“ভীষণ ক্ষুধার্ত আছি উদরে শারীরবৃত্ত ব্যাপে
অনুভূত হতে থাকে প্রতিপলে সর্বগ্রাসী ক্ষুধা…
………………………………………………
ভাত দে হারামজাদা
তা না হলে মানচিত্র খাবো ।”
বহুল আলোচিত এ কাব্যখ্যাত কবি রফিক আজাদ আর নেই। শনিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিছানায় চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন তিনি। তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় তিন মিনিটের প্রার্থনা সভার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল কণ্ঠশীলন আয়োজিত ওয়াহিদুল হক স্মারণিক মিলনোৎসবের ২য় দিনের ২য়পর্ব।
এর আগে যথারীতি সকাল দশটায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে কণ্ঠশীলন শিল্পীবৃন্দ ২য় ও শেষ দিনের উৎসবের সূচনা করেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রইস উল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে শুরু হয় আগত আবর্তন শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ ও কথনপর্ব। ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর দেশত্ব বোধক গান ও তক্ষশীলার শিশুবন্ধুদের ব্রতচারী অভিপ্রদশর্নী ছিল এ পর্বের প্রধান আকর্ষণ।
দুপুরের পর পরই সংবাদ এলো কবি রফিক আজাদ আর নেই। উৎসবে নেমে এলো শোকের ছায়া। আলোচকবৃন্দ সকলেই উৎসব আমেজ হারিয়েছেন। অভিজ্ঞানপত্র বিতরণ করতে এসে তাই সাংস্কৃতজন সৈয়দ হাসান ইমাম, ওয়াহিদুল হক জীবন ও কর্মের আলোচক বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচারক ও নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী ছিলেন ভীষণ শোকাহত। কি বলবেন ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না কেউই। আসলে এমন একটা দুঃসংবাদ কেউই আসা করেননি উৎসব প্রাঙ্গণে।
তাই বলা যায় শেষদিনের শেষটায় ওয়াহিদুল হক স্মারণিক মিলনোৎসব পরিণত হয়েছিল প্রার্থনা সভায়। সকলের কণ্ঠে ধ্বণিত হচ্ছিল Ñ ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাবো।
তারপরও উৎসব এগিয়ে চলে ধীরালয়ে কল্পরেখার শিশুরা মঞ্চে আসে, শোকাবহ পরিবেশে দলীয় আবৃত্তি পরিবেশনা করেন আবৃত্তি একাডেমি, স্বরব্যঞ্জন ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের ধ্বনি।
‘এমন অনেক দিনইতো গেছে,
অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থেকেছি
হেমন্তের পাতা ঝড়ার শ্বদ শুনবো বলে
নিঃশব্দে অপেক্ষা করেছি বনভূমিতে ….’
রফিক আজাদের কবিতায় আজ আবৃত্তিশিল্পীদের চোখে জল। একক আবৃত্তিতে অংশ নেন- শব্দসৈনিক আশরাফুল আলম, অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, রূপা চক্রবর্তী, ইস্তেকবাল হোসেন, মাশকুর-এ সাত্তার কল্লোল, মজুমদার বিপ্লব, ফয়জুল্লাহ সাঈদ, ড.শাহাদৎ হোসেন নিপু, মাসুম আজিজুল বাশার, অনন্যা লাবণী পুতুল, সোহেল আনোয়ার, ফখরুল ইসলাম তারা ও শরীফ মজুমদার।
সব শেষে ছিল অচিনপাখি বাউল সমিতির পরিবেশনা। বাবুল বাউলের পরিচালনায় গেয়ে ওঠা বাউলীছন্দে পিনপতন নিস্তব্ধতা নামে শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, কেন্দ্রিয় পাবলিক লাইব্রেরী প্রাঙ্গনে। এভাবেই শোকের মাতনে শেষ হয় ওয়াহিদুল হক স্মারণিক মিলনমেলা।
সোনালী ব্যাংকের আর্থিক সহযোহিতা দুদিনব্যাপী এ উৎসবে গণমাধ্যম সহযোগিতা প্রদান করে এটিএন বাংলা, দৈনিক মানবজমিন, কালারস এফএম ও সাহিত্যবাজার ডটকম তাদের সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়েছেন। শোকাবহ এ দিনে তারাও কণ্ঠশীলনের সাথে দ্বৈতকণ্ঠে শোক প্রকাশ করেন কবি রফিক আজাদের প্রতি।
মরিয়া তুমি প্রমাণ করিলে
কখনোই তুমি মর নাই
আবৃত্তির মঞ্চে কবি তুমি
চিরকাল রচিলে ঠাঁই ।
কবিতার মাঝে তোমাকে খুঁজিব
কবিতায় জানাবো মনের স্বাদ
অমরত্বে চিরকাল রবে
মনের গহীনে রফিক আজাদ ।