১৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বরিশালের মুলাদীতে অংশীজন অবহিতকরণ সভায় এসব তথ্য জানালেন সমবায় অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ বিশ্বাস।
মুলাদী উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান মিঠু খান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী।
তিনি বলেন, ‘সরকার বঙ্গবন্ধুর সমবায় দর্শনের আলোকে সমবায়ভিত্তিক গ্রাম উন্নয়ন, আইলবিহীন চাষাবাদ, কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার, আধুনিক মৎস্যচাষ, গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি সেন্টার স্থাপনকে প্রাধান্য দিয়ে প্রাথমিকভাবে ৯ জেলার ১০টি গ্রামে এই বঙ্গবন্ধু মডেল ভিলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন । প্রধানমন্ত্রীর গ্রামভিত্তিক উন্নয়নের ধারণাকে সামনে রেখে প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। সে লক্ষ্য পূরণে বরিশাল জেলার মুলাধী উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের চরকমিশন এবং গৌরনদীর হোসনাবাদ গ্রামকে বঙ্গবন্ধু মডেল গ্রামে রূপ দেয়া হবে। এ জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
হারুন অর রশিদ আরো বলেন, দেশে এখনো ৬০ ভাগ লোক কৃষির ওপর নির্ভরশীল। সে বিবেচনায় বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন বহুলাংশে পল্লী উন্নয়নের ওপর ভরসা করতে হয়। বঙ্গবন্ধু সবসময় কৃষি ও পল্লী উন্নয়নকে সামগ্রিক উন্নয়নের মূলশক্তি হিসেবে বিবেচনা করেছেন। সে লক্ষ্যে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। এরই আলোকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান হিসেবে সমবায় অধিদপ্তর ‘আমার শহর আমার গ্রাম’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পেও গ্রামের বৈশিষ্ট্য সমুন্নত রেখে সম্পদের সুষ্ঠু ও সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করা কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষির আধুনিকায়নে যান্ত্রিকীকরণ এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ও বাজার অবকাঠামো সৃষ্টির লক্ষ্যে বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান মহাপরিচালক ।
গত বছরের (২০২০) নভেম্বর মাসে ‘৪৯তম জাতীয় সমবায় দিবস-২০২০’ উপলক্ষে এসব মডেল গ্রাম গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই নির্দেশের পর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এই মডেল গ্রাম তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করে।
সম্প্রতি এই প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা করেছে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ। পিইসি সভার কার্যপত্রে দেখা গেছে, এই প্রকল্প দেশের ৮ বিভাগের নির্বাচিত জেলাগুলোয় বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও টাঙ্গাইল জেলা রয়েছে। ময়মনসিং বিভাগের জামালপুর, চট্টগ্রামের কুমিল্লা, সিলেটের সুনামগঞ্জ, খুলনার যশোর, রাজশাহীর রাজশাহী, রংপুরের রংপুর ও বরিশাল বিভাগের বরিশাল জেলায় দুটি গ্রামে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন
সমবায় অধিদপ্তরের যুগ্ম নিবন্ধক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিক উপলক্ষে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। কারণ দেশের উন্নয়নের বড় অংশ হচ্ছে গ্রাম। প্রধানমন্ত্রী আগেও বলেছিলেন, শহরের সুযোগ-সুবিধা গ্রামে পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে ১০টি গ্রামকে মডেল গ্রাম হিসেবে গড়ে তুলবো। সফল হলে দেশব্যাপী বড় আকারে প্রকল্প নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘শহরের মতো না হলেও যেন শহরের কাছাকাছি পর্যায়ের সব সুযোগ-সুবিধা গ্রামে পৌঁছাতে পারি, সে ব্যবস্থা করা হবে এই প্রকল্পে।’
জাকির হোসেন আকন্দ
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, ‘প্রকল্পটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হয়েছে। এর ফলে পিইসি সভাসহ অনুমোদনও তাড়াতাড়ি হবে। পাইলটিংয়ে সফল হলে প্রকল্পটি দেশব্যাপী বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী শহর ও গ্রামের বৈষম্য কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গ্রামের সঙ্গে শহরের দূরত্ব অনেক কমবে বলে আমি আশা করি।’
পিইসি সভায় প্রকল্পটির ওপর পরিকল্পনা কমিশন মত দিয়ে বলেছে, প্রকল্পের উদ্দেশ্যে ১০টি সমবায় সমিতি গঠন ও ৫ হাজার ৬০০ বর্গফুটের ১০টি কমিউনিটি ভবন নির্মাণের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। যা উদ্দেশ্যের পরিবর্তে প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত কাজ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
প্রস্তাবিত ডিপিপিতে অন্যান্য ভবন ও অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ১০টি কমিউনিটি ভবন নির্মাণে ৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে। ভবনগুলো নির্মাণে ১ বিঘা করে জমির প্রয়োজন। এজন্য কোনো জমি অধিগ্রহণ করা হবে কি না, তা উল্লেখ নেই। জমি অধিগ্রহণ করা না হলে জমির সংস্থান বিষয় ডিপিপিতে উল্লেখ করতে হবে।
দুই তলাবিশিষ্ট ১০টি কমিউনিটি ভবনের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণে বিল অব কোয়ানটিটি ধরে নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। স্যানিটারি, বৈদ্যুতিক কাজ, রাস্তা নির্মাণ, সীমানাপ্রাচীরের ব্যয় প্রাক্কলন একইভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে দেশের ৯ জেলার ১০টি গ্রামের মোট ৫০ হাজার মানুষ এ প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। ৪৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকার প্রকল্পটি গত ১৬ আগস্ট অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। বরিশালের মুলাদিতে এসে উল্লিখিত বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করলেন সমবায় মহাপরিচালক।