শেষ হলো প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক আয়োজন ‘বিজয় নিশান’

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাহিত্য বাজার

Sharing is caring!

IMG_0693মহান বিজয়ের ৪২ বছর উপলে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও অপরাপর সমমনা সংগঠনগুলোর আয়োজনে তিন দিনব্যাপী বিজয় উদযাপন অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর সোমবার ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪২তম বিজয়বার্ষিকী উপলে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক আয়োজন “বিজয় নিশান” শিরোনামের এ আয়োজনের তৃতীয় ও শেষ দিন।

‘লোহিত বিজয় নিশান হাতে জেগে ওঠো অগ্নিদগ্ধ বাংলাদেশ’- এই শ্লোগান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার শেষদিনাটতে ছিল সাংস্কৃতিক কর্মসূচি, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও বইমেলা। এ দিন বিকেল তিনটায় কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের উদ্যোগে শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শুরু হয় দিনের প্রথম কর্মসূচি। এরপর বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে গোটা বিশ্বের বাঙালিদের সাথে শাহবাগে জাতীয় সংগীতে গলা মেলান আয়োজকরা। তারপর ‘বিজয় নিশান’ এর উদ্যোগে একটি প্রতিবাদী পদযাত্রা বের হয়ে হাকিম চত্বরে গিয়ে মূল অনুষ্ঠানস্থলে মিলিত হয়। সারারাত চলে নানান আয়োজন।

শুরুতেই দলীয় গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। তারা পরিবেশন করেন “পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে”, “কারার ওই লৌহ কপাট” প্রভৃতি গান। এরপর একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সোহানা আহমেদ, জসিম উ্দ্িদন, ুদে শিল্পী ঊর্বি প্রমূখ। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের শিল্পীরা। এছাড়া, কবিতা আবৃত্তি করেন বেলায়েত হোসেন, ইকবাল খোরশেদ খান প্রমূখ। এছাড়া, ছিল বইমেলা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্বরচিত কবিতা পাঠ, প্রদর্শনী বিতর্ক, সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, গীতিনাট্য, পারফর্মিং আর্ট, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী প্রভৃতি অনুষ্ঠান। সবশেষে প্রদর্শিত হয় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র।

এর আগে, তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করা হয় ১৪ ডিসে¤॥^র শনিবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যে। উদীচী’র কেন্দ্রীয় সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন উদীচী’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনির। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, এমন একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে এ বিজয় উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে যখন গোটা দেশবাসী কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা কসাই কাদের মোল্লার মৃত্যুদ- কার্যকরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। দীর্ঘদিন ধরে গণমানুষের যে দাবি, সেই দাবির বাস্তবায়নের প্রথম ধাপটি সম্পন্ন হওয়ার কালজয়ী এই মুহূর্তে গোটা দেশবাসীকে অভিবাদন জানান তারা। একইসাথে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার যে লে উদীচী ও সমমনা সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে যে লড়াই চালিয়ে আসছে তাতে যোগ দিয়ে সাংস্কৃতিক সংগ্রামের মাধ্যমে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সকলের প্রতি আহবান জানান তারা।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ছিল দণি আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি, অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা স্মরণে প্রগতি লেখক সংঘের বিশেষ অনুষ্ঠান। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী’র সহ-সভাপতি হাবিবুল আলম, শামীম আল মামুন, সহজিয়া, সারথী ব্যান্ড। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের খুদে শিল্পীরা। খেলাঘরের শিল্পীদের পর মঞ্চে আসে সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন। তাদের গণসঙ্গীত পরিবেশনা শেষ হলে মঞ্চে ওঠেন উদীচী’র শিল্পীরা। তারা পরিবেশন করেন মহান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের উপর ভিত্তি করে রচিত বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠান। এরপর প্ল্যানচেট বিতর্ক পরিবেশন করে রাজু বিতর্ক অঙ্গণ। সবশেষে প্রদর্শিত হয় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র।

তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানমালার আয়োজক ছিল বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, প্রগতি লেখক সংঘ, রণেশ দাশগুপ্ত চলচ্চিত্র সংসদ, রাজু বিতর্ক অঙ্গণ, পরিবেশ বীণ, সোমেন-তাজুল পাঠাগার, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী ও বিপ্লবীদের কথা।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!