যশোরের কবি ও সাহিত্যিকদের কথা : শ্রী তারাপদ দাস

সাহিত্য বাজার

Sharing is caring!

DSC00552

যশোরের সাগরদাড়ি গ্রামে কবি মধূসূদন দত্তের বসতভিটার দৃশ্য। এটি এখন মধুসূদন স্মৃতি জাদুঘর।

যশোরের কবি ও সাহিত্যিকদের কথা
শ্রী তারাপদ দাস

প্রবাহমান কাল থেকে যশোর সাহিত্যচর্চার পাদপীঠ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বৃটিশ শাসনকাল থেকে আজ পর্যন্ত বহু কবি-সাহিত্যিক এ জেলায় জন্মগ্রহণ করে, তাদের লেখায় সাহিত্য সম্ভার সমৃদ্ধ করেছেন। অধুনা যশোরের সাহিত্যচর্চা এবং কবি সাহিত্যিকদের বিবরণ দিতে গেলে বৃহত্তর যশোরের প্রখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের কথা না বললে আধুনা যশোর অকৃতজ্ঞ বলে মনে হবে। তাই প্রথিতযশাঃ কতিপয় কবি-সাহিত্যিক, যারা তাদের সাহিত্যকর্ম দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে গৌরবময় করে তুলেছেন তাদের নাম ও ঠিকানা তুলে ধরছি মাত্র।
নড়াইল জেলায় কালিয়া উপজেলার গুরুনাথ সেনগুপ্ত, লোহাগড়া উপজেলার রায় বাহাদুর যদুনাথ মুজমদার, ডমুরিয়া গ্রামের কবিয়াল বিজয় সরকার, ঝিানাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার মুন্সী মেহেরউল্লাহ, শৈলকুপা থানার কবি গোলাম মোস্তফা, মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার মোহাম্মদ গোলাম হোসেন, পার নান্দুয়াল গ্রামের ডাঃ লুৎফর রহমান, সাঝআইল গ্রামের কবি ফররুখ আহমদ, শালিখা থানার নিমাই ভট্রাচার্য এবং ঝিনাইদহ জেলার দুর্গাপুর গ্রামের জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী প্রমুখ আমাদের যশোরকে সম্মৃদ্ধ করে তুলেছেন।
এখন অধুনা যশোরের যে সমস্ত কবি-সাহিত্যিক প্রাচীনকাল থেকে সাহিত্য সৃষ্টিতে অবদান রেখে স্মরণীয় হয়েছেন আমি পর্যায়ক্রমে তাদের নাম ঠিকানা ও সৃষ্টির উল্লেখ করছি।

* মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দও (১৮২৪-১৮৭৩)। জন্মস্থান: কেশবপুর উপজেলার সাগরদাড়ি গ্রাম। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: মেঘনাদবধ (মহাকাব্য), বীরাঙ্গনা (কাব্য), ব্রজাঙ্গনা (কাব্য), তিলোত্তমা সম্ভব (কাব্য), মায়াকানন (নাটক), একেই কি বলে সভ্যতা (প্রহসন), বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো (প্রহসন), চতুর্দশপদী কবিতা প্রভৃতি।
* মান কুমারী বসু (১৮৬৩-১৯৪৩)। জন্মস্থান: অভয়নগর উপজেলার শ্রীধরপুর গ্রাম। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: প্রিয় প্রথমা (কাব্য) কুসুমাঞ্জলি (কাব্য), বিভূতি (কাব্য) শুভ সাধনা (কাব্য) প্রভৃতি।
* হেমেন্দ্র প্রসাদ ঘোষ (১৮৭৬-১৯৩২) জন্মস্থান: চৌগাছা উপজেলা সদরে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: বিপতœীক (নাটক), অধঃপতন (নাটক), প্রেমের জয় (নাটক), নাগপাশা (উপন্যাস), অশ্র“ (উপন্যাস), মৃত্যুমিলন (উপন্যাস), প্রেম মরীচিকা (উপন্যাস), চোরাবালি (উপন্যাস), আষাঢ়ে গল্প (গ্রল্প গ্রন্থ)
* রায় বাহাদুর খগেন্দ্রনাথ মিত্র (১৮৮০-১৯১৯)। জন্মস্থান: অভয়নগর উপজেলার ধুলগ্রাম।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: নীলাম্বরী, কানেরদুল, কীর্তন গীতি।
* গোলাম লতিফ বিদ্যা বিনোদ (১৮৮৩-১৯৫২)। জন্মস্থান: সদর উপজেলার ঘোপগ্রাম। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: শিশুখুশী, নবীর কালাম, জাতীয় জীবন, পয়াগম্বর ও রসুল প্রভৃতি।
* কবি অবলা কান্ত মজুমদার (১৮৯১-১৯৫৮)। জন্মস্থান: মনিরাম উপজেলার বক্ষপুর গ্রাম। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: মধুগীতি কাব্য, মহাকবি মধুসূদন (নাটক), মহত্ব মন্দির (উপন্যাস), জীবন প্রদীপ (উপন্যাস), অমর শিখা (উপন্যাস) প্রভৃতি।
* আবুল হোসেন (১৮৯৬-১৯৩৮)। জন্মস্থান: ঝিকরগাছা উপজেলার কাউরিয়া গ্রাম।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: বাঞ্জালী মুসলমানের শিক্ষা সমস্যা, বাংলার নদী সমস্যা, নিজেদের বিড়ম্বনা প্রভৃতি।
* কবি তিলক শরৎ চন্দ্র মজুমদার (১৮৯৭-১৯৬০)। জন্ম্স্থান : মনিরামপুর উপজেলার পোড়াডাঙ্গা গ্রাম। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: পঞ্চকথা, পল্লব (কাব্য) আবর্ত (কাব্য) সুসময়ের ঘুম (উপন্যাস) স্বপ্নসাথী (কাব্য) সঞ্চারিনী (কাব্য)।
* কাজী মুজিবুর রহমান (১৮৯৮-১৯৬৭)। সদর উপজেলার দয়াপাড়া গ্রাম। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: বেদুইন, মোনক্ষুদা (কাব্য), শাহী আমল কাহিনী। উপন্যাস-শাহজাদা।
* মনোজবসু (১৯০১-) কেশবপুর থানার ডোঙ্গাঘাট গ্রাম। গ্রন্থাবলী : ভুলি নাই, সৈনিক, ওগো বধু সুন্দরী, বাঁশের কেল্লা, রক্তের বদলে রক্ত, সেতুবন্ধ, প্রেম নয়, ছবি আর ছবি প্রভৃতি।
* কাজী মৌলভী আবদুর রউফ (১৯০৪-১৯৭১)। কেশবপুর উপজেলার আন্দুলীয়া গ্রাম। কাব্য: অভ্রু সেতার, উপন্যাস: বাসার, পথের ডাক।
* ধীরাজ ভট্রাচার্য (১৯০৬-১৯৬২)। কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া গ্রাম। গদ্যগ্রন্থ : আমি যখন পুলিশ ছিলাম। আমি যখন নায়ক ছিলাম প্রভৃতি।
* ওয়াহেদ আলী আনসারী (১৯০৭-১৯৬২)। চৌগাছা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রাম। গ্রন্থ : নাস্তা, শেখ ফরিদ, ভিক্ষাবৃত্তি, কাব্য কোরান ইত্যাদি।
* অটল বিহারী দাস (১৯০৯-)। কেশবপুর উপজেলার কাকিলা খালি গ্রাম। কাব্যগ্রন্থ : অমরস্মৃতি, ঈশাখাঁ।
* মোঃ মতিউর রহমান (১৯১৪-)। বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেল বাড়িয়া গ্রাম। গ্রন্থ : ইসলাম ঐতিহাসিক পর্যালোচনা।
* ডাঃ অজিত কুমার ঘোষ (১৯১৯-)। সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রাম। গ্রন্থ : বাংলা নাটকের ইতিহাস, জীবন শিল্পী শরৎ চন্দ্র, বঙ্গ সাহিত্যে হাস্য রসের ধারা প্রভৃতি।
* শাহাদত আলী আনসারী (১৯২০-২০০৩)। সদর উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। গ্রন্থ : শ্রী মতীর রণভঙ্গ, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও পরিবার পরিকল্পনা, মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ।
* গালিব হরমুজ (১৯২৬-)। সদর উপজেলার বুসন্দিয়া গ্রাম। গ্রন্থ : টুনির পিঠে, শিশুতোষ, বিস্মৃতির অতলে-৭১, মুক্তিযুদ্ধ, সুন্দরবনের আদিকথা, ভিন্ননাম ছড়া, ঐতিহাসিক যশোর, মুক্তিযুদ্ধের পল্লীচিত্র, সৃষ্টির অন্তরালে, কিংবদন্তীর মিলন মেলা প্রভৃতি।
* বেগম আয়েশা সরদার (১৯২৭-) বাঘারপাড়া, খানপুর গ্রাম। কাব্যগ্রন্থ: মায়ামুকুল।
* হামিদা রহমান (১৯২৭-) সদর উপজেলার পুরাতন কসবা। গ্রন্থ : শাহীমহল (ছোট গল্প), স্বাতী (কাব্য), মহাপ্রলয়ের স্বাক্ষর (গ্রন্থ)।
* গোলাম মাজেদ (১৯২৮-১৯৮৪) কেশবপুর উপজেলার আন্দুলিয়া গ্রাম। কাব্যগ্রন্থ : আজব বাদ, ভাওতা, আহা জয় বাংলা, সপ্তক, ছোট গল্প -পার্থিব ইত্যাদি ।
* প্রমথ কুমার রায় (১৯২৯-) মনিরামপুর উপজেলার লখাইডাঙ্গা গ্রাম। গ্রন্থ : সর্ব ধর্ম সমন্বয়ে মুক্তির বাণী, রস মাহাতম।
* অধ্যাপক আজিজুল হক (১৯৩০-) স্থায়ী নিবাস যশোর শংকরপুর। কাব্য : ঝিনুক মুহূর্ত সূর্যকে, বিনষ্টের চিৎকার, অস্তিত্ব চেতনা, আমাদের কবিতা।
* তারাপদ দাস (১৯৩৭-) অভয়নগর উপজেলার মাগুরা গ্রাম। গল্পসংকলন : সভ্যতার অন্তরালে, কাব্য- প্রত্যয়, স্মৃতি যদি ইতিহাস (মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকায়), সঙ্গীতমালা (গান)।
* জহুরুল ইসলাম (১৯৩০-) মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর গ্রাম। গ্রন্থ : উপন্যাস- নিমতলার ডাঙ্গা, পলিমাটির দেশে, নাটক-চাঁদের দেশে, কাব্য- জেল থেকে বেরিয়ে ট্রেন থেকে প্রিয়াকে।
* মোহাম্মদ শরীফ হোসেন (১৯৩৪-২০০৭) সদর উপজেলার খড়কী গ্রাম। গ্রন্থ : যশোর পৌরসভার প্রথম পঞ্চাশ বছর, যশোর পাবলিক লাইব্রেরী, রবীন্দ্রনামের বড়খবর
* কবি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামন (১৯৩৬) সদর উপজেলার খড়কী গ্রাম। কাব্যগ্রন্থ : অনির্বাণ, শংকিত আলোক, বিপন্ন বিষাদ, প্রতুনু প্রত্যাশা, ভালবাসার হাতে, ইচ্ছেমতি, সঙ্গীত: নির্বাচিত গান, প্রভৃতি
কালিপদ দাস (১৯৩৬-১৯৭৩), মেছুয়া বাজার, যশোর সদর। নাটক- বাস্তুহারা, চারশবিশ, জয়বাংলা, আনারকলি, সাথীহারা, তিতুমীর, সোনার বাংলা। ডিটেকটিভ- বাঘা সিরাজ প্রভৃতি।
* সাদেকা শফিউল্লাহ (১৯৩৬ – ২০০২), ঘোপ, যশোর। গ্রন্থ : নিষিদ্ধ সুখের যন্ত্রণা, মুগ্ধ অবশেষে, শর্তহীন নিঃশব্দে। শিশুদের জন্য- বাম্পার গোঁ গোঁ
* মনুয়ারা মহসিন (১৯৩৮) ঝিকরগাছা। নাটক-বকুল মালা, উপন্যাস-রক্ত পলাশ মন, সুখ এক ঝলক উড়ন্ত পাখী।
* আব্দুর রহিম আসাদী (১৯৪০) শার্শা উপজেলার খড়িখালী গ্রাম (বর্তমানে দলম ঘাটা গ্রাম (সদর)। কাব্য : এই আরন্যকে, দিবা লোকে নিরন্তর, মুখস্ত কবিতা, সূর্যের মানচিত্র। গ্রন্থ : আজন্ম লালিত, জলে জোছনায় এই মুখ প্রভৃতি।
* সালমা শহীদ চৌধুরী (১৯৪০) ঘোপ, সদর উপজেলা। গ্রন্থ : রন্ধন বিচিত্রা, খাদ্য পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা। নাটক – ফুলের বাগান।
* হোসেন উদ্দিন হোসেন (১৯৪৯), ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রাম। গ্রন্থ : যশোরাজ্য বাংলাদেশ, যশোর জেলার কিংবদস্তী, অমৃত বৈদেশিক উপন্যাস- নষ্ট- মানুষ, প্লাবন একজন প্রভৃত্তি।
* ডাঃ ফজল মোবারক  (১৯৪১-), অভয়নগর উপজেলার সিদ্দিপাশা গ্রাম। গ্রন্থ : আমার লাম্পট্য, দেবতার প্রেম,
আঙ্গিনায় কালো মেঘ, ইষ্টিকুটুম ছাটুম ছুটুম। গান- ঝংকার, স্পন্দন।
* এহসান চৌধুরী (১৯৪২-), ঘোপ, যশোর। উপন্যাস- অন্তিম প্রার্থনা, ফেরারীদিন। নাটক- নূপুরের মন, চেনা মিছিল, রক্তঝরার দিন। শিশুসাহিত্য- কাঠি মামার এ্যাডভেঞ্চার, কাঠিমামার নতুনখবর, কাঠিমামার কর্মকান্ড, চিড়িয়াখানার জীবযন্তু।
* মোঃ রফিকুজ্জামান (১৯৪৩), সদর উপজেলার সড়কী গ্রাম। চিত্রনাট্য- সোহাগ, ঘরসংসার, ছুটির ঘন্টা, জোকার, সুখে থাক, সানাই। কাব্য- কোথায় লুকাব মুখ, ভালবাসার সুখ-অসুখ।
* ডঃ সৈয়দ আকরাম হোসেন (১৯৪৪), বারান্দীপাড়া, যশোর। উপন্যাস- দেশকাল ও শিল্পরূপ, চেতনালোক ও শিল্পরূপ। (তিনি মূলত একজন সমালোচক)
* এ,এস, এম শামসুর রহমান (১৯৪৬) কেশবপুর উপজেলার বায়সাগ্রাম। গদ্যগ্রন্থ : চলারপথ, ব্যবসায়ে ইবাদত, মানুষের আদী পিতা আদম না বানর প্রভৃতি।
* অধীর কুমার দাস (১৯৩৫) অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ গ্রাম। কাব্য- ছন্দবীথিকা, বজ্রবীণা, প্রবন্ধ- এবং এখন আমরা, শতাব্দীর সফল প্রয়াস। গল্পগ্রস্থ : দু’মুঠো বকুল, সঙ্গীত সঙ্গীতা

* কংকর গুপ্ত (১৯৪৮-২০০৩) মনিরামপুর উপজেলার সুজাতপুর গ্রাম। নাটক- অগ্নিবীণার কবি, সুনীল আবাস, আমরা ক’জন, কোথাও অমৃত নেই, অভিশপ্ত মসনদ, শুভংকরের ফাঁকি।
* মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম (১৯৫৪), কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া গ্রাম। কাব্য- আমার সোনার হরিণ চাই। নাটক- প্রথম প্রতিশ্র“তি, ক্ষুধা, নিশি-মৃগয়া, সৈকতেসূর্য। উপন্যাস- পোড়ামাটি ভাঙ্গা ঘর, সূর্যবলয়।
* কুতুব উদ্দীন আমার (১৯৫৯) বেজপাড়া, যশোর। কাব্য-নবজীবন, উচিত কথা। মূলত তিনি ছড়াকার।
* কাজী শওকত শাহী (১৯৬০) নিউ টাউন, যশোর সদর উপজিলা। কাব্য সংকলন- কথা আর সুরে সুরে। প্রবন্ধ- শিক্ষালয়ের ইতিকথা।  (বিদ্যালয় ও কলেজের ইতিহাস)।

উল্লেখিত কবি, সাহিত্যিক ছাড়াও অনেক প্রবীন এবং তরুন কবি, সাহিত্যিক যশোরে প্রকাশিত সংবাদপত্র যথা দৈনিক গ্রামের কাগজ, দৈনিক স্পন্দন, দৈনিক লোকসমাজ প্রভৃতিতে কবিতা, গল্প, ছড়া ইত্যাদি প্রকাশ করে আসছেন, তাদের কারো কারো দু’একটি প্রকাশনাও রয়েছে।
কবি ও সাহিত্যিকদের সাহিত্যচর্চার জন্য প্রাচীন কাল থেকে বহু সংগঠন ও সাহিত্য কেন্দ্র যশোরে গড়ে উঠেছে। যে সমস্ত কেন্দ্রে সাহিতচর্চা হয় তার মধ্যে যশোর পাবলিক লাইব্রেরী অন্যতম। এখানে সাহিত্যচর্চার জন্য একটি কক্ষ বরাদ্দ আছে। পাকিস্তান আমলে প্রতি রবিবারে সাহিত্যের আসর বসত। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর শনিবারে সমাবেশ হয়। এই প্রবীন, নবীন কবি সাহিত্যিকবৃন্দ স্ব-ম্ব লেখা নিয়ে আসেন এবং পাঠ করেন। প্রতিমাসে এখানে থেকে “দূর্বা” নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। প্রসঙ্গ ক্রমে বলা প্রয়োজন, প্রাক স্বাধীনতা কালে প্রয়াত কবি অবলাকান্ত মজুমদার নিজ বাড়ীতে ‘যশোর সাহিত্য সংঘ’ স্থাপন করে প্রতি রবিবারে সাহিত্যের আসর বসাতেন। তিনি নিয়মিত ভাবে মাসিক “শতদল” পত্রিকা প্রকাশ করতেন। অনুরূপ ভাবে মাহমুদুল হক তার ‘নতুন দেশ’ পত্রিকা অফিসে সাহিত্যের আসর বসাতেন এবং তার পত্রিকায় কবি সাহিত্যিকদের লেখা প্রকাশ করতেন। স্বাধীনতার পর তারাপদ দাস এবং শাহাদাত আলী আনসারীর যুক্ত প্রচেষ্টায় “বর্ণদীপ্ত সাহিত্য গোষ্ঠী” প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী অফিস ছিল লাল দীঘি পাড় জনাব মিজানুর রহমান সাহেবের বাড়ী। আহমদ রফিক সাহেব অনুরুপ ভাবে রবি বাসরীয় সাহিত্য পরিষদ গঠন করে সাহিতচর্চা করতেন এবং কবি সাহিত্যিকদের আসরে সাহিত্যচর্চার সুযোগ দিতেন।
যে সমস্ত সংগঠন কবি-সাহিত্যকদের সাহিত্যচর্চার পথ সুগম করে দিয়েছে তার মধ্যে যশোর সাহিত্য কেন্দ্র’ “শতাব্দী সাহিত্য গবেষনা পরিষদ, ভৈরব সাহিত্য চর্চা কেন্দ্র, বিদ্রোহী সাহিত্য পরিষদ, নজরুল সাহিত্য পরিষদ। এই সব সংস্থাগুলি যথাক্রমে চাঁদের হাট, আব্দুর রাজ্জাক কলেজ, ভূপতি মঞ্চ ও পৌরসভা ভবন (পরিত্যক্ত) কেন্দ্রে উপজেলার লাইব্রেরীতে এলাকার কবি সাহিত্যিক বৃন্দ সাপ্তাহিক, মাসিক আসর বসিয়ে সাহিত্যচর্চা করেন।
তরুন কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে যারা নিয়মিতভাবে সাহিত্যচর্চা করেন এবং গ্রন্থ প্রকাশ করছেন তার মধ্যে কবি স্বপন মোহাম্মদ কামাল, খসরু পারভেজ, রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন, এ জামান, ফখরে আলম, কাসেদুজ্জামান সেলিম, পদ্মনাভ অধিকারী, জি এম মুছা, তহীদ মনি, শাহনাজ পারভীন, শাহরিয়ার সোহেল, এস এম তোফাজ্জুল, সুভাষ বিশ্বাস প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। প্রবীন কবি ও সাহিত্যিদের মধ্যে মোঃ সামসুজ্জুমান, ফজলুল হক, আমিরুল ইসলাম রন্টু, আমিরুল আলম খান, প্রমুখ অনিমিত ভাবে লেখেন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র ছাত্রী কবিতা, প্রবন্ধ ও ছোট গল্প লিখে সাহিত্যের আসরে পাঠ করে এবং প্রবীনদের দ্বারা উৎসাহিত হয়।
তথ্য সংগ্রহ সহায়ক পুস্তক
বাংলা সাহিত্যে যশোরের অবদান
লেখক শাহাদত আলী আনসারী
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে যশোরের সম্পদ।
লেখক- এ, জামান।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!