রাজনীতির ময়মনসিংহে আ.লীগের ছায়ায় মজবুত জাতীয় পার্টিঃ ঐক্যবদ্ধ বিএনপি
ময়মনসিংহ শহরের প্রবেশ মাত্রই চোখে পড়ে প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে রাজনৈতিক সাইনবোর্ড, ব্যানারের ছড়াছড়ি। এতে দুজন নেতার পৃথক পৃথক উপস্থিতিই বলে দেয় এদের একতার ঘাটতি।কোনোটায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান (শান্ত)। কোনোটায় সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইকরামুল হকের (টিটু) পক্ষ থেকে নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। ময়মনসিংহ মহানগরের রাজনীতি এখন এই দুই নেতাকে কেন্দ্র করে দুটি ধারায় বিভক্ত। দুই পক্ষ আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করে। আর এই সুযোগে জেলা ও মহানগরে বাড়ছে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির জনপ্রিয়তা বলে জানান ময়মনসিংহ শহরের বাসিন্দারা।
বিভাগীয় সদর বা জেলার যখন এই অবস্থা স্বাভাবিকভাবেই জেলার ১১ টি আসনে এর প্রভাব পরবে বলে মনে করেন জেলার সাংস্কৃতিক নেতা কবি ও সাংবাদিক স্বাধীন চৌধুরী। গত নির্বাচনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে স্বাধীন চৌধুরী বলেন, ২০১৮ এর নির্বাচন যদিও সমালোচিত তারপরও সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করে। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছে প্রতিটি এলাকায়। কিন্তু এই দ্বন্দ্বই তাদের খাবে। তারউপর দ্রব্য মূল্যের নিয়ন্ত্রণহীনতা একটা বড় ব্যর্থতা বলে মনে করেন সাংবাদিক স্বাধীন চৌধুরী।
জেলার রাজনীতি নিয়ে সক্রিয় ব্রাহ্মপল্লীর গালিব, হামিদসহ একাধিক নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একসময় ময়মনসিংহ মহানগরে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল সাবেক ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের বড় ছেলে মোহিত উরের। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি ভিন্ন। মতিউর রহমান মন্ত্রিত্ব যাওয়ার পর মোহিত উরের দাপট কমে গেছে। একসময় মোহিত উরের সঙ্গে ছিলেন এমন অনেকে এখন ইকরামুলের পক্ষে ভিড়েছেন। এলাকায় পরিবহন খাত, বালুমহাল ও উন্নয়নকাজের দরপত্রসহ স্থানীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রণও অনেকাংশেই এখন মেয়র ইকরামুল ও তাঁর ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হকের (শামীম) হাতে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেনও এখন মেয়রপক্ষের লোক হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, ‘মতিউর রহমানের সময়ে এখানকার রাজনীতিতে তাঁর কথাই ছিল শেষ কথা। এখন নতুন রাজনীতি। আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করছি। মেয়র ও সাবেক মন্ত্রিপুত্রের মধ্যে সাংগঠনিক প্রতিযোগিতা নিয়ে দূরত্ব আছে।’
মতিউর রহমান ২০০৪ সালে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। এরপর টানা এক যুগ সভাপতি ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে ধর্মমন্ত্রী হন। তখন ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের রাজনীতি, নিয়োগ-বাণিজ্য, ঠিকাদারি, বালুমহালসহ বিভিন্ন খাত মন্ত্রিপুত্র মোহিত উর নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ ছিল। ২০১৯ সালে তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মতিউর রহমান আর মন্ত্রিত্ব পাননি। মূলত এরপর ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়। ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মেয়র ও তাঁর ভাই রাজনীতিতে আবির্ভাবের পর থেকে এখন তাঁদের অবস্থান ভালো, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এখানে অঙ্গসংগঠনগুলোও এখন দুই গ্রুপে বিভক্ত অবস্থায় আছে। যুবলীগ ও ছাত্রলীগে মেয়র ও তাঁর ভাইয়ের অবস্থান হয়েছে। আগে মহানগর ছাত্রলীগে মোহিত উরের একটা অবস্থান ছিল, এখন সেটা নেই। তবে মহানগর জাতীয় পার্টির সাংস্কৃতিক সম্পাদক শহীদ আমিনী রুমী বলেন, কোন্দল সব দলেই আছে। এটাকে কোন্দল বলা যাবেনা। এটা ভোগী ও ত্যাগী দ্বন্দ্ব। যেখানে টাকা আছে, সেখানেই একদল ভোগী ও ত্যাগী আছে। জেলায় নয়টি আসন আওয়ামী লীগের সাংসদ। দুটি জাতীয় পার্টির দখলে। স্বাভাবিক কারণেই সাংসদের দলটি ভোগী আর বাকীরা সব ত্যাগী দল। বিএনপিরও একই দশা। তাদের দ্বন্দ্বটা টাকার বদলে চেয়ারের ভিতর ঢুকেছে এই পার্থক্য।
এদিকে জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বলেন, বিএনপি নির্বাচন নিয়ে মোটেই চিন্তিত নয়। এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবেনা। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাবো ইনশাআল্লাহ। সব জেলা উপজেলা ও ইউনিয়নে বিএনপির কমিটি গঠন কার্যক্রম চলছে। এটা শেষ হলেই আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করবো।
নেতাকর্মীদের বক্তব্যে ২০১৮ এর নির্বাচনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে একতার বিকল্প নেই আওয়ামী লীগের। পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা যায় গত ২০১৮ এর নির্বাচনে ময়মনসিংহের ১১টি সংসদীয় আসনেই বিজয়ের হাসি হেসেছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীরা। এর মধ্যে ৯টি সংসদীয় আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। দু’টি আসনে লাঙল প্রতীক নিয়ে ভোটে জিতেছেন জাতীয় পার্টি। এখানে একটি আসনেও জয়ী হতে পারেননি ধানের শীষ প্রতীকের ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপি।
বিগত নির্বাচনী তথ্য অনুযায়ী ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন জুয়েল আরেং। তার প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ২ লাখ ৫৮ হাজার ৯২৩।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আফজাল এইচ খান পেয়েছেন ২৮ হাজার ৬৩৮ ভোট। বর্তমানে এখানের ১৯ টি ইউনিয়নের হাট বাজারে বিএনপির কার্যক্রম বেশ ঐক্যবদ্ধ বলে দাবী ময়মনসিংহ উত্তর জেলা যুবদলের সহ সভাপতি আব্দুল আজিজ খান ও হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসলাম মিয়া বাবুলের। তাদের দাবী শুধু জেলাই নয় বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিএনপি এখন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করছে। এখানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হোসেন ও সাধারণ সম্পদক পদে প্রিয়তোষ বিশ্বাস বাবুল। দীর্ঘ ৯ বছর পর গঠিত এ কমিটি নিয়েও চলছে দ্বন্দ্ব। হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া আসনে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে আছেন আলহাজ্ব আব্দুল রহিম ও জাহিদুল ইসলাম পাপ্পু।
ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসন থেকে ২০১৮ তে আওয়ামী লীগের শরীফ আহমেদ নির্বাচিত হয়েছেন। এখানকার ১৭০টি ভোট কেন্দ্রে তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৭২ ভোট। তার কাছে পরাজিত প্রার্থী বিএনপির শাহ শহীদ সারোয়ারের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ৬২ হাজার ২৩৩ ভোট। এখানে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব বেশ শক্তিশালী বলে দাবী তারাকান্দা উপজেলা সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ এমদাদুল হক খান।
গত নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাজিম উদ্দিন আহমেদ ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩০০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসাইন পেয়েছেন ২৪ হাজার ৫১৯ ভোট। এসময় বিএনপির একাধিক প্রার্থীর মধ্যে দ্বন্দ্ব স্পষ্ট ছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এ আসনের একজন সম্ভাব্য প্রার্থী জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল ইসলাম সেলিম ওরফে (কবি সেলিম বালা) বলেন, গৌরীপুর আসনে বিএনপি এখন প্রচন্ড শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা কেউই কোনো চিন্তা করিনা। তাছাড়া আমি কোনো প্রার্থী নই। আমি শুধু দলীয় পরিচয়ে সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে চেষ্টা করছি। জন্মভূমির টানে গ্রামের মানুষের উপকার করার চেষ্টা করছি। গৌরীপুর আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড হেলাল উদ্দিন আহমেদ।
২০১৮ এর নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে তৃতীয়বারের মতো বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। মোট ১৭৬টি ভোট কেন্দ্রের ফলাফলে তিনি ২ লাখ ৪৪ হাজার ৭৭৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ পেয়েছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৭৫৩ ভোট। এখানে এখন শান্ত-টিটু দ্বন্দ্বে অশান্ত আওয়ামী লীগের আঙ্গিনা।
ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী খালিদ বাবু। তিনি পেয়েছিলেন ২ লাখ ৩২ হাজার ৫৬৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী জাকির হোসেন বাবলু পেয়েছেন ২২ হাজার ২০৩ ভোট। মুক্তাগাছার সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাইফুজ্জামান দুদু জানান, জেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব এখানেও ছাপ ফেলেছে। ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দিয়েই তা স্পষ্ট হয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আর বিএনপি এখানে খুবই দূর্বল। তিনি আরো জানান গত বছর মুক্তাগাছা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিল্লাল হোসেন সরকার ১৭ হাজার ৩২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শহিদুল ইসলাম শহীদ পেয়েছেন ৫ হাজার ২৬১ ভোট। এটাই এখানে বিএনপির অবস্থান প্রমাণ করে।
ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে ৬ষ্ঠ বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন মোসলেম উদ্দিন অ্যাডভোকেট। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ৪০ হাজার ৫৮৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি’র ইঞ্জিনিয়ার শামছ উদ্দিন। তিনি পেয়েছেন ৩২ হাজার ৩৩২ ভোট। এখানে বিএনপির অবস্থান শক্তিশালী হলেও গত বছর ফুলবাড়ীয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া ৫ হাজার ৬৩৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তুফা পেয়েছেন ৪ হাজার ৪২৮ ভোট।
ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী ২ লাখ ৪ হাজার ৭৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার কাছে ৩৬ হাজার ৪০৮ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটন। ত্রিশাল বাণিজ্যিক নগরী। তাই এই আসনটি ময়মনসিংহ সদরের সাথে সমান গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে এখানে মাদানী গ্রুপের সাথে উপজেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যেই চলছে এখন। অন্যদিকে এখানে বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে গত বছর ঝাড়ু মিছিলও হয়েছে। আর হান্নান সাহেব না থাকায় জাপা এখানে গুরুত্বহীন।
ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে পুনরায় জয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৬৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এইচ এম খালেকুজ্জামান পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৬৩ ভোট। তবে বর্তমানে আওয়ামী লীগের অবস্থান এখানে খুবই দূর্বল। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ১০ নেতার মৃত্যু ও বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাসহ ৪১ জনকে বহিষ্কার করা নিয়ে এই সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বিএনপির অবস্থান ও সম্ভাবনা এখানে প্রচণ্ড শক্তিশালী বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ। তবে ভোটের বিশ্লেষণে ইউপি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অবস্থানই শক্তিশালী বলে ধারণা করা যায়। কেননা সপ্তম ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়েছে। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১০ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হলেও এবার মাত্র ৩টিতে জয় পেয়েছেন তারা। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী মনোনয়নে মুন্সিয়ানা দেখানোয় গতবারের তুলনায় এবার ভালো করেছে। গতবার মাত্র একটিতে জয় পেলেও এবার তিনটি ইউপিতে জিতেছে তারা।
ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন পেয়েছেন ২ লাখ ২৭ হাজার ২৭৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির খুররম খান চৌধুরী ২০ হাজার ৮৬০ ভোট পান। বর্তমানে নান্দাইলের রাজনীতিতে চলছে চরম বিশৃঙ্খলা। বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ জুয়েলকে ঘীরে এই বিশৃঙ্খলা তৈরি বলে জানান আওয়ামী লীগের একাংশ। ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি এডভোকেট জহিরুল হক খোকা ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল এর স্বাক্ষরিত পত্রে সাংসদের গঠিত কমিটি অবৈধ ঘোষণা করে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম ও সিরাজুল ইসলাম ভূইয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়।
ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী আওয়ামী লীগের ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল পেয়েছেন ২ লাখ ৮১ হাজার ২৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের এলডিপির প্রার্থী সৈয়দ মাহমুদ মোর্শেদ পেয়েছেন ৩ হাজার ১৭৫ ভোট। এখানে আওয়ামী লীগের বিকল্প এখন শুধুই আওয়ামী লীগ। সর্বজন প্রশংসনীয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে দীর্ঘ ২৬ বছর পর গফরগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন স্থানীয় এমপি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহবায়ক ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন বারবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আবুল কাশেম। এখানে বিএনপির হাল ধরে আছেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম-আহ্বায়ক ও পাগলা থানা বিএনপি’র নেতা ডা. মোফাখখারুল ইসলাম।
ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা জাতীয় সংসদের ১৫৬ নম্বর আসন। গত নির্বাচনে এখানে ২ লাখ ২২ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী বিএনপির ফখর উদ্দিন বাচ্চু পেয়েছেন ২৭ হাজার ২৭৭ ভোট। শিল্পনগরী ভালুকার রাজনৈতিক মেরুকরণ তাই সম্পূর্ণ আলাদা। শিল্পকারখানা, খামার আর বাগানে সমৃদ্ধ এ এলাকা ব্যবসায়িক অঞ্চল বা শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়দের পাশাপাশি বাইরের বিনিয়োগকারীদেরও পছন্দের জায়গা এই ভালুকা। এখানের রাজনীতির হিসাব নিকাশও ভিন্ন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবী, আমাদের এখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি সব এক। এক পরিবারের সবাই। কেউ কাউকে ডিস্টার্ব করে না। ভোটের আগে কিছুই টেরও পাওয়া যাবেনা এখানে।