কথাই দিলাম না, আনোয়ারের হয়ে ফেসবুকের সব বন্ধুদের জন্য বিষয়টি জানালাম ও সবাইকে আমন্ত্রণ জানালাম এই মহতী আয়োজনে শরীক হতে।
ফেসবুকে অনেক বন্ধুই অনেক বড় বড় বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের মধ্যে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদও আছেন। তাই একটা বিশ্বাস ছিল- হয়ত ফেসবুক বন্দুদের কেউ কেউ আসেবন এই শান্তিকামী জনতার মানববন্ধন কর্মসূচীতে।
দূর্ভাগা দেশের দুর্ভাগা নাগরিক আমরা। দেশ জ্বলছে দুইনেত্রীর প্রতিহিংসার আগুনে। আর আমরা ঘরে বসে বড় বড় কথা বলে দুইনেত্রীর চৌদ্দগুষ্ঠির উদ্দার করছি। আহ্ একবার ভাবুনতো? আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য কি রেখে যাচ্ছেন। সবখানেই কি স্বার্থ খুঁজলে চলে। সবাই কি স্বার্থপর হয়? না হয়েছে? জনাচারেক ভালো লোক তাই হাজির হয়েছে দেশের টানে, মায়ের টানে।
শুক্রবার জুম্মার পর বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে প্রেসেক্লাবের সামনে পৌঁছতেই ধ্রুম ধ্রুম বোমা ফাটার শব্দে আতংকিত চারিদিক। মানুষের ছুটোছুটি, পুলিশের সতর্কতা। জাতীয় পার্টি ও কাজী জাফর-এর সমাবেশ চলছিল প্রেসক্লাবের আঙ্গিনায়। সেখানেই এই বোমার বিস্ফোরণ। আতংকে দর্শক আর আমজনতা সবাই ছুটে পালালেন।
আমরা ৬ জন বেলা ৩টায় যখন শান্তিপ্রিয় জনতার মানববন্ধন লেখা ব্যাণার নিয়ে দাঁড়ালাম রাস্তায় তখন পুলিশ আর ফটোসাংবাদিক ছাড়া কোনো লোক নেই। প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক ওয়াহিদ হাসান রাজা, ভোরের কাগজের শাহাদাত হোসেন আর যায়যায়দিনের আমারই সাবেক সহকর্মী সিনিয়র শাহিন ভাই ছুটে এলেন আন্তরিকতার টানে। তাদের একজন বললেন- সাহিত্য বাজার সম্পাদক কি ভুলে গেছে- এখানে মাথাপিছু ১০০ টাকা দিলে তবেই মিছিলে/মানববন্ধনে লোকের জমায়েত হয়? তবুও এই জনাচারেক লোকের ছবি তুলে নিলেন তাদের কেউ কেউ।
হেসে জানালাম- দাদা হৃদয়ের টানে এসেছি যে। দেশের প্রতি যাদের ভালবাসা আছে, তারা আজ নয়তো কাল জাগবে আর ছুটে আসবে। আসতেই হবে একদিন। দরকার হলে বাংলাদেশ আমজনতা পরিষদ (বাপ) নামে পৃথক রাজনৈতিক দলও গঠন হবে — একদিন, এভাবেই।
(বাংলাদেশ আমজনতা পরিষদ – বাপ) বিষয়ে পড়ুন প্রথম আলো ব্লগের সাহিত্য বাজার ও রাজখবর গ্রুপে।)