‘৯০ এ দুইনেত্রী যারে বিশ্ব বেহায়া উপধী দিছে, আইজ হেই হেরে লইয়াই তাগোর যত নাচন কোঁদন। তাইলে এরশাদ দোষটা করছিল কি? কওন দেহি ভাই। হেরে তোরা স্বৈরাচার কইয়া টাইনা হেঁচরাইয়া নামাইলি, তারপর মতা পাইয়া হের চেয়েও বেশি খারাপ কাজ তোরা করলি। তাইলে তোগোর চেয়ে এরশাদ খারাপ কোন খান দিয়া?’
কথাগুলো আমার নয়। হরতালের মাঝেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীসেবা নামক বাসে চড়ে বসা ধামরাইয়ের দুই বৃদ্ধ যাত্রীর। তাদের কথার সূত্র ধরেই বাসের ভিতর শুরু হয়েছে চলমান রাজনীতি আর এই হরতাল অবরোধের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্দার। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে ঘাঢ়তেড়া স্বৈরাচরী আর বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে মতালোভী আখ্যা দিয়ে যাত্রীদের ােভ ঝারার সে এক ভয়াবহ দৃশ্য। এ মূহুর্তে দুইনেত্রীর কোনো অনুচর যদি বাসে থেকে থাকেন আর তাদেও কানে যদি এসব বিষয় যায়, তাহলে নির্ঘাত বলা যায় তারা গলায় কলসি বাঁধবেন (যদি লজ্জা বলে কিছু তাদের অবশিষ্ট থাকে) ও দুর্গন্ধ-পচা বুড়িগঙ্গায়-ই ডুবে মরার চেষ্টা করবেন।
বাসটিতে যাত্রী খুবই কম। আসাদগেট থেকে তাদের সহযাত্রী হয়ে মিরপুর মাজার রোড পর্যন্ত তাদের বিতৃষ্ণার নিশ্চুপ সাী হলাম কিছুটা সময়। আমিন বাজারের যাত্রী শরাফত আলী একবার শুধু বাসের হেলপারের কাছে জানতে চাইলেন, ভাই তোর বাস সাভার বাজার পর্যন্ত যাবেতো?
চালকের আসন থেকে বাস চালক তখন জানালেন, ভাই হরতালটা হচ্ছে মানিকগঞ্জ পার হয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাটা দিয়ে একটু জোরে টানি এই যা।
টানা অবরোধ আর হরতালে এভাবেই নাভিশ্বাস চলছে সাধারণ মানুষের। তাদের অনেকের কাছেই এখন এই দুইনেত্রীর তুলনায় এরশাদ অনেক ভালো হয়ে গেছেন। শরাফত আলী বলেন, এরশাদ যদি উল্টাপাল্টা কথা না বইলা কাজের কাজ দেখায় তাইলে আগামি নির্বাচন যখনই হোক বেশির ভাগ ভোট সে একাই পাইবো। ৯১ থেইকাই দুইনেত্রীরেতো আমরা এই পর্যন্ত দেখলাম।
তাদের কথা ও চিন্তায় বাধা পরে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আচারণ প্রসঙ্গ এলে। নিজেরাই আবার তার জাবাব খোঁজেন নিজেদেও কথার ভিড়ে – আরে ভাই একটা মানুষ, প্রায় ৯০ বছর যার বয়স, হের পাছায় যদি সুইয়ের গুতা আর রাইফেলের নল ভইরা দেয়ার ভয় দেহায়- তাইলেতো এরকম হইবোই। তারতো এহন ছাইড়াদে মা কাইন্দা বাঁচি দশা।
হঠাৎই মনে হলো সাধারণ মানুষের মাঝে একটা জরিপ চালানো যাক সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে নিয়ে। যে ভাবা সেই কাজ। জাতীয় পার্টি ও এরশাদ সম্পর্কে তাদের চিন্তা কি জানতে টেকনিক্যাল মোড়ে বাস থেকে নেমে পুরোটা পথ হেঁটে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। পথে মিরপুর সরকারী বাংলা কলেজ, ডেল্টা হাসপাতাল, আনসার ক্যাম্প-এর একটি চা দোকান আর মিরপুর এক নম্বর মাজার রোডের কাঁচা বাজরে একটা জরিপ চালানোর চেষ্টা নেয়া হল। কৌশলে কথা বললাম প্রায় ২০ জনের সঙ্গে। এদের মধ্যে ছাত্র, চা দোকানদার, সাধারণ ক্রেতা, গৃহিনী ও কাঁচাবাজারের সবজী ব্যবসায়ী অন্যতম।
মাপ করবেন যদি একটা প্রশ্ন করি, এরশাদ সাহেব ও তার জাতীয় পার্টি কি এই দেশে আর জায়গা পাইবো? আপনার কি মনে হয়?
উত্তর দিতে রীতিমতো ভাবনায় পড়রেন ছাত্রদেও অনেকে। তাদের ভাবনায় এরশাদ সাহেব এখন মাইনকা চিপায় পড়েছেন। আওয়ামী লীগ ছাড়া তার আর গতি নেই। বিএনপি নির্বাচনে না এলে তিনিই বিরোধী দল হবেন, এটা নিশ্চিত।
অন্যদিকে চা দোকানদার, গৃহিনী ও সবজী বিক্রেতাদের মতে, ‘সব ভালো যার শেষ ভালো তার’। এরশাদ সাহেবেÍ শেষটা ভালো হতেই হবে। তাকে একটা সুযোগ এবার দেয়া উচিত। স্বৈরাচারতো সবাই। খালেদা জিয়া স্বৈরাচার হলেন বলেই না লগি বৈঠার আন্দোলন হইলো। এখন শেখ হাসিনা স্বৈরাচারী করছেন বই-লাই তো এই অবরোধ আর হরতালে আমাগোর পোয়া বারো। তয়, এরশাদ সাব কি দোষ করলেন? সবাইতো তিনবার কইরা মতায় আইলো গেলো। এরশাদই শুধু একবার আইছে। তারে আরো একবার চান্স দেয়া উচিত।
সাধারণ ক্রেতা যারা কিছুটা শিতি, তাদের চিন্তা-ভাবনায়ও এখন এরশাদ প্রভাব বিস্তার করছেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে যে সব মামলা রয়েছে, একইরকমের মামলাই রয়েছে দুইনেত্রীর বিরুদ্ধেও। তারা কেউ ধোয়া তুলসী পাতা না। তাহলে মামলার ভয় দেখানোটা বোকামী। অথচ জেনারেল এরশাদ এই ভয়ে এতো ভীত যে সে নিজের মাতায় গুলি করতেও রাজী তবুও জেলে যাবেন না। তার উচিত জেলে যাওয়া। সে জেলে বসেই শুনতে পাবে দেশজুড়ে তারই জয়ধ্বনি।
অপরাধ মা করবেন, হঠাৎ এরশাদ প্রেমিক হয়ে উঠেছি যারা ভাবছেন, তাদের জন্যে বলছি। চলমান এই সংকট মূহুর্তে, চড়া বাজার দর আর লাশের রাজ্যে বসে কি আর চুপ থাকা যায়, না উচিত? অনিশ্চিত যখন আগামীতে এটাই এখন উত্তম পথ, যে অচল মালটাকেই আসুন চালানোর চেষ্টা করি। তাকে সাহস আর শক্তি যোগাই যেন তিনি স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারেন। জাতীয় পার্টিও চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আপনি ধৈর্যশীল ও স্থির হউন, সত্য কখনো চাঁপা থাকে না। সেতো আপনার চেয়ে ভালো আর কে জানে?