চলমান সময়ের কবিতা

অতিথি লেখক

Sharing is caring!

উদিত হৃদয়
মুনূহু (মুহম্মদ নূরুল হুদা)

দিন নেই রাত নেই মুখোমুখি আমার সময়,
দিন নেই রাত নেই মুখোমুখি তোমার সময়;
অহনা গহনে টানে, তুমি টানো অধিক ভেতর,
ভেতরে-বাইরে আছি, মুখোমুখি দুই চরাচর।
ভালোবেসে কবে তুমি এতোটুকু পেয়েছিলে সুখ
তোমার কি মনে পড়ে? আমার তো কিছুই পড়ে না;
অনঙ্গকালের বুকে অপলক তাকিয়ে উন্মুখ
পড়েছো হৃদয় যার সে হৃদয় তোমাকে পড়ে না!
কবিতা শর্মিন্দা সতী গ্রিসদেশে ট্রয়ের নগরে
হেলেনের হাত ধরে বিদিশায় পা-বদল করে;
হোমারের পেনেলোপি, হাসনের নটী বিনোদিনী,
অধরে অধর আঁকে, ডানা রাখে অনন্ত অম্বরে।
দহনে পেয়েছি যাকে তার কাছে গহন শিখিনি?
একবার দেখা দিয়ে কুহু স্বরে ডাকে কুহকিনী।
কতবার কতবার দিব্যলোকে তুমি অমাময়?
সে কেন থাকে না ঘরে, যাকে আমি আঁকি প্রমাময়?
একা একা সব দেখা, একা চোখে একা বৃষ্টি ঝরে।
তরঙ্গে তরঙ্গ মেশে, দেশে দেশে উড়ানির চরে।
চেনা অচেনার দেশে ফেনা মেশে ফেনার অধরে।
দেহের আড়ালে দেহ, হৃদয়ের আড়ালে হৃদয়।
মানুষ অনন্তজয়ী, হৃদয়ে হৃদয় যদি হয় বিনিময়;
মানুষ অনন্তজয়ী, হৃদয়ে হৃদয়ে যদি উদিত হৃদয়।
০৬-২৭.০৭.২০২১

আলোর মিছিলে চলো
তপংকর চক্রবর্তী
সংসারে সুখ হয় রমণীর গুণে
শিশু থেকে বুড়ো হই এই কথা শুনে
কিন্তু আসল কথা রমণীর মন
বলুনতো পুরুষেরা বুঝেছে কখন ?
মানুষের অর্ধেক নর আর নারী
জানে, তবু পুরুষেরা করে বাড়াবাড়ি।
সৃষ্টির শুরু থেকে এই নিপীড়ন
নানাভাবে বিষিয়েছে নারীদের মন।
নারী মানে মাতা-বধু-মেয়ে আর বোন
তাদের দাবিয়ে রেখে চলে না এখন
অতীতে যা ঘটে গেছে সব ভুলে গিয়ে
সময়ের সাথে চলো সামনে এগিয়ে
দু’জনেই যদি বোঝে দু’জনের ভাষা
পৃথিবী সুখের হবে এই শুধু আশা
এখন সময় ঠিক নর-নারী মিলে
হাতে হাত রেখে চলো আলোর মিছিলে।

ত্যাগ
হা সা ন মা হ মু দ

এই যে আমার নিপাট কাব্য মেদবিহীন এই সুর
কাছে টানি তুমি যতই গ্রহণ করো দূর….
আলস্য খুব বন্ধু আমার তোমার ছিল কাল
বন্ধু ভাগ্য নিয়েও এমন অভব্য হালচাল…
ত্যাগের আছে খুব মহিমা- খুব জানা এই কথা
মুখর আমি নিয়ত হায়! তোমার নীরবতা…
সাগর দিল শাদা ইলিশ পড়শী দিলো উঁকি
কুকড়ি জুড়ে সম্ভাবনা– তাই উপকূলমুখী।
এই যে উতল ঢেউয়ের প্রণয় হরিণ চোখের লাজ
আজ অভিমান ভুলেই পড়ব মহিমা-কোলাজ

হা সা ন মা হ মু দ
যখন মর্মর বেজে ওঠো

হরিণহৃদয় খুঁড়ে যখন পাখি হয়ে যাই
শব্দগুচ্ছ থেকে ঝুলে পড়ে রোদ্দুর মন
আর তুমি বোররাক বেগে ছুটে যাও তিমির নেশায়
মেঘ-সন্ধ্যা, দিনে-রাতে জীবন খুঁজতেই
আহা! কি মর্মর বেজে ওঠো
চৈত্রের ঝরাপাতা, ঝিঁঝিঁ অনুরাগ
স্বপ্নের পাদদেশে যখন সমুদ্র নীল পরিণতি পাবে
আমি মানুষের চোখে পাব আপেল আনন্দ; অহমি
জীবন ভুলে নির্ণয়ে অকস্মাৎ চলে যাব তোমার চুলঘরে
পারদের মতো মিশে যাব রক্তকণিকায়
ইন্দ্রসভা থেকে তুমি
আলোর বেগে এসে দাঁড়াবে সটান…
অলৌকিক মেঘে ডুবে যেতে যেতে যেতে
বাড়াব দু’হাত-
নিবিড় তাকালে তুমি পাঞ্জায় মুদ্রিত হবে! দৃশ্য হবে! হবে ছায়ামন।
যখন মর্মর বেজে ওঠো, আমি এভাবেই অদৃশ্য হয়ে… যাই…

আনুগত্য
মৈথিলী

দুনিয়াতে অনেক কিছুই ঘটে যায় হয় খুব মন ভালো থাকলে নয়ত মন খুব খারাপ থাকলে…
ওই আদর আর ভালোবাসার গল্পও
কত কথা বলতে মন চায়,
শুধু কথা আর কথা
আচ্ছা, তুমি জ্বলতে রাজি ?
ভালোবাসার জ্বালা ?
তোমার অনুগতে প্রেম আছে, তাই না ?
মানে আনুগত্য ভালোবাসো,
না, তবে প্রেমের আনুগত্য চাই শেষ দিন পর্যন্ত,
সেই জন্যই তো বেঁচে থাকা …
কিন্তু সে যে ফল্গু ধারার মত, অন্তরে, শরীরে সর্বত্র সদা প্রবাহমান
প্রেম কি লুকিয়ে রাখা যায় ?
সে যে শত সহস্রের মধ্যেও প্রস্ফুটিত
সবসময় তার কোলের কাছটিতে থাকতে, বেড়ালের মত গায়ে, মাথায় উঠতে, জড়িয়ে থাকতে ভালো লাগে।
তবে,
আমার মত ছন্নছাড়াকে কি আর তোমার মত ভালো মানুষ সহ্য করতে পারে ? তার জন্য যে চাই আমার মত ছন্নছাড়াই,,,,

স্বাদ
আরিফ আহমেদ

তুমি কি শুনেছো
পাতাঝরা শব্দ টিনের চালে
টুপটুপ, চুকচুক কুয়াশা আাদর
নিশিরাতের গালে।।

শুনেছো কি কখনো
মাঝরাতে ডাহুকের সাথে
সুর মিলিয়ে কুকুরের ডাক
মানবশিশুর অবিকল নকলে
বেড়ালের কান্নার আওয়াজ।

কোথাও এখন আর যায়না শোনা
দলবাধা শেয়ালের কান্না
হুককা হুয়া, হুক্কা হুয়া
একা কাঁদে নিঃসঙ্গ খাডাস
বন উজার বৃক্ষ নিধনে
মানুষেরা কেড়ে নিছে ওর আবাস।।

ঘুঘু ডাকা ভোরে
শিশির মাখা পায়ে
সরিষা ফুলের ভালোবাসা পেয়েছো কি
স্রোতাম্বিনী
নদীর সাথে মিতালীতে
পানশী নাও বেয়েসো কি

দেখেছো কি কখনো
নায়ের দোলনীতে দুলে চলা নীল আকাশ
যদি দেখে থাকো জেনে রাখো
বন্ধু, তোমার মিলে যাবে জীবনের সব হিসাব।।

পুনর্জন্ম
প্রহ্লাদ ভৌমিক

যে ফুল কখনও দিনে ফোটেনা
সে ফুলের মেধাবী গন্ধে শব্দনীড় খুঁজে পায়
উদভ্রান্ত কবি
শব্দ মাধুর্যে ভরিয়ে তোলে সে জীবনের সম্ভার
ও কবির একান্ত ব্যক্তিগত আকুতি
এই সব কিছুর মধ্যেই আমি অবিরাম মেতে থাকি
শব্দে শব্দে ভেসে থাকি ,ডুবে থাকি আমি
শব্দময়তার উত্তাল ঢেউ স্রোতে…
সভ্যতার আড়াল থেকে এখন আর কেউ
কোনও পথিক প্রকৃত বিদ্রোহে তেমন করে ডাকেনা
কেউ ডেকে বলেনা এসো,ব্যক্তিগত আড়াল ভেঙে
আমরা নগ্ন হই, অগ্নিশুদ্ধ হই
আসলে ওরা নিজেরাই জানেনা যে
তা না হলে ‘ফিরে পাওয়া যাবেনা হারিয়ে যাওয়া
কোন সংবেদনশীলতা’…
জানি, প্রকৃত বিদ্রোহের শেষে অপেক্ষা করে আছে
‘নতুন এক পৃথিবী’, ‘নতুন এক জীবন যাপন’
আর এই নতুনে দীপ্ত আলোর সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে
নতুন এক সময়ের দিকে ক্রমশঃ এগিয়ে যাওয়া
আমি অবরুদ্ধতার সমস্ত চক্রব্যুহ ভেদ করে
চরম বাস্তবে এসে নিজেই নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি
এবার আমার ভাষা,শব্দ ও বর্ণমালাকে একে একে
জীবনের সত্যের সাথে মিলিয়ে দিতে চাই
শিল্পের সত্যে…
সেই সত্যের নিপুণ পথচিহ্ন এঁকে দিচ্ছে মহাকাল
আমি সেই মহিমায় রোজ নিজেকে ঋদ্ধ
ও পরিশুদ্ধ করতে থাকি
আর দিকনির্দেশক সশব্দ বোধগুলো আমাকে
ওই নিপুণ পথচিহ্ন আঁকা পরম সত্যের দিকে
ক্রমাগত এগিয়ে দেয় হাত ধরে
আমার ভেতরে এক মুক্তমনের তিতির ডেকে ওঠে
অলৌকিক এক আলোর বিভায় আমার পুনর্জন্ম হয় ।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!