উদারমনা সফল রাজনৈতিক ওবায়দুল কাদেরঃ যেন বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাহিত্য বাজার

Sharing is caring!

উদারমনা সফল রাজনৈতিক ওবায়দুল কাদেরঃ যেন বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি 

তিনি যখন প্রথম সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক সেতুমন্ত্রী  হলেন মেসেঞ্জারে তার কাছে অনুরোধ জানানো হলো মোটরসাইকেলের ইন্সুইরেন্স কি উপকারে আসছে দয়া করে একটু ভেবে দেখুন। মাত্র একসপ্তাহের ব্যবধানে মোটরসাইকেলের ইন্সুইরেন্স তুলে দিলেন তিনি। এবং বিআরটিএ আইন ২০১৮ অনুমোদন নিলেন। আবার অসুস্থকালীন সময়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওখানের একটি চমৎকার সাঁতারের ছবি নিয়ে বিরোধী পক্ষে সমালোচনা হতে পারে বলামাত্র তিনি ছবিটি সরিয়ে দিলেন। একবার প্রশ্নও করলেন না সমস্যা কোথায় বা তোমার তাতে কি? এমন খুটিনাটি আরো অনেক বিষয়ে তার ফেসবুক পেজে মন্তব্য রয়েছে। যা ধৈর্য ধরে তিনি দেখেছেন এবং যৌক্তিক মনে হলে পদক্ষেপ নিয়েছেন। এই উদারমনা ও বিরোধী চিন্তাকেও সম্মান জানানোর মানুষটির নাম ওবায়দুল কাদের। হাঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুইবারের সাধারণ সম্পাদক ও তিনবারের সড়ক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এর কথাই বলছি। মানুষের ভালোবাসা ও দোয়াই তাকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রেখে আবার ফিরিয়ে এনেছে বলে দাবী করেন তিনি। তাই আমৃত্যু সততা ও ত্যাগের মহীমায় উজ্জ্বল জীবনই একান্ত কাম্য তার। এভাবেই নিজের একান্ত অনুভূতি জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এত উন্নয়নমূলক কাজের পরও স্বস্তি পাচ্ছি না। মন্ত্রণালয় নিয়মিত চালাচ্ছি। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি। দশ বছর একাধারে আছি, এই মন্ত্রাণালয়ে কোনো কমিশন, পার্সেন্টেজ, কোনো প্রমোশন বাণিজ্য কখনো করিনি। আমার বিবেকের কাছে আমি পরিষ্কার। আপনারাও আপনার বিবেকের কাছে পরিষ্কার আছেন তো? তার এ কথার সাথে আরেকজন মানুষের উচ্চারণ মিলে যায়। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার আদর্শকে ধারণ করেই স্যার শব্দে নয়, ভাইয়া ডাকে গভীর ভালোবাসা ও বিশ্বাস খুঁজে পান মহতী এই মানুষটি। যদিও বঙ্গবন্ধু সবাইকে তুই বা তুমি সম্বোধনে আপন করে বেঁধে ফেলতেন। এ গুনটি আরো দেখা গেছে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ভিতরেও। তারাও খুব সহজে তুই ও তুমি সম্বোধনে মানুষকে কাছে টেনে নিতে পারেন। এখানে ওবায়দুল কাদের কিছুটা ব্যতিক্রম বটে। তিনি ছোট বড় সবাইকেই আপনি বলতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। তবে স্যার শব্দে নয়, ভাইয়া ডাকে গভীর ভালোবাসা ও বিশ্বাস খুঁজে পান মহতী এই মানুষটি।

তিনি যে শুধু উদার ও নীতিবান তাই নয়, স্পষ্টবাদী একজন মানুষ তিনি। যে কিনা নিজের দোষটি কখনো ঢাকার চেষ্টা করেননা। যার প্রমাণ দেখা যায় সাম্প্রতিক সময়ে দেয়া তার কিছু বক্তব্যে। সড়কের বিশৃঙ্খলা তাকে আহত করে। প্রশাসনের উদাসীনতায় কষ্ট পান তিনি। আর তাইতো বিআরটিএ চেয়ারম্যানের প্রতিও ক্ষোভ স্পষ্ট হয় তার বক্তব্যে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিআরটিএতে শর্ষের মধ্যে ভূত আছে। ভূত হলো দালালরা। বিআরটিএর ভেতর থেকে দালালদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হয়। তা না হলে দালালরা বাইরে থেকে এসে বিআরটিএতে কিভাবে দৌরাত্ম্য করে? গ্রাহকদের হয়রানি করে? এটা বন্ধ করতে হবে যেকোনো মূল্যে।

এসময় সেতুমন্ত্রী আরো বলেন, আমি বলব-যা বন্ধ হয়নি সেটা বন্ধ করেন। বিআরটিএতে যে অপকর্ম যারা করে, তাদের ভালো হয়ে যেতে বলুন চেয়ারম্যান সাহেব। এগুলো নিয়ে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিন। 

এটা বলেই কিন্তু খান্ত হননি তিনি। হুটহাট মীরপুর, কেরানীগঞ্জ ও খিলক্ষেত বিআরটিএ কার্যালয়ে হানা দিয়েছেন তিনি। যখন তখন নিজেই সড়কে দাঁড়িয়ে কাগজপত্র ও ফিটনেস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। অসুস্থতার কারণে যা এখন কঠিন হয়ে গেছে তার জন্য। 

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সাথে ঐক্য গড়ে সড়কে মৃত্যু নিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালটা আমার কাছে আসে ভিন্নভাবে, সবার দিন শুরু হয় একভাবে, আর আমার দিনটি শুরু হয় অন্যভাবে। কাগজের পাতার অপ্রত্যাশিত মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর পড়ে আমার দিন শুরু হয়। মন্ত্রী হলেও আমি তো মানুষ। আমারও কষ্ট হয়। আমিও দগ্ধ হই অদেখা দহনে। মনে হয় আমিও সেই অসহায় পরিবারের একজন। যে পরিবারের কয়েকজন একসঙ্গে পথের বলি হয়। কখনো দুই পরিবহনের সংঘর্ষে। কখনো তিন চাকার গাড়ি ইজিবাইকে, নসিমন, করিমনে।

নিজেদের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেকগুলো ত্রুটি আমাদের আছে, সেটা তো অস্বীকার করে লাভ নেই। সুন্দর সুন্দর ব্যানার-পোস্টার করলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয় না। নিরাপদ সড়ক দিবস করতে হবে প্রতিদিন। তিনি আরো বলেন, এত উন্নয়ন হলো; কিন্তু অনেকে বলেন এই কাজটি হয় না কেন। সড়কে শৃঙ্খলা কেন আনতে পারব না। এখন সংকট শৃঙ্খলা, পরিবহন ও সড়কের। এখানে ব্যর্থ হলে আমাদের উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে। এটাই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। কাজের মান ও গতি দুটোই ঠিক রাখতে হবে। মানহীন কোনো কাজ বরদাস্ত করা হবেনা। 

খুব সম্ভব বাংলাদেশে সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তার মতো করে এতোটা কাজ আর কেউ দেখিয়েছেন বলে মনে হয়না। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী ও পায়রা সেতুসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ সেতু ও উড়ালপথ তৈরি করার পরও তিনি মনে করেন এখনো প্রচুর কাজ বাকী আছে, ধীরে ধীরে তা বাস্তবায়নের সুযোগ দিতে হবে। চলতি বছর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প আসতে যাচ্ছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, অবকাঠামোগতভাবে পরিবর্তন দৃশ্যমান। চলতি বছর সড়কে আমি তো বলব, বৈপ্লবিক পরিবর্তন পুরোপুরি দৃশ্যমান হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শেষ পর্য়ায়ে, আমি গর্ব করে বলব, আমার মন্ত্রণালয়ের সব মেগাপ্রকল্পগুলো চলতি বছরই উদ্বোধন ও শেষ করা হবে ইনশাআল্লাহ । সেগুলো হলো- পদ্মা সেতু, এমআরটি লাইন ৬, মেট্রো রেল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ও চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল।

মন্ত্রী বলেন, গত ২৪ অক্টোবর পায়রা সেতুর উদ্বোধন হলো। আর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের ভিত্তিপ্রস্তর দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

অনেকটা যেন বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি ওবায়দুল কাদের। বঙ্গবন্ধুর মতোই সবাইকে আপন করে নেয়ার প্রবণতা তার ভিতর। ছাত্র জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ওবায়দুল কাদের ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোশারফ হোসেন এবং মাতা ফজিলাতুন্নেছা। মোশারফ হোসেন প্রথমে সরকারি চাকরি করলে পরবর্তীতে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। ওবায়দুল কাদের স্থানীয় বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। তার বাবা সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। কাদের নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

নোয়াখালী কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় তিনি ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তিনি ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন ও ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) কোম্পানীগঞ্জ থানা শাখার অধিনায়ক হিসেবে যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর তিনি ৫ বছর কারাবন্দী ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং দুই মেয়াদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন।

ওবায়দুল কাদের ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছয়বার নোয়াখালী-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। ১৯৯৬ সালের জুনে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে জয়লাভ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে সরকার গঠন করে। প্রতিবারই তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টি পরবর্তীতে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ। এ সময় সপ্তম জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভায় তিনি যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের সাথে ২৩ জুন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২০০১ সালের ১৫ জুলাই এ মন্ত্রিসভা বিলুপ্তির পূর্ব পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। এ সময় মওদুদ আহমদ বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি দলের প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের ২৬ জুলাই পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬-০৮ বাংলাদেশী রাজনৈতিক সংকটের সময় ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের জরুরি বিধিতে গ্রেফতার করা হয়। ২০০৭ সালের ৯ মার্চ তিনিও গ্রেফতার হন এবং ১৭ মাস ২৬ দিন কারাগারে থাকার পর ২০০৮ সালের ৫ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান। কারাগারে থাকাকালে কারাজীবনের বর্ণনা দিয়ে “অনুস্মৃতি : যে কথা বলা হয়নি” নাম একটি গ্রন্থ রচনা করেন।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে সরকার গঠন করে এবং তিনি একই আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে নবম সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। নবম সংসদে তিনি তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘সভাপতিমন্ডলীর সদস্য’ নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর তিনি শেখ হাসিনা সরকারের দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের (বর্তমান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়) মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১২ সালের এপ্রিলে তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহকারী একান্ত সচিবের (এপিএস) অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সুরঞ্জিত পদত্যাগ করার পর তিনি কিছুকাল রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পালন করেন।

২০১৪ সালের দশম এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি জয়লাভ করেন এবং শেখ হাসিনার তৃতীয় ও চতুর্থ মন্ত্রিসভায়ও তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে ২০১৬-২০১৯ মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর ২১তম জাতীয় সম্মেলনেও তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক পদে পুন:নির্বাচিত হন। রাজনীতি ছাড়াও বেশ কিছুদিন সাংবাদিকতা করেছেন এবং বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তার রচিত ৯টি গ্রন্থ রয়েছে।

Bangladesh: A Revolution Betrayed

বাংলাদেশের হৃদয় হতে

পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু

এই বিজয়ের মুকুট কোথায়

তিন সমুদ্রের দেশে

মেঘে মেঘে অনেক বেলা

রচনা সমগ্র

কারাগারে লেখা অনুস্মৃতি: যে কথা বলা হয়নি এবং 

নির্বাচিত কলাম

সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এর দপ্তরের অধীনে যে সব কাজ ইতিমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে বা হবার পথে – সারাদেশে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতাধীন ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ক, ৪ হাজার ৪০৪টি সেতু এবং ১৪ হাজার ৮৯৪টি কালভার্ট রয়েছে। ২০০৯ থেকে জুন ২০১৮ পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক উন্নয়ন খাতের আওতায় ৪ হাজার ৩৩১ কিলোমিটার মহাসড়ক মজবুতিকরণসহ ৫ হাজার ১৭১ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্তকরণ করা হয়েছে। অনুন্নয়ন খাতের আওতায় ৪ হাজার ৮৬৯ কিলোমিটার মহাসড়ক কার্পেটিং ও সীলকোট, ১ হাজার ৮৯২ কিলোমিটার ডিবিএসটি এবং ৮ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার ওভার লে করা হয়েছে। ৪১৭ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চারলেন বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। দেশের অর্থনীতির লাইফ-লাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের ১৯০ কিলোমিটার চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে; ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন সড়ক চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়ক ডিভাইডারসহ চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ। যাত্রাবাড়ি-কাঁচপুর সড়ক আট লেনে উন্নীতকরণ। এটি দেশের প্রথম আটলেন মহাসড়ক। গত দশ বছরে এ বিভাগ ২৭৬টি প্রকল্প সমাপ্ত করেছে এবং ৩৪১টি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বর্তমানে ২০১৮-১৯ অর্থ-বছরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন ১৩৯টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ সময়ে ৯টি ফ্লাইওভার/ওভারপাস ও ৭টি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনীর মহিপালে ছয়লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় ফেনীর ফতেহপুর, কুমিল্লার পদুয়ার বাজার, ইলিয়টগঞ্জ ও চট্টগ্রামের কালুশাহ মাজার এলাকায় তিনটি রেলওয়ে ওভারপাস, কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নির্মিত হয়েছে মাওনা ফ্লাইওভার। এছাড়া ঢাকা মহানগরীতে বনানী রেলওয়ে ওভারপাস, মিরপুর থেকে এয়ারপোর্ট রোড পর্যন্ত মো. জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার, কুমিল্লা শহরে শাসনগাছা ফ্লাইওভার, টঙ্গীতে আহসান উল্যাহ মাস্টার ফ্লাইওভার, চট্টগ্রাম বন্দর সংযোগ ফ্লাইওভার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ সময়ে ৯১৪টি সেতু ও ৩ হাজার ৯৭৭টি কালভার্ট নির্মাণ/পুনঃর্নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শহিদ বুদ্ধিজীবী সেতু, সুলতানা কামাল সেতু, শেখ লুৎফর রহমান সেতু, শেখ কামাল সেতু, শেখ জামাল সেতু, শেখ রাসেল সেতু, সোনাতলা সেতু, এলাসিন সেতু, কাজির বাজার সেতু, আচমত আলী খান সেতু, শাহ আমানত সেতু, ওয়াজেদ মিয়া সেতু, থানচি সেতু, রুমা সেতু, তিস্তা সেতু, শহিদ আব্দুর রব সেরনিয়াবত সেতু, বড়দহ সেতু, সানন্দবাড়ি সেতু, বিরুলিয়া সেতু, চৌফলদী সেতু, শহিদ শেখ ফজলুল হক মনি সেতু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ঢাকা-আরিচা জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সরলীকরণ করা হয়েছে। এছাড়া, সারাদেশের মহাসড়কে ১৪৪টি দুর্ঘটনাপ্রবণ বাঁক চিহ্নিত করে ইতোমধ্যে ১৩০টি নিরসন করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরী ও তৎসংলগ্ন এলাকার যানজট নিরসনে ও পরিবেশ উন্নয়নে উত্তরা ৩য় পর্ব হতে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশের প্রথম এলিভেটেড মেট্রোরেল-এর নির্মাণ কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এতে ১৬ স্টেশন থাকবে এবং উভয়দিকে ঘন্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে। ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকা’র আরবান ট্রান্সপোর্টের চাহিদা ও পরিধি ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এর উদ্যোগে ২০০৫ সালে প্রণীত ২০ বছর মেয়াদী স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান-এসটিপি সময়োপযোগী করে আরএসটিপি ২০১৫-৩৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিদ্যমান আইন, বিধিমালা, নীতিমালা ও গাইডলাইনস সংশোধন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করে সংস্কার এবং আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন আইন, বিধিমালা, নীতিমালা ও গাইডলাইনস প্রণয়ন করা হয়েছে ও হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মোটরযানের এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১২, টোল নীতিমালা, সওজ’র ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ইজারা নীতিমালা, মেট্রোরেল আইন-২০১৫, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) আইন-২০১৬, রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা ২০১৭ ইত্যাদি প্রণয়ন ও জারি করা হয়েছে। কর্মিদের শাস্তির ব্যবস্থা রেখে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংসদে পাশ করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে বিআরটিএ’র নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় ২০০৯ থেকে জুন ২০১৮ পর্যন্ত ২ লাখ ৮৬ হাজার ৬৭৪ জন পেশাজীবী গাড়ি চালককে দক্ষতা উন্নয়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং এর কার্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালনার সুবিধার্থে ২০১০ সাল থেকে মোটরযানের যাবতীয় কর ও ফি অনলাইন ব্যাংকিং পদ্ধতিতে আদায়, ২০১১ সাল থেকে ইলেক্ট্রনিক চিপযুক্ত ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স, ২০১২ সাল থেকে মোটরযানে রেট্রো-রিফ্লেক্টিভ নাম্বারপ্লেট এবং রেডিও ফ্রিক্যুয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্যাগ সংযোজন, ২০১৪ সাল ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ডিআরসি) এর কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। মোটরযানের ফিটনেস স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরীক্ষাপূর্বক ফিটনেস সার্টিফিকেট ইস্যুর লক্ষ্যে মিরপুরস্থ মোটরযান পরিদর্শন কেন্দ্র (ভিআইসি) প্রতিস্থাপনপূর্বক গত ৩০ অক্টোবর ২০১৬ তারিখ হতে চালু করা হয়েছে। ক্সবিআরটিএ’র সকল ডিজিটাল সার্ভিসের ডাটা ব্যাক-আপসহ নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্যে বিআরটিএ-তে একটি আন্তর্জাতিক মানের ডাটাসেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস আধুনিকায়ন ও সেবার গুণগতমান বাড়াতে প্রণয়ন করা হয়েছে ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন ২০১০ এর আওতায় অনুমোদিত দু’টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৪০০ ট্যাক্সিক্যাব চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতেও ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দশ বছরে বিভিন্ন ধরনের ৯৫৮টি বাস বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) এর বাস বহরে সংযোজন করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!