মামুন মোয়াজ্জেম! একজন কবি ও একজন প্রশাসক

আরিফ আহমেদ

Sharing is caring!

আমাকে আদর দিয়ে সোহাগ দিয়ে
পোষা পাখি করে রেখেছো
কৃতবিদ্য জ্ঞান এই চারদেয়াল
সব নিয়ে বেশ সুখে আছি !
পোষা পাখির সংসারে খাঁচা ভেঙে গেলেই আকাশ অচেনা
ডানার সামর্থগুলো তুমি খুব কৌশলে
লুকিয়ে রেখেছো চতুর বিদ্যায়
তোমার চোখের ভাষা সন্মোহন মায়াজাল
এবং মেপে মেপে বৃত্তির খোরাক
আমাকে খুব সুখে রেখেছে!
আমিতো গাইতে জানি তোমার কথার মতো বলতেও পারি
তোমার নন্দন কলায় গদগদে হয়ে গর্বিত হই
পেটের টান ও জৈবিক তাড়ন তোমার সিন্দুকে রেখে
আমি সুখি দিন যাই
আমার চারদেয়াল খাঁচার রগরগে শিক
বহিঃশত্রুর রক্ষাকবচ
উপরে আকাশ ভাসার স্বপ্নগুলো ফিকে করে দিয়ে
তোমার হৃদয়বৃত্তির স্বপ্নগুলোর আঁচে
বড্ড ওমসুখে আছি
আদর নিয়ে সোহাগ নিয়ে
গর্বিত পোষা পাখি হয়ে
পাড়ার লোকসুদ্ধ বলি ‘ কী সুখ রে ভাই!!’
কবিতা আর প্রশাসন একসাথে যায় কি? একবারে যে যায় না তা-ই বা কি করে বলি? প্রমাণতো আছেন সাবেক জনপ্রশাসন সচিব জনপ্রিয় কবি আবু নাসের কামাল চৌধুরী! আরো কয়েকজন কবি ও প্রাবন্ধিক আছেন এ তালিকায়। তবে তাদের অনেকে অবসরে এসেছেন সাহিত্যের চর্চায়। ব্যতিক্রম কবি মামুন মোয়াজ্জেম। তিনি যে শৈশব থেকেই লিখছেন তা নয়, নিজের কর্মক্ষেত্রকেই করে তুলেছেন কাব্যময়।।। (পোষা পাখি)

বেশিরভাগ পুলিশের কর্মকর্তারা যখন সন্ত্রাস ও  মাদকের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ার বেছে নিয়েছেন,তিনি তখন সেমিনার সিম্পোজিয়াম করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে ব্যস্ত সময় কাটানোর পর এ্যাকশনে যাচ্ছেন। কখনো আবার কিশোর অপরাধীকে বা, মাদক সেবনকারীকে তুলে দিচ্ছেন অবিভাবকের হাতে।লিখছেন –

“কোথাও ফেলেছি মিষ্টি সুখের শ্বাস

তুমি তুলে নিলে বাঁচবো এটাই আশ…!!

তার কবিতার বিষয়ে কবি ও সাংবাদিক স্বাধীন চৌধুরী বলেন – অসাধারণ অভিব্যক্তি ও সাধারণ বাক্য তার কাব্যিক চরণের শক্তি। তার  কবিতা শুধু মুগ্ধতা ছড়ায় না ভাবনাকে ব্যস্ত করে তোলে। আমি এবং ময়মনসিংহের অনেকেই কবি মামুন মোয়াজ্জেমকে প্রশাসক হিসেবে নয়, কবি হিসেবেই বেশি জানি।  কবি মামুন মোয়াজ্জেম এর কবিতা বিষয়ে এ সময়ের তরুণ কথা সাহিত্যিক জুয়েল কবির জানান, মামুন মোয়াজ্জেম, নব্বই দশকের কবি। তিনি কাব্যপ্রেমিক এবং কাব্যচর্চায় শতভাগ বিশুদ্ধ থাকেন। তার কবিতায় ব্যাক্তিগত জীবনাপোলব্ধি প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করে। যে কারণে তার কাব্যসিদ্ধিতে বিষয় বরাবরই থাকে মূখ্য ভূমিকায়। সেই সাথে যুক্ত হয় তার শৈশব অনুভবে জড়িয়ে থাকা গাঁয়ের ধুলোমাখা প্রান্তর। ঘুরে ফিরে স্ফূরিত হয় নষ্টালজিক মূহুর্তসকল। প্রেম এবং প্রকৃতি তার ভাবনার আধার। ভাবনাকে আত্তীকরণের মাধ্যমে তিনি কল্পনার বিস্তার ঘটান তারই চেনা পৃথিবীর পাখায় পাখায় শাখায় শাখায়। কবিতায় আঞ্চলিক তথা লৌকিক শব্দপ্রয়োগ তার কাব্য নির্মাণকে স্বাতন্ত্র করে।

 ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত ‘চন্দ্রাবতীর কয়েকজন সন্তান ‘ কাব্যগ্রন্থের বারোজন কবির  একজন মামুন মোয়াজ্জেম। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কালো জল অন্তহীন’ নিয়ে ২০১৬ সালে তার আত্মপ্রকাশ হলেও ছোটো কাগজের সাথে যুক্ত তিনি ছোটোবেলা থেকেই।

শৈশবে ই বাবা মাকে হারানোর যন্ত্রণা তাকে করে তুলেছে সুশিক্ষিত ও মানবিক। তাইতো শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট তাকে ছুঁয়ে যায় আপন জনার মতোই। তিনি লেখেন ঃ

ঢেউয়ের অভিঘাতেই ভাঙে তার ঘুমের প্রহর

ওপাশে কীর্তনখোলা কালাবদরে বদর বদর করে
হাল ধরে কালা মাঝি-
নিঝুম রাতের ওপর আকাশের সন্তাপ
এই যে জললগ্ন জেলে নাল বাতি এঁকেছে
কোলাজ- তার দু:খে ঘুমায় না তারা।

কিছু কি ফেলে যায় ওই হাড় খাটুনির কালো লোকগুলো
মাছেদের সাথে দৌড়ে দৌড়ে যে এখন ছিপছিপে মাছ-
ঘুমের চোখের ভেতর স্বপ্নদেখা বধূরা দেখে
রূপোলী ইলিশ-
রাতের সোহাগগুলো যার চিরকাল শিকেয় ওঠানো
রূপোলী পর্দার রূপোর স্বপ্নগুলো নিয়ে ঘুম ভাঙে
এঁটো বাসন মাজার ইঁদারার পাশে শুনে রূপোলী খবর
অথবা ঘাটের ওপর বুক ভাঙে তার ।
ভোরের আকাশ ক্রমশ: গরম হয়ে
সমস্ত সংসার সোহাগ আঁচড়ে ফেলে দেয় !

কীর্তনখোলার সাদা জলে কোন স্বপ্ন নেই তার
জলের সাথে জীবন, জীবনের সাথে জল
ক্রমশ: কালো বলে স্বপ্নেরা জেগে ওঠে
জেলেদের নালবাতির জলজ কোলাজ ঘিরে !!

একনজরে কবি মামুন মোয়াজ্জেম জীবনচিত্রঃ

জন্ম: কিসমত বনগ্রাম, নান্দাইল, ময়মনসিংহ।
:: ভাইবোনদের মধ্যে কনিষ্ঠতম।
:: স্ত্রী- ফেরদৌস আরা
দুই কন্যা- ঊর্জানা ও রিমঝিম।
::আনন্দমোহন কলেজে কৈশোরে ইন্টারমিডিয়েট তারপর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুক ক্যাম্পাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর।
ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও ছোটকাগজে লেখালেখি।
বর্তমানে শুধু ছোটকাগজে লেখালেখি করেন।
:: প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ:: ২ টি ‘ ও ‘দৃশ্যের গোপন দরজা'(২০১৮)
প্রকাশের অপেক্ষায় আছে আরো দুটি কাব্য গ্রন্থ।

বর্তসানে তিনি উপ-পুলিশ কমিশনার (ওয়েলফেয়ার এন্ড ফোর্স), অতিঃ দায়িত্বে উপ-পুলিশ কমিশনার (প্লানিং, রিসার্চ এন্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট),
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঢাকা।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!

About the author

ডিসেম্বর ৭১! কৃত্তনখোলার জলে সাঁতার কেটে বেড়ে ওঠা জীবন। ইছামতির তীরঘেষা ভালবাসা ছুঁয়ে যায় গঙ্গার আহ্বানে। সেই টানে কলকাতার বিরাটিতে তিনটি বছর। এদিকে পিতা প্রয়াত আলাউদ্দিন আহমেদ-এর উৎকণ্ঠা আর মা জিন্নাত আরা বেগম-এর চোখের জল, গঙ্গার সম্মোহনী কাটিয়ে তাই ফিরে আসা ঘরে। কিন্তু কৈশরী প্রেম আবার তাড়া করে, তের বছর বয়সে তের বার হারিয়ে যাওয়ার রেকর্ডে যেন বিদ্রোহী কবি নজরুলের অনুসরণ। জীবনানন্দ আর সুকান্তে প্রভাবিত যৌবন আটকে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পদার্পন মাত্রই। এখানে আধুনিক হবার চেষ্টায় বড় তারাতারি বদলে যায় জীবন। প্রতিবাদে দেবী আর নিগার নামের দুটি কাব্য সংকলন প্রশ্ন তোলে বিবেকবানের মনে। তার কবিতায়, উচ্চারণ শুদ্ধতা আর কবিত্বের আধুনিকায়নের দাবী তুলে তুলে নেন দীক্ষার ভার প্রয়াত নরেণ বিশ্বাস স্যার। স্যারের পরামর্শে প্রথম আলাপ কবি আসাদ চৌধুরী, মুহাম্মদ নুরুল হুদা এবং তৎকালিন ভাষাতত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রাজীব হুমায়ুন ডেকে পাঠান তাকে। অভিনেতা রাজনীতিবিদ আসাদুজ্জামান নূর, সাংকৃতজন আলী যাকের আর সারা যাকের-এর উৎসাহ উদ্দিপনায় শুরু হয় নতুন পথ চলা। ঢাকা সুবচন, থিয়েটার ইউনিট হয়ে মাযহারুল হক পিন্টুর সাথে নাট্যাভিনয় ইউনিভার্সেল থিয়েটারে। শংকর শাওজাল হাত ধরে শিখান মঞ্চনাটবের রিপোটিংটা। তারই সূত্র ধরে তৈরি হয় দৈনিক ভোরের কাগজের প্রথম মঞ্চপাতা। একইসমেয় দর্শন চাষা সরদার ফজলুল করিম- হাত ধরে নিযে চলেন জীবনদত্তের পাঠশালায়। বলেন- মানুষ হও দাদু ভাই, প্রকৃত মানুষ। সরদার ফজলুল করিমের এ উক্তি ছুঁয়ে যায় হৃদয়। সত্যিকারের মানুষ হবার চেষ্টায় তাই জাতীয় দৈনিক রুপালী, বাংলার বাণী, জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক, মুক্তকণ্ঠের প্রদায়ক হয়ে এবং অবশেষে ভোরেরকাগজের প্রতিনিধি নিযুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ান ৬৫টি জেলায়। ছুটে বেড়ান গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। ২০০২ সালে প্রথম চ্যানেল আই-্র সংবাদ বিভাগে স্থির হন বটে, তবে অস্থির চিত্ত এরপর ঘনবদল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, আমাদের সময়, মানবজমিন ও দৈনিক যায়যায়দিন হয়ে এখন আবার বেকার। প্রথম আলো ও চ্যানেল আই আর অভিনেত্রী, নির্দেশক সারা যাকের এর প্রশ্রয়ে ও স্নেহ ছায়ায় আজও বিচরণ তার। একইসাথে চলছে সাহিত্য বাজার নামের পত্রিকা সম্পাদনার কাজ।