কয়েকটি শোকার্ত পঙক্তি
[ প্রিয় কবি মুশাররাফ করিম মঞ্জুভাইয়ের বিদেহী আত্মার উদ্দেশ্যে]
কেউ এসে নিয়ে গেলো তাঁকে, তার করাল স্বভাবে
শরীরের সবটুকু নিলো, পরিচর্যায়
যতটুকু বেড়েছিলো মাটি ও জলের দানে
চুল, দাঁড়ি, ত্বকের নিখুঁত,
হৃদয়ের বাগে ফুটেওঠা অযুত গোলাপ
সবটুকু নিয়ে নিলো কি?
কতটুকু সাধ্য তার? জীবনের বিপুল বিভার
মূল ধরে ছিঁড়ে নেবে?
কিছু তাকে রেখে যেতে হয়, জীবনের ফুল
দিবস-রজনী কঠোর শ্রমের দামে
কিছু সে ফুটিয়েছিলো লাল নীল নানান রঙিন
সবুজ পাতার ঘ্রাণে মদির সুবাস
কিছু কাতরতা মায়া মোহ মমতার গাথা
কথার মোড়কে প্রলেপ মাখানো বিপুল কবিতা
কী এমন সাধ্য তার ছিঁড়ে নেবে জীবনের ধ্রুপদের তান?
কেউ এসে নিয়ে গেলো তাকে
তার ঝরা হলুদ পাতাকে
চিরকাল বাতাসে বাতাসে
জোনাকির আলোর আভাসে
রেখে গেলো আগুনের দোল
জীবনের রঙেমাখা বিভাসিত ভুল।
সুন্দরীর পুঁথি
সুন্দরী নাইওর যায় গাঙপাড় দিয়া।
খামোখা লিখছি খত কলম কাটিয়া।।
তালপাতা হিজিবিজি মুরগির ফড়ে।
সুন্দরী নাইওর যায় পামরের ঘরে।।
আহারে নগর নারী মাসকারা মেখে।
চোখেতে আগুন দাগো সুপুরুষ দেখে।।
জানো না তাহার আছে হাজার ছলনা।
জড়াও প্রেমের ফাঁদে নগর ললনা।
পামর ভ্রমর তার দারুণ গোমর।
বধূরে লইয়া হাঁটে ধরিয়া কোমর।।
মুখেতে তরল মধু ভিতরে গরল।
বধূরে জিনিয়া লয় জানিয়া সরল।।
একদিন নিয়া যায় বনবীথিকায়।
বলে ঘরে যত আছে সোনাদানা তায়।।
পরিয়া আসিও তুমি যাবো পালাইয়া।
তোমারে করিবো বিয়া কাজিরে ডাকিয়া।।
এইকথা শুনে বধূ খোসালিত মন।
স্যুটকেসে ভরে নেয় যত আছে ধন।।
মন ভরে প্রেম জ্বরে ভাষে গদগদ।
যেনোবা গেলাস ভরে পিয়ে আছে মদ।।
প্রেমিকের কথা সেতো মধুর সমান।
গহনা পরিয়া আজ করিবো প্রমাণ।।
বিবাহ করিয়া যাবো দূর বনবাস।
মিটাবো বাঁধিয়া ঘর মনে যতো আশ।।
তারপর নেমে এলো ঘনকালো রাত।
কোথায় প্রেমের ঢল ছলাৎ ছলাৎ।।
দয়িতের চোখ আজ বড়ো বেশি লাল।
সহসা নামিয়া আসে মরণের কাল।।
সুন্দরী নাইওর যায় সাদা থান পরে।
বাঁশের খাটিয়া থেকে হিমরং ঝরে।।
তালপাতা হিজিবিজি কবরের ঘরে
সুন্দরীর পুঁথিটি লিখি মুরগির ফড়ে।
দ্রোহ
তোমার রুদ্রহাতে যুদ্ধ সাজাও স্পার্টাকাস
কৃপাণ খোলো, ছিন্ন করো নীল আকাশ
রোমনগরীর কপাটগুলি গুঁড়িয়ে দাও
প্রাসাদ ভেঙে রক্ত ঢেলে নাও ভাসাও
বর্শাছোরায় অত্যাচারীর শির গাঁথো
অট্রহাসির ভয়াল সুরে মন মাতো,
পেট্রিসিয়ান এখনোতো চারদিকে
প্লেবিয়ানের মুণ্ড ঝোলায় লাল শিকে
নিরোর বাঁশি বাজছে দেখো, আগুন অই
পুড়ছে বেবাক শ্রমেগাঁথা প্রাচীন বই
এখনোতো নিরন্ন সব শ্রমদাস
হিস্যা তাদের গ্রাস করেছে অক্টোপাস
ফসল বুনে বছর শেষে শূন্য হাত
ভাগ্যে জোটে অন্ধকারের অঘুম রাত,
তোমার রুদ্রহাতে যুদ্ধ সাজাও স্পার্টাকাস
শোষণকারীর ডেরায় ছোঁড়ো মরণত্রাস
পাথর তোলো, চূর্ণ করো পাহাড়চূড়
ক্ষত্র্যবেশী বৈশ্যরাজের মানিক জোড়
ধুলোয় মেশাও সমান করো ভূমির ভাঁজ
নতুন করে জাগুক নতুন জীবনসাজ।