বাংলাদেশের সাহিত্যচর্চা ও
সাহিত্য পত্রিকার ভূমিকা
রহমান রাজু
সাহিত্যের কাগজ কী এবং কেন? সে কাগজের প্রতিশ্রুতি কী? কীইবা প্রত্যাশা? কীইবা প্রাপ্তি? দীর্ঘায়ু এ প্রশ্নগুলো আমাদের খুবচেনা; উত্তরগুলো যেমন জীবনযাত্রা-নিয়ন্ত্রিত ঠিক তেমনি পরিবর্তিত-সময়নির্ভরও। সাহিত্যের কাগজ আদতে সাময়িকপত্র আমাদের গদ্যসাহিত্যের সূচনাসময়ে যার দাম্ভিক প্রকাশ ও বিকাশ। ‘সৃষ্টি’ মলাটবন্দী হবার আগে সহজলভ্য হয়ে অধিকসংখ্যক পাঠকের করস্থ করে তুলবার দায় সাহিত্যের কাগজেরই। কালের গতিতে এ ধরনের কাগজ ঘিরে তৈরি হয়েছে গোষ্ঠিবদ্ধতা; এমনকি ইউরোপশাসিত নানা ইজমের সঙ্গে সমান্তরালে পাল্ল¬া দিয়েছে ‘লোকাল ইজম’ পর্যন্ত যা যুগপৎ প্রশংসিত-ধিকৃত। আপেক্ষিকতার ব্রাকেটে হয়তো সবই সত্যি কিন্তু সর্বজনীন মূল্যবোধ আমাদেরকে ভাবিত করে। হালের প্রচলিত বাজার ব্যবস্থায় মূল্যবোধ পণ্যমূল্যে বিকৃত; বসে আদর্শের হাটবাজার। ‘আর্ট’ও (শিল্প) ‘ইন্ডাস্ট্রি’র (শিল্প) দিকে কাৎ। স্ট্যান্ডবাজি হয়ে ওঠে মুখ্য। কে কাকে ল্যাঙ মেরে কতখানি উপরে উঠতে পারে জমে ওঠে তার প্রতিযোগিতা? এহেন অবক্ষয়িত সময়ে কোন খুঁটির ওপর তবে দ-ায়মান আমাদের বর্তমান শিল্প-সাহিত্য? কীইবা তার দশা? বাংলার বাজারে কেঁচোমাটির মতো গড়ে ওঠা প্রকাশনা সংস্থাতো হাতে গুণে শেষ করা যায় না। অথচ ‘সময়ের সাহিত্য’ ওয়াকিবহাল হওয়ার জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর খুব বেশি নির্ভরও করা যায় না আজকাল। সময়কে ধরতে তাই ‘সাহিত্যের কাগজ’ই অনিবার্য হয়ে ওঠে। কে কে লিখছেন? কেমন লিখছেন? কার ভাষাবৈশিষ্ট্য কীরূপ? তার আলোচনা-সমালোচনাসহ মৌলিক রচনার প্রকৃত চালচিত্র পেতে ভীড়তে হয় সাহিত্যের কাগজেই। সাহিত্যের কাগজ বলতে সাহিত্য করে এমন কাগজকেই প্রাথমিক ধারণাজ্ঞানে আলোচনাটি চলতে পারে। এই সাহিত্যের কাগজেরও রয়েছে নানা রকমফের। দৈনিকের সাময়িকী-বিচিত্রা-লিটল ম্যাগাজিন-ছোটকাগজ কত কী ! আকার বিচারে দৈনিক-ট্যাবলয়েড-বুলেটিন-বিচিত্রা-লিটলম্যাগ-ফোল্ডার ইত্যাদি। এ লেখাটি মূলত সাহিত্যের কাগজ সম্পর্কিত একটি সূত্র সন্ধানের আভাস দেবে দৈনিক-লিটলম্যাগ-ছোটকাগজ-ম্যাগাজিন-ফোল্ডারসূত্রেই। বাংলা গদ্যসাহিত্য বিকাশের কালে সাহিত্য সাময়িকী কীরূপ ভূমিকায় অবতীর্ণ তা বিদ্বদসমাজের সজ্জনমাত্রই জ্ঞাত। ‘তত্ত্ববোধিনী’, ‘বঙ্গদর্শন’, ‘কল্লোল’, ‘শিখা’, ‘কালিকলম’, ‘কবিতা’, ‘সবুজপত্র’র নির্মিত রথে বর্তমান সাহিত্য সাময়িকপত্রের গমন-প্রত্যাগমন খুব একটা সুখকর নয়। বেশির ভাগ কাগজই ভেতরে ফাঁপা, বাহিরে হৃষ্টপুষ্ট-চাকচিক্যময়। তাহলে কী আমাদের অর্জন? ভাষা নামের এক চিলতে মাটির মায়া আমরা বুঝিনা; সত্যি কথা কইতে পারি না। সর্বংসহা ধরিত্রী আমাদের শেখাতে পারে নাই নয়, আমরা শিখতে পারি নাই। নিতে শিখিনি, ‘আকাশভরা সূর্যতারা’কে। দখিন-মেরুর আকাশে জেগে থাকা তারার বেদনা আমাদের বোধে খেলে না, আমরা নকল মজদুরি নিয়ে ব্যস্ত; অরিজিনালিটির সঙ্কট। ফলত অতিবাহিত জীবনও ফটোকপি নির্ভর; বড়জোর পাইরেসি আক্রান্ত। স্তূতি না করে চাঁচাছোলা কথা কইতে গেলে প্রসঙ্গত, সমালোচকবর্গের বর্তমান শব্দমাল্য ‘শালা’ নিশ্চয়। বোধ করি চর্বিতচর্বণ-পোষ্য-পেয়রূপে স্তূতিজ্ঞান তার নেপথ্যকারণ হওয়া উচিত। এতে লাভালাভের খতিয়ান আছে; নির্বাসনে আছে ‘ঠোঁটকাটা’ প্রবাদটিও উচিত কথায় দোস্ত বেজার বৈকি বিবেচনায়। ‘আপনাকে’ই আমরা কখন পণ্যরূপে বাজারজাতকরণ করছি সে বোধও আমাদের গ-ারসদৃশ চর্মে প্রবেশ করানো মুশকিল; হালের বাজারে আমরা নিজেকে বিকোই; ভুলে যাই ‘হাতের কলম জনম দুঃখি তাকে বেচো না।’ বাণিজ্যের বেসাতিতে আমরা আবিষ্ট; শিল্পপতিগণ (ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট) সাহিত্যের ঠিকাদারিত্বে তকমা আঁটায় ব্যস্ত। সাহিত্য ও সাহিত্যের কাগজ কথাসূত্রে এমত দৃশ্যই বিশ্বাস্য। অথচ সাহিত্যের কাগজেই একজন লিখিয়ের বিকাশ-বিস্তার, স্বদেশ ও স্বভাষা-সাহিত্যের হালচাল, সর্বোপরি সাহিত্যের দাবি পূর্ণতা পায়।
আমরা জানি একসময় প্রথা ভেঙেছিলো সবুজপত্র (১৯১৪)। রবীন্দ্রদ্রোহীতায় এসেছিল ‘কল্লে¬াল’ (১৯২৩)। নতুনের আবাহনে এসেছিলো ‘কালিকলম’ (১৯২৬), ‘প্রগতি’ (১৯২৭), ‘ধূপছায়া’ (১৯২৭), ‘পরিচয়’ (১৯৩১), ‘পূর্বাশা’ (১৯৩২), ‘কবিতা’ (১৯৩৫) ইত্যাদি। দীর্ঘায়িত করে বললে ‘স্বাক্ষর’ (১৯৬৩), ‘সাম্প্রতিক’ (১৯৬৪) ‘কণ্ঠস্বর’ (১৯৬৫)ও। ‘কণ্ঠস্বর’ থেকেই শুরু করি। ষাটের উত্তুঙ্গ-অস্থির পরিস্থিতিতে নতুন দ্রোহী দায় নিয়ে নতুন ‘কণ্ঠস্বর’ প্রতিধ্বনিত হয়েছিল সেদিন। ইউরোপে ১৮৪০এ র্যালফ ওয়াল্ডো ইমারসন-এর ‘ডুয়েল’ দিয়ে সাহিত্যের কাগজরূপে লিটল ম্যাগাজিন ধারার যে সূচনা, বাংলাদেশে সে লিটল ম্যাগাজিনের বিস্তার পূর্বোক্ত কাগজগুলো দিয়েই। অতঃপর আমাদের মুক্তিযুদ্ধপূর্ব সময়ে ‘পূর্বমেঘ’, ‘বিপ্রতীক’, ‘কালান্তর’, ‘উল্কা’, ‘শ্রাবস্তী’, ‘অচিরা’, ‘বহুবচন’, ‘উত্তরণ’, ‘কিছুধ্বনি’, ‘রূপম’, ইত্যাদি নামও অনুপেক্ষণীয়। আশির দশকে এসে বাংলাদেশে এ ধারাটি ঋদ্ধ হয়। তারুণ্য, নতুনের আহ্বান, প্রথাভাঙার মিছিল, দ্রোহীচেতনা, আপোসহীনতা, প্রতিষ্ঠানবিরোধী চিন্তা সর্বোপরি ছোটমরিচ কিন্তু ঝাল বেশি। তাতে অল্পেই কাজ হয়। সে সরু কিন্তু চাঁচাছোলা-ধারালো। কারো তোয়াক্কা করে না, স্বতন্ত্র স্বরে কথা বলতে গিয়ে কার পাছায় ফোসকা পড়ে সেদিকে ভ্রƒক্ষেপ নেই। সত্যসন্ধানী হয়ে শিল্পের প্রতি জবাবদিহিতা তার; কোনো কাটতি মাল হবার ধান্দা নেই। তেলে মাথায় তেল আয়োজন না করে খসখসে বাস্তবতাকে তুলে ধরে কারো কারো চর্বি কমাতে সহায়ক। তাতেও কিছু কিছু গ-ারের সন্ধান মেলে। ওতে কিছু যায় আসে না। নতুন ভাষায়, নতুন গদ্যে, নতুন ঢঙে নিয়ত তার প্রকাশ। উত্তরণের একান্ত দায় তার। যতদিন বাঁচবে ততদিন ঝাঁঝ নিয়েই বাঁচবে। মরবে তবু নতি স্বীকার করবে না। লিটল ম্যাগাজিনের এমনতর ভাবনা আজ আন্তর্বৈশিষ্ট্যে প্রশ্নজড়িত। আদর্শের লড়াইয়ে কে কোথায়? মূলধারা কোনটি? সাহিত্যচাষীদের মধ্যে মাযহাব দ্বন্দ্ব হয়ে উঠেছে প্রকট। ওর হচ্ছে-এর হচ্ছে না। ও বাণিজ্য করছে; সে তেল মারছে। আমিই ঠিক-তালগাছটা আমার ইত্যাদি এক ধরনের সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব। শিলবাটা আর শিলনড়ার ঘষাঘষিতে সাহিত্যের অবস্থা বেগতিক। অবশ্য এও আমাদের ভুলে গেলে চলে না যে সবাই তো অন্তত সাহিত্য করছে চুরি ডাকাতি, বাটপারি তো করছে না। (অবশ্য কুম্ভীলক যে নেই তা নয়।) তবুও তো দ্বন্দ্বসূত্রের অবসান চাই। আজকের সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন একই সুতোয় কি গাঁথা যায় ‘বিপ্রতীক-জীবনানন্দ-আরণ্যক-ছাপাখানা-দ্রষ্টব্য-সুতরাং-ড্যাফোডিল-প্রতিশিল্পান-ছলাৎ’ আর অন্যদিকের ‘একবিংশ-নিসর্গ-লোক-অমিত্রাক্ষর-শালুক-চিহ্ন-অরণি-ধমনি-পুষ্পকরথ-সুনৃত-ভাস্কর’ জাতীয় কাগজগুলোকে? (এক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি নাম ব্যবহার করা হলো মাত্র। পাঠক নিশ্চয় ধারাটি বুঝে নেবেন)। সবইতো লিটল ম্যাগাজিনরূপেই আত্মপরিচয় দিতে উন্মুখ। সত্যিই কি তাই? এই দুই ধারার কাগজই কি স্বভাবধর্মে এক শুধু আকার ছাড়া?
সঙ্কট তৈরি হয়েছে ‘লিটল ম্যাগাজিনে’র পরিভাষা নিয়ে। হরহর করে অনেকেই এর পরিভাষারূপে ‘ছোটকাগজ’ শব্দটি ব্যবহার করছেন; কনসেপ্ট নিয়ে ভাবছেন না। আকারগত বিবেচনায় ‘লিটল ম্যাগাজিন’ অবশ্যই ‘ছোটকাগজ’ হতে পারে। কিন্তু চারিত্র্য বিচারে ‘লিটল ম্যাগাজিন’ আলাদা। সব ‘ছোটকাগজ’ই ‘লিটল ম্যাগাজিন’ নয়। সুবিমল মিশ্র জানান ‘লিটল ম্যাগাজিন হচ্ছে সাহিত্যের বিশিষ্ট একটি দৃষ্টিভঙ্গি, বেপরোয়া, রবীন্দ্রপরবর্তী বাংলা সাহিত্যে যা ক্রমশ প্রকট হচ্ছে, হয়ে উঠছে।’ অর্থাৎ লিটল ম্যাগাজিন একটি দৃষ্টিভঙ্গি যা স্বতন্ত্র সংজ্ঞা তৈরি করতে সহায়ক। যতটা না গাঠনিক পরিচয় তার চেয়েও বেশি গুরুত্ববহ তার চারিত্রিক পরিচয়। ‘লিটল ম্যাগাজিন’ রীতিমতো কট্টর মৌলবাদী যার অন্তর্মূলে লুকিয়ে আছে সত্যিকারের প্রগতি। সবাই যখন ‘লিটল ম্যাগাজিন’ শব্দটি ব্যবহার করতে হুড়োহুড়ি শুরু করে দেয় ব্যাপারটি কেমন যেন বেঢপ হয়ে ওঠে। আকারে ছোট কিন্তু চরিত্রে অনেকটাই আপোসবাদী কাগজগুলোকেও কি আমরা তবে ‘লিটল ম্যাগাজিন’ বলবো। বোধ করি বুদ্ধদেব বসুর লিটল ম্যাগাজিন ধারণা এতদপ্রসঙ্গে যুক্ত হতে পারে। ‘লিটল কেন? আকারে ছোট বলে? প্রচারে ক্ষুদ্র বলে? সব কটাই সত্য। কিন্তু এগুলোই সব কথা নয়; ঐ ‘ছোটো’ বিশেষটাতে আরো অনেকখানি অর্থ পোরো আছে। প্রথমত কথাটা, একটা প্রতিবাদ : একজোড়া মলাটের মধ্যে সবকিছুর আমদানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, বহুলতম প্রচারের ব্যাপকতম মাধ্যমিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। লিটল ম্যাগাজিন : বললেই বোঝা গেলো যে জনপ্রিয়তার কলঙ্ক একে কখনো ছোঁবে না, নগদ মূল্যে বড় বাজারে বিকোবে না, কিন্তু হয়তো কোনো-একদিন এর একটি পুরনো সংখ্যার জন্য গুণিসমাজে উৎসুকতা জেগে উঠবে। সেটা সম্ভব হবে এ জন্যই যে, এটি কখনো মন জোগাতে চায়নি, মনকে জাগাতে চেয়েছিলো। চেয়েছিলো নতুন সুরে নতুন কথা বলতে; কোনো এক সন্ধিক্ষণে যখন গতানুগতিকতা থেকে অব্যাহতির পথ দেখা যাচ্ছে না, তখন সাহিত্যের ক্লান্ত শিরায় তরুণ রক্ত বইয়ে দিয়েছিল-নিন্দা, নির্যাতন বা ধনক্ষয়ে প্রতিহত হয়নি। এই সাহস, নিষ্ঠা, গতির একমুখিতা, সময়ের সেবা না-করে সময়কে সৃষ্টি করার চেষ্টা-এইটেই লিটল ম্যাগাজিনের কুলধর্ম। …ভালো লেখা বেশি জন্মায় না, সত্যিকারের নতুন লেখা বিরল; আর শুধু দুর্লভের সন্ধানী হলে পৃষ্ঠা এবং পাঠক-সংখ্যা স্বভাবতই কমে আসে। অর্থাৎ আমরা যাকে বলি সাহিত্যপত্র, খাঁটি সাহিত্যের পত্রিকা লিটল ম্যাগাজিন তারই আরো ছিপছিপে এবং ব্যঞ্জনাবহ নতুন নাম।’ ইংরেজি-বাংলা অভিধান আমাদের সহজলভ্য। তাতে ‘লিটল’ অর্থ ‘ছোট’ আর ‘ম্যাগাজিন’ অর্থ ‘পত্রিকা’ বা ‘কাগজ’। এমনটি বিবেচনায় বোধ করি ‘লিটল ম্যাগাজিন’ ‘ছোটকাগজ’ হয়েছে। ভুলটা সেখানেই। আমরা নিশ্চয় ‘রিয়েল’ মানে ‘আসল’ আর ‘স্টিক’ মানে ‘লাঠি’ জানা সত্ত্বেও ‘রিয়েলিস্টিকে’র অর্থ ‘আসললাঠি’ বলি না। তেমনি আকার বিবেচনায়ই লিটলের মূল জায়গা হতে পারে না। মোটেও না। প্রমাণিত সত্য যে ‘লিটল ম্যাগাজিন’ তার স্বভাবধর্ম নিয়েই ‘লিটল ম্যাগাজিন’। শাব্দিক অর্থ ছাড়িয়ে তা ব্যঞ্জনার্থকে লালন করে। ‘লিটল ম্যাগাজিন’ ধারণাটি একটি ইজমের সমান্তরাল। মূলত একটি মুভমেন্ট, একটি টার্ম। ‘লিটল ম্যাগাজিনে’র পরিভাষা ‘লিটল ম্যাগাজিন’ই হওয়া বাঞ্ছনীয়। এতে করে ‘বিপ্রতীক’, ‘জীবনানন্দ’, ‘আরণ্যক’, ‘প্রতিশিল্প’, ‘দ্রষ্টব্য’, ‘থার্ডম্যাগ’, ‘সুতরাং’, ‘ছলাৎ’, ‘ম্লান’-এর মর্যাদা রক্ষা হয়। এটা কিন্তু ঠিক যে আকারগত বিবেচনায় ‘লিটল ম্যাগাজিন’ ‘ছোটকাগজ’ হতে পারে কিন্তু স্বভাবগত দিক থেকে তা ভিন্ন। ‘লিটল ম্যাগাজিন’। আমরা ‘ফোকলোর’ শব্দটির প্রতিশব্দ নিয়ে বহু হৈ চৈ করার পর ‘ফোকলোরটাকে’ই যৌক্তিক মনে করেছি। বোধ করি এক্ষেত্রেও তেমনটিই সঙ্গত। ‘লিটল ম্যাগাজিন’ই মূল, শতভাগ কৌমার্যের দাবিদার। ‘ছোটকাগজ’ নাম দিয়ে তার কৌমার্যকে কলঙ্কিত করা আমাদের উচিত হবে না। বরং আমরা ‘ছোটকাগজ’কে অন্যতর বিবেচনায় দেখি। ‘ছোটকাগজ’ বিবেচনায় দেখি ‘একবিংশ’, ‘নিসর্গ’, ‘ধূলিচিত্র’, ‘অমিত্রাক্ষর’, ‘লোক’, ‘শালুক’, ‘চিহ্ন’, ‘পড়শি’, ‘শব্দ’, ‘ভাস্কর’, ‘দোআঁশ’, ‘পুনশ্চ’ জাতীয় কাগজগুলোকে? আকারে এরা ওয়ান সিক্সটিন। অর্থাৎ ছোটকাগজ। স্বভাবধর্মে এরা হুবহু ‘লিটল ম্যাগাজিন’ নয়। তাছাড়াও বাজারে আজকাল অর্থনীতির ছোটকাজ, রাজনীতির ছোটকাগজও বেরিয়েছে। আরও সুনির্দিষ্ট করে যদি বলি আমাদের উল্লি¬খিত কাগজগুলো আসলে ‘সাহিত্যের ছোটকাগজ’ বোধ করি সেটাই ভালো। এগুলো মোটেই ‘লিটল ম্যাগাজিন’ হতে পারে না। দুটোই স্বতন্ত্র নাম। ‘লিটল ম্যাগাজিন’ আর ‘ছোটকাগজ’। ‘লিটল ম্যাগাজিনে’র বেশ কিছু স্বভাবকে ‘ছোটকাগজ’ লালন করে। প্রয়োজনে আপোসও করে। প্রতিষ্ঠিত কারো কারো লেখা ছাপে; প্রতিষ্ঠিত জনকে নিয়ে সংখ্যা করে। প্রকাশের ভারে বিজ্ঞাপনের সঙ্গে আপোস করে। (কোনো কোনো পত্রিকা তো এটাকে ব্যবসা করে তোলে) অবশ্য এটাও ঠিক যে প্রতি কলাম ইঞ্চি ৩০০০ টাকা এমন বিজ্ঞাপন ছোটকাগজ ছাপে না। বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট বাছবিচার। দ্রোহ আছে, আপোসও আছে। ‘ছোটকাগজ’রূপে বেশ কিছু দায় এ কাগজগুলো কাঁধে তুলে নেয়। এতশব্দের মধ্যে লেখা শেষ করুন, এক ফর্মার বেশি লিখবেন না এ জাতীয় ভয়াবহ বাণী ছোটকাগজ কখনো ছোড়ে না। বরং লেখাটি সমাপ্ত করুন, আপনার বক্তব্য স্পষ্ট করুন এমন ধারণাকেই লালন করে। উচ্চতায় এরা ঢাউসও হয় কখনো কখনো। সমসাময়িক সাহিত্যের প্রকৃত হালচালের সালতামামিতে এ জাতীয় কাগজের ভূমিকা অগ্রগণ্য। সে হোক রোগাপটকা চেহারার অথবা হৃষ্টপুষ্ট। বিশেষ সংখ্যাগুলো সংগ্রহে রাখবার কাজটাও কিন্তু করছে এ ছোটকাগজগুলোই। ‘লিটলম্যাগাজিনে’র মতো মৌলবাদী এরা না। এরাও মৌলবাদী তবে অনেকটা উদারনৈতিক। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান অনিবার্য নয়, সাহিত্যের হাল-হকিকতকে ধারণ করতে কখনো কখনো প্রতিষ্ঠানের লেখা অথবা প্রতিষ্ঠান বিষয়ক সংখ্যা ‘ছোটকাগজগুলো’র করতে হয় সাহিত্যের দায় থেকেই। ছোটকাগজ ঘনিষ্ঠজনেরা কিন্তু ‘লিটল ম্যাগাজিন’ ধারণা থেকেই বেড়ে ওঠা; আবার লিটল ম্যাগাজিনীয় সবগুলো ধর্ম থেকে কখনোই সে সরেও আসতে পারেনা এবং আরও নিশ্চিত যে তা কখনো বাজারি-ফরমায়েশি হয়ে ওঠে না। এটি ‘লিটল ম্যাগাজিন’ পরবর্তী একটি নতুন গতি। ‘লিটল ম্যাগাজিন’ যদি আমাদের বোধ-বুদ্ধি-লেখক তৈরির শেকড় বা মূল হয় তবে ‘ছোটকাগজ’গুলো সে মূলের কা-। মর্মমূলে ‘লিটলম্যাগাজিন’ আর বহির্বাস্তবতায় কা-রূপে দ-ায়মান ‘ছোটকাগজ’। এইক্ষণে ‘লিটল ম্যাগাজিনে’র বেশ সঙ্কট; অথচ ছোটকাগজ বেরোচ্ছে অহরহই। কেন? কি প্রয়োজনের তাগিদে ছোটকাগজ যেটুকু আপস করে সেটাই কি তবে বেশি মান্য? এজন্যই কি ‘লিটল ম্যাগাজিনে’র সঙ্কট। কিন্তু আমাদের মগজে কারফিউ ভাঙার গান তো সাহসী সুরে ‘লিটল ম্যাগাজিন’ই গেয়েছে। আমরা কি তবে শেকড় বিচ্ছিন্ন হবো? মূল থেকে সটকে পড়ে যাবো? কা- দাঁড়াবে কোথায়? তার চেয়ে বরং মূল-কা- নিয়েই আমাদের শিরদাঁড়া তেজী থাকুক সেই ভালো। আজকের উচ্চকিত আলোয় ‘বিলবোর্ড’ সবার চোখে পড়তে বাধ্য কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি এর মর্মমূলে রয়েছে পাঠের হাতেখড়ি আধার ‘ব্ল্যাকবোর্ড’। সময়ের হয়েও সময়কে সৃষ্টি করবার; একটি নবনির্মিত গতিপথের সন্ধানে ‘লিটলম্যাগ-ছোটকাগজে’র বিকল্প নেই, যেমনটি অবিকল্প কমলকুমার মজুমদার- আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-শহীদুল জহির। খুব উচিত একটি ঔচিত্যবোধকে সংগোপনে লালন করা; কারফিউ ভেঙে বেরিয়ে আসা এবং যার যা প্রাপ্য তা স্বতঃস্ফূর্ত হ্যান্ডওভার করা।
দৈনিকের সাময়িকীর ভূগোল বড়ই আলাদা। তবুও প্রসঙ্গত। যেকোন দৈনিকের সংকল্প হয় বাণিজ্যিক ভাবনায়; কাটতির হিসেব-নিকেশে। সর্বশ্রেণীর মানুষের সন্তুষ্টি বিবেচনা করতে হয় দৈনিককে। নিজের বলতে তেমন নেই; সবই বাণিজ্যের। সুস্থতা-অসুস্থতাজ্ঞানও হারায় কখনো কখনো। ওতে বহুরকম পাতা থাকে। দেশের পাতা, বাণিজ্যের পাতা, অর্থনীতির পাতা, ধর্মের পাতা, খেলার পাতার সঙ্গে যুক্ত হয় সপ্তাহে কোনো একদিন সাহিত্যের পাতা। আসলে তা পাতা-ই। প্রতিষ্ঠিত লেখক-খুব চেনা মুখ-জনপ্রিয় শিল্পীসাহিত্যিক অথবা নিজেদের নির্মিত তালিকার বাইরে সে পাতাটি শোভা পায় না। একজন নবীন লিখিয়ের ঋদ্ধ লেখাটিও সেখানে বাজেয়াপ্ত হয় কাটতি স্টারদের ভীড়ে। একটি গদ্য লিখলে ২০০০, গল্প লিখলে ১৫০০ কবিতা লিখলে ৩০০ গ্রন্থালোচনায় ৫০০ এমন মাশুলে যে লেখাটির সৃষ্টি তা যতটা শিল্পের তার চেয়ে বেশি উপার্জনের। স্পেস বিবেচনায় এ কাগজের লেখাগুলো আড়ষ্ট‘এত শব্দের মধ্যে লিখুন’ সতর্কবাণী পেয়ে। আদতে একটি ‘লিটল ম্যাগাজিন’ এবং ‘ছোটকাগজ’ যা করছে, আদর্শিক বিচারে ভিন্ন মেরুতে দৈনিকের অবস্থান। তারাও সাহিত্য করছে। রয়েছে চড়ামূল্যের সাহিত্যসম্পাদকও। তাবৎ পৃথিবীর সমস্ত সাহিত্যে সে হাফেজ। ‘তাহার বিবেচনাই চূড়ান্ত বলিয়া বিবেচিত হইবে’ (বোধ করি কোনো উপরবার্তা তাহার উপর নাযিল হইয়া থাকে, লেখার মানের চেয়ে বাণিজ্যের ব্যাপারটি সেখানে প্রাধান্য পাইবে-বিভিন্ন অঞ্চল ধরিতে হইবে- চেনামুখ গুরুত্ব পাইবে এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের প্রাধান্য থাকিবে। অন্তত সাহিত্যের ক্ষেত্রে আমরা তেলে মাথায় তেল-ই দিবো)। অন্যসব পাতার মতোই বিষ্যুদবার অথবা শুক্কুরবারের পাতা সাহিত্য পাতা। আসলেই এটি একটি পাতা। যা মূল এবং কা- থেকেই সৃষ্টি অথচ নিজের বাড়াবাড়িতে সে মূল-কা- বিচ্ছিন্ন হয়, যখন-তখন ঝড়ে পরে পদদলিত হয় এবং রমজান মাসে তার বিকল্প ব্যবহার বেড়ে যায়; ইফতারির সময় যথেষ্ট কাজে দেয়। বড়জোর সাহিত্যের এই ক্ষেত্রটিকে সাহিত্যের একফর্দ বা পাতা বলা যেতে পারে। যদিও শামসুর রাহমানের সময়ে ‘দৈনিক বাংলার সাময়িকী’ আর আবু হাসান শাহরিয়ারের সম্পাদনায় ‘খোলা জানালা’ দৈনিকের হয়েও দৈনিকের নয়; সাহিত্যের একথা সর্বজন-স্বীকৃত। সাহিত্যের কাগজের যে বড় দায় সাহিত্যের প্রতি; লেখক সৃষ্টি দৈনিকগুলোর ভ্রƒক্ষেপ নেই সেদিকে। তাতে আবার দাঁড়িয়ে গেছে পত্রিকার নামে গ্রুপ/গোষ্ঠী। উত্তরণের প্রচেষ্টাও ক্ষীণ। তবে একথা সত্যি যে, এক নজরে এ সপ্তাহের সাহিত্যিক (জন্ম কিংবা মৃত্যু) পরিসংখ্যানে দৈনিকের একটি বিশেষ ভূমিকাতো রয়েছে। ফরমায়েশি আর চেনামুখের বৃত্ত থেকে সরে দাঁড়ানোর সদিচ্ছাটাই দৈনিকের পাতার সাহিত্যপাতাকে রক্ষা করতে পারে।
আমাদের রয়েছে বেশকিছু বিচিত্রা-ম্যাগাজিন সাইজের সাহিত্যকাগজ। যা মাসিক-দ্বিমাসিক-ত্রৈমাসিকরূপে প্রকাশিত। ‘কালি ও কলম’, ‘নতুন ধারা’, ‘ফেরারি’, ‘সাহিত্য বাজার’ ‘সাপ্তাহিক’, ইত্যাদি উদাহরণ হিসেবে আসতে পারে। ‘কালি ও কলমে’র সামগ্রিক আয়োজনকে ইতিবাচক করে দেখাই শ্রেয় তাতে একটা নির্মোহ পরিকল্পনার ছাপ আছে। একইসঙ্গে বিশেষ সংখ্যা ও সাধারণ অংশও সাহিত্যের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত মনে হয়। অমুক গোষ্ঠীর অমুকের লেখা যত ভালোই হোক তা ছাপবো না অথবা অমুকের নাম দেখে খারাপ লেখাটাও ছাপতে হবে এমন ব্যাকরণ ‘কালি ও কলমে’ আছে বলে এখন পর্যন্ত জোর দিয়ে বলা যায় না। তবে সংখ্যা থেকে সংখ্যায় উতরানোর যে ব্যাপারটা ‘কালি ও কলমে’ দীর্ঘদিন লক্ষ করি সম্প্রতি তাতে একটু শৈথিল্য বোধ করি। হয়তো সেটা সাময়িক। ‘কালি ও কলম’ বিষয়টাকে ইতিবাচক করে দেখলে সাহিত্যের কাগজরূপে তার থেকে পাঠক মুখ ফেরাবেন না হয়তো। ‘নতুনধারা’র ভিন্নগদ্য আয়োজন সাধুবাদ পাবার দাবি করতে পারে। একটি বিশেষ মেজাজ আছে নতুনধারার। এখন পর্যন্ত প্রতিটি সংখ্যা সংগ্রহের মতো। এ কাগজটির আয়ু নিয়ে পাঠকের শঙ্কা আছে। ‘সাহিত্য বাজার’ বোধ করি একটি স্বতন্ত্র প্লাটফরম নির্মাণ করতে চায়। জেলাভিত্তিক সাহিত্যের হাল-হকিকত ব্যাপারটি তাতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ; ভাবনাটির পুষ্ট পরিচর্যা হলে এই একটিমাত্র দিক বিবেচনাতেও সাহিত্যবাজার একটি স্বতন্ত্রসরণি নির্মাণ করতে পারে। ‘সাপ্তাহিক’ নামের পত্রিকাটি সাহিত্যকাগজ নয়, তবুও উৎসবসংখ্যায় সাহিত্যের সমাহারটুকু বেশ সমৃদ্ধ। ‘ফেরারি’ চেহারাসুরতে মাশাল্লাহ, ঘোষণা-চিন্তা ভালো কিন্তু বাস্তবায়ন এখন পর্যন্ত প্রমাণিত হয় না। সর্বোপরি এ জাতীয় কাগজগুলোতে এক্সপেরিমেন্টাল ব্যাপারটির যথেষ্ট ঘাটতি। সাহিত্যের জন্য করবার জায়গারূপে এ কাগজগুলো খুবই গুরুত্ব বহন করতে পারে।
নানা বিদ্যায়তনে কিংবা সংগঠনে বিশেষ বিশেষ দিনে এক ধরনের ফোল্ডার কাগজের সাহিত্যচর্চাও আমাদের চোখে পড়বে। মোটেও তা উড়িয়ে দেবার মতো নয়। ফোল্ডারের মধ্য দিয়ে লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনাময় মুখগুলো বেরিয়ে আসে; আগামীর লেখক তাতে উৎসাহ পায়, নিজের ভেতরের আগুনে বারুদ ঘষে আলো জ্বালায়, সোনার কাঠি-রূপোর কাঠি ছুয়ে বাস্তব-স্বপ্ন-কল্পনার ভুবনচারি হয়, অতঃপর সে খুঁজে নেয় একটি লিটল ম্যাগাজিনÑশিল্পসাহিত্যের ছোটকাগজ, বিচিত্রা কিংবা দৈনিক। আজকের প্রেস প্রকাশনার আশির্বাদে একটি মলাটবন্দি ছোটকাগজ বের করা অনেকটাই সহজ। সেই ক্ষণেও ফোল্ডার কাগজ কী কাজ করে? ভাববার বিষয়। একজন লেখকের লেখক হয়ে উঠবার, পাঠকের দৃষ্টিতে পড়বার প্রাথমিক সূত্র-সন্ধানতো ফোল্ডারই দেয়। ফোল্ডার আছে বুনিয়াদী ভাবনায়।
আদতে কেমন হওয়া উচিত শিল্প-সাহিত্যের কাগজ? সম্পাদক কে বা কারা? লিখিয়ে কারা? পাঠকই বা কারা? চূড়ান্ত সত্য হলো সাহিত্যের কাগজে এ তিনকেই হতে হয় কমিটেড। স্বতন্ত্র চিন্তার অনুরণনে শব্দশ্রমিক। তাদের দায় শিল্প-সাহিত্যের প্রতি। সম্পাদক অন্বেষণ করবেন নতুন লিখিয়ের। প্রয়োজনে বিষয় নির্ধারণ করে দিয়ে সংগ্রহ করবেন সৃজনী গদ্য-কবিতা অথবা আরো কিছু। লিখিয়েগণ প্রচলায়ন ভাঙায় হবেন সদা-তৎপর। পাঠক নিশ্চিতরূপে খুঁতখুঁতে, উকুন বাছার মতো পাঠোত্তর অভিব্যক্তিতে হবেন সজাগ। কেননা সাহিত্যের কাগজ লাখকপি ছাপা হয় না, ছাপা হয় সীমিত। ফলত পাঠকসংখ্যাও সুনির্ধারিত-সীমিত একান্ত গরজে যারা ভীড় করে আজিজে, ম্যাগাজিন কর্ণারে-বিষ্যুদবার-শুক্কুরবারের দৈনিকে-একুশের বইমেলায়। মনে হয় সাহিত্যের কাগজের একটি কমন মেজাজ থাকা উচিত। এতদ্প্রয়োজনে দুটি কাগজের ঘোষণা লক্ষ করা যেতে পারে, প্রথমটি ‘কণ্ঠস্বর’ আর দ্বিতীয়টি ‘চিহ্ন’ থেকে নেয়া।
১.
এটি তাদের পত্রিকা
যারা সাহিত্যের ঘনি ‘প্রেমিক, যারা শিল্পে উন্মোচিত, সৎ, অকপট, রক্তাক্ত, শব্দতাড়িত, যন্ত্রণাকাতর, যারা উন্মাদ, অপচয়ী, বিকারগ্রস্ত, অসন্তুষ্ট, বিবরবাসী, যারা তরুণ, প্রতিভাবান, অপ্রতিষ্ঠিত, শ্রদ্ধাশীল, অনুপ্রাণিত, যারা পঙ্গু, অহঙ্কারী, যৌনতাপুষ্ট।
এ পত্রিকায় অনাহূত
প্রবীণ মোড়ল, নবীন অধ্যাপক, পেশাদার লেখক, মুর্খ সাংবাদিক, পবিত্র সাহিত্যিক এবং গৃহপালিত সমালোচক।
২.
এসো লিখিয়ে সব লেখায় লেখায় ভাঙি মগজের কারফিউ…
আর বিশ্বাসী, পবিত্র, শ্ল¬ীল, শৃঙ্খলিত, প্রাতিষ্ঠানিক, গোষ্ঠীকেন্দ্রিক, সাম্প্রদায়িক, অবরুদ্ধ, যৌনকাতর, যৌনবিদ্বেষী, ধার্মিক, আবেগী, নিরাবেগী এইসব আমরা নই…
তো আপনি কি আমাদেরই একজন…
আমাদের বোধ ও বিধিতে উপর্যুক্ত আবাহন সহায়ক বিবেচনায় নিলে শিল্প-সাহিত্যচর্চা প্রশ্নমুক্ত হতে পারে। কেননা মগজ শানানো নতুন লিখিয়ের পরিচর্যাতো সাহিত্যের কাগজই করবে। একজন লেখক নিজে প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠবার পূর্ব পর্যন্ত সাহিত্যের কাগজে আর প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠবার পর তার ভূগোল বদলে যাবে, গ্রন্থে বা বিশেষ সংখ্যায়-ক্রোড়পত্রে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের সাহিত্যে ‘ধর্মের চেয়ে আগাছা বেশি, শস্যের চেয়ে টুপি বেশি’ বহুল প্রচলিত, পরিচিত এবং বিশ্বাস্যও। আমাদের এ্যতো এ্যাতো কাগজের ভীড়ে সাহিত্যের আদর্শিক জায়গাটা কোথায়? এটাই এ সময়ের সবচে’ বড় প্রশ্ন?
লেখক : রহমান রাজু, সম্পাদক, চিহ্ন, রাজশাহী
আমি এই সাহিত্য বাজারে লেখা প্রকাশ করতে আগ্রহী।
তাহলে আমাকে কি করতে হবে প্লিজ বলবেন।