কবিতা সহে না দানব-যাতনা : অবশেষে এল রাষ্ট্রীয় অনুদান
অবশেষে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেতে যাচ্ছে জাতীয় কবিতা উৎসব। প্রতিবারের মতো এবারও ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির ১ ও ২ তারিখ শুরু হচ্ছে কবি ও কবিতাপ্রেমীদের এই মিলনমেলা। কবিতা পরিষদের ২৮তম এই আয়োজন হবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপির সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ মাত্র এমন একটি পদক্ষেপ কবি ও কবিতাপ্রেমীদের জন্য অত্যন্ত আনন্েদর বলে জানান সব্যসাচী কবি সৈয়দ শামসুল হক।
সাধরণ সম্পাদক কবি আসলাম সানি জানান, এবারও শহীদ মিনার এবং কবি কাজী নজরুল ইসলামের মাজারে ফুল দিয়ে সূচনা করা হবে প্রথম দিনের কর্মসূচি। সকালে উৎসব ভেন্যুতে উত্তোলন করা হবে জাতীয় পতাকা। একই সময় উত্তোলন করা হবে কবিতা পরিষদের পতাকা। পরিবেশিত হবে জাতীয় সঙ্গীত এবং উৎসব সঙ্গীত। এর পর মঞ্চে ওঠবেন অতিথিরা। উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করবেন কবি সৈয়দ শামসুল হক। আলোচনায় অংশ নেবেন দেশের বরেণ্য কবি সাহিত্যিকরা। প্রায় একই রকম আয়োজন থাকবে সমাপনী দিনে। ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান তিনি।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রায় ২৭ বছর আগে যাত্রা করা দেশের প্রগতিশীল কবিদের বার্ষিক এই উৎসব আয়োজন এত বছর ধরে নিজেদের অর্থায়নেই চলে আসছিল।কবিতা উৎসবের আয়োজক সংগঠন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী জানিয়েছেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের আগ্রহের কারণেই সরকারি অনুদান গ্রহণ করা হচ্ছে। এর আগে কখনো সরকারি অনুদান গ্রহণ করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা কখনো সরকারি অনুদান চাইনি, কখনো পাইওনি। কিন্তু নতুন সংস্কৃতিমন্ত্রী দীর্ঘদিন থেকে নানাভাবে আমাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। সংস্কৃতিসচিবও একজন সাহিত্যিক। তাঁদের বিশেষ উৎসাহে এই অনুদান নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি জানান, দুই দিনব্যাপী কবিতা উৎসবের এবারের বাজেট হচ্ছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার অনুদান হিসেবে দিচ্ছে দুই লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘কাজ করার মতো পর্যাপ্ত অর্থের সংকট আমাদের রয়েছে। তার পরও বাঙালি সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেওয়ার মতো সকল শুভ কাজে সরকার পাশে থাকতে চায়। তারই অংশ হিসেবে কবিতা উৎসবে সামান্য সহযোগিতা করা হচ্ছে।’দেশের শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনে জাতীয় কবিতা উৎসব একটি অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। ১৯৯৭ সালে যাত্রা করে দেশের প্রগতিশীল কবিদের প্রতিবাদী এই আয়োজন। তখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন জেনারেল এইচ এম এরশাদ। তাঁর প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় তখন আয়োজন করা হতো এশীয় কবিতা উৎসব। সৈয়দ আলী আহসান, আল মাহমুদসহ কিছু কবি যুক্ত ছিলেন সেই আয়োজনে। এর প্রতিবাদে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কবিরা আয়োজন করেন জাতীয় কবিতা উৎসব। কবি সুফিয়া কামাল, শামসুর রাহমান থেকে শুরু করে প্রগতিশীল কবিরা এই আয়োজনে যুক্ত হন। এর পর থেকে প্রতিবছর ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে এই উৎসব-আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
কবিতার বৃহত্তম এই আয়োজন কেবল দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও বিশেষ মর্যাদা অর্জন করেছে। প্রতিবছর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশের নানা ভাষা ও সংস্কৃতির কবিদের মিলনমেলা বসে ঢাকায়। কবিরা কবিতা উৎসব শেষে অমর একুশে বইমেলাও ঘুরে যান। এবারও সুইডেন, নরওয়ে, ভারত, ফিলিপাইন, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ ও ভাষার প্রায় ৩০ জন কবি উৎসবে যোগ দেবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।এবার অনুষ্ঠিত হবে ২৮তম কবিতা উৎসব। উৎসবের স্লোগান ‘কবিতা সহে না দানব-যাতনা’। উদ্বোধন করবেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। প্রতিবছরের মতো এবারও একুশের গান, উৎসব সংগীত, স্বরচিত কবিতাপাঠ, আবৃত্তি, কবিতার গান, সেমিনার ও প্রদর্শনীর আয়োজন থাকবে। কবিতা উৎসবের প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।
(কৃতজ্ঞতায় : আজিজুল পারভেজ, দৈনিক কালের কণ্ঠ)