প্রায় ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পটুয়াখালীর লেবুখালী এলাকায় পায়রা নদীর ওপর পায়রা সেতু ২৪ অক্টোবর যানবাহনের জন্যে খুলে দেওয়া হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এটি উদ্বোধন করবেন। ইতিমধ্যে সেতুর সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বসেছে টোলঘর ও টোল তালিকাও। আর এই টোল তালিকা নিয়ে বরিশাল ও পটুয়াখালী পরিবহন মালিক- শ্রমিক এবং যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেধেছে। অতিরিক্ত টোল তালিকা তৈরি করার অভিযোগ তাদের।
সরেজমিনে পায়রা সেতু পরিদর্শন করে দেখা যায়, এ সেতুটিতে টোল নির্ধারণ করে যে বিলবোর্ড টানানো হয়েছে। তা ফেরী ভাড়ার তুলনায় অনেক বেশি। যেখানে ফেরি পারাপারে ভারী ট্রাকের টোল ছিল ১০০ টাকা সেখানে পায়রা সেতুতে টোল নির্ধারিত হয়েছে সাড়ে ৭ গুণ বেশি ৭৫০ টাকা।
বড় বাসের ফেরি ভাড়া ছিল ৯৫ টাকা, সেতুতে তা নির্ধারিত হয়েছে ৩৪০ টাকা যা সাড়ে ৩ গুণ বেশি। মাইক্রোবাসের ৪০ টাকার ভাড়া হয়েছে ১৫০ টাকা যা পৌনে ৪ গুণ বেশি।
সেতুটিতে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী ট্রেইলার ভাড়া বা টোল ৯৪০ টাকা, হেভি ট্রাক ৭৫০ টাকা, মিডিয়াম ট্রাক ৩৭৫ টাকা, বড় বাস ৩৪০ টাকা, মিনিট্রাক ২৮০ টাকা, কৃষিকাজে ব্যবহৃত যান ২২৫ টাকা, মিনিবাস-কোস্টার ১৯০ টাকা, মাইক্রোবাস ১৫০ টাকা, ফোর হুইল চালিত যানবাহন ১৫০ টাকা, সেডান কার ৯৫ টাকা, ৩-৪ চাকার যান ৪০ টাকা, মোটরসাইকেল ২০ টাকা, রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, ঠেলাগাড়ি ১০ টাকা হারে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।
অথচ ওই সেতুর নিচে নদী পারাপারে ফেরি ভাড়া: ট্রেইলার ৩৭৫ টাকা, হেভি ট্রাক ১০০ টাকা, মিডিয়াম ট্রাক ৯৫ টাকা, বড় বাস ৯৫ টাকা, মিনিট্রাক ৯৫ টাকা, কৃষিকাজে ব্যবহৃত যান ৯০ টাকা, মিনিবাস-কোস্টার ৫০ টাকা, মাইক্রোবাস ৪০ টাকা, ফোর হুইল চালিত যানবাহন ৪০ টাকা, সেডান কার ২০ টাকা, ৩-৪ চাকার যান ১০ টাকা, মোটরসাইকেল ৫ টাকা, রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, ঠেলাগাড়ি ৫ টাকা।
সেতুটির টোল নির্ধারণ নিয়ে পরিবহন সেক্টরের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
পটুয়াখালী বাস মিনিবাস মালিক সমিতির রিয়াজ উদ্দিন মৃধা বলেন, ‘যদি টোল পুনর্নির্ধারণ করা না হয় সেক্ষেত্রে বরিশাল-পটুয়াখালী রুটের পরিবহন ব্যবসা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা আছে।’
‘বরিশাল-পটুয়াখালী রুটে যাত্রী প্রতি নির্ধারিত ভাড়া ৮০ টাকা’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘হয় ভাড়া বাড়ানো হোক নতুবা টোল কমানো হোক।’
যাত্রীবাহী বাসচালক মোঃ হোসেন বলেন, ‘এই ব্রিজে অনেক বেশি টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে ধার্য করা উচিত।’
এদিকে রুপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মানিক জানান, দুটোর একটাতো করতেই হবে। হয় যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে নয়তো ফেরীতে যে ভাড়া সেই একই ভাড়া টোল তালিকায় হতে হবে। তানা হলে পরিবহন বন্ধ থাকবে।
পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর কামরুল হাসান বলেন, ‘ফেরি ও সেতুর টোলের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। সড়ক পরিবহন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে টোল নির্ধারিত হয়ে থাকে। এতে আমাদের কোনো হাত নেই।’
২০১৬ সালের ২৪ জুলাই পায়রা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।
১ দশমিক ৪৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থ সেতুর উভয়পাড়ে প্রায় ৭ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক রয়েছে। নদী শাসনের কাজও সম্পূর্ণ শেষ শেষ হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধন অপেক্ষা।