জাতীয় কবিতার উৎসব ও অমর একুশে বইমেলা সংবাদ

সাবা প্রতিবেদক

Sharing is caring!

A 006জাতীয় কবিতা পরিষদ
বন্ধু, তোমার সাথে কিন্তু আজ
দেব আমি আঁড়ি।
সব সরকারকে না বলে
তুমি যাও, সব কবিদের বাড়ি
পার, যত তারাতারি ।

‘কবিতা মৈত্রীর কবিতা শান্তির’ – এ শ্লোগান নিয়ে এবারের জাতীয় কবিতা উত্‍সব শুরু হয়েছিল। হাজারো কবির মিলনমেলা এই উত্‍সবে । ছোটো বড় ভেদাভেদ হীন প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরপুর এ উৎসব শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক না হয়ে বিভিন্ন জেলা শহরে অনুষ্ঠিত হলে খুবই ভালো হতো। ‘জাতীয় কবিতা উৎসব ২০১৬। কবিতার মাধ্যমে মানবতাকে জাগিয়ে তুলতে দুই দিন ব্যাপী এ উৎসবে অংশ নেয় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শতাধিক কবি।

A 002সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে দেশীয় কবিদের ছড়া পাঠের মাধ্যমে শুরু হয় ১০ পর্বে বিভক্ত উৎসবের ৮ম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। পরবর্তী পর্বে ঘোষণা করা হয় জাতীয় কবিতা পুরস্কার ২০১৬ এবং জাতীয় কবিতা পরিষদ সম্মাননা পুরস্কার ২০১৬। এবছর পুরস্কার পান কবি সাজ্জাদ কাদের এবং কবি বেলাল চৌধুরী। নিয়ম অনুযায়ী আগামী বছর জাতীয় কবিতা উৎসবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে।
নবীন, প্রবীণ এবং বিভিন্ন দেশের কবিদের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করাই এ উৎসবের মূল প্রাপ্তি বলে জানান অংশ নেয়া কবিরা। এত বড় একটি কবিতার উৎসবের আয়োজনে নিজেকে সামিল করতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কবি। বিশ্ব শান্তি ও মানবতার স্লোগানে এই কবিতা উৎসব বড় ভূমিকা রাখবে এমনটাই প্রত্যাশা অংশ নেয়া কবিসহ সকলের।

 

 

 

অমর একুশে বইমেলা : বাংলা একাডেমিতে শুরু হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা

বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শুরু হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এ মেলার উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন 120সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আক্তারী মমতাজ। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ কবি ও জীবনানন্দ অনুবাদক জো উইন্টার, চেক প্রজাতন্ত্রের লেখক-গবেষক রিবেক মার্টিন, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সমিতির (আইপিএ) সভাপতি রিচার্ড ডেনিস পল শার্কিন এবং বাংলাদেশের প্রকাশকদের পক্ষে অন্য প্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং নজরুলসংগীত পরিবেশন করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পৌত্রী অনিন্দিতা কাজী।

শিল্পী তপন মাহমুদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করা হয়। মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং ঐতিহাসিক ভাষার গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ভাষাকে সমৃদ্ধ করার জন্য অনুবাদ সাহিত্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘আমাদের সাহিত্যের ধ্রুপদি ও স্বনির্বাচিত সাহিত্য সম্ভার বিশ্ব পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে আরও ব্যাপকভিত্তিক ও মানসম্মত অনুবাদ জরুরি।’

প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা যাত্রা শুরুর তিন দশক পেরিয়ে এখন বিশ্বের দীর্ঘকাল ব্যাপ্ত গ্রন্থমেলার স্বীকৃতি পেয়েছে, যা বাংলাভাষী মানুষ হিসেবে প্রত্যেকের জন্য পরম গৌরব ও আনন্দের বিষয়। এ গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে দেশের নানা প্রান্তের মানুষ এমনকি বহির্বিশ্বে বসবাসরত বাঙালিদের যে বিপুল সমাগম ঘটে, তা এই মেলার সাংস্কৃতিক সারবত্তা ও শক্তিকেও ফুটিয়ে তোলে। বইয়ের মেলা এভাবে পরিণত হয় বৃহত্তর বাঙালির মিলনমেলায়।’

স্বাগত ভাষণে একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি অতিথিদের সমাগমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মাত্রিকতা যোগ হয়েছে। এবার মাসব্যাপী একুশে গ্রন্থমেলা বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী এবং ৩ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবের আবহে আরও প্রাণময় হয়ে উঠবে।’ তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বর্তমান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা একাডেমিতে ব্যাপক অবকাঠামোগত ও গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়িত হয়েছে, যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও স্বীকৃতি পাচ্ছে।’

সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘একুশের গ্রন্থমেলার পরিসর ক্রমেই বাড়ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারিত হয়েও ভবিষ্যতে স্থান সংকুলান হবে কি না, তা ভেবে দেখার বিষয়। তাই ভবিষ্যতে যাচাইবাছাই করে প্রকাশক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গ্রন্থমেলা পরিচালনা করতে হবে।’

BoiMela2গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক রচিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা’ বইয়ের ব্রেইল ও অডিও সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করেন। এ বই থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে একটি কবিতা আবৃত্তি করে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আসিফ করিম পাটোয়ারী। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী তাঁর ‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’ বইয়ের ব্রেইল সংস্করণেরও মোড়ক উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রীর হাতে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত ‘আধুনিক বাংলা অভিধান’ তুলে দেওয়া হয়।

গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৫ প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন কবিতা-আলতাফ হোসেন, কথাসাহিত্য-শাহীন আখতার, প্রবন্ধ-আবুল মোমেন ও আতিউর রহমান, গবেষণা-মনিরুজ্জামান, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্য-তাজুল মোহাম্মদ, অনুবাদ-আবদুস সেলিম, নাটক-মাসুম রেজা, স্মৃতিকথা-ফারুক চৌধুরী, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও পরিবেশ-শরীফ খান এবং শিশুসাহিত্য-সুজন বড়ুয়া। অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের হাতে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!