তেলবাজারে তাক ধিনা ধিনঃ তেলের সাথে নুনটিও নিন
আরিফ আহমেদ
তেলবাজারে তাক ধিনা ধিনঃ তেলের সাথে নুনটিও নিন
“তাক ধিন তা ধিন
তেলের সাথ নুনও নিন
তা ধিন তা ধিন।।”
প্রায়শ ফুটপাতে দেখা ও শোনা যায়, একটা কিনলে একটা ফ্রী হকারদের ডাক চিৎকার। এবার ফুটপাত ছাড়িয়ে হকারদের এই কৌশল ভূয়সী স্থান দখল করেছে বহুজাতিক খ্যাতনামা শিল্প প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং পরিকল্পনায়। তেলের বাজার অস্থির করে তুলতে তারাও এখন একটার সাথ অন্যটি নিন দাবীতে আটকে দিয়েছেন খুচরা বিক্রেতাদের। তবে তা মোটেই ফ্রী নয় বরং অপ্রয়োজনীয় ও নষ্ট প্রায় পণ্য দ্বিগুণ দামে কিনতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ খুচরা বিক্রেতাদের।
বরিশালের পোর্ট রোডের মুদি ব্যবসায়ী সিদ্দিক বলেন, আজ দুইদিন কোনো তেল নেই দোকানে। কোম্পানির কোনো এজেন্টও রশিদ কাটতে আসেনা। তীর কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করলে তারা পাঁচ লিটার তেলের সাথে এক কেজি চা পাতা বাধ্যতামূলক কিনতে হবে বলে জানিয়েছেন। আর সিটি বলেছে সাথে সরিষার তেল কিনতেই হবে। একই অভিযোগ পাওয়া গেল নতুন বাজার, বাংলা বাজার ও সাগরদি বাজার ঘুরেও।
গত ২৪ এপ্রিল শনিবার বিশ্বে পাম অয়েলের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া তেল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই দেশের বাজারে লাগামহীনভাবে বাড়ছে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম। গত দুই দিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলে ১৫ থেকে ১৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
উল্লেখ্য, গত প্রায় দুই বছর ধরে সয়াবিন ও পাম অয়েলের বাজার চড়া। দেশের বাজারে দাম কমাতে সম্প্রতি ভোজ্য তেলের বিভিন্ন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমানো হয়। এতে দাম কিছুটা কমে। কিন্তু এখন আবার লাগামহীনভাবে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম। গত বৃহস্পতিবার ২৮ এপ্রিল
খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৫ থেকে ১৭২ টাকা ও খোলা পাম অয়েল ১৫৮ থেকে ১৬৩ টাকায় বিক্রি হয়। যা দুই দিন আগেও যথাক্রমে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা ও ১৪০ থেকে ১৪৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
যদিও সরকার খুচরা বাজারে বিক্রির জন্য প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৩৬ টাকা ও পাম অয়েল ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সরকারের বিপণন সংস্হা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে সয়াবিন তেল, পাম অয়েলের দাম বাড়ার বিষয়টি জানিয়েছে। সরকারের এ সংস্হাটির হিসেবে গত বছর এই সময় দেশে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১২০ থেকে ১২৩ টাকা ও খোলা পাম অয়েল ১০৬ থেকে ১১০ টাকা লিটারে বিক্রি হয়েছে। প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মাওলা বলেন, ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের বড় রপ্তানিকারক দেশ। তাই তাদের রপ্তানি বন্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে। সামনে দাম আরো বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা অফিস প্রধান মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা ভোজ্য তেলের বাজারে অভিযান পরিচালনা করবো। কেউ কারসাজি করে তেলের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্হা নেওয়া হবে। তেল নিয়ে কোনো ধরনের নৈরাজ্য মেনে নেওয়া হবে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে প্রতি বছর ২৪ লাখ টন ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ২০ লাখ টন খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়। বাকি ৪ লাখ টন ব্যবহূত হয় শিল্প খাতে। আর মোট চাহিদার ৬৭ শতাংশই পাম অয়েল দিয়ে মেটানো হয়। ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে দাম বাড়ছে পাম অয়েলের। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ ডলারে, যা এক বছর আগে ছিল ৯৬০ ডলার। আর এক বছর আগে প্রতি টন সয়াবিনের দাম ছিল ১ হাজার ১০ ডলার। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ ডলারে।
তবে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সি বলেছেন, মজুতদার ব্যবসায়ীদের থেকে হকাররা অনেক ভালো আচরণ করছে। হকাররা তবু একটার সাথে একটা ফ্রী দিচ্ছে। আমাদের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কেউ ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পা দেবেন না। আপনাদের কাছে টিসিবির গাড়ি পৌঁছে যাবে।