প্রিসিলার খোলাচিঠি -বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর প্রতি

অতিথি লেখক

Sharing is caring!

শ্রদ্ধেয় জনাব তারেক রহমানকে স্যারকে অনুরোধ

স্যার,
যদি আপনি আজই ঘোষণা দিতেন যে— যতদিন ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেঁচে থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন, ততদিন তিনি হবেন আপনার প্রধান উপদেষ্টা এবং রাষ্ট্রপতি—তাহলে কি হতে পারত, তা কি আপনি কল্পনা করতে পারেন?
এই ঘোষণার পরই পঙ্গু হয়ে পড়ত অন্য সব রাজনৈতিক দল, থেমে যেত সব সমালোচনা, নিস্তব্ধ হয়ে যেত সব কণ্ঠ।

আপনি যদি আরও একটি ঘোষণা দিতেন—তরুণ আশিক চোধুরী হবেন অর্থনীতি, বিনিয়োগ ও পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা টিমের প্রধান – তাহলে কী হতে পারত, তা কি ভাবতে পারেন?
আপনি এমন আরও কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যা বদলে দিতে পারে আপনাদের ভাবমূর্তি এবং দলের প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি।লাভবান হত দেশ , বিশ্বাস বাড়ত বিনিয়োগকারী দেশগুলোর ।
এটা আপনি করবেন না বা করতে পারবেন না , কারণ আপনার দলের মুরব্বীরা এটা করতে দেবে না ।

আপনার দলে এমন কে আছেন, যার কথা বিশ্বের যেকোনো রাষ্ট্রপ্রধান শুনতে বাধ্য হন, অথবা যিনি আন্তর্জাতিক মহলে সম্মানিত?
আপনার দলে এমন কে আছেন, যাকে ড. ইউনূসের মতো টাকা দিয়ে লেকচার দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়?

জনাব আশিকের বক্তৃতাটি শুনুন। আপনার কি এমন কেউ আছেন, যিনি এমন ভাবেন, এমন বক্তৃতা দিতে পারেন, এবং যাঁর কথা শ্রদ্ধাভরে মানুষ বসে বসে শোনে? ফখরুল স্যার , আব্বাস স্যার বা অন্য এমন কে আছেন যারা ডঃ ইউনুস বা আশিক চৌধুরীর মত বিশ্ব নিয়ে জ্ঞান রাখেন ?

বর্তমান দেশের জনগণ বা ভোটার আর বিশ বছর আগের ভোটার এক জিনিস নয় , এটা মাথায় নিচ্ছেন না কেও এবং এই একই কারনে সব নিয়ন্ত্রণে থাকা সত্বেও পালাতে হয় হাসিনা আপাকে ।

জনাব তারেক রহমান, এক দু বছর আগে আমি এক ভিডিওতে শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করেছিলাম—উনার উপদেষ্টারা কারা? আজ, একই প্রশ্ন আপনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য: আপনার উপদেষ্টারা কারা? তারা কি কিছুই দেখে না? কিছুই বোঝে না?

আমি নিশ্চিত, ড. ইউনূস এমন প্রস্তাবে রাজি হবেন না। আবার এটাও নিশ্চিত, তিনি না করেও স্থির থাকতে পারবেন না। কারণ, এটি এখন দেশের চাওয়া, জনগণের চাওয়া।

এই সিদ্ধান্তে আপনার কী ক্ষতি হতে পারে? উনার বয়স হয়েছে । বাচঁবেনইবা আর কত দিন ? কতদিন কাজ করতে পারবেন ?
তবে এসবের আগে আপনাকে নিজের দলের নেতাদের শিক্ষা দিতে হবে—কীভাবে একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে সম্মান জানাতে হয়।
যাকে সারা বিশ্ব দাঁড়িয়ে সম্মান করে, তাকে আপনার দলের পিয়ন কিংবা দারোয়ানের ছেলে নেতারা হুমকি দেয়।
আজ আপনাদের জনপ্রিয়তা আছে, হয়তো ক্ষমতায়ও আসবেন। কিন্তু আপনার পথ হবে কণ্টকাকীর্ণ, কারণ আপনার পাশে তরুণ, মেধাবী মানুষের অভাব আছে।
যারা আছেন, তারা অধিকাংশই শুধু ক্ষমতা চায়।
আপনার প্রত্যেক জনপ্রিয় নেতার ইলেকশন দাবির পোস্টে ৮০ % মানুষ ‘হা হা’ রিয়্যাক্ট দেয়—এটা কী ইঙ্গিত দেয়?

এই লেখাগুলো আমার গবেষণার ফলাফল। আমার সাথে একটি বিশাল টিম কাজ করে—তারা কেউ ক্ষমতা-লোভী নয়। তাদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকসহ সব পেশার মানুষ আছেন।
তারা নিজেদের প্রচারে আগ্রহী নয়—দেশকে ভালোবাসেন।

বর্তমানে ক্ষমতায় গেলেও টিকে থাকাটা হবে আপনার জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। খাদ্য, বিদ্যুৎ, গার্মেন্টস শিল্প, বিনিয়োগ—সবকিছুই আজ ধ্বংসের মুখে।
ড. ইউনূস চেষ্টা করছেন সবকিছু কিছুটা ঠিক করার।
আপনি কি মনে করেন, আপনি ক্ষমতায় গেলে আপনার মন্ত্রীরা এইভাবে কাজ করবেন? এই যোগ্যতা উনাদের আছে ? সেনাবাহিনী আপনার পক্ষে কাজ করবে ?
প্রশাসন আপনার কথা শুনবে ?
পাশের দেশ আপনাকে সুখে রাখবে ?
আজ আপনার দলের নেতারা আপনার কথা শোনে না। কর্মীরা নিয়ন্ত্রণে নেই , আপনি যেমন ভদ্রভাবে কথা বলেন, আপনার দলের নেতাদের সেই সৌজন্যবোধ নেই।
একজন নেতা তো প্রকাশ্য মিটিংয়ে বলেছে—আপনি তাকে ভয় পান, তাই তাকে ফোন না দিয়ে তার স্ত্রীকে ফোন দেন!
স্বার্থে আঘাত পেলে সে আবার বলবে—আপনি গোপনে তার স্ত্রীকে ফোন দিয়েছেন , অন্য কারণে , স্ক্রিন শট সাংবাদিকদের দেখাবে !
যে এইরকম দাবি করতে পারে, সে সব কিছু বলতেই পারে! সে নাকি নোবেল পাবে ! এমন দাবীও করেছেন !

আপনার দলের নেতাদের অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তার কারণে আজ মানুষ আপনাদের নিয়ে হাসাহাসি করে।
আপনি যদি বলেন—সোশ্যাল মিডিয়ার রিপোর্ট সঠিক নয়—তাহলে আমি বলব, এই ভাবনাটাই আপনাকে ডুবাবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘটনা কি মনে আছে? যিনি সোশ্যাল মিডিয়ার চাপে ক্ষমতা হারিয়েছিলেন?
আজ সোশ্যাল মিডিয়া হলো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম—এর বিকল্প নেই।

তাছাড়া, সবাই ড. ইউনূস নয়। ড. ইউনূসও তরুণদের পছন্দ করেন।
তাই, বয়স্কদের যথাযথ সম্মান দিয়ে অবসর দিন। আর নিজে হাল ধরুন, কঠোর হোন।

যদি কোনো বাধা থাকে, জনগণের সামনে লাইভে এসে বলুন।
মানুষ বিএনপিকে ভালোবাসে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও আপনার কারণে।
বিএনপি থেকে বেরিয়ে গেলে উনারা শুন্য হয়ে যাবেন।
তাই ভয় পাবার কিছু নেই।

আমার কথা শোনা আপনার জন্য জরুরী নয়, জরুরী জনগণকে শোনা । কিন্তু যদি আপনি পরিবর্তনের পথে না হাঁটেন, আধুনিকতা ও জনগণের মতামতকে অগ্রাধিকার না দেন—তাহলে নিশ্চিত বিপদ আপনার অপেক্ষায় ।

আপনার রাজনীতিতে এক ধরনের শীতলতা ও নিরাপদ দূরত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে—এটা শুভ লক্ষণ নয়।

কেন আপনারা সেইসব লোকদের সঙ্গ দিচ্ছেন, যাদের জনগণ পছন্দ করে না? কেন সেই দলের নাম বলেন , পক্ষে বলেন , যাদের সরাতে জীবন দিয়েছে অনেক তরুণ , আহত এখনও হাজার হাজার ! কেন সেদিন আপনার মহাসচিব বলেছিল ছাত্রদের সাথে আপনারা নেই ? আপনি নিজে যেখানে মিটিং করেছিলেন ছাত্রদের সাথে ?
কোন দলের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন উনি ?
সময় কম , সিদ্ধান্ত নিতে হবে দ্রুত । তা না হলে , বল চলে যাবে অন্যদের নিয়ন্ত্রণে ।তখন কিছু করার থাকবে না আপনার ।
আপনার ভাবতে হবে ক্ষমতা বড় না দেশ বড় ? দেশের উন্নয়ন বড় ? কাকে দিয়ে দেশের উন্নয়ন হবে । এটা ভাবলেই ক্ষমতা হবে দীর্ঘস্থায়ী ও নিরাপদ ।এর কোন বিকল্প নেই ।

আপনার চারপাশে অনেক মানুষ থাকলেও , আপনাকে সঠিক সময়ে সঠিক বুদ্ধি দেয়ার লোকের বড় অভাব ।তাই বাধ্য হয়ে fb তে লিখতে হল ।আপনি আমার লিখা দেখেছেন , পড়েছেন এবং আপনার টিম আমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!