- পটুয়াখালীতে বিভিন্ন সময়ে যে সকল সাহিত্যিক তাদের কাজের মধ্যে চিরভাস্মর হয়ে আছেন তাদের মধ্যে উনিশ শতকে পটুয়াখালীর মুরাদিয়ার মালেক উদ্দীন মুন্সী পুঁথি সাহিত্য রচনা করেন। তার রচিত গ্রন্থ মাত্র একখানা, তাজল আলম তবে গ্রন্থখানা অনন্য। এছাড়া আঠারো ও উনিশ শতকে গুনাই বিবি, হাসেম গাজীর পুঁথি প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করা হয়। এর লেখক পটুয়াখালী অ লের। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি। বি. ডি. হাবীবুল্লাহ বিশ শতকের লেখক। তার গ্রন্থাবলি সমাজকে ধাক্কা দেয়ার মতো। তার গ্রন্থাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শেরে বাংলা, যুগস্রষ্টা অশ্বিনী কুমার, এই কি প্রগতি, পল্লী মঙ্গল, ব্লাক মার্কেট, দুরমুজ কেতাব, কাব্যে সূরা আর-রহমান। অধ্যাপক সেকান্দার মোমতাজীর লেখা গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। একদিকে তার রয়েছে ধর্মীয় গ্রন্থাবলি অন্যদিকে সাহিত্য গ্রন্থ। তার গ্রন্থাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পটুয়াখালীর লোকসাহিত্য, বরিশালের ছড়া, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে মেরাজ, হযরত ইব্রাহীমের স্বপ্ন ইত্যাদি। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি সাহিত্যরতœ উপাধি লাভ করেন।
সিরাজুদ্দীন আহমদ বিশ শতকের শুরুর দিকের লেখক। জন্ম ইন্দ্রকুল গ্রামে, ১৮৯৭ সালে। পল্লী সংস্কার ও আদর্শ জাতি গঠন, হায়দারাবাদে দুই সপ্তাহ ও আত্মজীবনী তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। পটুয়াখালী থেকে প্রথম প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘পল্লীসেবা’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি। এ. এস. এম. আবদুর রব ১৯২৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন পটুয়াখালী শহরে। তার রচিত গ্রন্থাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য এ. কে. ফজলুল হক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বাকেরগঞ্জের নতুন ইতিহাস। মোশারফ হোসেন বিশ্বাস পটুয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৮ সালে। তিনি মূলত শিশু সাহিত্যিক। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে চীনদেশের রূপকথা, পংখীরাজের রাজকুমার ও নয়াচীন গড়লো যারা।
রতন লাল চন্দ্রবর্তীর জন্ম বাউফলে। তার রচিত বাংলাদেশের মন্দির গ্রন্থখানা খুবই সমাদৃত। আলী আসগর পটুয়াখালী জেলার দুমকীর অধিবাসী। নাটক ও উপন্যাস লেখক তিনি। তার লেখা ময়নামতি, পদ্ম কবরী ও দুটি পরিবার গ্রন্থ অন্যতম। খোন্দকার আব্দুল খালেক ভাষাসৈনিক ও সংগঠক। তার রচিত গ্রন্থাবলির মধ্যে একশতাব্দী, চিঠি (পত্র), জিনের বাদশা, দুই দাবাড়ে ও সেতু বাঁধার গান অন্যতম। রুহুল আমীন খান পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানার চৈতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার রচিত বিখ্যাত গ্রন্থাবলি হলো স্বর্ণঈগল, শরাবান তহুরা, হিজবুল্লার ডাক প্রভৃতি। দীর্ঘদিন তিনি দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। রঞ্জন দেবনাথের জন্ম পটুয়াখালীর মৌকরণে। তার রচিত গ্রন্থাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য গলি থেকে রাজপথ, সিঁদুর দিও না মুছে, পৃথিবী আমাকে চায়, একটি গোলাপের মৃত্যু প্রভৃতি।
মুহাম্মদ আখতার ফারুক প্রকৃতপক্ষেই একজন শক্তিশালী লেখক। পটুয়াখালীর বাউফলে তার জন্ম। তার রচিত গ্রন্থাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য খালিদ ইবনে ওয়ালিদ, মরণ মিছিল, আকবরের নবরতœ, আল মামুন, কিশোর এলো বীরের দেশে, ফুটলো গোলাপ ইষাণ দেশে, কুরআন ব্যাখ্যার মূলনীতি প্রভৃতি। তিনি সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। মুসলিম আলী আখন্দের জন্ম পটুয়াখালীতে। তার জংগে কাশ্মির, মণিমালা, গীতমালা, বিলম্বিত রজনী, তন্ত্রের বিবর্তন, বিজ্ঞানের আলো প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। সুফী মোতাহার হোসেনের জন্ম ফরিদপুরে হলেও তার আদি নিবাস পটুয়াখালীতে। ‘সনেট সংকলন’ই তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনা। এজন্য তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত হন।
রফিকুল্লাহ নেছারীর জন্ম পটুয়াখালীর সোনাখালী গ্রামে। ইসলামি ও আরবি ব্যাকরণমূলক বিভিন্ন পুস্তকের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আহালে সুন্নাত ওয়াল জামাত গ্রন্থখানা। তার রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ২০ খানা। আবু জাফর মোহাম্মদ ছালেহর জন্ম পটুয়াখালীর দুমকী থানায়। তিনি আলীয়া মাদরাসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাকরণ বিষয়ক একখানা অনন্য গ্রন্থ ‘হেদায়াতুল্লাহু’ রচনা করেছেন। মোক্তার আলী সরদার, তিনি আধুনিক বিচিত্রানুষ্ঠান, মজার কাহিনী, টুকটুকে লাল প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেছেন। গলাচিপার ফজলুর রহমানের লেখা সিরাজুদৌলা, রক্তস্নাত বাংলা ও পটুয়াখালীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রভৃতি। কুড়ি পাইকার এ. বি. নূরুল হকের লেখা ধর্মীয় গ্রন্থ ‘ইসলাম কি প্রায়শ্চিত্ত’ অবলম্বনে একখানা বই লিখেছেন লাউকাঠীর কাজী আব্দুল মতলেব।
আলহাজ মোঃ ঈসার লিখেছেন ‘ইসলামী চরিত্র’। বাউফলের সিতারা বেগম লিখেছেন ‘বিদ্রোহী কবি নজরুল’ নামে একটি বই। ইয়াকুর আলী-শিকদার লিখেছেন ‘ওয়াজেবদেব ইতিকথা’। তিনি সাহিত্য বিনোদ উপাধীতে ভূষিত হন। গুনাই বিবির কাহিনী অবলম্বেনে খাদেম আলী মৃধা লিখেছেন ‘গুনাই বিবি’ নামে একখানা নাটক। শিশু পর্যবেক্ষণ নামে একখানি গ্রন্থ রচনা করেছেন মুসলিম আলী আকন। বোয়ালতলীর এমরান আলীর লেখা ‘জেনারেল প্রপারটিজ অব ম্যাটার এন্ড মেকানিকস’। শামসুল হকের লেখা গ্রন্থ ‘এডমিনেষ্ট্রেটিভ রিফার্মস ইন পাকিস্তান’। কুড়িপাইকার এম মোজাম্মেল হক লিখেছেন চলার পথে, আলোর সংস্পর্শে ও সুখের আশায় প্রভৃতি গ্রন্থ। পাঁজাখালীর সিকদার আব্দুল রহমানের লেখা গ্রন্থের নাম ‘মঞ্জুরী’। নির্মল কুমার দাসগুপ্তের লেখা ‘প্রফুল্ল কমলে কীট’। ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে বরিশাল’ গ্রন্থ লিখেছেন হিরালাল দাসগুপ্ত। লোহালিয়ার শাহ মোহাম্মদ মতিউর রহমানের লেখা কাব্য ‘বীর জনতার কণ্ঠ’ এ.কে.এম. সরোয়ার লিখেছেন ‘মুক্তিযুদ্ধে নয় নম্বর সেক্টর’। এম. কেরামত আলীর লেখা গ্রন্থ ‘ঞযব সবংংধমব’। বনিয়াকাঠির মোঃ মতিউর রহমানের লেখা ‘বাতিলের সাথে মোরা লড়বোই’। ‘উদয়ের পথে’ গ্রন্থখানা লিখেছেন ভরিপশার ডা. মোঃ শামসুল হক। মেজবাউদ্দিন বাবলার এককগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘তাবাসসুম প্রচ্ছায়’ নৈসঙ্গে নীল কষ্ট’ প্রভৃতি। ফয়সাল আহমদ রিপনের লেখা গ্রন্থ আমাদের বসন্ত দিনে; একটি যুদ্ধ অন্যটি ভালবাসা প্রভৃতি। সৈয়দ গফুর ও দেবেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছেন প্রবন্ধ গ্রন্থ। মোঃ ইয়াকুব আলীর লেখা ‘দক্ষিণ ভাটির কৃষি সভ্যতা’। ‘স্বর্ণলতা’ নামক গ্রন্থ লিখেছেন নারায়ণ গঙ্গেপাধ্যায়। ‘তসলিমা নাসরীনের তথাকথিত নারী স্বাধীনতা ও সুইডেনের বেহায়াপনা’ গ্রন্থখানা লিখেছেন বাবুল সিরাজী।
পটুয়াখালীতে সংকলনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ‘সৈকতে জীবন কল্লোল’ জেলা পরিষদ কর্তৃক ১৯৮০ সালে প্রকাশিত হয়। এছাড়াও পটুয়াখালীতে মুজাহিদুল ইসলাম প্রিন্সের “বৃত্তের বাইরে”,মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস পটুয়াখালী জেলা,কুয়াশা মূর্খের“কাঠ কয়লার কবিতাসহ একাধীক লেখকের অসংখ্য গ্রন্থ বেরিয়েছে।##