রবীন্দ্রপরবর্তী বাংলা নাটকের উজ্জ্বলতম নাট্যকার সেলিম আল দীন। স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে রেখেছেন অনবদ্য ভূমিকা। পাশ্চাত্য নাট্যরীতির বলয় থেকে বেরিয়ে বাংলা নাটককে দিয়েছেন শিকড়ের ঠিকানা। হাজার বছরের বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যকে অনুসরণ করে নাটকের আঙ্গীকে বর্ণনাত্মক রীতির সফল প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার এই কীর্তিমান নাট্যকারের ষষ্ঠ প্রয়াণবার্ষিকী। এ উপলক্ষে সোমবার থেকে শুরু হলো চার দিনব্যাপী নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন স্মরণোৎসব।
‘ঐতিহ্যের ধারায় রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ থেকে সেলিম আল দীন, বাঙলা নাট্য কভু নয় দীনহীন’ শ্লোগানে এই স্মরণের আয়োজন করেছে নাট্যদল স্বপ্নদল।
সোমবার পৌষের বিকেলে শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে স্মরণোৎসবের সূচনা হয়। আয়োজনেই শুরুতেই সদ্য প্রয়াত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের স্মৃতির উদ্দেশে উৎসবটিকে উৎসর্গ করে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা । উৎসব উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। প্রথম দিনের আয়োজনে ছিল সেলিম আল দীনের জীবন-শিল্পকর্ম-দর্শন বিষয়ক আলোচনা ও সেমিনার। মঞ্চসারথি আাতাউর রহমানের সভাপতিত্বে ‘নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন : নবীন অভিনেতার দৃষ্টিতে’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকার বাইরের চারজন ও দেশের বাইরের একজনসহ ১৮টি নাট্যদলের ১৮ জন নবীন নাট্যকর্মী সেলিম আল দীনের নাট্যকর্ম প্রসঙ্গে নিজেদের অভিমত তুলে ধরেন। অভিমত পর্ব শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে সেলিম আল দীনের নাট্যাভিনয়বিষয়ক নাট্যকর্মী ও দর্শকদের প্রশ্নের জবাব দেন মঞ্চকুসুম শিমুল ইউসুফ। আলোচনার উপসংহার টানেন সেলিম আল দীনের শিল্পসঙ্গী নাসির উদ্দীন ইউসুফ, নাট্যজন এসএম মহসীন, সেলিম আল দীনের সহধর্মিণী বেগমজাদী মেহেরুন্নেসা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক লুৎফর রহমান প্রমুখ। সূচনা বক্তব্য দেন উৎসব-আহ্বায়ক ও স্বপ্নদলের দলপ্রধান জাহিদ রিপন।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, ব্রিটিশ উপনিবেশ-পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথই প্রথম হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারায় বাংলার সঠিক নাট্যরীতিসূত্রকে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, যা তার সৃষ্টিকর্মে আধুনিকরূপে প্রতিফলিত হয়েছে। পরবর্তীতে সেলিম আল দীনের আমৃত্যু সৃষ্টিশ্রমে দিগন্ত বিস্তৃত হয়েছে বাংলা নাট্যরীতি।
সভাপতির বক্তব্যে আতাউর রহমান বলেন, বাংলা নাট্যধারায় সেলিম আল দীন যেন এক প্রবহমান খরস্রোতা নদী। বিশ্বসংসার থেকে জ্ঞান আহরণ করে দেশজ প্রেক্ষাপটে তিনি নাটক লিখেছেন।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ মঙ্গলবার। এদিন সকাল ৮টায় শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা প্রাঙ্গণ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীনের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশে যাত্রা করবে নাট্যকর্মীরা। সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলাভবন থেকে শোভাযাত্রাসহ নাট্যকারের সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হবে। কাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শিল্পকলা একাডেমীর পরীক্ষণ থিয়েটার হলে সেলিম আল দীনের কালজয়ী সৃষ্টি ‘হরগজ’ নাট্যপ্রযোজনার মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হবে। প্রদর্শনীতে অতিথি থাকবেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ কে এম শামীম চৌধুরী। উৎসবের সমাপনী দিন বৃস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শিল্পকলা স্টুডিও থিয়েটারে মঞ্চস্থ হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর ধ্রুপদী কাব্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা।‘ এতে অতিথি ও উৎসবের সমাপনী বক্তা হিসেবে থাকবেন গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সভাপতি এবং শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। পাশাপাশি এ উৎসবের অংশ হিসেবে নাট্যশালার লবিতে থাকছে নাট্যাচার্যকে উৎসর্গ করে রচিত সঙ্গীত কোরিওগ্রাফি পরিবেশনা, পোস্টার-আলোকচিত্র-ভিডিও প্রদর্শনী।
ট্রিবিউট টু সুচিত্রা সেন ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একডেমীর নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের উদ্যোগে ৮ জানুয়ারি থেকে চলছে মহানায়িকা সুচিত্রা সেনকে নিবেদিত চলচ্চিত্র উৎসব ‘ট্রিবিউট টু সুচিত্রা সেন’। দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত এ উৎসবটি এখন দারুণ জমে উঠেছে। দর্শকের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে একাডেমীর ডিজিটাল আর্কাইভ থেকে উৎসব এখন নিয়ে আসা হয়েছে সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে। ছবি দেখার জন্য প্রতিদিন সন্ধ্যায় ছয়টায় প্রদর্শনীর ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই দর্শনাথীরা ভিড় জমাচ্ছেন মিলনায়তনের বাইরে। সুচিত্রা সেন ও উত্তম কুমার অভিনীত ১০টি চলচ্চিত্র সাজানো দশ দিনব্যাপী এ উৎসবের ষষ্ঠ দিন ছিল সোমবার । এদিন দেখানো উত্তম কুমার-সুচিত্রা সেন অভিনীত চলচ্চিত্র ‘একটি রাত।’ ‘আজ মঙ্গলবার ‘হারানো সুর‘ প্রদর্শিত হওয়ার কথা থাকলেও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর কারণে ছবিটি দেখানো হবে ?? জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায়। ১৫ জানুয়ারি প্রদর্শিত হবে ‘সাঁঝের প্রদীপ’, ১৬ জানুয়ারি ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ও ১৭ জানুয়ারি ‘ওরা থাকে ওধারে।’