মীরপুরের গোলচক্করে ফুটপাত দখলের প্রতিযোগিতা: স্কুলের সামনে ডাস্টবিন 

আরিফ আহমেদ

Sharing is caring!

মীরপুরের গোলচক্করে ফুটপাত দখলের প্রতিযোগিতা: স্কুলের সামনে ডাস্টবিন 

বিশেষ প্রতিবেদক

ঢাকা সিটি করপোরেশন (ঢাসিক) এর চরম অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির অনন্য উদাহরণ মীরপুর গোলচক্কর এলাকার ৩ নং ওয়ার্ড। এই এলাকায় ময়লা, মাদক আর ফুটপাত দখলের যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চলছে তার পুরো দায়ভার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের। তাদের দায়িত্বের অবহেলা এখানে স্পষ্ট হয়ে ওঠে সরেজমিন অনুসন্ধানে।
১৪ ও ১৫ জানুয়ারি মীরপুর টাউনহল, ১০ নম্বর পুরাতন কাঁচা বাজার, হোপের গলিসহ আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়ক ও ফুটপাত পুরোটাই দখল করে বাণিজ্যিক পসরা বসিয়েছে ভাসমান হকারেরা। আর এদের বসার সুযোগ করে দিতে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের বাহিনীর সাথে বর্তমানের বেশকিছু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের তৎপরতা চোখে পড়ে।
আবার ৩ নং ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিগত বিতর্কিত কাউন্সিলরদের বিতর্কিত পদক্ষেপগুলোকে এখনো আঁকড়ে আছে এই বৈষম্য বিরোধী প্রশাসন। অভিযোগ জানালে, এখনো পরষ্পরকে দোষারোপ করার প্রবণতা কর্তৃপক্ষের। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়ে ওয়াকিটকি কোমড়ে ঝুলিয়ে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা হিসেবে জাহির করা এবং বাসাবাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা আনা-নেওয়ার ভ্যানভাড়া বৃদ্ধির জন্য ছুটে বেড়ানো, কেউ প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসী কায়দায় ওয়াকিটকি ব্যবহার করে সবাইকে জড়ো করা ছাড়া আর কোন উন্নয়নমূলক ভূমিকা দেখা যায়নি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শক বা ফিল্ড ইন্সপেক্টরদের।
মীরপুর ১০ নম্বর পুরাতন বাজার সড়কের পাশে সেনপাড়া পর্বতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঠিক প্রবেশপথ সংলগ্ন দেয়াল ঘেঁষে রাখা হয়েছে বাজারের যাবতীয় বর্জ্য ফেলার ডাস্টবিনটি। ডাস্টবিনের চারপাশে, সড়কের উপরও ময়লা আবর্জনার স্তূপ। রিকশা চালক, পথচারী যখন তখন প্রশ্রাব করতে বসে যাচ্ছে স্কুলের দেয়াল ঘেঁষে। এ পথে যেই যাচ্ছে, নাকে রুমাল চেপে তবেই পার হচ্ছে এটুকু পথ। পাশেই কিন্তু হাজারো প্রায় শিক্ষার্থী নিয়ে মীরপুরের সুখ্যাতি সম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটি। কোমলমতি শিশুদের চলাচল, পড়াশুনা ও স্কুল মাঠে খেলাধুলা বন্ধ হবার উপক্রম এই ময়লা পঁচা গন্ধের কারণে। পাশাপাশি সন্ধ্যা হলেই মাদকের আখড়ায় পরিণত হয় এই বাজার ও টাউনহল মাঠসহ আশেপাশের সড়কের অলিগলি। সড়কে আলোর ব্যবস্থা নেই দীর্ঘদিন। বাজারের পঁচা বর্জ্যের পাশাপাশি মাদকের বিকট দুর্গন্ধে সবসময় ভারী হয়ে আছে এই এলাকা। এ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের লেখিত অভিযোগ ছাড়াও স্থানীয় সচেতন বাসিন্দাদের প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করে গত প্রায় পনের বছর ধরেই চলছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা। বলা যায়, তিন ওয়ার্ড ছাড়াও মীরপুর ১০ নম্বর গোলচক্কর, মীরপুর স্টেডিয়াম, গার্লস আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ, হোপের গলি, এভিনিউ ফাইভ ও ১১ নং বাজার এলাকা নিয়ে গঠিত সিন্ডিকেট এখনো নিয়ন্ত্রণ করছে এসব অবৈধ কার্যকলাপ।
এখানে যত দোষ নন্দ ঘোষ অর্থাৎ সাবেক পলাতক কাউন্সিলরদের ঘাড়ে চাপিয়ে তাদের অপরাধমুলক কর্মকাণ্ড রীতিমতো জিইয়ে রেখে তাতে আরো নতুন করে তাঁ দিচ্ছেন স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। যার সুযোগ নিচ্ছেন সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন উত্তর ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিকই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে এই ডাস্টবিন রাখার জন্য দায়ী। সেসময় প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদ না করলেও গোপনে একাধিক লেখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন মীরপুর ১০ এ ব্লকের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুস্তাফিজুর রহমান বললেন, গত ২০১৪ সালে আমাদের অভিযোগের কারণে কয়েকমাস এটি সরিয়ে নেয়া হয়েছিল, কিন্তু কাউন্সিলর মানিক এসে এটি পুনরায় এখানে বসিয়ে দিয়েছে। এই বিদ্যালয়ে ৯০০ এর বেশী শিক্ষার্থী যারা সবাই শিশু। এই শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে হলেও ডাস্টবিনটি সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে মানিকের এর প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক বিতর্কিত নেতা টিঙ্কু ৫ আগস্টের পর এলাকায় দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজি বুঝে নিলেও এই বিষয়ে সেও নিরব। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মীরপুরের সমন্বয়করাও এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাসিক উত্তর ৩ নং ওয়ার্ড প্রশাসককে খুজতে যেয়েই উঠে আসে অনেকগুলো নাম। যারা হোপের গলি, ১০নং গোলচক্কর এলাকার ফুটপাত দখল নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানা গেছে। আর এদের রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট। এলাকার মাদকের বাণিজ্য এরাই নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানা যায়।
৩ নং ওয়ার্ড কার্যালয়ের প্রশাসক খুঁজতে গেলে ১০ নং গোলচক্কর সংলগ্ন পুরাতন টাউনহল মাঠে গিয়ে চোখে পড়ে ঢাসিক কর অঞ্চল ৪ আঞ্চলিক কার্যালয়। এখানে মাঠের ভিতরে শ্রমিক ইউনিয়ন, ফেডারশন, কর্মচারী ইউনিয়ন নামের সাইনবোর্ড ও অফিস রয়েছে। অফিসগুলোর ভিতর টাসের আড্ডা চলছে। গাঁজার গন্ধ স্পষ্ট টের পাওয়া যায়। বাহিরে পুরো মাঠ দখল করে আছে সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি, ট্রাক্টর সহ ভারী যানবাহন। অথচ ২০০৩ সালে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এই মাঠটিতে অত্যাধুনিক নাট্যমঞ্চ সহ টাউনহল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তৈরি করেছিলেন একটি মুক্তমঞ্চ। যদিও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না কর অঞ্চল ২ ও ৪ এর প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। কর অঞ্চল ৪ এর সামনের এই মাঠের বিভিন্ন কোনোয় সন্ধ্যার পর মাদকের কেনাবেচা হয়, গভীর রাত পর্যন্ত বহিরাগতদের আড্ডা হয়। এ নিয়ে কিছুই করার নেই বলে জানান কর অঞ্চল ৪ এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা
তুফানি লাল রবি দাস। তিনি বলেন, এটি কর অঞ্চল ২ এর জায়গা। আমরা ভাড়াটিয়া মাত্র। আর কর অঞ্চল ২ মীরপুর সনি সিনেমা হলের পাশে। ওখানে কথা অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেন তিনি।
অথচ এই মাঠ ও আশেপাশের এলাকায় মাদকসহ বিভিন্ন দুষ্কর্ম্মের সাথে জড়িত এই জোন ৪ এর কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীও। এদের মধ্যে ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মানিক বাহিনীর পারভেজ, সোহেল ও জসিম। টিঙ্কু বাহিনীর আলমগীর, বাপ্পি, জুলহাস ( গাঁজা) জোন ৪ কর্মচারী হাসান ও রাজ্জাক এর নাম রয়েছে। হাসান ও রাজ্জাক ইতিপূর্বেও দূর্নীতির কারণে এরেস্ট হয়েছিল। অথচ এখনো চাকুরীতে বহাল তবিয়তে রয়েছে বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এছাড়াও রয়েছে ছাত্রদলের নেতা ৩ নং ওয়ার্ডের নাসির। এরা ছাড়াও রয়েছে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের সহকর্মীদের অনেকেই। মীরপুরে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে ছাত্র জনতার উপর আক্রমণ চালিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার আগে এখানে ৩নং ওয়ার্ডের আহ্বায়ক শেখ আক্কাস আলী, প্রথম ও দ্বিতীয় যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম (নজু) ও জাহাঙ্গীর আলম (লালন) এর কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা বরং তারাই মীরপুর টাউনহল মাঠ ও আশেপাশের এলাকায় টোকাই শ্রেণীর লোকজন নিয়ে মাদকের আখড়া বসিয়েছে বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে যেকোনো দিন সন্ধ্যার পর টাউনহল মাঠ ছাড়াও সিটি করপোরেশনের অঞ্চল ৪ আঞ্চলিক কার্যালয়কে ঘীরে জমজমাট হয়ে ওঠা বিভিন্ন সংগঠনের কার্যালয়ে, মুক্তমঞ্চ ঘুরে দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলে জানান একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী। এদের একটি অংশ আবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এসে রাতের বেলা জুয়ার আড্ডা বসায় এবং নিরাপত্তা রক্ষীকে মারধর করে ভবনের ছাদে বা কক্ষে আড্ডা বসায় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কাউন্সিলর মানিকের আয়ের বড় একটি খাত ছিলো এই বাজারসহ আশেপাশের ফুটপাত ও মিরপুর ১০ নম্বরের হোপ স্কুলের গলি। সেখানেও বসানো হয়েছে বাজার। পাঁচ বছর ধরে সেখানে প্রায় এক হাজার দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা নিতেন মানিক। দোকান বরাদ্দ দেওয়ার নামেও এককালীন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নিয়েছে সে ও তার অনুসারীরা। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর এখন এসবকিছু লালন ও টিঙ্কু বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে মানিকের লোকজনই এখন টিঙ্কুর সহযোগী।
একজন বিএনপি কর্মী জানান, অনেকের দাবী মিরপুরের মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ছিলো মানিকের হাতে। অথচ মানিক তাবলিগ জামাতের অনুসারী ছিলেন এবং প্রচণ্ডভাবে মাদক বিদ্বেষী ছিলেন। তবে মীরপুর আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ছিলো এখানের মাদক কারবারীরা। ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রউফ নান্নু তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার ভাই কচি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের একজন। যাদের খুশি রাখতে মানিক নিরবতা পালন করতো। মানিকের সহযোগী অনেকেই তখন মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগী ছিলো। এখনও এরা টিঙ্কুর সাথে মিলে এই এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। বিএনপির অনেকেই এর সাথে জড়িত বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মীরপুরের সমন্বয়ক ও সেনাবাহিনীও সবকিছু জানে। তারাই কিছু করতে পারছে না।
পুরাতন বাজার এলাকার মসজিদ সংলগ্ন একজন ব্যবসায়ী বলেন, এখানকার আওয়ামী লীগ নেতা ফকির মহিউদ্দিন মারা যাওয়ার পর থেকেই তিন নম্বর ওয়ার্ড মাদকের বাণিজ্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই ওয়ার্ডে ছোট-বড় ১৩টি বিহারি ক্যাম্প ও ৯টি বস্তিকে কেন্দ্র করে ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের ব্যবসা হয়। যার টাকা দিয়ে বিহারি ক্যাম্পগুলোতে বাবর ওরফে হিজড়া বাবর, কাল্লু ওরফে বাবা (ইয়াবা) কাল্লু, আজহার ও আরমানের নেতৃত্বে বিশাল সিন্ডিকেট এউ মাদক কারবার দেখাশোনা করে। হিজড়া বাবর নিজেকে হিজড়া দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে সে হিজড়া নয়। তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি কাল্লু সেকশন-১১, মুসলিম ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকায় মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করে। এদের গডফাদার ছিলেন আব্দুর রউফ নান্নু ও তার ভাই কচি।
এদের সবাই এখানে বিএনপির নেতাকর্মীদের একটা অংশকে সাথে নিয়ে এসব অবৈধ ব্যবসাসহ ফুটপাতের চাঁদাবাজি ধরে রেখেছে। যে কারণে ৫ আগস্টের পর ১০ নম্বর গোলচক্কর ও আশেপাশের এলাকায় ফুটপাত দখল করে হকারদের দৌরাত্ম আগের চেয়ে বেড়েছে বলে জানান এলাকার বাসিন্দারা।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, গোলচক্কর এলাকার ফুটপাতের দখল তিনভাগে বিভক্ত। মডেল থানা বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এবং পুলিশ, কাফরুল থানা বিএনপি, আওয়ামী লীগ এবং পুলিশ আবার পল্লবী থানা বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশ যৌথভাবে এই ফুটপাতের দখল ধরে রেখেছে বলে জানান তারা। আর এগুলো থেকে এখনো টাকা-পয়সা আদায় করে আওয়ামী লীগ নেতাদের ফেলে যাওয়া কর্মীরাই। আজহার ও আরমান, সোহেল, জসিম সহ আরো অনেকে ৩ নং ওয়ার্ড অংশের ফুটপাত থেকে চাঁদা তুলে স্থানীয় বিএনপিসহ প্রভাবশালী ব্যাক্তদের হাতে তুলে দিচ্ছে বলে জানান তারা। সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা আসাধও সবকিছু জানে এবং এ নিয়ে তার কোনো ভূমিকা বা প্রতিবাদ নেই বলে জানান এলাকাবাসী।
জানা গেছে বিগত ২০১৪ সাল থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু ৩ নং ওয়ার্ডেই জুটের ব্যবসা ও মাদক কারবার নিয়ে বিরোধের জেরে ২০/৩০ টির মতো হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। একাধিকবার অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে এই ওয়ার্ডে। গোলচক্কর ফুটওভার ব্রিজ থেকে চারপাশের প্রবেশপথ পুরোপুরি হকারদের দখলে। নারী-পুরুষ শিশুদের চলাচলের কষ্ট স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হকারদের দৌরাত্ম যতটা না, তারচেয়ে বেশি ফুটপাতের ক্রেতাদের জটলা। যে জটলায় ক্রেতা কম, বখাটেপনা বেশি। ভিড়ের সুযোগে পকেটমার, নারীদের শ্লীলতাহানি ঘটছে অহরহ। গোলচক্কর থেকে পশ্চিমে স্টেডিয়াম এবং পূর্বে হোপের গলি পর্যন্ত, দক্ষিণে শাহআলী মার্কেট সীমানা এবং উত্তরে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার পর্যন্ত ফুটপাত পুরোটাই দখল করে হকারদের দৌরাত্ম। আর এদের বাণিজ্যিক ফায়দা নিতে স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর জমজমাট আড্ডা পুরাতন টাউনহল মাঠ বা সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাঠ, সেনপাড়া পর্বতা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০ নং গোলচক্কর পুরাতন বাজার, হোপের গলি ও মিরপুর স্টেডিয়ামের আশেপাশের গলিতে। কোনো ক্রেতার সাথে হকারদের ঝগড়া বা কথা কাটাকাটি হলেই এরা ছুটে যাচ্ছে এবং হকারদের পক্ষ নিয়ে ক্রেতাকে সর্বশান্ত করছে বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে এখানে।
এসব বিষয়ে নিয়ে সরাসরি কথা হয় ঢাকা সিটি করপোরেশন (ঢাসিক) কর অঞ্চল ২ এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শকদের সাথে। কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, ফুটপাত দখল মুক্ত করতে আমরা বারবার পদক্ষেপ নিয়েও তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছি। এজন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমাদের কর্মতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। মাদকের বিযয়টি পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে ডাস্টবিন সরিয়ে নিতে একটু সময় ও আলোচনা প্রয়োজন। কেননা ডাস্টবিন কোথায় বসবে তা নির্ধারণ করা খুবই কঠিন বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!

About the author

ডিসেম্বর ৭১! কৃত্তনখোলার জলে সাঁতার কেটে বেড়ে ওঠা জীবন। ইছামতির তীরঘেষা ভালবাসা ছুঁয়ে যায় গঙ্গার আহ্বানে। সেই টানে কলকাতার বিরাটিতে তিনটি বছর। এদিকে পিতা প্রয়াত আলাউদ্দিন আহমেদ-এর উৎকণ্ঠা আর মা জিন্নাত আরা বেগম-এর চোখের জল, গঙ্গার সম্মোহনী কাটিয়ে তাই ফিরে আসা ঘরে। কিন্তু কৈশরী প্রেম আবার তাড়া করে, তের বছর বয়সে তের বার হারিয়ে যাওয়ার রেকর্ডে যেন বিদ্রোহী কবি নজরুলের অনুসরণ। জীবনানন্দ আর সুকান্তে প্রভাবিত যৌবন আটকে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পদার্পন মাত্রই। এখানে আধুনিক হবার চেষ্টায় বড় তারাতারি বদলে যায় জীবন। প্রতিবাদে দেবী আর নিগার নামের দুটি কাব্য সংকলন প্রশ্ন তোলে বিবেকবানের মনে। তার কবিতায়, উচ্চারণ শুদ্ধতা আর কবিত্বের আধুনিকায়নের দাবী তুলে তুলে নেন দীক্ষার ভার প্রয়াত নরেণ বিশ্বাস স্যার। স্যারের পরামর্শে প্রথম আলাপ কবি আসাদ চৌধুরী, মুহাম্মদ নুরুল হুদা এবং তৎকালিন ভাষাতত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রাজীব হুমায়ুন ডেকে পাঠান তাকে। অভিনেতা রাজনীতিবিদ আসাদুজ্জামান নূর, সাংকৃতজন আলী যাকের আর সারা যাকের-এর উৎসাহ উদ্দিপনায় শুরু হয় নতুন পথ চলা। ঢাকা সুবচন, থিয়েটার ইউনিট হয়ে মাযহারুল হক পিন্টুর সাথে নাট্যাভিনয় ইউনিভার্সেল থিয়েটারে। শংকর শাওজাল হাত ধরে শিখান মঞ্চনাটবের রিপোটিংটা। তারই সূত্র ধরে তৈরি হয় দৈনিক ভোরের কাগজের প্রথম মঞ্চপাতা। একইসমেয় দর্শন চাষা সরদার ফজলুল করিম- হাত ধরে নিযে চলেন জীবনদত্তের পাঠশালায়। বলেন- মানুষ হও দাদু ভাই, প্রকৃত মানুষ। সরদার ফজলুল করিমের এ উক্তি ছুঁয়ে যায় হৃদয়। সত্যিকারের মানুষ হবার চেষ্টায় তাই জাতীয় দৈনিক রুপালী, বাংলার বাণী, জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক, মুক্তকণ্ঠের প্রদায়ক হয়ে এবং অবশেষে ভোরেরকাগজের প্রতিনিধি নিযুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ান ৬৫টি জেলায়। ছুটে বেড়ান গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। ২০০২ সালে প্রথম চ্যানেল আই-্র সংবাদ বিভাগে স্থির হন বটে, তবে অস্থির চিত্ত এরপর ঘনবদল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, আমাদের সময়, মানবজমিন ও দৈনিক যায়যায়দিন হয়ে এখন আবার বেকার। প্রথম আলো ও চ্যানেল আই আর অভিনেত্রী, নির্দেশক সারা যাকের এর প্রশ্রয়ে ও স্নেহ ছায়ায় আজও বিচরণ তার। একইসাথে চলছে সাহিত্য বাজার নামের পত্রিকা সম্পাদনার কাজ।