চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের পাশাপাশি বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন সারা বিশ্ব। হরতাল, অবোরোধে অতিষ্ট সাদারণ মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠছে, ঠিক তখনই নির্বাচন পরবর্তী সহিংশতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা নির্যাতন নতুন মাত্রা যোগ করেছে রাজনীতির মাঠে। এমনই বদলে যাওয়া প্রেক্ষপটে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের গোপন শপথ গ্রহণ নাটক নিয়েও জনমনে অনেক প্রশ্ন। প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কথায় কথায় ইনশাআল্লাহ শব্দটি নিয়েও।
তাই এ লেখাটি শুরুর প্রথমেই পবিত্র কোরআন থেকে কিছু উদ্বৃতি ব্যবহার করতে হচ্ছে। কারণ এ বিষয়ে বা আমাদের অনুকরণীয় ব্যক্তিবর্গের আচারণ নিয়ে পবিত্র কোরআন কি বলে জানা অতি জরুরী।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজ এর চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান অনুদৃত
পবিত্র কোরআন এর সূরা বাকারা, রুকু ২২ আয়াত ১৭৭ এখানে বলা হয়েছে যে, তোমাদের মুখমণ্ডল পূর্ব বা পশ্চিম দিকে (নামাজ পড়লেই) প্রত্যাবর্তিত করলেই তাতে পূণ্য নেই। বরং পূণ্য তার- যে ব্যক্তি আল্লাহ, আখিরাত, ফেরেশতা, পবিত্রগ্রন্থ সমূহ বা কেতাব ও নবীগনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আল্লাহকে খুশি করার জন্য আত্মীয়-স্বজন, এতিম, দরিদ্র, পথিক ও ভিক্ষুকদেরকে এবং দাসত্ব মোচনের জন্য ধন-সম্পদ ব্যয় করে। সালাত প্রতিষ্টা করে, জাকাত প্রদান করে এবং অঙ্গীকার করলে তা পূরণ করে।
প্রশ্ন : আমাদের নেতা-নেত্রীদের কতজন এই অঙ্গীকার করলে তা পূরণ করছেন? তাহলে কি তারা নিজেদের মুসলমান দাবি করতে পারেন?
রুকু ২৪ আয়াত ১৯১ এবং রুকু ২৭ আয়াত ২১৭ তে আল্লাহ বলেছেন, অশান্তি সৃষ্টি হত্যা অপেক্ষা গুরুতর অপরাধ ।
প্রশ্ন : ইসলামের নামে যারা এই অশান্তি সৃষ্টি করছে তারা কি তাহলে মুসলমান?
সূরা বাকারার অন্য একটি রুকু ২৮ আয়াত ২২৪ এ উল্লেখ করা হয়েছে , মানবমণ্ডলীর মধ্যে হীত সাধন, পরহেযগারী ও মীমাংসা করে দেয়ার ক্সেত্রে তোমরা স্বীয় শপথসমূহের জন্য আল্লাহ্র নামকে লক্ষ্যবস্তু বানিও না। অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে কোনো কসম করনা।
প্রশ্ন : সারা দেশে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো বা বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাস দমন করবো ‘ইনশাআল্লাহ’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি নেত্রীর এই ইনশাআল্লাহ ব্যবহার কি এখানে উপযুক্ত হচ্ছে?
ধর্মীয় চিন্তাবিদগণ এ বিষয়ে কি চুপ করেই থাকবেন?
চলমান রানৈতিক ধারায় দুইনেত্রীর ঝগড়ার সুযোগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ অনেকটা এগিয়ে ছিলেন সাধারণ জনতার বিচারে। কেননা তার স্বৈরাচার উপাধীটা যে রাজনৈতিক নোংরামী ছিল তা এখন মানুষ স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে। সাধারণ মানুষ দেখেছে ১৯৯৬ তে বিএনপি এবং ২০১৪তে এসে আওয়ামী লীগ কিভাবে স্বৈরাচার হয়েছে। তাই অনেকের কাছেই এরশাদ এখন নির্দোষ বলেই বিবেচিত। তার সেই বহুব্যবহৃত বিশ্ব বেহায়া উপাধীটিও এখন আওয়ামী লীগ দখল করেছে। যে কারণে এবারের নিরপেক্ষ নির্বাচনে কম হলেও ১২০টি আসন জাপার জন্য নির্ধারিত ছিল বলে বিশেজ্ঞদের ধারণা।
কিন্তু সব কিছু তালগোল পাকালেন এরশাদ নিজেই। নিজেকে একজন ধার্মিক পুরুষ দাবি করেও এরশাদ বারবার তাঁর কথার বরখেলাপ করেছেন। সম্প্রতী তার শপথ গ্রহণ এবং রওশন এরশাদের বিরোধী নেত্রী হওয়াটা জনগণ ভালো চোখে দেখেন নাই। যে কারণে বলা যায়, একুল ওকুল বিএনপির নয়, জাতীয়পার্টির (এরশাদের) হারাতে হবে আগামি সুষ্ঠধারার নির্বাচনে।
বিএনপি নেত্রীর প্রতি সাধারণ মানুষের আবেদন, আপনার আপোষহীনতা বজায় রাখুন, তবে হরতাল বেরোধ প্রত্যাহার করে নিজের দলের কর্মী-নেতাদের নিয়ে সংসদভবনের গেটে যেয়ে আমরণ অনশন করুন। কোনো অনশন নাটক না। দেশের প্রতি ভালবাসা থাকলে সত্যিকারের অনশন করুন। এভাবে দেশের ভিতর অশান্তি সৃষ্টি করবেন না।
সবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি নিবেদন এই যে, আপনার হাসি ঠাট্ট্রার রাজনীতি এবার বন্ধ করুন। আপনিও ক্ষান্ত দিন এবং বিএনপির সাথে আলোচনায় বসে সত্যিকারের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনুন। সবার আগে চাই স্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এবার অন্তত সেটা তৈরি করে দেখান। খুব ভালো হয় যদি আপনারা দুইনেত্রী এক টেবিলে বষে নিজেদের পদত্যাগ পত্র জমা দেন এবং দলীয় সেনত্রীত্ব যোগ্য কারো হাতে সোপার্দ করেন। আপনাদের বয়স হয়েছে। এবার বিশ্রাম নিন। ঘরে বসে আল্লাহকে ডাকুন ও ক্ষমা প্রার্থানা করুন অজ্ঞাত পাপের জন্য।