গত ২০ জুলাই বুধবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় ছিল তীরন্দাজ নাট্যদলের আলোচনা সভা ও প্রদর্শনী। ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ শীর্ষক নাটকের প্রদর্শনীর প্রয়োজনেই বিতর্কের বিষয় ছিল – সুন্দরবন ও রামপাল প্রসঙ্গ। আলোচক ছিলেন অধ্যাপক ড. আনু মোহাম্মদ।
অনুষ্ঠান শুরুর আগমূহুর্তে তীরন্দাজ দলের জন্য বরাদ্ধকৃত হলবুকিং বন্ধ করে দেন শিল্পকলা একাডেমির কর্তৃপক্ষ। তীরন্দাজ কর্তৃপক্ষ জানান যে শিল্পকলা কর্তৃপক্ষ আলোচনা প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে শুধু নাটকের প্রদর্শনী করতে বললে আমরা তা মানতে পারিনি বলেই আমাদের প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে : এই সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কণ্ঠ চেপে ধরার এ সংবাদটি আজ সকাল পর্যন্ত কোনো পত্রিকা বা টেলিভিশন চ্যানেলে প্রকাশ পায়নি এমনকি সাংস্কৃতিক বিবেক বলে খ্যাত সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন নেতৃবৃন্দও এ বিষয়ে কোনো কথা এখনও বলেন নি।
শুধু মাত্র আজন্ম অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান স্যার বললেন, “আমি বিষয়টি জানি না। জানলে সাথে সাথে প্রতিবাদ জানাতাম। এটা যদি ঘটে থাকে তবে তা মোটেই ভালো কথা নয়।”
তবে ফেসবুক জুড়ে প্রতিবাদ অব্যাহত রযেছে। তাই ফেসবুক থেকে কয়েকটি লেখা এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো।
নাটক প্রদর্শনীর পূর্বে দর্শকরা নাটক দেখতে এসে জানতে পারেন শিল্পকলা একাডেমী কর্তৃপক্ষ তীরন্দাজ এর নাটক প্রদর্শনী ও সুন্দরবন নিয়ে বাহাস অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন। এ বিষয়ে সাংস্কৃতিক কর্মী ব্রাত্য আমিন এর ফেসবুক স্ট্যাটাসটি এখানে কোড করা হল:
পুর্বের নির্ধারিত নাটক ও বাহাস দেখার জন্য দর্শকরা শিল্পকলা একাডেমীতে এসে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে হতবাক হয়ে গেছেন অনেকে। দর্শক হিসাবে নাটকটি দেখতে না পেরে অনলাইন এক্টিভিস্ট বাকি বিল্লাহ ফেসবুকে তার অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে তীরন্দাজ বাংলাদেশের নাট্যজগতে এক বিশেষ নাম। তীরন্দাজ, বটতলার মত নাটকের দলগুলো সমসাময়িক সময়কে ধারালো ছুরির ফলার মত প্রতিফলিত করছে মঞ্চে। তীরন্দাজের নতুন নাটক ‘কন্ঠনালীতে সূর্য’এর প্রদর্শনী ছিল আজ সন্ধ্যা ছয়টায়, শিল্পকলার মূল মিলনায়তনে। নাটকের আগে সুন্দরবনের বুকে রামপাল কয়লাবিদ্যুত প্রকল্প প্রসংগে বিতর্ক আহ্বান করেছিল তারা- কন্ঠনালীতে সূর্য নাটকের বিষয়বস্তুও এই প্রসংগ। বিতর্কে রামপাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকে ডেকেছিল তীরন্দাজ, প্রকল্পের পক্ষে কথা বলার জন্য অন্যদেরও আহবান জানিয়েছিল তারা। আর এ বিষয়ে বিতর্কের দূ:সাহস করার খেসারত দিতে হলো তাদের।
বিকেল পৌনে ছ’টার দিকে শিল্পকলা গিয়ে দেখি সাজ সাজ রব। প্রচুর পুলিশ,মূল ফটক বন্ধ করে রাখা হয়েছে। নাটকের টিকিট দেখে দেখে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। আমি কাউন্টারে তীরন্দাজের শো’এর টিকিটি কাটতে গিয়ে দেখি ওখানে কেউ নেই। আরো দুটি নাটকের শো ছিল,ওগুলির টিকিট বিক্রি হচ্ছে। দীপক সুমনকে ফোন দিয়ে শুনতে পেলাম- তাদের বুকিং বাতিল করে দেয়া হয়েছে। এই বোধবুদ্ধি নিয়ে শিল্পকলা চালান কর্তাব্যক্তিরা। সরকার বিব্রত হবেন বলে নাটকের শো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে- এর নাম শিল্প সংস্কৃতি চর্চা? কোথায় গিয়ে দাড়াচ্ছি আমরা? কথা বলতে দিতে এত ভয়?
তীরন্দাজের বন্ধুরা ছেড়ে কথা বলেননি। তাদের প্রতিবাদী স্পিরিটকে অভিনন্দন। কিন্তু অন্যরা কোথায় ছিলেন? অন্যান্য নাটকের দলগুলির কাছে প্রত্যাশা- আপনারা এই অন্যাায্য সিদ্ধান্তের প্রতিবদ করুন। তীরন্দাজের পাশে দাঁড়ান। অন্যথায় এইসব শিল্পচর্চা আর ভেড়া চরানোর মধ্যে পার্থক্য থাকে না।
সরকারের এই হীন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেক অনলাইন এক্টিভিস্ট সাইয়েদ ফয়েজ আহমেদ বলেন,
শিল্পকলা একাডেমীতে নাটক শুরু হবার আগে ভাষনে রামপাল নিয়ে কথা বলায় শো বন্ধ এবং আনু মোহাম্মদকে হেন্সথা। অবশ্য আনু মোহাম্মদ এর বক্তব্য এখন এমনিতেই মেইন্সট্রিম মিডিয়াতে আসে না।এই কাহিনীও আসবে না, হয়তো।
অনেক টাকা পয়সা খরচ করে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়াতে বৃটিশ কোম্পানী ভাড়া করা হয়েছে কিন্তু তাতে তো লাভ হয়ইনাই উলটা জার্মানিতে ডিরেক্ট কার্গো শিপমেন্ট বন্ধ। জার্মানি আমাদের জন্য অন্যতম বৃহত্তম বাজার। সেইখানে ডিরেক্ট শিপমেন্ট বন্ধ হইলে প্রভাব বেশ খারাপ হবে। এরপর হয়তো প্যাসেঞ্জার শিপমেন্ট ও বন্ধ করে দিবে কিনা কে জানে। এই কাহিনীও মিডিয়াতে আসবে না, হয়তো।
ফেসবুকে এইগুলা লেইখাও লাভ নাই, কিছুই হবে না, জাহান্নামের চৌরাস্তায় দাড়ায়ে আইয়ুব খান কানতে কানতে বলতেসে, তাবেদারী মিডিয়া আর ফেসবুক এই দুইটা জিনিস আমার আমলে থাকলে আমি মরার আগপর্যন্ত এই দেশের মানুষরে শাসন কইরা যাইতাম। এগো স্বাধীনতার তো প্রশ্নই আসে না, আমার শাসন থিকাও ছাড়া পাইতো না।