ফয়সাল শাহ’র ‘প্রেম-প্রেমাঞ্জলি’ – কবিতার নতুন ঠিকানা

গাউসুর রহমান

Sharing is caring!

11

কবি ফয়সাল শাহ

ফয়সাল শাহ’র ‘প্রেম-প্রেমাঞ্জলি’- কবিতার নতুন ঠিকানা
গাউসুর রহমান

সমকালীন বাংলা কবিতার অমিত প্রতিভার বর্ণিল স্মারক ফয়সাল শাহ। দশকওয়ারি বিভাজনে নব্বই দশকের কবি তিনি। প্রেম-ই তাঁর কবিতার মূল প্রনৌদনা, মূল প্রবর্তনা। এর সঙ্গে মিশেছে প্রকৃতি-নিসর্গ,যুগচৈতন্য, আত্মসত্তার উন্মোচনের প্রেরণা ও মানবিক ভাব-বিশ্ব। সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেম- প্রেমাঞ্জলি’ সে স্যা-ই বহন করে।
প্রাণশক্তির উচ্ছলতা ফয়সাল শাহ’র কবিতার প্রধান প্রাণশক্তি। প্রাণের উত্তাপ ও বর্ণবিভা দিয়ে জীবনের বসন্ত রচনা করেন তিনি কবিতায়। তিনি সর্বমুখী আত্ম-জাগৃতির জাতক বলেই তাঁর কবিতা পূর্ণায়ত আত্মঅভিব্যক্তি। প্রেম সেখানে তাঁর কবিতার প্রাণভোমরাঃ
‘নীল নীল কষ্টগুলো আমার শিরা-উপশিরায়
প্রবাহিত হয়ে লাল ধারায় মিলায়
আর যে দিয়েছে একগুচ্ছ নীল কষ্ট
সেতো রজনীগন্ধা হয়ে
ফুলদানিতে গন্ধ বিলায়।’
[‘নীল নীল কষ্ট’, প্রেম-প্রেমাঞ্জলি’]

অভিজ্ঞতার বিস্ময়কর রসায়ন, দ্রবণ ও পরিবর্তন নিয়ে ফয়সাল শাহ আপন মানসের ভেতর অনুভব করেন জীবনের নানা ঘটনার অভিঘাত। স্মৃতিময় সমগ্রসত্তা নিয়ে জীবনমন্ত্রের খোঁজে এই কবি। প্রণয়- বেদনার জন্যেই ঐকান্তিক আবেগের স্বচ্ছ ও বলিষ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কবিতায়। ফয়সাল শাহ’র কবিতায় আছে আত্মভাবনা, বস্তুতথ্য, আন্তর-আত্মীয়তা। তাঁর নম্্রধূসর স্বপ্নের ভুবনে প্রেম ও রোমান্টিকতা গুঁজে দ্যায় হিরন্ময় পালকঃ
‘আমার চিন্তা, স্বপ্ন তোমায় যদি ছুঁয়ে যায়
তবে বুঝে নিও, আমার চেতনার একটি অংশ তোমার
যা সুযোগ দেয় নতুন কিছু ভাবনার।
সবটুকু জুড়ে আছে
কামনার চূড়ান্ত সীমায়
যেটুকু চাওয়া যেটুকু পাওয়া
সবকিছু তোমায় ঘিরে।’
[‘তোমায় ঘিরে’, ‘প্রেম-প্রেমাঞ্জলি’]

F-shahকবি হিসেবে ফয়সাল শাহ মনের রুদ্ধদ্বার উন্মুক্ত উন্মুল করে দেন। তাঁর সূক্ষ্ম অনুভূতির রূপ-ভাণ্ডারে প্রেমের অনিবার্য উপস্থিতি। স্বপ্নচারী এই কবি তাঁর অনুভূতির, সংবেদনশীলতার অকপট উচ্চারণ করেছেন কবিতায়। প্রেমাবেগ সেখানে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশী। স্বতঃসিদ্ধ প্রাণাবেগ ও বিবেচিত প্রেমবোধে তাঁর কবিতা সর্বজনীন রূপ পরিগ্রহ করেঃ
‘মায়ার অর্থ খুঁজি তোমার কাছে
আসবো আমি রজনীগন্ধার মালা হয়ে
থাকব দু’জনে হৃদয়ের কাছাকাছি।’
[‘ভাষাগুলো শব্দ খোঁজে’, ‘প্রেম-প্রেমাঞ্জলি’]

ফয়সাল শাহ’র ব্যক্তি-চৈতন্য অনেক েেত্রই প্রণয় চৈতন্যে পর্যবসিত হয়। মানবীয় সৃজন-প্রয়াসের মৌল উৎস হিসেবে কাজ করে কবির চেতনা। তাঁর প্রণয়- চেতনা সময়- চেতনার সাঙ্গেও একাত্ম। তাঁর কবিতায় এক ধরণের সহজ গতিশীল বাক্ভঙ্গি আছে। সৌন্দর্যসৃষ্টির প্রয়াসকে একাতœ করেছেন তিনি প্রেমে। কবিতায় অনেক েেত্রই তিনি স্বপ্ন-কল্পনা-আবেগ, উদ্রেক শক্তি নিয়ে উপমায়, চিত্রকল্পে ঘনীভূত হয়েছেনঃ
‘মনমোহন মিলনমাধুরী, যুগলমুরতি
নিকুঞ্জ প্লাবিত চন্দ্রকর
হৃদয় পশিবে ফুলপাশ অয় প্রেমবন্ধন
প্রাণপনে প্রাণ বয়ে যায়।’
[‘কামনার কুয়াশায়’, ‘প্রেম-প্রেমাঞ্জলি’]

প্রণয়ের প্রেরণা ফয়সাল শাহ’র কবিতাকে সঞ্জীবনী শক্তি দিয়েছে, একথাটি যেমন সত্য; তেমনি সত্য যে, কবিতায় তিনি অনুভূতি ও অভিজ্ঞতাকে আত্মীকরণ করতে সম হয়েছেন। তাঁর উদ্দীপনার করতলে সমাজ ও সময় ও ঝলসে ওঠে। সময়ের আয়নায় তিনি নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পান। কবি তাই উচ্চারণ করেনঃ
‘চারপাশে যখন কিছু না থাকে
তখন মন বিষণœ হয়।
চারপাশে যখন সবকিছু থাকে
তখনও মন বিষণœ হয়।’
[‘বিষণœ বিলাসী’, ‘প্রেম-প্রেমাঞ্জলি’]

এভাবেই প্রণয়ের প্রচ্ছদে পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিম্বিত হয় ফয়সাল শাহ’র কবিতায়। প্রকৃতি ও নিসর্গের হাতছানি তাঁর প্রেমবোধকে যেমন ঘনীভূত করে, তেমনি কবিতার বয়ানকে করে সংহত। এভাবে প্রেম-ভালোবাসই তাঁর কবিতায় বিছিয়ে রাখে ধাত্রী- আসনঃ
‘আজ এ কোন ফাগুনে দুলছে হৃদয়
শিশিরভেজা প্রভাতবেলায়
এসো না প্রিয়া প্রীতির আলিঙ্গনে
সোহাগ মায়ার প্রেমবন্ধনে
একসাথে হারিয়ে যাই দিগন্ত পথে।’
[‘দিগন্ত পথে’, ‘প্রেম-প্রেমাঞ্জলি’]

প্রণয়ের মাধ্যমে জীবনের উজ্জীবনই ফয়সাল শাহ’র কবিতায় আরাধ্য। বাস্তবের আঁচড়ে এেেত্র তাঁর অস্তিত্ব কখনো কখনো প্রশ্নচিহ্নিত। জীবন-যাপনের বিভিন্ন উপাচার তাঁর কবিতায় প্রণয়ের মাধ্যমে জীবনের রহস্য উন্মোচন করতে চায়। তীব্র গহনশক্তির মাধ্যমে আত্মসত্তার উন্মোচক এই কবি কবিতার মাধ্যমে অতিক্রম করবেন অনেক দূরের পথ এ প্রত্যাশা পাঠক করতেই পারেন। ‘প্রেম-প্রেমাঞ্জলি’ পাঠকপ্রিয়তা পাবে বলে আমরা আশাবাদী। ধ্র“ব এষের দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ ‘প্রেম-প্রেমাঞ্জলি’ কাব্যকে দিয়েছে বিশেষ মাত্রা।
“ প্রেম- প্রেমাঞ্জলি-ফয়সাল শাহ” প্রথম প্রকাশঃ একুশে বইমেলা- ২০১৩ ॥ জিনিয়াস পাবলিকেশন ॥ ১১/১, বাংলাবাজার, ইসলামী টাওয়ার, দ্বিতীয় তলা, ঢাকা- ১০০০। প্রচ্ছদঃ ধ্র“ব এষ ॥ মূল্যঃ ১২৫/- টাকা ॥

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!