ঢাকা যেন মগের মুল্লুক : যানজটে অস্থির নগরী, হকারদের দৌরাত্ম বেড়েছে চাঁদার পরিমাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাহিত্য বাজার

Sharing is caring!

ঢাকা যেন মগের মুল্লুক : যানজটে অস্থির নগরী, হকারদের দৌরাত্ম বেড়েছে চাঁদার পরিমাণ

,বিশেষ প্রতিবেদক

যানজটে অস্থির রাজধানী ঢাকার চিত্র এখনো একইরকম। পাতালরেল, মেট্রোরেল কিম্বা উড়ালসড়ক কোনোটাই ঢাকার যানজট থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করতে পারলোনা। মতিঝিল থেকে শুরু করে মীরপুর বা গাবতলি যেতে যতগুলো চৌরাস্তা রয়েছে সবগুলোতেই দীর্ঘ ট্রাফিক জট। আর এসব জটের অন্যতম কারণ ভাসমান দোকান ও অটোরিকশা। প্রধান সড়কে এই অটোরিক্সা গুলোর চলাচলের জন্য রয়েছে নানামুখী অভিযোগ। ভীত ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করেই এগুলো চলছে বলে জানালেন অনেকেই।
শুধু ফুটপাত নয়, বেশিরভাগ সড়কের প্রায় অর্ধেক এখন হকারদের দখলে। আর এই দখলদারিত্ব রাজনৈতিক দলগুলো বা স্থানীয় প্রভাবশালী কোনো নেতার ছত্রছায়ায় ক্রমশ বেড়েই চলছে বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেল নীলক্ষেত থেকে মীরপুর ১০ ও ১৪ কচুক্ষেত বাজার সড়কে দাঁড়িয়ে। সরেজমিনে এই চিত্র দেখা গেছে গত ১২ থেকে ১৪ জানুয়ারী যথাক্রমে রবি ও মঙ্গলবার স্থানীয়ভাবে মার্কেট বন্ধের দিনে। রবিবার মীরপুর এলাকার প্রায় সব মার্কেট বন্ধ থাকার নিয়ম চলে আসছে বিগত ২০১৪ সাল থেকে। তাই প্রতিটি মার্কেটের সামনেই ভাসমান ভ্যান বা ফুটপাত দখল করে বাণিজ্যিক পসরা বসে। আগে এই জন্য দোকান প্রতি ২০০/৩০০ টাকা চাঁদা নিত আওয়ামী লীগের নেতাও পুলিশ। এখন বেড়েছে চাঁদার পরিমাণ। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও পুলিশের প্রতিনিধি এই চাঁদা নিচ্ছে ৫০০/৬০০ টাকা বলে জানালেন মীরপুর ১০ হোপের গলি ও ১৪ সড়কের বাজার বসানো কয়েকজন ব্যবসায়ী। বিশেষ করে ১০ নং গোলচক্কর এলাকার ফুটপাত ও হোপের গলি নিয়ে অসংখ্য অভিযোগ এখানে। এলাকাবাসী বলেন, কীসের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন? কোনো পরিবর্তনতো হয়নি। হোপের গলিতে আগে সড়কের একপাশে শ’তিনেক দোকান বসত। এখন তা সড়কের দুপাশে হাজার ছাড়িয়েছে। পলাতক আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর মানিকের লোকরাই বিএনপির নেতৃত্বে এগুলো সামলাচ্ছে এখনো। ছাত্রদল, যুবদল, বড়দল, ছোটদল পরিচয়ে চলছে এসব দখলদারি। সড়কে হাঁটাচলার উপায় নেই এটা একদমই সত্য প্রমাণিত হোপের গলিতে।
এদিকে কচুক্ষেত বাজার এলাকার স্থায়ী ব্যবসায়ীদের পরিবর্তে তাদের দোকানের সামনেই তাদের পণ্য নিয়ে বসা একাধিক ভাসমান ব্যবসায়ী বললেন, রবিবার এ অঞ্চলের মার্কেট বন্ধ থাকার সুযোগে আমরা মার্কেটগুলোর মালিকের অনুমতি নিয়ে ভাসমান দোকান বসাই। একটি দুটি করে আমাদের চারপাশে এখনো শতশত দোকান ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়কেও বসিয়ে দিয়েছে নেতারা। পুলিশ ও নেতারা মিলেমিশে এসব দোকান থেকে চাঁদা নিচ্ছে। আমরাও এখন দিতে বাধ্য হচ্ছি বলে জানান একাধিক ব্যবসায়ী। তারা আরো বলেন, এ নিয়ে অভিযোগ জানাতে উপ পুলিশ কমিশনার উত্তর এর ফোন নম্বর গুগলে সার্চ দিলে যে নম্বর রিসিভ করে তা সাধারণ মানুষের নম্বর। সত্যতা যাচাই করতে গুগল সার্চ দিলে পাওয়া যায় উপপুলিশ কমিশনার লেখা +8801675840079 এই নম্বরটি। মজিবর রহমান নামের ভদ্রলোক জানালেন, অসংখ্য ফোনে উপপুলিশ কমিশনারকে খোজা হয় এই নম্বরে। এটি আমার ব্যক্তিগত ফোন নম্বর ভাই।
প্রায় একই কথা শোনা গেল নীলক্ষেত এলাকায় স্থায়ী ব্যবসায়ীদের কাছে। তারাও অভিযোগ জানাতে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা কাউকেই পাননা ফোনে। মঙ্গলবার নীলক্ষেত, কাটাবন, শাহবাগ সহ ঢাকা নিউমার্কেট এলাকা সাপ্তাহিক বন্ধ। আর এইদিন ভাসমান হকারদের খুব কমই খুঁজে পাওয়া যায় এই এলাকায়। অথচ বাকী দিনগুলোতে এলাকার ফুটপাত ও সড়কে হকারদের দৌরাত্ম আগের তুলনায় তিনগুণ বেড়েছে বলে জানান স্থায়ী ব্যবসায়ীরা। নিউমার্কেট ও গাউসিয়ার ভিতরে বড় বড় দোকানের সামনেও হকারদের বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এখানেও স্থানীয় নেতাদের সাথে রয়েছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের চাঁদাবাজি। এই হকারদের কিন্তু কেউই বিনামূল্যে বসার সুযোগ করে দিচ্ছে না। অথচ মানবতার দোহাই দিয়েই দিন দিন হকারদের দৌরাত্ম বাড়ছে বলে জানান স্থায়ী ব্যবসায়ীদের অনেকেই।
অন্যদিকে নগরীতে হকারদের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অটোরিকশা। ছোট্ট ছোট্ট বিভিন্ন আকৃতির তিনচাকার বাহন, কোনটি মোটা চাকা, আবার কোনোটি চিকন রিকশার চাকায় ইঞ্জিন ব্যবহার করে অটোরিকশা বানানো হয়েছে। সাই সাই করে অলিগলি ছাড়াও প্রধান সড়কেও ছুটে বেড়াচ্ছে এসব অবৈধ যানবাহন। যেখানেই দীর্ঘ যানজট, সেখানেই সড়কের উপর ভাসমান হকার আর অটোরিকশার অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি স্পষ্ট চোখে পড়ে। সরজমিনে মীরপুর ১০ নং গোলচক্কর ফুটওভার ব্রিজে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য স্পষ্ট হয়েছে। এখানে ব্রিজ থেকে ওঠানামার প্রবেশমুখ আটকে চলছে ফুটপাত দখলের প্রতিযোগিতা। একপাশ নয়, ফুটপাতের দুপাশে থরে থরে সাজানো কাপড়, জুতোসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক পসরা। মানুষের চলাচলের ভোগান্তিতে কারো কিছু যায় আসেনা এ শহরে । কর্মজীবী পুরুষ কিম্বা নারীকে রীতিমতো ঠেলাঠেলি করে ফুটপাত ব্যবহার করতে হচ্ছে। যা দেখেও না দেখার ভান করে সয়ং ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট বললেন, অনিয়মই নিয়ম এখানে। তিনি ও পুলিশ কনস্টেবল দাঁড়িয়ে এসব দেখেন। কেউ কেউ যানজট ছাড়াতে হাঁকডাক বা ছুটোছুটি করেন। কথা বলতে চাইলে সার্জেন ফরহাদ জানালেন, একটু সামনে উপপুলিশ কমিশনার স্যার আছেন। তার কাছে যান। আমাদের কথা বলার অনুমতি নেই।
উপপুলিশ কমিশনার রফিকুল ইসলাম এর কার্যালয়ে তখন অভ্যন্তরীণ কোনো বৈঠক চলছে। বাহিরে অপেক্ষমান নারী-পুরুষের ভিড়।
ব্যস্ততার ফাকে বললেন, ফুটপাত সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। আমাদের কিছু করার নেই। আজ একটু ব্যস্ত আছি, আগামীকাল কথা বলবো।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!