সংবিধান, সংবিধান আর সংবিধান। এই নিয়ে চলছে দুইনেত্রী তথা রাজনীতিবিদদের জোড় লড়াই। যে সংবিধান শুধু মানুষ হত্যার রাজনীতি শেখায়, সে সংবিধান বাদ দেয়ার কথা কেউ বলে না। দয়া করুন, ক্ষমা করুন ও নতুন একটি সংবিধান তৈরি করুন। এ সংবিধান বেদ, বাইবেল, কোরাণ বা ত্রিপিটক নয়, যে বাদ দেয়া যাবে না।
বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করেই দেশব্যাপী যে উত্তেজনা শুরু হয়েছিল তা এখন বুমেরাং হয়ে জ্বালাও-পোড়াও ও হত্যা রাজনীতিতে পরিনত হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে ১৮দলের সাথে ১৪দল ও পুলিশের সংঘাত-সহিংসতা। গত ২৫ অক্টোবর থেকে আজ ২৮ অক্টোবর সারাদেশে নিহতের সংখ্যা প্রায় ২০ জন। দুইনেত্রীর ফোনালাপের পর আশাবাদী জাতির উপর এ হত্যাযজ্ঞ এক বিভিষীকা ছাড়া আর কিছু নয়। ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোন কররেন ও ২৮ অক্টোবর সোমবার রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে দলীয় নেতাদের নিয়ে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানালেন গণভবনে। দুইনেত্রীর এই ফোনালাপের ফলে গোটাজাতি অপেক্ষায় ছিল যে, তাদের মধ্যে সমস্যা সমাধান নিয়ে কথা হবে, হরতাল তুলে নেয়া হবে, বন্ধ হবে সব ধরনের সহিংসতা।
কিন্তু জনগণের প্রত্যাশাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দুইনেত্রী খেলছেন অপ-রাজনীতির খেলা। একজন ফোন করলেন, কিন্তু আলোচনার মূল বিষয়ের ধারে কাছে গেলেন না। তিনি ২৮ অক্টোবর বিরোধী নেতাকে দাওয়াত করলেন গণভবনে। তিনি জানেন, যদি এ দাওয়াত বিরোধী নেতা গ্রহণ করেন ও গণভবনে আসেন, তাহলে তার প্রধানমন্ত্রীত্ব ও সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে কোনো বিতর্ক আর থাকবে না। সব বৈধ হয়ে যাবে। ২৭ অক্টোবরের পর সংসদ ভেঙ্গে দেয়া নিয়ে বিএনপি আর কোনো কথা বলতে পারবে না। কারণ গণভবনে আসা মানেই প্রধানমন্ত্রীর দাওয়াতে আসা। যে প্রধানমন্ত্রীকে ২৫ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে ২৭ অক্টোবরের পর অবৈধ বলেছেন বেগম জিয়া।
অন্যদিকে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার ভাষণে স্পষ্ট বলেছেন – ‘আজ (শুক্রবার) ও আগামীকার শনিবারের মধ্যে আলোচনার উদ্যোগ না নিলে রবিবার ২৭ অক্টোবর থেকে ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাথমিক কর্মসূচি হিসেবে হরতাল ঘোষণা করা হল।’
বিরোধীনেত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী তার আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। পাল্টা আহ্বান জাননো বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব। কারণ এতটা বছরের পরে আপনাদের মধ্যে যে বাক্যালাপটুকু হয়েছে, এতেই জাতি স্বপ্ন দেখছে, সত্যিকারের গণতন্ত্রের চর্চার স্বপ্ন। শুধু এই জন্যই হরতাল তুলে নিয়ে বা সিথিল করে থেকাতে পারতেন এই সহিংসতা। হরতালের আগেই শনিবার বিকেল থেকে দেশজুড়ে যে অশান্তি শুরু হয়েছে, জ্বালাও পোড়াও, বোমাবাজী, কত শত গাড়ি পোড়ানো হল, এর দায় কে নেবে? জনগণকে ট্যাক্সের পাল্লায় ডুবিয়ে কিনে আনা গাড়িগুলো যখন পোড়ে, তখন পুরো জাতি কি পোড়ে না ? রবিবার রাত পর্যন্ত একদিনে ৬ জনের লাশ পড়ল। যেখানে এক নুরুলদীন ও ড. মিলনের লাশকে পুঁজি করে এরশাদকে ক্ষমতাচ্যূত করা হলো, সেকানে এতশত লাশের উপর দাঁড়িয়ে আপনারা দুইনেত্রী জনগণ জনগণ করছেন? যেই জনগণ এখন বোমা আর বোমাতংঙ্ক নিয়ে গৃহবন্দী। এসব কি আপনাদের দেশপ্রেম?
আপনাদের মুখেই শুনেছি – ‘জনগণ নাকি সকল ক্ষমতার উৎস’। সংবিধানের শুরুতেই এ কথা নাকি লেখা আছে। যদিও ২৭ অক্টোবর রবিবার দিবাগত রাত ১২টা ০৭ মিনিটে একুশে টিভির একুশেরাত অনুষ্ঠানে এসে আলোচক রাজনীতিবিদ আ স ম আব্দুর রব ও লেখক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘আমাদের সংবিধান নিজেই সন্ত্রাসী সংবিধান। যখন যে ক্ষমতায় এসেছে, এ সংবিধান তার স্বার্থ রক্ষা করছে, বারবার তার বা ব্যাক্তিস্বার্থেই পরিবর্তন হয়েছে। জনগণের স্বার্থে এ সংবিধান কখনোই কথা বলেনি।’
তাহলে এই সংবিধানের দোহাই দিয়ে কেন এত রক্তপাত? আমাদের জন্য জাতীয়পার্টির চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদতো তাহলে আপনাদের দুজনের চেয়ে অনেকগুনে ভালো ছিলেন। তিনি অন্তত দুটি লাশ দেখেই ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন। অথচ আপনারা দুই নারী, মমতাময়ী দুই মা অসংখ্য ছেলের লাশ দেখেও ক্ষমতার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, বিভিন্ন কুটচালে একে অপরকে পরাজিত করার চক্রান্ত করছেন শেষমুহুর্তেও। ধিক আপনাদের।
এককাজ করুন, পবিত্র কোরআন, পবিত্র বাইবেল, পবিত্র বেদ ও পবিত্র ত্রিপিটকের আলোকে দেশের শাসনভার পরিচালিত হোক। এই পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোই হোক দেমের সংবিধান, তাহলে আর বারবার পরিবর্তন হবে না। আর প্রতিটি ধর্মগ্রন্থ আগে মানুষের মুল্যায়ন করে নেতার না। দেশের মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের সংবিধান পবিত্র কোরান, খ্রিস্টধর্মের জন্য বাইবেল, হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের জন্য বেদ এবং বৌদ্ধ ধর্মের জন্য ত্রিপিটক হবে একমাত্র সংবিধান। এই নিয়মেই দেশের শাসন ব্যবস্থা হোক।
আমরা এই হরতাল, এই মৃত্যু আর হানাহানি, জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি চাইনা। সংলাপ নামের নাটকও আমরা আর দেখতে রাজী নই। এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বিষয়টা ভালোভাবে বুঝে তবেই সংলাপে বসুন ও আমাদের শান্তি দিন। প্রয়োজনে এই সংবিধানও বাদ দিন। তা না হলে আপনাদের বাদ দেয়া ছাড়া আমাদের আরকোনো পথ থাকবে না। এখনো সময় আছে দু’জনেই ফিরে আসুন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে।