একটি ঘৃণাপন্থি কবিতা
খসরু পারভেজ
ভ্রাতৃসঙ্ঘের বুড়ো কবি! বউ পেটানো অধ্যাপক!
আপনার গালের ভেতর মাছি ঢুকে গেছে নাকি!
হা করে বসে আছেন যে! মুখে কোনো কথা নেই!
কোথায় হারিয়ে গেল আপনার কথার পায়রারা!
রামু-নোয়াখালী-কুমিল্লার পর যখন পীরগঞ্জ পোড়ে
নিজেকে কাতুকুতু দিয়ে হাসতে থাকেন পীর সাহেব!
তার সংক্রামক হাসি পোকা হয়ে উড়ে যায় জুম্মাবারে
সেই পোকারাই শনিবার এলে পুড়িয়ে দেয় ‘মালুবন'(!)
বুদ্ধিবিক্রেতা! আপনার বুদ্ধির বেলুন কি চুপসে গেছে?
নাকি, আপনার বোধের গরু গাছে উঠে বসে আছে?
ধর্মের ঘোড়া ছুটছে, আর বসে বসে মজা দেখছেন!
পচন ধরেছে মস্তিকে, আপনি তো এখন ব্যর্থ রাখাল!
চুলকানি খুব মজাদার, সহজেই ছড়িয়ে পড়ে অঙ্গে;
চুলকিয়ে চুলকিয়ে এমনি করে কত মজা লুটবেন?
ইতিহাসের পাতা আর কত নোংরা করবেন আপনি!
হে ভাড়! চুপ করুন! আপনার কথা শুনে পিত্তি জ্বলে।
আপনারা বামপন্থি, রামপন্থি, আমপন্থি, জামপন্থি
আপনাদের বুকের ভেতর লুকিয়ে থাকে গোখরোর ফণা
কেউ কেউ ঘামপন্থি, দুঃসময়ে তারা শুধু ঘামতে থাকে
আমি ঘৃণাপন্থি,শতগুচ্ছ ঘৃণার থুতু আপনাদের দিলাম!
____________
২০ অক্টোবর ২০২১
বড়দা
পুলক হাসান
বড়দা, বাতাসে ফুলে-ওঠা তোমার হাওয়াই কুর্তা
মনে হয় পালতোলা এক নৌকা।
কিন্তু নদী যখন পানিশূন্য
কী তার ফায়দা?
ডুকরে ডুকরে কাঁদে পদ্মাপারের রাশিদা!
আর তিস্তাপারের গল্পের তো অন্তই নেই
সেখানে শূন্য আকাশে চিলের চিৎকারে নামে গভীর নিস্তব্ধতা,টের পাই তোমার সংকীর্ণতা!
ভেতরে কুরে কুরে খাচ্ছে এক ঘুণপোকা
তারপরও আমার হুঁশ নাই।
নইলে কখনই বলবে না তুমি
দীপ জ্বেলে যাই
তবু কেন তোমার প্রেমে অন্ধ আমি?
ভয়
হা সা ন মা হ মু দ
মাঝি যখন নিজে ডোবে কে বাঁচাবে তারে?
জানবে হাসু ভাইরে আমার, ডুবলে হৃদ মাঝারে
বিবর্তন আর খাঁচার নামে এই যে তোদের প্রলাপ
অপেক্ষা-অধীরে ফোটে নানান রঙের গোলাপ!
যখন তারা হারিয়ে যাবে মুখের দিকে চেয়ে
তোমার গোলাপ ভুলবে হাসি তীরের মায়া নিয়ে
ভাঙ্গন রেখা পেরিয়ে মাঝি যাবে সমুদ্দুর?
জীবন রেখা ডাকবে তাকে বাজিয়ে ঢেউয়ের সুর
সুর না জেনে গাইলে মাঝি এমন দশাই হয়
খোয়াজ খিজির থাকলো সাথে, তবুও এমন ভয়!
সহজ ফুল
মামুন মোয়াজ্জেম
সহজেই যে হয়ে গেছে ফুল
আমি তাঁর কাঁটার প্রেমেই থাকি
ফুলের রূপের জেল্লা খুব বেশি সস্তা মনে হয় !
আগুনেরও রূপ থাকে পিদিম পিদিম ভরে থাকে শিখা
পুড়ে যাওয়ার মতো আগুনের রূপে আমি হাত ঢুকাই না
পরাবৃত্ত তীক্ষ্ণ শিখার শীর্ষে আঁচ নিই;এই যা !
খুব কষ্টে যে কথা বুকে জমা থাকে
আমি কান পেতে শুনি সেই বাণী
তাই চিরকাল দুপুর নিদাঘে ঘুঘুর ডাকই আমার প্রিয়
আমাদের যেটুকুন নিজের মতো হয়ে না ওঠা
তার রঙ পালিশে আমি মগ্ন কারিগর
কাদাজলের কষ্ট ও ভালবাসায় ফুটে ওঠা পদ্মই আমার প্রিয়
কাঁটার নিরাপত্তায় যে ফুলের হাসির বিলাস
আমি তার কাঁটারই সমঝদার !
কাঁটারও কষ্ট থাকে ফুলের প্রতি ভালবাসা থাকে
অহর্নিশ রক্ত ঝরানোয় মোতায়েন থেকে সে বাঁচায় ফুল।
—–
ঢাকা।
সন্ধ্যা
ফয়সল নোই
জমিয়ে রেখেছি পরে দেখবো বলে ,
পরে দেখা হবে। আজ এই বিকেলের সোনালী মেঘের রঙ
তোমার কাছে পৌঁছে চলে যাবো।
মনে হয় মৃত্যুও কাম্য কিছু নয়, প্রাণের উত্তাপ ছেড়ে
চলে যাবে কেউ । আশাহীন অভিমানে
এমন কি হেমন্তের শিশিরও কিছু বলবে না ডেকে।
দীর্ঘশ্বাস মথিত এই উদ্যানে বিকেলে কে হেঁটে যায়
ঔষধি পদক্ষেপে বিষণ্ন প্রবীণ গাছের হেলে পড়া ছায়ায় !
ঘ্রাণে ঘ্রাণে পুষ্প হাসে । রূপের পাশে দুঃখি চন্দ্র ।
আলগোছে মনের শুকনো নালায় নালায়
শীষ কেটে উড়ে উড়ে যায়। সেও কি তোমাকে চেনে !
সে কি জানাবে কিছু তবু অজানা সংযোজনে ? সন্ধ্যায় সন্ধ্যায়
বিপণ্ন আলো হবে আরো একাকিত্ব বিধুর নিঃশ্বাসের সমান !
বাঁক
প্রহ্লাদ ভৌমিক
তুমি যে দুঃখ দেবে তেমন কোনও নিষ্ঠুরতা
দৈবাৎ ঝলসে উঠলেও
বুঝেছি তীব্র অভিমান সে
জলেও তো ভেসে ওঠে চাঁদের গভীর ছায়া
ঢেউ স্রোতে সেও ছায়া ভেঙে ভেঙে ছোটে নদী
তবুও দু’চোখে সেই ঢেউ নদী আঁকে চাঁদ
তুমিও শব্দে,অক্ষরে,বর্ণে অবশেষে
পোষ্ট মডার্ন হলে আমি হবো ছায়াপাখি
আর তুমি ছায়াপাখি হলে
নদীর গভীর অতল থেকে সূর্য তুলে এনে
আমি হবো তোমার ডিজিটাল কবিতার উদভ্রান্ত কবি
এরকম এক ভয়ংকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়
যুক্ত হতে থাকে আমাদের ব্যক্তিগত পাশওয়ার্ড
এবংঅসম্ভব দুলতে থাকে পেন্ডুলামের মতো
দু’চোখের পাতায় আটকে থাকে তার ছায়া
আর এই দৃশ্য সঙ্গমের বর্ণময় আঁকা সেই ছবি
আমি কোথায় দাঁড়াবো তবুও অপেক্ষায় ?
নিভৃত নির্জনে নিরিবিলি একা দাউদাউ পথের এই বাঁকে !
পাখিদের প্রেম নিবেদন
রাসেল আশেকী
তোমাদের মহাকাব্যে লেখা আমাদের ইতিহাস
আমরাও মনে রেখেছি তার প্রতিটি ওঠানামা শ্বাস
আর ভালোবাসার মতো কোনো সম্পদ, সুস্থতার
মতো কোনো উপহার, ইহবিশ্বে নাই জেনে
তিলে তিলে তাই করেছি সঞ্চয়
নিঝুম নিস্তব্ধতায় এনেছি জলের ভাষা
দেখেছি নাথের ঘাড়ে সাপ আর সমুদ্রের খেলা
সুরবাহী আলোর সন্তান মেঘেরও আগে পৌঁছে গেছি পৃথিবীর দেশে দেশে, আর ত্রিকালদর্শী ঋষির মতো
মানুষভূমির জঠর জঙ্ঘায় রেখেছি কত বীজ–
বট, খেজুর, জলপাই
বলতে দ্বিধা নাই, আমরা সেই টিঠু-কুন পাখিবংশ
আদি অন্ধকার থেকে অদ্যাবধি ভালোবাসার অংশ
আমাদের রাজা নাই, প্রজা নাই, নায়ক নাই, নায়িকা নাই–কেউ ভাবতে, কেউ ডাকতে, কেউ বলতে, কেউ গাইতে, কেউ নাচতে এসেছি, কেউ-বা এসেছি
জাগাতে আপন রোশনাই
তোমাদের ভাবনায় হয়তো আমরা খাঁচার
অচিনপাখি, না হয় কোনো রসিক মনের মায়াসুন্দরী
আমাদের চোখে তাই বিস্তৃত বিস্ময় অরণ্যপল্লব আঁখি
…প্রবীণ গাছটিও উপড়ে ফেলেছো, শুষে খেয়েছো
নদী, আর আমাদের সবচেয়ে সুন্দর পাখিটিকে
করেছো বন্দি…
যার ক্ষোভে বিক্ষোভে প্রতিবাদে কিছুই বলতে
আসিনি, শুধু তোমাদের সামনে দাঁড় করিয়েছি
একটি বিপন্ন পৃথিবী, আর দৈত্যপুর থেকে আগত
দুঃখের ঘণ্টাধ্বনি
হতে পারি তোমাদের কাবাব কিংবা বুকের মায়া
তবু চাই বন্ধুর মুক্তি, চাই শান্তির পৃথিবী
কেননা, এখনো তোমরা শিকারী আর শিকারসন্ধানী এখনো তোমরা শুধুই সংখ্যা, বিস্ময়কর ব্যস্ত জনসংখ্যা আর আমরা জীর্ণজরা তাড়াতে তাড়াতে আসা যিশুর ছায়া, কৃষ্ণের প্রেমাত্মা, বুদ্ধের নিব্বানা, মুহাম্মদের খোদায়ী সেনা, আর সোলায়মানের বুকজোড়া ভালোবাসা…
যার সুরে সুরে গানে গানে আমাদেরও জপনা
একটাই– ক্ষমা করো, ভালোবাসা দাও
আমাদের সম্প্রতি মানুষের শুধু
আরিফ আহমেদ
ঘটনার গভীরে লুকানো ঘটনার খোঁজ
পেয়েছে কি কোনো অনুসন্ধানী নাগরিক?
পার ভাঙা নদীর কিছের এতো আক্রোশ
বুঝেছে কি কখনো কোনো গবেষক?
ভালোবাসা বন্ধনে বাঁধা গাঁও গ্রাম এখনো একাকার
হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান
বিবাহের উৎসবে সব ধর্মের রসের বাঁধন
নাচে মনুমিয়া নাচে দূর্গেশ্বরী মন।
কে তুমি নরাধম
রাজনৈতিক আগুনে চালভাজা খেতে চাও?
চায়ের পেয়ালায় গোয়ালা; দুধ ঘাম বুঝেছো কখনো
কীসের তবে এই আস্ফালন?
লাকুম দিন উকুম ওয়ালা ইয়া দিন
ধর্ম যার উৎসবও তাঁর
আমি দর্শক; হবো হাততালির প্রয়োজন।
বাকরুদ্ধ আমরা দু’জন
——- অপূর্ব গৌতম
এক ঝুড়ি বেদনা নিয়ে কাল বিকেলে
আমার দরজায় কয়েকটা টোকা দিল মালবিকা
চেচিয়ে আসছি বলার আগেই
আরও কয়েকটা টোকা পড়লো
মনে হলো আগের চেয়ে এবারের শব্দটা একটু বেশিই
কানটা এখনও অনেকটাই ভালো
কিন্তু চোখের ঝাপসাটা বাড়ছেই দিন দিন
দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই
ডান হাতটা কিছুটা কেটে যায় ছিটকানির কোণায়
ওপারের কন্ঠে আগেই বুঝেছি
আমারই মালবিকা ঠায় দাঁড়িয়ে
দরজা খুললাম কিন্তু সে ঘরে ঢোকে না
হাতের ব্যাগটা বাম হাতের মুঠোয়
দখিনের খোলা মাঠে তার নিবিড় দৃষ্টি
বুঝতে আর মোটেই বাকি রইলনা-দোকনী চাল দেয়নি
খোলা দরজার এপাশে ওপাশে বাকরুদ্ধ আমরা দু’জন
বাংলা ডিকশনারিটা খুব ভালো করে পরিস্কার করলাম
কতইবা আর পরিস্কার হবে – বিষয়তো পুরোনো
দু’হাতে তুলে দু’বার কপালে ঠেকালাম
মালবিকার হাতে দিয়ে বললাম
পুরোনো বইয়ের দোকানে বিক্রি করে
চাল ডাল আনো, আজতো এভাবে চলি
বিকেলের নরম রোদ্দুরে তুমি আমাকে
বইয়ের দোকানে নিও
আমার কবিতাগুলো ঠিক ঠিক ওদের খুব পছন্দ হবে
দেদারছে আয় করুকনা ওরা, আমাকে দু’পয়সা দিলেই হবে …