সমাজসেবক সাজ্জাদ পারভেজ এর অবদান: ফুল বিক্রেতা শিশুকন্যারা এখন নিয়মিত স্কুলে যায়

ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি

Sharing is caring!

সমাজসেবক সাজ্জাদ পারভেজ এর অবদান: ফুল বিক্রেতা শিশুকন্যা আমেনা ও মোহাইমিনা নিয়মিত স্কুলে যায়

বিশেষ প্রতিবেদক

নতুন জুতা পায়ে দিয়ে আনন্দে নাচতে নাচতে প্রতিদিন সকালে এখন নিয়মিত স্কুলে যায় আমেনা ও ময়মুনা। আগে পড়াশোনা তারপর কাজ। এ নিয়মের অনুসরণ করে স্কুল শেষে পোশাক বদলে তবেই আবার নেমে পরে ফুল বিক্রির কাজে। তবে এতে করে ওদের পায়ের জুতো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ২৫ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ তার ৮৪ ব্যাচের বন্ধুদের সহযোগিতায় দুই বোন আমেনা ও মোহাইমিনার জন্য নতুন জুতা কিনে দিয়েছেন। এর আগে তাদের পোশাক ও পড়াশুনার ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনি।
জানা যায়, এক বছর আগেও আট ও দশ বছর বয়সের দুই শিশুকন্যা আমেনা ও মোহাইমিনার উপার্জন দিয়েই চলেছে মা নুরুন্নাহর বেগমের সংসার। আর শিশু কন্যারা সড়কে, দোকানে, পার্কে ফুল বিক্রি করে এই সংসার চালানোর কাজটি করতো। জীবীকার তাগিদে ফুল বিক্রি করতে নেমে দুই বোনের পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে যায়। জীবীকার প্রয়োজনে ওরা ঝড়-বৃষ্টি, গরম কিম্বা শীত উপেক্ষা করে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ লোক সমাগম স্থান মুক্তিযোদ্ধা পার্ক ও ঐতিহ্যবাহী বেলস্ পার্ক সহ বাস টার্মিনাল ও সড়কে ঘুরে ঘুরে সকাল-সন্ধ্যা ফুল বিক্রি করে যা উপার্জন করতো, তার সবটাই তুলে দিত মায়ের হাতে। এতে করে পড়াশুনার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ থাকার পরও পড়ার সুযোগ হতো না ওদের। এভাবেই একদিন ২০২৪ সালের শুরুর দিকে হঠাৎ করেই আমেনা ও মোহাইমিনার দেখা হয় সাজ্জাদ পারভেজ এর সাথে। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে গরম কাপড়ের অভাবে কাঁপতে থাকা শিশু দুটিকে দেখতে পান সমাজসেবা কর্মকর্তা ও একজন মানবিক মানুষ সাজ্জাদ পারভেজ। তার সামনেই শীতে কাঁপতে কাঁপতে ফুল বিক্রির চেষ্টা করছিলো ঐ দুই শিশুকন্যা। বিবেকের তাড়নায় শিশু দুটিকে কাছে ডেকে ওদের সম্পর্কে জানতে চান তিনি। প্রাথমিকভাবে জানতে পারেন, শিশু দুটির বাড়ি নগরীর কীর্তনখোলা নদী তীরবর্তী রসূলপুর বস্তিতে। ছয়জনের পরিবারের তাদের বাবা পঙ্গুপ্রায় অক্ষম মানুষ। তেমন একটা কাজ কর্ম করতে পারে না। বড় ভাইও দায়িত্বহীন হয়ে মা-বাবা ভাইবোন ত্যাগ করে অন্যত্র বসবাস করে। এরপরে আমেনা ও মোহাইমিনা দুই বোন। যারা সংসারের হাল ধরতে গিয়ে ফুল বিক্রি করছে। তাদের পর ৬-৭ মাস বয়সী আরও এক ছোটভাই রয়েছে বলে জানতে পারেন সাজ্জাদ পারভেজ।
বরিশাল জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, ছোট ছোট মেয়ে দুটি শিক্ষার আলো পাবে এটাই আমার প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা থেকেই ওদের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি, এটাই বড় প্রাপ্তি আমার। ওরা যতদিন পড়তে চাইবে আমি ওদের পড়াশুনার জন্য যা যা দরকার তা করার চেষ্টা করে যাবো।
তিনি আরো বলেন, আমাদের আশপাশে এরকম সুবিধাবঞ্চিত অনেক আমেনা ও মোহাইমিনা রয়েছে। আবার সমাজে বিত্তবান মানুষও কম নেই। তাই আমাদের ৮৪ ইভেন্ট এর বন্ধুরা মিলে এ জাতীয় সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছি। সমাজের অন্যরাও যদি এগিয়ে আসেন তাহলে অসংখ্য আমেনা ও মোহাইমিনার জীবন সুন্দর হয়ে উঠবে বলে জানান সাজ্জাদ পারভেজ ।
শুধু আমেনা ও মোহাইমিনা নয় ইতিপূর্বেও ছিন্নমূল শিশু, অসহায় বৃদ্ধা, প্রতিবন্ধী এবং অসুস্থ স্বজনহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অসংখ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বরিশালের এই সমাজসেবা কর্মকর্তা। এমনকি জেলার কোনো সাংবাদিক বা পত্রিকা সংশ্লিষ্ট কর্মী, হকারদের অসহায় অবস্থা বা কষ্টের কথা তার কানে যাওয়া মাত্রই তিনি ছুটে গেছেন ঐ সাংবাদিক বা হকারের ঘরে। যতটুকু পেরেছেন নিজের ও প্রশাসনের সহযোগিতা পৌঁছে দিয়েছেন অসহায় মানুষটির কাছে। যে কারণে বরিশালের মানুষের কাছে সমাজসেবা কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ এখন একজন মানবিক মানুষের নাম। সমাজসেবা দপ্তর থেকে নয়, নিজেই সমাজসেবক পরিচয়ে সমাজ সেবা দপ্তরকে আলোকিত করেছেন সাজ্জাদ পারভেজ। সরকারি দায়িত্বের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন হতদরিদ্র, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, গরীর মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ানো প্রতিদিনের রুটিনের একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাজ্জাদ পারভেজের। যে কারণে স্কুল জীবনের বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ৮৪ ইভেন্ট নামের পৃথক সংগঠন। যতদূর জানা গেছে, সাজ্জাদ পারভেজ ১৯৯৭ সালে বরিশাল সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তখন থেকেই তার এসএসসির ৮৪ ব্যাচের বন্ধুদের নিয়ে ৮৪ ইভেন্ট নামের গ্রুপের মাধ্যমে অসহায় মানুষদের সহায়তার কাজ করে যাচ্ছেন। এই গ্রুপের মাধ্যমে অবহেলিত মানুষ দেখলেই এগিয়ে যান তিনি। তার এসব ভালো কাজ দিয়ে তিনি তিনবার অর্জন করেছেন জাতীয় শ্রেষ্ঠ প্রমোশন পদক। এছাড়াও ২০২০ সালে পেয়েছেন শুদ্ধাচার পুরস্কার। কয়েক ধাপে পদন্নোতি পেয়ে ২০২৪ সালে জেলা সমাজসেবা সহকারি পরিচালক হিসেবে পদন্নোতি পেয়ে বরিশাল অফিসে যোগদান করেন সাজ্জাদ পারভেজ। বরিশালের কাউনিয়ায় অবস্থিত একমাত্র বৃদ্ধাশ্রমটির প্রতিও তার রয়েছে সজাগ দৃষ্টি। যে কারণে বৃদ্ধাশ্রমের প্রায় ৮০ জন বয়োবৃদ্ধের কাছেও সাজ্জাদ পারভেজ শ্রদ্ধার নাম।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!