মাসুম হাবিব এর তিনটি কবিতা
১.
জাগবে আবার কবে
তুমি যা ভাবছো সবকিছু নয় ঠিক
বোমা মারলেও ফিরবে না যুবা ঘরে,
জেগে ওঠবেই ঘুমন্ত পাবলিক
শেষ দেখা হবে যুদ্ধের প্রান্তরে।
স্বাধীনতা সেতো নয়তো সহজ কথা
স্বাক্ষী রয়েছে বিদ্রোহী মুজিবুর,
কুয়াশা সরেই হাসবে যে তৃণলতা
দেখে নাও তবে সকালের রোদ্দুর।
টুকটুকে লাল শার্ট পরেছে কারা
কারা পেয়েছেন সূর্যের আশকারা?
ইতিহাস পড়ে জেনে নাও ঠিক তবে
দেশপ্রেম সে জাগবে আবার কবে?
২. মৈথুনের স্বরলিপি
নির্জনতা আঁধার ঘরে মেলছে ডানা
দেয়াল ঘড়ি থমকে আছে আকাঙ্খাতে,
কোষের ভাঁজে অনুভুতি দিচ্ছে হানা
লাল প্লেটোনিক পায়রা উড়ে প্রিয়ার হাতে।
অদ্ভুত এক চোখের পুরুষ ওঠলো কেঁপে
বের হয়ে যায় পাখির বাসা খোঁজার ছলে,
অপেক্ষা আর সইছে না যে যাচ্ছে ক্ষ্যাপে
অধীর মনে প্রবেশ করে বনাঞ্চলে।
সুরক্ষিত সেই এলাকায় আগমনে
একেক করে খোলে গেলো সুখের ছিঁপি,
দৃশ্যগুলো ভাবছে কবি চন্দ্রাসনে
যায় কি লেখা মৈথুনেরই স্বরলিপি!
৩) অলৌকিক চশমা
একি চশমা আমার চোখে! পরিচিত মানুষদের বড্ড অপরিচিত মনে হচ্ছে। দোকানদার শফিকুলের চাঁদমুখ অবিকল শুয়োরের মতো। কি বিচ্ছিরি ব্যাপার! শাহবাগের পথে হাঁটছি। এই পথে চোখ বন্ধ করেও হাঁটা যায়। অতি চেনা পথ। এখানেই সভ্যতার প্রথম বীজ রোপন করেছিলাম কোন এক রাতে। এতো হিংস্র জানোয়ার আগে কখনো দেখিনি। আমি কি তবে ভুল পথে আসলাম? না না ভুল হবে কেনো! ফুলের দোকানগুলো ঠিকঠাক আছে। গন্ধ পাচ্ছি অতীতের, মিছিলের, সাহসের। ফুলসজ্জার যাবতীয় প্রসাধনীগুলো লাজুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পথের মানুষ মিয়া বাবরুলের সাথে আচমকা দেখা। তার চোখের দিকে তাকাতেই দেখি হাজার বছেেরর তৃষ্ণার্ত পাখিরা উড়ে গেলো আপন ঠিকানায়।
তারপর থেকে এখনও খুঁজে বেড়াই সেই অলৌকিক চশমা!!!
তিনটি কবিতা।। শমিত মণ্ডল
শালবনের ধারে পুরোনো বাড়িটি।শালপাতা পড়ে আছে বাড়িটির ছাদে।
লতাগুল্ম মানুষের টানে এগিয়ে এসেছে।কান পাতলে শোনা যায় জলধ্বনি।
নদী তত দূরে নয়।দূরের এ নদী অনেকটা বেঁকে এসেছে বাড়ির পাশে,
মানুষের টানে।
মানুষের ফুল্লভাষা,প্রীত গান একে-তাকে টানে।তাই কুটুম্বের টান
এড়াতে পারে না। ধীরে ধীরে আসে নদী, আসে বনভূমি।
আসে বনের পতঙ্গ আর পাখি।গান গায়,নাচে।
২. কবি ও কবিতা
গাছপালা যেন কথা বলে সে কবির কবিতায়।
কার সাথে কথা বলে?
কেন, ওই কবিরই সাথে।
কবিতায় নদীর জল থেকে উঠে আসেন স্বয়ং নদী।তার রূপ
শান্ত ও সমাহিত।
ছন্দকে ভাঙেন তিনি আবার ছন্দকে গড়েনও।
একটা অদ্ভুত রহস্য জমে থাকে তার কবিতায়।
কবিতায় রহস্য থাকলেও কবির মধ্যে রহস্য নেই কোনো।
৩. কয়েকজন প্রাপ্তবয়স্ক
কয়েকজন প্রাপ্তবয়স্ক, পুরুষ তারা, হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে
চায়ের দোকানে। চায়ের পর সিগারেট,আবার চা। ফাঁকে ফাঁকে কতবারই
যে হাসল তারা,কতবারই যে ইয়ার্কি দিল তার আর ইয়ত্তা নেই।দু’একটা
গালাগালও কি আর দিল না তারা?
ঢলে পড়ল বেলা। হাসতে হাসতে উঠে পড়ল ওরা।যে যার বাড়ির পথ ধরল।
বুঝতে পারলাম প্রাপ্তবয়স্ক এরা; তবু প্রাপ্তমনস্ক নয়।
মৈথিলী এর তিনটি কবিতা
মরচে ধরা আলো আর ব্যাঙের ছাতায়
নীল রঙ
পাখাটা চলতে চলতে থেমে গেছে কোন সকালে
আকাট মুর্খ ছেলেটা আশ্বিনের সাদা মেঘে
ধান বোনে
পরিযায়ীর ঝাঁক এসে থেমেছে আলপথে
সড়সড় করে সরে গেল একটা কালাচ
বেনেবৌ ভূল হাতে রোজ নিঃস্ব হয়
অতন্দ্র প্রহরীর মত জেগে ওঠে পাংশুটে গন্ধ।
২) শব্দ কুহেলিকা
শব্দ ব্যাপারী হেঁকে যায়,
শব্দ চাই শব্দ
লাল শব্দ, নীল শব্দ
গেরুয়া মাটির শব্দ,
সাথে পার্থিব অপার্থিব শব্দ কুহেলিকা
পায়রার খোপে বেঁচে আছি
ডানার ঝটপট শব্দ
ওরা উড়ে যায়
প্রত্যহ শব্দ রচনা করে
ওরা শব্দের ব্যাপারী।
৩) সরীসৃপ কথন
ঝিরঝির ঝিরঝির একটানা আওয়াজ হয়ে চলেছে
মেঘভাঙা সকালে
নিশ্চুপ বোগেনভেলিয়া,
মাথা দোলাচ্ছে নিশ্চিন্তে
আমি আছি
কবুতরের ভাঙা পালক
মাটিতে পড়ছে, চুপ
কোনো শব্দ নয়,
গোটা একটা টিনের গায়ে
খোলস ছাড়ছে সরীসৃপ
এখনও ঝিরঝিরে আওয়াজ
ছেঁটে দেওয়া ঝুমকোর শিষ বেরচ্ছে নিঃশব্দে
আমি আছি
বনজ গন্ধে আছি,
শালিখের ডানায় আছি,
বোর্ডরুমের দেওয়ালে আছি
অযাচিত পায়ের শব্দে ঘুম আসে একটানা
আমরা সরীসৃপ হব।
স্বাধীন চৌধুরী এর কবিতা
আগুনের দিন জ্বলে জ্বলে থাকে
আগুনের রাত আলো হয়ে যায়
আগুনের বৈভব বড় ভালোবাসি।
আমাদের পার্থক্য তো
আগুনে-রূপের ভেতর।
অরূপে যে যায় না চেনা !
রূপে আকারে এই সামান্য
আগুন হয়েই জ্বলি..
না থামুক আগুনের বিভীষিকা,
মোহনীয় ঢেউ !
আগুনের আঁচে
জ্বলুক না কেউ কেউ..
কথনগুচ্ছ
এক
মৌনতায় বসে থেকে কতো কথা বলে গেলে!
কতো হলো- না বলা কথায়
কতো কথা রয়ে গেলো না বলা ভাষায়
সব কথা না হোক বলা
সব কথা না থাকুক পাতায় পাতায়
তোমার মৌনতা
মনে মনে পড়ে নেবো
হলে প্রয়োজন…
দুই
দেখো! ডানাহীন পাখীর মনোহর উড়াল!
স্বপ্নপক্ষী গন্তব্যহীন গন্তব্যে ধাবমান
মন উড়ে যায় মন উড়ে যায় বলে
আজও গান ওই সুদূরের… !
তিন
বসন্ত টের পাই তোমার শোভিত বাগানে
জোড়াপাখী বলে যায়- সুসময় বয়ে যায়
কিন্নরী কণ্ঠ শুনে সুমধুর লহরী জনে জনে
চার
ওঁরা
জ্বেলেছিলেন প্রদীপ..
আলোর কালে অন্ধকারে
এই শিখাটি আরো তীব্র হোক
দিব্য, তাপিত হয়ে জ্বলুক
ভেতর বাহির..
পাঁচ
খুঁজি
তারাদের তারা
নক্ষত্রের নক্ষত্র
খুঁজতে খুঁজতে
জেনে যাই
সেইসব ইতিহাস-
অতঃপর মায়া কেটে গেলে
ফের আশাবাদী হতে বলি নিজেকে।