সাহিত্য বাজার উৎসব মঞ্চ থেকে : প্রফেসর আলী ইদ্রিস

সাহিত্য বাজার

Sharing is caring!

02

বক্তব্য রাখছেন লেখক প্রফেসর আলী ইদ্রিস

alochona-3সাহিত্য বাজার পত্রিকার উদ্যোগে সাহিত উৎসব হলো ময়মনসিংহে। প্রচন্ড দাবদাহের এই বৈশাখে বৃষ্টিহীন জলশুন্য ব্রহ্মপুত্রের তীরে এই উৎসব যেন প্রকৃতির সাথে মিলে যায়। এক যুগ পর ময়মনসিংহে এই ধরনের আয়োজন।
শুষ্ক, রু, প্রকৃতি জলের ছোয়া পেলে যেন পেলব ফুল্ল কুসুমিত হয়ে উঠে সাহিত্য অঙ্গন ও যতেœর ছায়া পেলে ডাল পালা মেলতে পারে নিতে পারে মুক্তি আর স্বস্থির নি:শ্বাস।
ময়মনসিংহ সাহিত্যের উর্বর ভূমি, স্বর্ণ ফসলে উজ্জ্বল এর ঐতিহ্য পট। ব্রহ্মপুত্র আয়মান ঘোড়াউত্রা, কংশ সোমেশ্বরী তীরে তীরে যুগে যুগে রচিত হয়েছে সাহিত্যের গৌরব গাঁথা।

চন্দ্রবতী, উকিল সুন্সী, শৈলজানন্দব, কেদার নাথ মজুমদার শামসুদ্দিন আব্দুল কালাম, আবুল মনসুর আমেদ প্রমুখ সাহিত্য মনীষীদের বিচরনভূমি এই জনপদে এই সাহিত্য আসর যথার্থ অথেই গুরুত্ব বহন করে।
সকল ধরনের জাতীয় অনুষ্ঠানের মঞ্চস্থল ঢাকা হতে পারে। ঢাকার মুখীনতার বাইরের যে সকল সাহিত্য উৎসব হতে পারে এই মিলন মেলা এই অনুষ্ঠান তার দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।
তিন দিনের উৎসবে নয়টি চমৎকার মনোমুগ্ধকর নয়টি সাহিত্য অধিবেশন হয়েছে। দেশের বরেন্য লেখকদের সম্মাননা ও পদকে ভূষিত হয়েছে। ময়মনসিংহ শহর তার উজ্জ্ল স্মৃতি স্বার হয়ে রইল।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, বগুড়া ছাড়াও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কবি সাহিত্যিক ও সাহিত্য,বোদ্ধারা এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তাদের অভিনন্দন।
সংবর্ধিত লেখকদের দায়িত্ব বাড়লো আশা করি ভবিষ্যতে তারা নিজ নিজ েেত্র তাদের কর্মমুশনতার পরিচয় দেবেন। দেশ ও সমাজের দায়িত্ব পালনে তারা অগ্রণী হবেন এই সাহিত্য উৎসব এই প্রত্যাশা লালন করে।
একদা এই ময়মনসিংহ শহর ছিল সাহিত্য সংস্কৃতির উৎসবে ভয়পুর। সাম্প্রতিক সময়ে যন্ত্র জীবন নগরের পীড়ন, জীবন সংগ্রামের বহুবিধ বেদনায় মানুষগুলো নীল দংশনে কিছুটা আক্রান্ত হলেও শেষ পর্যন্ত যে সাহিত্যের শাশ্বত সৌরভের কাছেই ফিরে আসে এই উৎসব সেটিই প্রমান করলো। বাংলাদেশের গল্পের শরীর জুড়ে রয়েছে বহুমান্ত্রিক অর্জনের অহংকার। আমাদের গল্পকার গন মুক্তিযুদ্ধ, হানাদার বাহিনীর নির্যাতন ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের বিলোড়িত সমাজের চিত্র-চারিত্র অংকন করেছেন দতার সাথেই।
হাসান আজিজুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, কায়েস আহমদ, জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, মাহমুদুল হক প্রমুখ যেমন একটি দশক থেকেই গল্পের প্রকরণ ভাষা ব্যক্তির রণ ও তৃষ্ণার রূপায়নে নিবেদিত থেকেছেন সত্তর দশকে রাহাত খান। বুলবুল চৌধুরী মঞ্জু সরকার সুশান্ত মজুমদার, আদসান চৌধুরী প্রমুখ তীর্যক আলো ফেলেছেন মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম, শাসক দলের ব্যর্থতা মূল্যবোধের অবয়, দুর্ভি, হত্যা, সামরিক শাসন হতাশা ও আশাভঙ্গের বেদনা প্রভৃতি বিষয়ে।
আশির দশকে মামুন হুসাই শহীদুল জহির, নাসরিন জাহান, কাজল শাহনেওয়াজ প্রত্যেকেই গল্পের বিষয় চিন্তা ভাষাভঙ্গিতে নতুনত্ব নিয়ে এসেছেন।
নব্বই এর দশকে এক ঝাঁক উজ্জ্বল গল্পকার জীবনকে ভিন্ন বাস্তবতায় উপস্থাপন করেছেন।
ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ, জটিল রাজনীতি, বেকারত্ব, ফতোয়াবাজী, খুন, ধর্ষণ এনজিও ব্যবসা প্রভৃত বিষয়কে গল্পে অঙ্গীভূত করেন।
আহমদ মোস্তফা কামাল, প্রশান্ত মৃধা, শাহীন আক্তার, পাপড়ি রহমান, খোকন কায়সার, অদিতি ফাল্গুনী প্রমুখ গল্পের প্রথাগত ধারণাই যেন পাল্টে দিতে চান। পুরাণ, মিথ আঞ্চলিক ডায়লক, ধর্মের অনুষঙ্গ ইত্যাদি বিষয়কে সমকালীন জীবনের সাথে যুক্ত করে গল্প রচনা করতে চান এই সময়ের গল্পকারগণ।
গল্পের এইসব সোনালী প্রহর আমাদের আলোকিত করে, সাহসী করে।সাহিত্য বাজার উৎসব যে গতির সঞ্চার করে দিলো আশা করি এই যাত্রা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকবে।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!