বসিকে খোকন সেরনিয়াবাত এর জয়ের একবছর : জোয়ার এসেছে খালে: হাসতে শিখেছে মানুষ
বিশেষ প্রতিবেদক
‘
নতুন বরিশাল গড়ার অঙ্গিকার
জয় হোক শেখ হাসিনার’ এই প্রত্যয় নিয়ে বরিশালের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেছেন, আমাকে কাজ করতে দেন, আগামী ৪ বছরের মধ্যে এই বরিশাল প্রকৃত রূপসী বাংলায় পরিনত হবে।
১২ জুন বুধবার নির্বাচনে জয়ী হবার একবছর পূর্তি উপলক্ষ্যে কাউন্সিলের শুভেচ্ছা গ্রহণকালে মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত আরো বলেন, নগরীর কাউন্সিলররা হচ্ছেন আমার হাত। আপনারা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলে জনগণ আমাদের উপর আস্থাশীল হবেন।
মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর জয়ী হবার পরপরই বরিশালে চিত্র বদলে যেতে শুরু করে। ১৪ নভেম্বর ২০২৩ আনুষ্ঠানিক ভাবে বরিশাল সিটি করপোরেশন বসিকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। দায়িত্ব গ্রহণের আগেই তিনি খাল পুনরুদ্ধার ও নগরীর ড্রেনগুলো আধুনকায়নের জন্য ৭৯৭ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে এনেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে । এই প্রকল্পের মধ্যে ২৬৮ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ এই মুহূর্তে চলমান রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ২৫০ কিলোমিটার রাস্তার কার্পেটিং, ৪৩ কিলোমিটার আরসিসি রাস্তা, ৫০ কিলোমিটার সিসি রাস্তা, ১০০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মান, ৯০৪৫ বর্গমিটার আরসিসি চত্বর, নগরের ২১টি রাস্তার মোড়ের সৌন্দর্য বর্ধন, নগরীতে ৪টি ভাস্কর্য নির্মাণ ও নির্মাণ সহায়ক যানবাহন ক্রয়।
এছাড়াও সাড়ে ৩৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দিয়েছেন তিনি যা এই মুহূর্তে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এরমধ্যে আছে ৯২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর খাল খনন ও খালের দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মানসহ নান্দনিক সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ। একই সাথে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ২২শ কোটি টাকার আরো একটি সনন্বিত প্রকল্প। এরমধ্যে রয়েছে ফুটওভার ব্রিজসহ নগরীর রাস্তা, ড্রেন বিদ্যুৎ খাল ও পানি সরবরাহের অত্যাধুনিককরনের কাজ। এছাড়া অন্য একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করা হবে নতুন নান্দনিক অত্যাধুনিক নগরভবন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
গত এক বছরে নগরীতে ৮ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে, সাড়ে তিন কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে, দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাগরদি খালের দুপাড়ে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হয়েছে। এছাড়া বিশেষ প্রকল্পের আওতায় নগরীর ড্রেন থেকে আবর্জনা অপসারণসহ ড্রেনের উপর পকেট স্লাব নির্মাণ করা হয়েছে। যা দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতিমধ্যে সুফল দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত। উন্নয়ন সহায়তা কর্মসুচীর অংশ হিসেবে শীতের সময় কয়েক হাজার শীতার্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে এবং ঘুর্নিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ঈদগাঁ সংস্কার, মশক নিধন, পার্ক ডেকরেশনসহ সার্বিক কার্যক্রম করা হয়েছে। সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন হলো নিয়মিত সিটি করপোরেশন (বসিক) পরিষদের সভা করা হচ্ছে, কাউন্সিলরদের ক্ষমতায়ন করা হয়েছে এবং উন্নয়ন কার্যক্রমের ওয়ার্ড ওয়ারি কাজের সমবন্টণ করা হয়েছে। যা নিয়ে খুশি নগরীর ৩০ ওয়ার্ডের ৪০ জন কাউন্সিলর।
গতবছর ১২ জুনের এইদিনে বরিশাল মহানগরীর ভাগ্যের এই পরিবর্তন ঘটেছিল। একজন অপরিচিত প্রায় মানুষ, যিনি রাজনীতি থেকে সবসময় দূরে সরে থাকতে পছন্দ করতেন, তাকেই বরিশালবাসী নগরপিতা নির্বাচিত করে উল্লাসে মাতোয়ারা হয়েছিলো। নাম তার আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এর ছোট ছেলে। নিভৃতচারী, মৃদুভাষী একজন সাদামাটা মানুষ। বরিশালে যখন যোগ্য নেতৃত্বের সংকট চরমে। ঠিক তখন ২০২২ সালের ১৫ আগষ্টকে ঘীরে এই মানুষটি আলোচনায় এলেন প্রথম। আগষ্টের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী এই মানুষটি নিজেও পায়ে গুলি খেয়ে অল্পের জন্যে বেঁচে গেছেন এবং বাঁচিয়েছেন ভাতিজা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকেও। গণমাধ্যমের কল্যাণে এই সংবাদ মূহুর্তে পৌঁছে গিয়েছিল ৫৮ বর্গমাইল বরিশাল নগরীর প্রায় ৫ লাখ মানুষের কাছে। একইসাথে বিষয়টিতে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথও খুঁজে পেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। কেননা তখনকার সময়ে বরিশালের মেয়র এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বে একটা চরম সংকট তার চোখেও ধরা পরেছিলো হয়তো। একেতো বরিশাল ৫ আসনের সংসদ সদস্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল অবঃ জাহিদ ফারুক শামীম এবং জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের মধ্যে চলছিল একটা টানটান দ্বন্দ্ব উত্তেজনা। তারউপর ঐ সময়ের মেয়রের কাজকর্মে নগরবাসীসহ প্রশাসনও রীতিমতো বিরক্ত। বরিশালে নেতৃত্ব সংকট দূর করতেই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ২০২৩ সালের জানুয়ারী থেকেই পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সাথে খোকন সেরনিয়াবাত আলোচনায় আসতে থাকেন। নৌকার মনোনয়ন নিশ্চিত হতেই চারিদিকে শ্লোগান ওঠে শামীম- খোকন দুই ভাই, বরিশালে আর সমস্যা নাই। নতুন বরিশাল গড়ার অঙ্গিকার, জয় হোক শেখ হাসিনার। এসময় আরো একটি নাম উচ্চারণ হয় বরিশালের ঘরে ঘরে। তিনি খোকন সেরনিয়াবাত এর সহধর্মিণী লুনা আব্দুল্লাহ। বরিশাল মহানগরীর মহিলাদের কাছে প্রিয় নাম লুনা ভাবী সহজেই হয়ে ওঠেন সকলের আপন। জাহিদ ফারুক ও খোকন সেরনিয়াবাত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পাশাপাশি লুনা আব্দুল্লাহ এর অক্লান্ত পরিশ্রমে ২০২৩ সালের ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন বসিক নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। উৎসব আর উল্লাসে নগরবাসী তাকে বরণ করে নেন। মেয়র নির্বাচিত হবার পূর্বে নগরবাসীকে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলেন খোকন সেরনিয়াবাত। সেখানে আধুনিক বরিশাল গড়ার লক্ষ্যে খাল পুনরুদ্ধারসহ ৩৫ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বরাদ্দও চলে আসে তিনি জয়ী হওয়া মাত্রই। যার প্রমাণ পুরোপুরি চাক্ষুস এখন বরিশাল নগরীতে। নগরীর সাতটি খাল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা শুরু হয়েছে, ইতিমধ্যেই জোয়ারভাটার পানিতে দূর হয়েছে জলাবদ্ধতা ও নোংরা আবর্জনা। বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের মানুষ গত ২২ বছর ধরে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার করছিলেন।গণমাধ্যমে এ সংবাদ দেখেই সেখানে ছুটে যান মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত। স্বচক্ষে দেখেন নগরীর মাতাসার এবং পুরানপাড়ার অবস্থা। বাসিন্দারা পানি সংকটে তখন স্থানীয় মসজিদ কিংবা যে বাড়িতে টিউবওয়েলসহ পাম্প বসানো আছে সেখানে পানির জন্য ধরনা দিচ্ছিলেন। অপেক্ষা করছেন দীর্ঘ লাইনে। মেয়রকে দেখে ছুটে আসেন তারা।মাতাসার এবং পুরানপাড়ার বাসিন্দারা জানান, বরিশাল সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত মেয়র এবং ভারপ্রাপ্ত মেয়রসহ ছয়জন দায়িত্ব পালন করেছেন। এভাবে ২২ বছর কেটে গেছে। কেউ একটু খোঁজও নেয়নি তাদের। এই প্রথম কোনো মেয়র তাদের কষ্ট দেখতে ছুটে এসেছেন এতেই খুশি আমরা বলে জানালেন বাসিন্দারা।
বাসিন্দাদের এই দৌড়ঝাঁপের কষ্ট ও কথা শুনে কেঁদে ফেললেন মেয়র খোকন নিজেও। বললেন, আমি যতদিন বেঁচে আছি এবং মেয়র আছি ততদিন আর আপনাদের এভাবে দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না। মেয়রের নির্দেশে তৎক্ষনাৎ ঐ এলাকায় নিয়মিত দুটো পানির ট্রাক ও দুটো টিউবওয়েল বসানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে মাতাসার ও পুরানপাড়া এলাকায়। এদিকে আবার ঢাকা থেকে প্রকৌশলী এনে বসিয়ে রেখেছেন নগরভবনে। দুটি বাস টার্মিনালের আধুনিকায়ন এবং নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য কাজ করবেন এই প্রকৌশলীরা। মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত বললেন, আমি আমার দেয়া প্রতিটি প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ঘটাবো। আমাকে সময় দেন ও প্রশ্ন না তুলে কাজ করতে দেন। ধীরে ধীরে বদলে যাবে এই বরিশাল। বাণিজ্যিক বরিশাল হবে বিশ্বের অনন্য উদাহরণ। আগামী চার বছরের মধ্যে এই বরিশাল প্রকৃত রূপসী বাংলায় পরিনত হবে বলে জানান খোকন সেরনিয়াবাত।