সাহিত্য বাজার সাহিত্য পদক ও সম্মাননা প্রদান
প্রথিতযশা সাংবাদিক ও স্বাধীন বাংলা বেতারের শব্দ সৈনিক কবি ও সাহিত্যিক অরূপ তালুকদার এর হাতে সাহিত্য বাজার সাহিত্য পদক এবং ১১ গুনীজনের প্রতি শুভেচ্ছা ও সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দিলেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকালে বরিশাল সার্কিট হাউস মিলনায়তন সাহিত্য বাজার পত্রিকার ১৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বরিশাল সাহিত্য সংসদ আয়োজিত সাংস্কৃতিক আয়োজন ও উন্নয়ন সেমিনার শেষে এই পদক ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর আগে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শিশুদের নৃত্য পরিবেশন দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান। এ সময় পাশে ছিলেন প্রধান বিশ্লেষক ও আলোচক জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। শুভেচ্ছা ক্রেস্ট প্রদান করে সাহিত্য বাজার পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক তাদের বরণ করে নেন। এরপর উন্নয়ন বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বরিশাল অর্থনীতি সমিতির সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান। উন্নয়ন বিষয়ক মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন দৈনিক শাহনামা পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, নাট্যজন কাজল ঘোষ, সাংবাদিক সুশান্ত ঘোষ, আযাদ আলাউদ্দিন, বরিশাল ফরএভার লিভিং সোসাইটির পরিচালক এস এম ইমামুল হাসান শামীম। শাকিল মৃধা, কবি জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক সহ আরো অনেকে। বরিশাল সাহিত্য সংসদ এর সভাপতি কে এস এম মহিউদ্দিন মানিক বীরপ্রতীক এর সভাপতিত্বে এবং দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা ও এনটিভির বরিশাল ব্যুরো প্রধান আকতার ফারুক শাহিনের চমৎকার সঞ্চালনায় প্রাণবন্ত আলোচনা চলে প্রায় দু’ঘন্টা ধরে। সকলের বক্তব্যে উঠে আসে বরিশালের গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রয়োজনীয় বিষয়। যা নোট করে নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, সাহিত্যের অনুষ্ঠানে উন্নয়ন ভাবনা এবং উন্নয়ন বিষয়ক এই সেমিনার আমাকে মুগ্ধ করেছে। পদ্মা সেতুর সুফল ও উন্নয়নের বরিশাল সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়েও যে সাহিত্যের আলোচনা হতে পারে তা দেখিয়েছে সাহিত্য বাজার পত্রিকাটির প্রবন্ধ উপস্থাপক কাজী মিজান। একই মঞ্চে বরিশালের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে বরিশাল সদর হাসপাতালটিকে একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল রূপে দেখতে পাবেন বরিশালবাসী। এছাড়া শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও তৈরি হচ্ছে মনোরম পরিবেশ ও আধুনিক সুযোগ সুবিধা।
প্রধান বিশ্লেষক ও আলোচক জসীম উদ্দীন হায়দার তার দীর্ঘ আলোচনায় বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাখ্যা যেমন দেন, তেমনি পদক্ষেপ গ্রহণ বিষয়েও সরকারের কাছে পাঠানো প্রস্তাবনা ও পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি ফোরলেন, বাইপাস সড়ক, ভোলা থেকে গ্যাস আসার বিষয়টি ছাড়াও শিল্পায়নের জন্য ও বরিশাল বিসিকের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন।
আলোচনা শেষে সঞ্চালক বাসুদেব ঘোষের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সাহিত্য বাজার সাহিত্য পদক ও গুনীজন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি নজমুল হোসেন আকাশ।
“সাহিত্যের আয়নায় জেগে উঠুক মানুষের মুখ
সত্য আর সুন্দরের সন্ধানে এসো হই উন্মুখ।
ধর্ম-কর্ম বল কিম্বা আল্লাহ-ইশ্বর-ভগবান
বিশ্বজুড়ে যা কিছু সুন্দর সবটাই সাহিত্যের অবদান।”
এটাই সাহিত্য বাজার পত্রিকা ও বরিশাল সাহিত্য সংসদ এর মূল প্রতিপাদ্য। এই পঙতিমালায় লুকানো আমাদের পথচলা দর্শন। আমরা সত্যিকারের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মী বা প্রেমিকের উপস্থিতি চাই আমাদের সব আয়োজনে। কোনো রাজনৈতিক বা জাত ধর্ম ভেদাভেদ এখানে দেখতে রাজী নই বলে জানালেন বরিশাল সাহিত্য সংসদের সভাপতি কেএসএম মহিউদ্দিন মানিক বীরপ্রতীক। এসময় মুক্তিযোদ্ধা ও উন্নয়ন কর্মী আনোয়ার জাহিদ, ছড়াকার দীপঙ্কর চক্রবর্তী, এডিসি কবি, গল্পকার মনদীপ ঘরাই প্রমূখদের উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার এবারের সাহিত্য বাজার সাহিত্য পদক তুলে দেন স্বাধীন বাংলা বেতারের শব্দ সৈনিক সাংবাদিক ও সাহিত্যিক অরূপ তালুকদার এর হাতে। বরিশাল ফরএভার লিভিং সোসাইটির আংশিক সহযোগিতা নিয়ে আয়োজিত এ পদক ও গুনীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে আগত পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক সালাম খোকন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, সাহিত্য বাজার গুনীজন সম্মাননা ২০২২ প্রদান করতে নয়, সমর্পণ করতে এসেছি আমরা। এতে করে গুনীজনরা নয়, বরং আমরা ঋদ্ধ হবো, কৃতজ্ঞ হবো। আমরা এই শ্রদ্ধা নিবেদন করছি – শ্রদ্ধেয় গুনীজন সংগীতজ্ঞ মুকুল দাস, কবি ও ছড়াকার তপংকর চক্রবর্তী, সাংবাদিক আনিসুর রহমান স্বপন, সাংবাদিক মাহফুজা জেসমিন, শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক রাবেয়া খাতুন, রত্নগর্ভা মা অধ্যক্ষ তাহমিনা আক্তার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজল ঘোষ, সাহিত্যিক মাসুদ আলম বাবুল এবং ভিক্ষা করে বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা করা মানবিক যুবক সাখাওয়াত হোসেন এর প্রতি।
জেলা প্রশাসক ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের হাত থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহন পর্ব শেষ হলে ঘটে এক চমকপ্রদ ও শিক্ষনীয় দৃশ্য। পদক প্রাপ্ত গুরুজন সাংবাদিক অরূপ তালুকদার মাইক হাতে খুঁজে বেড়ান বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা করা যুবক সাখাওয়াত হোসেনকে এবং তার পদকের সাথে প্রাপ্ত সম্মানী টাকা তুলে দেন তার হাতে।বিষয়টিতে মুগ্ধ উপস্থিত অতিথিবৃন্দ ও আয়োজকেরাও। সম্পাদক আহমেদ তখন আপসোস করে বলেন, ইস আমাদের সম্মানীর পরিমাণটা যদি অনেক বড়ো হতো…।
যা শুনে মাউথপিস তুলে নেন এডিসি গল্পকার মনদীপ ঘরাই। সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চা সমাজে সুন্দর মনের মানুষ সৃষ্টি করে জানিয়ে তিনি আশ্বাস দেন আগামীতে সাহিত্য বাজার নিয়মিত প্রকাশনায় সার্বিক সহায়তার।
মহিউদ্দিন মানিক বীরপ্রতীক আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করলে সাংস্কৃতিক আয়োজনে সংগীত পরিবেশন করেন গোপাল কৃষ্ণ গুহ রিপন ও কমল ঘোষ। স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশ নেন কবি ফয়জুন নাহার শেলী, কামরুন্নাহার মুন্নি, অনিতা পাণ্ডে, সব্যসাচী সেনগুপ্ত সহ আরো অনেকে।