দরজার গায়ে লেখা আছে বিপদজনক। পাশেই সাদা কাগজে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা রয়েছে এই কক্ষে প্রবেশকারীকে কি কি নিয়ম পালন করতে হবে। কিন্তু কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করেই সাধারণ মানুষ অনায়াসে ভিতরে আসা-যাওয়া করছেন। বিষয়টা লক্ষ্য করে এখানে অবস্থানরত ও কর্মরত একজন চিকিৎসক বা টেকনিশিয়ান মামুন সাহেব এর কাছে দরজার বিপদসংকেত শব্দটি দেখিয়ে – এটি কেন? জানতে চাইলে তিনি যা বললেন- তা আরো ভয়ংকর।
তার ভাষায় – এখানের তিনটি কক্ষে গামা ক্যামেরা রয়েছে। আর এই ৯১৬ নং কক্ষটি হট চেম্বার, এখানে রয়েছে এমন একটি রেডিয়েশন যা সাধারণের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এখানে যারা প্রবেশ অনুমতি পাচ্ছেন, তারা সবাই প্রটেকশন নিয়ে আছেন।
কিন্তু এই যে সাধারণ মানুষ এখানে প্রবেশ করছেন, ভিতর থেকে তাড়া খেয়ে বের হযে আসছেন, এটা কেন বন্ধ করছেন না? কেন এই দরজায় কোনো দারোয়ান নেই।
উত্তরে ব্যাথাতুর হাসলেন মামুন সাহেব। পাশে এসে দাঁড়ালেন দীর্ঘ ৬ বছরেও চাকুরী স্থায়ীত্ব না পাওযা নার্স ফাতেমাসহ আরো তিনজন। ফাতেমা বললেন – এই কক্ষে যে সব রোগীরা আসেন তাদের এমন একটি ইনজেকশন পুশ করা হয়, যেটি পুশ করার পর তিনদিন তাদের থেকে দূরে থাকতে হয়। আর প্রথম তিন – চার ঘণ্টাতো তার ধারে কাছে ডাক্তার নার্স কেউ-ই যেতে পারেন না।
ফাতেমার কথা শেষ হতে না হতেই ৯১৬ নং কক্ষ থেকে হাত চেপে ধরে বের হয়ে এলেন একজন রোগী। মূহুর্তের মধ্যে মামুন সাহেব ও নার্সরা সবাই হাওয়া হয়ে গেলেন। হতভম্ব আমি, কিছু না বুঝে রোগীর সাথে চললাম – আপনি কোথায় যাবেন এখন?
রোগীটি জানালেন, ৯০৭ নম্বর কক্ষে যাব, কক্ষটি কোনদিকে বলতে পারেন?
রোগিটির উল্টো প্রশ্নে আমি আরো অবাক, আপনি জানেন না ৯০৭ নম্বও কক্ষ কোনদিকে, তাহলে নার্সদেও কাউকে সাথে নিতেন।
এ কথায় হাসলেন রোগীটি, বললেন, তারা কেউতো এলো না, ভিতর থেকে ইশারায় যেদিকে যেতে বলেছে আমি সেদিকেই যাচ্ছি। খুঁজে পেলে ওখানে চারঘণ্টা বসে থাকতে হবে আমাকে। আর পানি খেতে হবে কম হলেও চারলিটার । বারবার প্রশ্রাব করতে হবে। এটাই এই পরীক্ষার নিয়ম।
কি পরীক্ষা এটি?
রোগী জানালেন, তার হোল বোডি বন্ স্কান করতে হবে। এই স্কান করতে যে ইনজেকশন দেয়া হয়েছে, সেটি এতোই ভয়ংকর যে আশেপাশে যে আসবে তারও ক্ষতি হবে। তাই অস্থায়ী বা ইন্টার্নি নার্সরা কেউ ধাওে কাছে আসছেন না।
কথা বলতে বলতেই আমরা বিভিন্নজনকে প্রশ্ন কওে ৯০৭ নম্বর কক্ষ খুঁজে পেলাম। রোগীটি দ্রুত কক্ষের ভিতরে প্রবেশ করে আশেপাশের মানুষদের বিপদ থেকে রক্ষা করলেন যেন।
অথচ ৯০৭ নং কক্ষটি খুঁজে এখানে আসতে পার হতে হয়েছে কয়েকশ মানুষকে। যদি এই ইনজেকশন সত্যিই ক্ষতিকর তবে তার যা ক্ষতি করার তা ইতোমধ্যে করে ফেলেছে। বাকী যেটুকু তা এই কক্ষে একই ইনজেকশন সেবনকারী মোট ১১ জন রোগী যখন পালাক্রমে ২০ গজ দুরের বাথরুমে বা টয়লেটে যাবেন তখন বাকী ক্ষতিটুকু সাধন হয়ে যাবে। কারণ প্রতিবার টয়লেটে আসা-যাওয়ার পথেও অসংখ্য মানুষের মধ্যে দিয়ে রোগীদের চলতে হচ্ছে এবং ফিওে আসতে হচ্ছে ৯০৭ নং কক্ষে।
আমি যে ভয়ংকরের বর্ণনা দিচ্ছি তা দেশের প্রধান চিকিৎসাসেবাকেন্দ্র সাবেক পিজি ও বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালের চিত্র। ডি ব্লকের ৯ম তলার সিটি স্ক্যান বাব ন স্কান সহ প্যাথলজীক্যাল বিভাগের ঘটনা। এখানের তিনটি দরজায় লেখা আছে গামা ক্যামেরা। যারা বিজ্ঞানের সাথে কিছুটা সম্পর্ক রাখেন, তারা জানেন, গামা রশ্মি কি জিনিষ?
হট চেম্বারের সাবধানবাণী পড়ার পর এটা নিশ্চিন্ত যে এ ক্ষটি বিপদজনক। তাহলে এখানে কেন নিরাপত্তারক্ষী নেই। বিপদজনক রেডিয়েশন বহনকারী রোগীদেও ৯০৭ নং কক্সে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্তা কেন নেই। কেন ৯০৭ নং কক্ষে কোনো টয়লেট ব্যবস্থা রাখা হয়নি? এ প্রশ্নের উত্তর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলবেন কি?
এই কক্ষের সম্মুখে নেই কোনো নিরাপত্তারক্ষী। ছোট্ট তিনবছরের শিশুটি কিছু না বুঝেই প্রবেশ করছে বিপদজনক এই কক্ষে। হোল বডি স্কান চলাকালে রোগীর ঘনিষ্টজনকে রোগীর মাথার কাছে বসিয়ে রাখছেন কোনো প্রটেকশান ছাড়াই। অথচ টেকনিশিয়ানরা নিজেরা তখন প্রটেকশান নিতে ব্যস্ত। কেউ চোখে ড্রপ দিচ্ছেন, কেউ এ্যাপ্রোন পড়ছেন।