সাহিত্য বাজার সেরা লেখকসম্মান ও পুরস্কার পাচ্ছেন কবি ও উপন্যাসিক আফরোজা হীরা

আরিফ আহমেদ

Sharing is caring!

02‘কুড়ির ফুল হেলায় শুকালে
বাসি ফুলে হয়নাকো পুজো,
ঠাকুর, বিসর্জনেই মিলনের সুখ খোঁজো।’

আফরোজা হীরা ! একাধারে কবি ও উপন্যাসিক। সত্যি বলতে সাহিত্যের সব শাখায়ই তার বিচরণ অত্যন্ত বিচক্ষণতায়। কবিতা দিয়ে তার সাথে আলাপ হলেও তার প্রবন্ধ, রাজনৈতিক সমালোচনা, ধর্মীয় অনুভুতির লেখাগুলো আমাকে টেনেছে ভীষণভাবে। তারপর যখন হাতে এলো তার উপন্যাস বাংলার ঘরে গরে প্রতিটি নারী এক একটা জীবন্ত ইতিহাস বইটি। তখন রীতিমত বিস্মিত হলাম বইটির ভূমিকা পড়ে।

ভূমিকায় তিনি লিখেছেন : ‘আমি এক গণ্ড মূর্খ মেয়ে মানুষ, অন্য আর পাঁচজনের মতো ভারী ভারী সার্টিফিকেট আমার নেই। কখনো মনেই হয়নি শিক্ষিত বা মানুষ হওয়ার জন্য সার্টিফিকেট অনেক জরুরী কিছু। আমার ভিতর প্রকৃত শিক্ষা বলে যদি কিছু থাকে তার সবটুকু আমি প্রকৃতি থেকে নিয়েছি। আমার অনুসন্ধানী চোখ সর্বত্র খুঁজে ফেরে সৃষ্টির রহস্য, নষ্ট সমাজের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসঙ্গতিগুলো।’

আসলেই তাই উপন্যাসিক আফরোজা হীরা তার বিশাল নামের উপন্যাসটিতে তুলে এনেছেন সেই সমাজেরই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসঙ্গতিকে। ছাবিনা আর জয়তুন চরিত্রের নোনা পানি পান, কলিম আর সুন্দরবনের বাঘ, রহিমা, ছলিমের ২য় বিয়ে, ইত্যাদি গ্রাম বাংলার খুটিনাটি চিত্রকে একত্রিত করে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গাটাকে স্পষ্ট করে তুলেছেন বাংলার ঘরে গরে প্রতিটি নারী এক একটা জীবন্ত ইতিহাস – নামের গ্রন্থে।

উপন্যাস “বাংলার ঘরে ঘরে প্রতিটা নারী এক একটা জীবন্ত ইতিহাস” এর মোড়োক উন্মোচন কেরলেন আসাদুজ্জামান নূর, কবি হেলাল হাফিজ সহ আরো অনেকে।

উপন্যাস “বাংলার ঘরে ঘরে প্রতিটা নারী এক একটা জীবন্ত ইতিহাস” এর মোড়োক উন্মোচন কেরলেন আসাদুজ্জামান নূর, কবি হেলাল হাফিজ সহ আরো অনেকে।

ফেসবুকে প্রথম তার লেখা স্মৃতি ঝড়ের মূর্ছনা

এটা তো জানাই ছিল
সময়ের স্রোতে একদিন ধুয়ে যাবে
আঠারো বছরের সেই কাঁচা হলুদ রং।
প্রতিটা ঢেউয়ের ধাক্কায়, একটু একটু করে
দূরে সরে যাবে প্রিয় সব মুখ গুলো
যেমনি করে আজ আমি একেবারেই
হারিয়ে ফেলেছি-
ছোট্ট বেলার প্রিয় সেই লাল রঙের ফ্রগ
আর, পুতুলের বাক্সটা।

05পার্বতী পারু ছদ্মনামের এই কবিতা পড়েই তার সাথে আলাপ । কবিতার দুর্বোধ্যতায় নয় বরং সহজবোধ্যতার মুগ্ধতা নিয়ে সাহিত্য বাজার ডট কমে তার প্রথম কবিতার প্রকাশ হয়েছিল ২০১৪ সালের জানুয়ারীতে মাসে । লাইক সংখ্যা -৪২৩ (এ লেখাটির সময়ে)।

জানুয়ারী ২৯, ২০১৪ পদাবলী, সাহিত্য 424 বার পঠিত
ফেসবুকে তার অগনিত ভক্তের লাইক পড়েছিল মূবুর্তেই ।

সেই থেকে তার কবিতার প্রতি সাহিত্য বাজারেরও একটা দুর্বলতা স্পষ্ট । যার প্রমাণে এই সেরা সাহিত্যকর্মীর পুরস্কার তালিকায় তাকে যুক্ত করে আমাদের এই আনন্দ প্রকাশ এবং গর্বিত হওয়া ।
ষড়বিন্দু – ৬ জন কবির কবিতা নিয়ে সম্মৃদ্ধ একটি কাব্যগ্রন্থ, যেখানে আফরোজা হীরার কবিতা দিয়েই বইটির সূচনা । মোট ৫৩ টি কবিতায় কবির জীবন ও চেতনার দৃষ্টিভঙ্গী পরিস্কার হয়ে ওঠে ।
খুলনার মোংলাতে পশুর নদীর জল বাওয়া গায়ে মেখে বেড়ে ওঠা বলেই তিনি সিডর, আইলার মত বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগকে দেখেছেন খুব কাছ থেকে। তার কবিতায় প্রেম ভালবাসা ছাপিয়ে তাই জেগে ওঠে এক প্রতিবাদী উচ্ছাস ।
‘…টাকার নাম বদলে ডলার রাখলেই সে স্বর্ণমুদ্রা হয় না ।…
সোনালী টুপি মাথায় পড়লেই, হুজুর ডাকি না
আর কুত্তাকে আজও কুত্তাই বলি ।’

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!

About the author

ডিসেম্বর ৭১! কৃত্তনখোলার জলে সাঁতার কেটে বেড়ে ওঠা জীবন। ইছামতির তীরঘেষা ভালবাসা ছুঁয়ে যায় গঙ্গার আহ্বানে। সেই টানে কলকাতার বিরাটিতে তিনটি বছর। এদিকে পিতা প্রয়াত আলাউদ্দিন আহমেদ-এর উৎকণ্ঠা আর মা জিন্নাত আরা বেগম-এর চোখের জল, গঙ্গার সম্মোহনী কাটিয়ে তাই ফিরে আসা ঘরে। কিন্তু কৈশরী প্রেম আবার তাড়া করে, তের বছর বয়সে তের বার হারিয়ে যাওয়ার রেকর্ডে যেন বিদ্রোহী কবি নজরুলের অনুসরণ। জীবনানন্দ আর সুকান্তে প্রভাবিত যৌবন আটকে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পদার্পন মাত্রই। এখানে আধুনিক হবার চেষ্টায় বড় তারাতারি বদলে যায় জীবন। প্রতিবাদে দেবী আর নিগার নামের দুটি কাব্য সংকলন প্রশ্ন তোলে বিবেকবানের মনে। তার কবিতায়, উচ্চারণ শুদ্ধতা আর কবিত্বের আধুনিকায়নের দাবী তুলে তুলে নেন দীক্ষার ভার প্রয়াত নরেণ বিশ্বাস স্যার। স্যারের পরামর্শে প্রথম আলাপ কবি আসাদ চৌধুরী, মুহাম্মদ নুরুল হুদা এবং তৎকালিন ভাষাতত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রাজীব হুমায়ুন ডেকে পাঠান তাকে। অভিনেতা রাজনীতিবিদ আসাদুজ্জামান নূর, সাংকৃতজন আলী যাকের আর সারা যাকের-এর উৎসাহ উদ্দিপনায় শুরু হয় নতুন পথ চলা। ঢাকা সুবচন, থিয়েটার ইউনিট হয়ে মাযহারুল হক পিন্টুর সাথে নাট্যাভিনয় ইউনিভার্সেল থিয়েটারে। শংকর শাওজাল হাত ধরে শিখান মঞ্চনাটবের রিপোটিংটা। তারই সূত্র ধরে তৈরি হয় দৈনিক ভোরের কাগজের প্রথম মঞ্চপাতা। একইসমেয় দর্শন চাষা সরদার ফজলুল করিম- হাত ধরে নিযে চলেন জীবনদত্তের পাঠশালায়। বলেন- মানুষ হও দাদু ভাই, প্রকৃত মানুষ। সরদার ফজলুল করিমের এ উক্তি ছুঁয়ে যায় হৃদয়। সত্যিকারের মানুষ হবার চেষ্টায় তাই জাতীয় দৈনিক রুপালী, বাংলার বাণী, জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক, মুক্তকণ্ঠের প্রদায়ক হয়ে এবং অবশেষে ভোরেরকাগজের প্রতিনিধি নিযুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ান ৬৫টি জেলায়। ছুটে বেড়ান গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। ২০০২ সালে প্রথম চ্যানেল আই-্র সংবাদ বিভাগে স্থির হন বটে, তবে অস্থির চিত্ত এরপর ঘনবদল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, আমাদের সময়, মানবজমিন ও দৈনিক যায়যায়দিন হয়ে এখন আবার বেকার। প্রথম আলো ও চ্যানেল আই আর অভিনেত্রী, নির্দেশক সারা যাকের এর প্রশ্রয়ে ও স্নেহ ছায়ায় আজও বিচরণ তার। একইসাথে চলছে সাহিত্য বাজার নামের পত্রিকা সম্পাদনার কাজ।