আলমগীর রেজা চৌধুরীর কবিতা
আসবে
সমস্ত কিছুতে ঢকে যাচ্ছে তোমার চোরকাঁটা বিস্তার
সত্ত্বা ব্যাপী কল্লোলিত জলের মৃণ্ময় সংঘাত ।
অনন্ত থেকে তুমি আসবে
কী করে ফেরাবে হে কালজয়ী মৌন সঙ্গীত ?
আমার অস্তিত্ব জুড়ে বাসন্তী বিকেলের হাওয়া
রঙিন অনুভবে উড়ে আসছে দুএকটি প্রজাপতি
মত্ততায় মিশে যাচ্ছে ফেনায়িত জলে
পথ মাড়িয়ে সাঁকোতে থমকে গেছি –
অতন্দ্রিলা , তুমি আসবে ।
সময়
নদীর মতো বয়ে যায় এ যৌবন –
পিতার বয়সী মুখের দিকে তাকালে মনে হয়
মাতাল বসন্ত কোন অর্চনার সৌরভ
ছড়াতে পারে না , অবেলায় অসময়ে ।
মার কুঞ্চিত মুখের বলি রেখায়
বলে দেয়, যৌবনের অলঙ্কার খোয়া গেছে –
হিমেল বাতাস আমাকে জানায়
এখন তো তোমার
কবিতা
১
মিশিয়ে দিচ্ছি পথের মাঝে আমার দেহের পাত্রখান
রাতুল পায়ে আয় না সখি স্মরণ করে স্বপ্নবান
২
পাখিদের কর্কশ আর্তনাদ
চমকে ওঠে মেট্রোপলিটন শহর ।
৩
দক্ষিণে সমুদ্রের গর্জন ,মানুষ আসে- আমি সূর্য সেনের ভাই
উত্তরে হিমালয় তাপসী প্রেমিকার মতো ধ্যান নিমগ্না।
বাহুর পেশিতে বেঁধে দেয় জম্ম-অঙ্গুরী।
বাংলাদেশ
ত্রস্ত হরিণীর মতো বাংলাদেশ
হত্যার মচ্ছবে মগ্ন প্রজাপতি,
ওভাবে নয় , ওই বো ধি সবুজে
পড়ে থাক রক্তভুক কার্তুজ ।
বাংলাদেশ , তোমাকে নিয়ে এইসব
আমার মা
আমি তোমার চুলের ঘ্রাণমগ্ন সন্ধেবেলা মনে রাখি
আমি তোমার রাত্রির গভীরে আদিম রমণীর
বাৎস্যায়নী পাঠ শিখে রাখি,
যুদ্ধশিবিরে উগড়ে দেয়া মাতৃত্বের ফটো
গ্লোবালে আর্তিময় শব্দ।
শীতল কথোপকথনে বুঝে নিই
কী ভাবে টিভি স্ক্রিন জুড়ে তোমার মুখ;
চোয়াল ডেবে যাওয়া
রক্তশূন্য পাংশুটে জীর্ণ মুখ
আমি তোমার মাতৃত্ব মনে রাখি।
আমার মা
অষ্টম মাতৃত্বের স্বাদ নিয়ে সুগৃহিণী হয়েছিলেন।
রনজু রাইম এর কবিতা
[‘দেবতাগণ’ কাব্য থেকে]
আমার আছে একটি মাত্র দেহ
লৌহকঠিন লখিন্দরের ঘর
তার ভিতরে নেই দ্বিধা সন্দেহ
অন্য ঘরের অন্য কারো স্বর
আছে শুধু নিজের মত ও পথ
চৌর্যবৃত্তির বরফকুচিও নেই
সে পথ ধরে নিজের ভবিষ্যৎ
ঘোরলাগা কোন মুগ্ধ কাননেই
আমার আছে দুটো মাত্র চোখ
দৃষ্টি যে তার অভিন্নতা ঘিরে
দেহের ভিতর যা কিছু উন্মুখ
যায় হারিয়ে অদেখাতে ফিরে
ঘর জুড়ে স্রেফ একটি জানালা
দুই পাট তার যুগল চোখের মতো
যদিও ঘরে রুদ্ধ লোহার তালা
প্রাণটুকু এই দুর্গে অরক্ষিত
অন্ধত্ব মানেই এক সমুদ্রবেষ্টিত কুমারী আফ্রিকা
নিজের ভেতর জেগে ওঠো তুমি খুবই সন্তর্পণে
দেখবে দূর পাহাড়ে হেলান দেওয়া মেঘ-
সরে যাচ্ছে অবলীলায়
কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায় দেখবে মেঘমুক্তির আনন্দ
দুশো কি তারও বেশিকাল দাসত্বের ঘোর কাটিয়ে
মগজের অন্ধ কোষে কোষে ফুটবে সতেজ ফুল
এই খবর আজ পায়ে পায়ে পৌঁছে যাবে সবখানে
ঢেকে দেবে পুরনো সব ক্ষত বাহারী পাপড়িগুলো
নন্দনকাননে এতোকাল পড়েছিলে তুমি-
অন্ধত্বের অপ্রকাশে
কতজন কুসুমকলি চয়নে নিরন্তর গেঁথে গেছে মালা
করেছে তোমাকে ঘিরে কত না প্রমোদ উল্লাস
তার চেয়ে খুব ভালো ছিল পলায়ন, পরবাসী হওয়া
অন্ধত্ব মানেই এক সমুদ্রবেষ্টিত কুমারী আফ্রিকা
কোনোদিন তার নিজেকেই জানবার তাগিদ হল না
অন্ধ হলাহল
আমার সম্পর্কে তিনি মেঘ
তার জন্য এক সমুদ্র আবেগ
থই থই করে ওঠে
যদিও কিছুই তাকে জানাতে পারিনি ঠোঁটে
ভক্তি ও ভালোবাসায় ভরা মন
শুধু একটি চুম্বন
দিতে গিয়ে ভুলে যায় সমস্ত কোলাহল
তা দেখে হিংসায় ফেটে পড়ে অন্ধ হলাহল
ভালোবাসা কি তবে সঙ-বিধিবদ্ধ,
ভাবনা ব্যাকুল এলোমেলো গদ্য
ব্রাকেটবন্দি করেনি তাকে
পছন্দের বাগানে সে ফুটে থাকে,
উড়ে যাচ্ছে মেঘ
সঙ্গে বিস্রস্ত আবেগ
জিঘাংসার আকাশ পেরিয়ে
নিজস্ব ঠিকানা খুঁজে অপ্রেম এড়িয়ে
রাজু আলীম-এর কবিতা
সময়ের কলে জল ঢালি আমি সারারাত ধরে
নিষাদ হাওয়া কাঁদে কাব্যজলে গহীন অন্তরে।
সুখের বাহুতে সুখদুঃখ লেখা, নেই আত্মীয়তা
সুনামির জলে ভেসে গেছে প্রেম, প্রিয় অনুগতা।
বনের হরিণ ফিরে আসে ঘরে, কবিমন কাঁদে
ছবির জানালা খোলা চিত্র আঁকি আকাশের চাঁদে।
জীবনের স্মৃতিকণা জলে স্থলে ঘুমায় নীরবে
জলবৃষ্টি মন জানে তবু তাঁর ভালোবাসা হবে।
বিশ্বাস ভাঙার খেলা পৃথিবীকে ভাঙে খান খান
সবুজ প্রেমের টানে যেতে চাই উড়ে, আন্দামান।
নদীকে বোঝার মতো ঢেউ নেই, তীরে ভাবি বসে
অদৃশ্য জলের মধ্যে ডুবি আমি আহা! নিজ দোষে।
পাথরের কান্না শুনি, নেই অনুবাদ ভাষান্তর
আলোর মন্দিরে হাঁটি, কেঁপে যায় গোপন অন্তর।
পেট্রল বোমার প্রেম
নায়কের নিষ্পাপ চোখ চকচক চকলেট লাল
পেট্রল বোমায় জ্বলে যাচ্ছে আজ যৌবনের কাল।
কালের কবিতা মেধা তালিকায় ওঠে না কখনো
বিচারের মাপকাঠি লোককথা নতুন বানানো।
শব্দের ভেতরে নেই গভীরতা, পাখি ঘুম যায়
সাজিয়েছি শব্দমালা যদি কিছু কাব্য হয়ে যায়।
মেজাজ আমার সবসময় বাদশাহী রাজা
সুযোগ পেলেই তাই বালিকারা দিয়ে যায় সাজা।
গোলাপি গন্ধের প্রেম শুয়ে থাকে মাথার ওপর
অলৌকিক জলে ঘ্রাণ খেয়ে ফেলে কাপড় চোপড়।
সূর্য নিভে যায় জ্বলে চিরদিন থাকে না একার
শহরতলির প্রেম এখনা’র জানে না কে কার।
হঠাৎ হারিয়ে গেছে নীল পাখি থাকেনি খাঁচায়
তবে সে আসতে পারে এই মন দিল দরিয়ায়।
ক্ষমতার পরী
কবিতা এখন খুব
হরতাল অবরোধে কাঁদে।
বোমার আঘাতে তারা লুকাবেই
আকাশের চাঁদে।
কবিতারা থাকে কেউ গুলশানে
ঢাকা উত্তরায়।
পড়ালেখা উড়ে গেছে ঠন ঠন
সব হায় হায়!
চলুন কবিতা-গল্প সব মিলে
সংলাপ করি।
চেয়ারে বসতে চায় স্বপ্নে দেখা
ক্ষমতার পরী।
ঘরের শত্রু
মনের ভেতরে অগ্নিজলে বসে আছি তোমার কাছেই
যদিও চাও না তুমি শত্রু থাক, তবু সে আছেই।
অনেক চোখের মধ্যে দেখি আমি বিড়াল কুকুর
সাগরের কাছে গিয়ে অন্যদের ভাবছে পুকুর।
ধার্মিকের বেশে আছে তিনি, যেন জানে না কিছুই
বকেদের বেশে হাঁটে, হাতে থাকে ঘৃণা ভরা সুঁই।
ঘরের ভিতরে শত্রু বন্ধু থাকে নব্য রাজাকার
বিচার চাইবো কার কাছে আমি, বুকে হাহাকার।
চারদিক আলো জ্বলে নিভু নিভু আছে অন্ধকার
উপরে নির্দেশ আছে হয়ে যেতে পারে বন্ধ দ্বার।
তোমার সামনে ঘোরাফেরা করে মানুষের বেশে
কুকুর নামের কিছু মানুষের জল-তেলে মেশে।
ধৈর্যের আলোয় আছি চুপচাপ বসে আছি আমি
ঈশ্বর আমাকে দাও ধৈর্যশক্তি ও হে অন্তর্যামী।
জিনিয়া চৌধুরীর কবিতা
রানার – এসেছো রানার
একটা প্রশ্ন ছিলো জানার
বলতে পারো কবে
স্মৃতিভরা ব্যথার বোঝা -দহন
আর কতকাল বইতে আমায় হবে ?
আর কতকাল রাত্রী হবে কালো?
আর কতবার বুকের মশাল জ্বেলে
ছড়িয়ে দেব প্রেম প্রদীপে আলো?
রানার তুমি বার্তা বাহক হয়ে
আমার দুটো গল্পো নিও বয়ে
আমি এখন অন্ধ জাতিস্মর
যেদিন থেকে সে হয়েছে পর।
গল্পদুটো ভরে কল্পখামে
ঠিক পাঠিও,প্রজাপতির নামে
দেয় যদি সে খামের গায়ে চুম
চোখে আমার নামবে সুখের ঘুম।
একটি পদ্মকুঁড়ি
একটি পদ্মকুঁড়ি লাঞ্চিত হলো আনাড়ির হাতে
একটি কুয়াশামাখা মুখ
বঞ্চিত হলো চুম্বনের উষ্ণতা পেতে।
কখনো সখনো রাতেরাও দিন গোনে
আর বারো কোটি লোক কান পেতে শোনে
অবর্ণনীয় চিৎকার।
মাতালের দেহ ধরে অবিরাম দোলা দেয়
অষ্টাদশী তরুনী
একই ধারাপাতে লেখা হয়
যৌবনের পাপ।
তেত্রিশ কোটি দেবতার পায়ে মাথা কুটি
ইশ্বরের নগ্নতায় দেখি নির্জীব শোষন
আমি হায় ইশ্বর.হায় ইশ্বর বলে করি মাতম
নচ্ছার ধরনী বার্তা পৌঁছায়না তার কাছে।
তোকেই লিখি প্রথম
তোকেই লিখি প্রথম
প্রেমের চিঠি
যখন তোর মন হারানোর বেলা
তখন তারায় রাখতি কেবল দিঠি।
প্রেমের চিঠি
লিখবো আবার আয়
আমার প্রিয় আকাশ টি
তুই আজও ।
তুই ছুয়েঁছিস প্রথম অনুরাগে
তুই খুলেছিস প্রথম বুকের ভাঁজও।
এখন কী আর তেমন করে আছিস
পারলে এখন নিজের মতো বাঁচিস।
আমার বুকে পাথর কুচির কাঁটা
তৃষ্ণাটা আর হয়নি কোথাও বাটা…