ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০০২ সালে। নিয়ম অনুযায়ী ২০০৭ সালে পরের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এর পরও প্রায় আট বছর কেটে গেছে কোনো নির্বাচন ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া। বলা যায়, রাজনৈতিক নানা হিসাব-নিকাশের খপ্পরে পড়ে এই স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এখন ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারের আগ্রহের পেছনেও হয়তো রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ রয়েছে। কিন্তু আমরা বলতে চাই, তবু নির্বাচন হোক।
এই সময়ের মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশন নিয়ে অনেক পানি গড়িয়েছে। ব্যবস্থাপনার সুবিধা হবে, এই দোহাই দিয়ে ভাগ করা হয়েছে ঢাকাকে। কিন্তু প্রশাসকনির্ভর বিভক্ত এই সিটি করপোরেশন নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা তো দূরে থাক বরং অনেক ক্ষেত্রে ভোগান্তি বাড়িয়েছে। ওয়ার্ড পর্যায়ে কোনো নির্বাচিত কাউন্সিলর না থাকায় স্থানীয় জনগণের নানা দুর্ভোগ দেখার কেউই নেই। ঢাকার মতো একটি জনবহুল শহরের ব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিন ধরে যেভাবে চলছে, তা অকল্পনীয়। নির্বাচিত কোনো মেয়র বা কাউন্সিলর ছাড়া কোনো বড় শহরের ব্যবস্থাপনার কথা আজকের দুনিয়ায় কল্পনাই করা যায় না। যাইহোক, অবশেষে নির্বাচন হচ্ছে এটিই বড় কথা।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও ঘোষিত অবরোধ কর্মসূচির মধ্যেই দুই নগরীর তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে সাবেক ক্ষমতাসীন দল বিএনপি। অন্যদিকে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে সরকারের পক্ষ থেকে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ নিজেদের অনড় অবস্থান থেকে সরে আসতে চাইছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। নির্বাচন সুষ্ঠু হলেই কেবল পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে, অন্যথায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও চরম অবনতির দিকে ধাবিত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। ২৮ এপ্রিল ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে। প্রথমে বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সরাসরি ঘোষণা না এলেও বিএনপিপন্থী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা সংগ্রহ করেছেন মনোনয়নপত্র। নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপিপন্থী পেশাজীবীদের নিয়ে গঠিত হয় ‘শত নাগরিক কমিটি’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম। এ প্ল্যাটফর্ম থেকেই অরাজনৈতিক এ সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা।
ঢাকা উত্তরে আনিসুল হক ও তাবিদ আউয়াল, দক্ষিনে মির্জা আব্বাস ও সাঈদ খোকনকে ঘীরে চলছে ঢাকার নির্বাচনী জল্পনা কল্পনা। আজ ২৭শে এপ্রিল সোমবার যাবতীয় প্রচরণা বন্ধ। বাস আর টেবিলঘড়িকে ঘিরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের রাজনীতিতে নতুন নতুন উদ্দিপনার সঞ্চার হয়েছে। চট্টগ্রামে কি হবে জানিনা, কারণ ওখানের রাজনীতি যতটা না আওয়ামী বা বিএনপি নির্ভর তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি ধর্মিয় প্রভাব নির্ভর। আমি ওখানের বাসিন্দা নই, তাই জানিনা ওখানে আসলে কি হবে?
তবে ঢাকার মিরপুরে অবস্থানগত কারণে এখানের রাজনীতির সাথে আমি ছোটবেলা থেকেই পরিচিত। আমার ছোটবোন বিএনপির ভিপি শিরিন এখনো মীরপুরের নেতাদের কাছে সমান পরিচিত। যদিও বোনটি রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে যশোরে সংসার পেতে অনেক অনেক ভালো আছে।
ঢাকা উত্তরে বিএনপির সমর্থিত বাস মার্কার তাবিদ আউয়ালকে আমি যেমন চিনিনা তেমনি এ এলাকার অনেকেই চেনেন না। তারপরও বিএনপির সমর্থন থাকায় তার প্রচারণার খবর ছড়াচ্ছে। যদিও স্থানীয় কাউন্সিলরদের মধ্যে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী খুব একটা দেখা যায় না, যারা আছেন তারা প্রশাসনিক মামলা মোকাদ্দমায় পলাতক থাকায় তাবিদের পক্ষে প্রচারণা নেহাত কম। সেদিক দিয়ে টেবিলঘড়ি নিয়ে আনিসুল হকের প্রচারণা তুঙ্গে বলাই যায়। যদিও ব্যবসায়ী নেতা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে আনিসুল হক আগেই জনপ্রিয় ছিলেন। বিশেষ করে আমাদের সাংবাদিকদের কাছে তিনি আত্মমর্যাদাশীল ব্যক্তিত্ব হিসেবেই পরিচিত। অন্যদিকে জুনায়েদ সাকী বা মাহি বি চৌধুরীর কোনো প্রচারণাই মিরপুরে চোখে পড়েনি। তাই তাদের প্রসঙ্গে কিছুই বলার নেই। যদিও জুনায়েদ সাকীকে ব্যক্তি আমার খুব পছন্দ।
সাংবাদিকতার সাথে এখন আর আমি সরাসরি যুক্ত না থাকলেও ঐ যে, প্রবাদ আছে না, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে, আমিও তেমনি নির্বাচনী এ সময়টায় চুপ থাকতে পারলাম না। কারণ আমি বিগত সময়ে বরিশালের মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হীরণের হেরে যাওয়া ও তাঁর অকাল মৃত্যু বিশ্লেষণ করেছি। বিশ্বাস করুন বরিশালের বর্তমান মেয়র কামালের এতটুকু যোগ্যতাও নিই যে তিনি হীরণকে হারাতে পারেন। এ কথা স্বয়ং বিএনপির অনেক বড় নেতা বলেছেন। বিএনপি চেয়ারপারশন নিজে বরিশাল ভ্রমণকালে হীরণের কাজে মুগ্ধ হয়ে তাঁর প্রশংসা করেছেন। আমার একই ভয় আনিসুল হককে নিয়ে, তিনি বলির পাঠা হবেন নাতো? না না দক্ষিণে সাঈদ খোকনকে নিয়ে এ ভয় নেই। ওখানে মির্জা আব্বাস বিএনপির সঠিক প্রার্থী। তার স্ত্রীর প্রচারণা কৌশলও বেশ চমৎকার।
বিএনপির যোগ্য প্রার্থী না থাকায় কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী প্রায় সর্বত্র । এদের কাউকে কাউকে জোর করে বসিয়ে দেয়া ছাড়া সংগঠনের আর কোনো বিকল্প নেই। তবে যোগ্য কাউন্সিলর বিচারে এলাকার চিহ্নিত কুপ্রভাবশালী লোকটিকেই বেশিরভাগ স্থানে মুল্যায়ন করেছেন স্থানীয় সাংসদরা। যা হয়ত দলের নেতৃত্বরা বুঝতে পেরেও টাকা খেয়ে চুপ মেরে আছেন। যারফলে এখানে আওয়ামী লীগকে হয় দুর্নীতীর আশ্রয় নিতে হবে, অন্যথায় গো হারাকে মেনে নিতে হবে। যেমন এই মিরপুরেই ৫নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক কমিশনার নান্নু, বিগত সময়ে যিনি ছিলেন বিএনপি সমর্থিত। ৬নং ওয়ার্ডে হাজী রজ্জব আলী এদের নিয়ে অনেক কানাঘুষা চলছে। তাই চোখ বুঝে বলা যায় যে, সুন্দর, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থীদের সম্ভাবনা অনেক অনেক বেশি মিরপুর ১৪, ১৫ ও ১৬ আসনে।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে পরিস্কার নয়। অনেকেই এ নিয়ে প্রশ্ন করছেন – সংরক্ষিত শব্দটি যেখানে আছে, সেখানে আবার নির্বাচন কেন?