বরিশাল সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী তালুকদার হাট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ বিষয়ের তালবাহানার সংক্রান্ত অভিযোগ গুলো বিভিন্ন দৈনিক ও সংবাদ পোর্টালে পড়ে, এলাকার ছোটভাই-বোন ও সন্তান-সমদের শিক্ষার ভবিষ্যত বিষয়ে আতঙ্কিত হয়েই এ প্রতিবেদনটি লিখতে বাধ্য হলাম। একইসাথে কতিপয় অসৎ অসাধু সংবাদকর্মীর আচরণেরও তীব্র প্রতিবাদ জানালাম এ লেখনীতে। যারা সত্য না জেনে শুধু উৎকোচের লোভে যাকে ইচ্ছে তাকে সরকারের রোষাণলে ফেলার জন্য জামায়াত শিবিরের কর্মী বানিয়ে দিচ্ছেন। তারা ভুলে যাচ্ছেন যে, এতে করে শুধু একজন শিক্ষক না, বরং বাংলাদেশের সব শিক্ষকের অপমান করছেন তারা। নিয়োগ বিষয়ে কোনো শিক্ষকের অযোগ্যতা প্রমাণ পেলে ঐ শিক্ষক বাতিল হবেন, নিয়োগ কমিটিই তা করবেন। তাই বলে একজনকে অযোগ্য প্রমাণ করতে জামায়াত শিবির কর্মী কেন বানাচ্ছেন? তার বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ খুঁজে পাওয়া যায়নি এটাই তার প্রমাণ। আর যদি জামায়াত শিবির কর্মি নিয়োগের অভিযোগ করলেনই তাহলে, ঐ এলাকার চেয়ারম্যানতো জামায়ত শিবিরের প্রতক্ষ্র্যকর্মী ও আমীর, তাকে কি করে নির্বাচিত করেছে ঐ এলাকার মানুষ? এ প্রশ্নটি কেন আগে তুললেন না? তারমানে ডালের ভিতর কিছু সমস্যা আছে?
ঐ এলাকার আওয়ামী লীগের নেতা ইউসুফ সিকদার (সাবেক ইউপি সদস্য), কালাম খা সহ এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি টুনু তালুকদার, হারুন খা, দুলাল খা (এরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো ভাবে আমার নিকট আত্মীয়) প্রমূখ স্থানীয় নেতা উপস্থিত থাকা সত্তেও, একদল বিপক্ষ লোক নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা মোহাম্মাদ আমানকে জয়যুক্ত করিয়েছেন। আমান সাহেব জয়ী হবার পর জানা গেছে, তিনি জামায়াত ইসলামের সদস্য ও আমীর। এটা করে তালুকদার হাট বাসীরা আমাকেই চমকে দিয়েছিলেন। পরে জেনেছি, তারা এটা করেছেন, ভালো ও সৎ একজন মানুষকে চেয়ারম্যান হিসাবে চেয়েছেন বলে। আধুনিক মনমানসিকতায় পবিত্র কোরআন অনুবাদ বা তরজমা অনুসরণ করেই নাকি বর্তমান চেয়ারম্যান আমানের দিনযাপন। তাদের মুখে, এমন কি এলাকার শ্রদ্ধেয় বড় ভাইদের, চাচাদের অনেকের মুখে চেয়ারম্যান আমানের প্রশংসা শুনে বিস্মিত ও হতবাক হয়েছি। দলীয় স্বার্থ নয়, এখানে দেশের অর্থাৎ চাঁনপুরা ইউনিয়নের স্বার্থকে বড় করে দেখেছেন তারা। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চেয়ারম্যান আমান যতটা না জামায়াতে ইসলাম সদস্য তার চেয়ে অনেক বেশি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং তার এলাকার প্রতি দায়িত্ব জ্ঞান প্রচণ্ড সততানিষ্ঠ।
অভিযোগগুলো
অভিযোগ উঠেছে কলেজের সভাপতি ও সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে জামায়াত পন্থি এক ব্যক্তিকে এ পদে বসাতে তোরজোড় শুরু করেছেন তারা।
অভিযোগ উঠেছে, এ কলেজের অধ্যক্ষ অবসরে যাওয়ার পর নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। ইতোমধ্যে ২৫টি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জের ভৈরব হাজী আছমত আলী কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল মোঃ জাকির হোসাইনকে তালুকদার হাট স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি আব্দুল হালিম তালুকদার ও সাবেক সভাপতি খালেক চাপরাসী অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য তোরজোর শুরু করেছে। তবে অধ্যাপক জাকির হোসাইন জামায়াত ইসলামীর সক্রীয় কর্মী। যুদ্ধাপরাধী ব্যক্তিদের পক্ষে মিছিল-মিটিং করায় কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে বহিস্কার করেছে।
অভিযোগগুলোর উত্তর
সংবাদকর্মী বা প্রতিবেদকের কাছে প্রশ্ন শুধু জাকির হোসাইন সম্পর্কে এতো তথ্য পেলেন ও তা প্রকাশ করলেন? আর ২৫জন কি দোষ করল ভাই? নিয়োগ বিষয়েতো এখনো চুড়ান্ত কিছুই হয়নি, তাহলে আপনারাই ঘোষণা করে দিলেন যে জাকির হোসাইনের সমতুল্য যোগ্যতা ওখানে আর কারোরই নেই? এবং এটাই চূড়ান্ত সত্য। যে কারণে তাকে প্রতিহত করতেই এতো ষড়যন্ত্রের জ্বাল বিস্তার করতে বরিশালের কতিপয় সংবাদকর্মীরাও সাহায্য করছেন?
আপনারা যাকে জামায়াত শিবির সদস্য বলছেন, তিনি আমার আপন চাচা। প্রচন্ড সৎ মানুষ বলে তাকে নিয়ে গর্ব আমাদের সবার। এমনকি সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফরিদুল আলম জাহাঙ্গীর (তিনি জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাদের একজন) তিনি সয়ং আজ থেকে তিন বছর আগে আমাকে দিয়ে জাকির হোসাইনের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব গ্রহনের জন্য। কারণ জাকির হোসাইন তারই প্রত্যক্ষ ছাত্র ও একইবাড়ির সুত্রে আত্মীয়দের একজন, যেমনটি আমিও তার ভাইদের একজন।
ঐ যে তালুকদার হাট স্কুল ও কলেজের কথা আপনারা বলছেন, ঐ হাট বা বাজার এবং স্কুল ও কলেজের জমি জমাসংক্রান্ত মাঠ পসড়া/এসআর ঘেটে দেখুন ১৯৮৬ সময় পর্যন্ত আমাদের বংশীয় পৈত্বিক সম্পত্তি ছিল ঐসব। আমাদেরই বড়ভাই প্রয়াত শামসুল আলম তালুকদার বাবা চাচাদের সহযোগিতায় এ বিদ্যাপীঠটি তৈরি করেন সেই ১৯৭০ সালে এবং ১৯৭২ সালে এটি পূর্ণাঙ্গ উচ্চবিদ্যালয় হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। সকলের শ্রদ্ধেয় আনিস তালুকদার এর প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সারোয়ার আলম মন্টু, নাসির তালুকদার, ফরিদুর আলম জাহাঙ্গীর তালুকদার ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের প্রচেষ্টায়
এটি কলেজে পরিণত হলে আমাদের ঐ ভাইয়েরা এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন বলেই এ প্রতিষ্ঠানটি রাজনৈতিক কোন্দলমুক্ত একটি সুশিক্ষালয় হয়ে বরিশাল তথা বাংলাদেশের সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। আমার চাচা অধ্যপক জাকির হোসাইন আহঞ্জী একজন সৎ ও নীতিবাণ শিক্ষক বলেই তিনি হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজী বিভাগের প্রধান ছিলেন এবং বর্তমানেও নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে জামায়াত শিবির কর্মী বানিয়ে বরিশালের কতিপয় সাঙবাদিক বন্ধুরা মুলত আমাকেই অপমান করলেন। কাকের মাংস কাক খায় না, অথচ এখানে উল্টোই হলো, আপনাদের অজ্ঞতা বা অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তৈরি সংবাদটি কাকের মাংসেই কামড়ে দিলো কাকে।
এটা আমাদের গর্ব যে, বিভিন্ন অন্তঃদ্বন্ধ, কলহ থাকা সত্বেও ঐ তালুকদার হাটের তালুকাদর বাড়ি বা আহঞ্জী বাড়ীর প্রতিটি মানুষকে এলাকাবাসী ভালোবাসেন, বিশেষ করে আমাকে ও আমার বাবা চাচাদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ভালবাসা অফুরন্ত বলেই আজ আমার চাচার নিয়োগ আটকাতে এতো ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলাদেশ সরকার ও তার প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ খুব ভালো করে জানেন, আমরা জামায়াত শিবির না কি মুক্তচিন্তা ও ন্যায় নিষ্ঠতার পক্ষে?
আমরা সবসময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এতে জড়িত ছিলাম, আছি ও থাকবো। তিন তিনজন মুক্তিযোদ্ধার গর্বিত অংশিদার আমরা।
মোঃ জাকির হোসাইন (যিনি হাজী স্যার নামেই এলাকায় পরিচিত) তিনি তালুকদার হাট স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ বিষয়ে
আবেদন করবেন কিনা? করলে এলাকাবাসীর উপকার হবে না ক্ষতি হবে? তা আবেদন করার আগেই স্পষ্ট করেছিলেন ঐ এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা। আমি নিজেই সরাসরি এ বিষয়ে কথা বলেছি। কারণ চাইনি এ নিয়ে পরবর্তীতে কোনোরকম কথা উঠুক। তাই আমার এ প্রশ্নের উত্তরে ইউসুফ মেম্বর(সাবেক), কালাম খা ও দুলাল খা, টুনু তালুকদার, জব্বার স্যার, মসজিদের ঈমাম মোখলেসুর রহমান, ঈদ্রিস সিকদার, জিন্নাত আলী তালুকদারসহ তালুকদার বাজার ও আশেপাশের বাড়ির প্রত্যেকেই একবাক্যে তাকে সৎ মানুষ ও সু শিক্ষক উপাধী দিলেন, এবং
বললেন জাকির তো আমাদের ভাই, জীবনে কোথাও তার কোনো রাজনৈতিক খারাপ রেকর্ড নেই। সে যদি এলাকায় আসে তাহলে আমাদের সন্তানরা ভালো ও নীতিবান একজন শিক্ষক পাবে। কলেজ কমিটিতে কিছু দূনির্তীবাজ আছে, যাদের কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই, অথচ ক্ষমতা বলে কমিটির সদস্য হয়ে সাবেক সভাপতি, অধ্যক্ষকেও অপমান করেছে। জাকির হোসাইন এ কলেজে নিয়োগ পেলে এটা চরম সত্যি যে কলেজটি ঐ সব দূর্নীতিবাজ মুক্ত হবে।
কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফরিদুল আলম জাহাঙ্গির ঐ সময় অনেকটা চিৎকার করেই বলেছিলেন, তোরা গ্রামে চলে আয়, জাকিরকে বল, এই কলেজের দায়িত্ব নিতে, আমি হাঁপিয়ে
উঠেছিরে ভাই। এ প্রতিষ্ঠানটি জন্মলগ্ন থেকে স্বাধীনতার চেতনায় পরিচালিত হয়ে আসছে। জাকির এলে মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী ব্যক্তির কর্ম ও দক্ষতায় এ পতিষ্ঠান পরিচালিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
এ ব্যাপারে নিয়োগ কমিটির সদস্য ও শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের প্রতিনিধি বরিশাল সরকারী বিএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর স.ম ইমানুল হাকিম জানান, ০২ মার্চ তারিখ এ নিয়োগ নিয়ে বসা হবে। এখনো কে কে আবেদন করেছেন। তাদের কার কি অতীত ইতিহাস এটা জানা যায়নি। অবশ্যই নিয়োগ কমিটির যাচাই বাছাই করে অধ্য নিয়োগের বিষয়ে কাজ করবে বলে তিনি জানান। তবে অধ্যাপক জাকির হোসাইনকে যারা জামায়াত শিবির বলে অভিযোগ করেছেন, তাদের অভিযোগ প্রমাণ না পেলে সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ আমি করবো।