আসুন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হই : কাজী কোহিনূর বেগম তিথি

সাহিত্য বাজার

Sharing is caring!

Pic-glassআসুন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হই
কাজী কোহিনূর বেগম তিথি

যে জাতির মধ্যে দেশপ্রেমবোধ যত বেশী সেই জাতি ততই উন্নতির দিকে ধাবিত। সেটা আমরা সকলেই জানি। তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ দরিদ্রপিড়ীত একটি দেশ। শহীদের রক্ত এবং মা-বোনদের ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের দেশটা স্বাধীন হয়েছে। আর এই স্বাধীনতা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই (নাগরিকের), শুধু বিভিন্ন দলের নেতাদের নয়।

পশু আর মানুষের মধ্যে আল্লাহ্ পার্থক্য করে দিয়েছেন।  মানুষকে আল্লাহ্ ভাল – মন্দ বোঝার ক্ষমতা দিয়েছেন। আর পশুর ভিতর সেই গুণটা নেই। আজ ৪২ বছর পর সত্যকে স্বীকার করে নিতে / সত্যকে গ্রহণ করতে হরতাল – অবরোধের সম্মূখীন হতে হচ্ছে। এই হরতাল অবরোধে যে সব গাড়ী-দোকানপাট ভেঙ্গে যাচ্ছে বা পুড়ে যাচ্ছে, এতে কত শত  কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে? যারা এ কাজে লিপ্ত তারা কি একটু ভেবে দেখছে ? রেল লাইন বিচ্যুতি করন , বড় বড় গাছ কেটে ফেলা- মানুষ হত্যা। এসব কি কোনো সভ্য মানুষের কাজ ? সে যে দলেরই লোক বা সমর্থক হোক? তারা কি আসলে মানুষ? যারা এসব ধ্বংস মূলক কাজে লিপ্ত  তারা ভুলে গেছে ১৯০৫ সালের কথা – মির্জাফর আর ঘোষেটি বেগমের করুন মৃত্যুর কথা। ভুলে গেছে–১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব-১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন -১৯৬৬ সালের ৬ দফা-১৯৬৯ এর গনঅভ্যুত্থান এর কথা। তারপর ১৯৭১ । ইতিহাসের পাতা থেকে সালগুলো মুছে যায়নি – যাবেও না।

সত্যকে যারা মুছে দিতে চেয়েছিল। অসত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে প্রেতাত্মা রুপে যারা বাংলার মাটিতে ভর করে দ্বিতীয় পাকিস্তান করতে চেয়ে ছিল। কিন্তু তারা জানে না যে, সত্য সব সময় সূর্য্য হয়ে দেখা দেয়। সব দেশেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয় বাংলাদেশের মাটিতে কেন হবে না ? বাংলা ভাষায় কথা বলে – ঊর্দূ ভাষাভাষীদের সাথে যারা হাত মিলিয়ে ছিল – তাদের লজ্জা করেনি নিজের ভাষার সাথে মাটির সাথে বেঈমানী করতে। আজ পাকিস্তান দেখছে তাদের bad politics এর মৃত্যু হচ্ছে। তাই তারা দিশেহারা হয়ে নিন্দা জানাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে -পাকিস্তানের bad politicsকে একবার ধিক্কার জানানো উচিত বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে।

অন্যদিকে ক্ষমতার শেষমূহুর্তে শাষকদল এইযে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রমে হাত দিয়েছে। এটাও তাদের নোংরা রাজনীতির ও ষড়যন্ত্রেরই প্রতিফলণ। গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি না হলে সরকার এখানেও তার কুটচালে আবারো জামায়াত ইসলামকে সাথে নিয়ে বিএনপিকে কোনঠাসাকরণ রাজনীতির সুযোগ পেয়ে যেত। তাই ধন্যবাদ গণজাগরণ মঞ্চ সৈনিকদের।
নাগরিকের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে আমাদের সকলের সচেতন থাকা উচিত। দলের নেতাদের অন্যায় নির্দেশ আমরা যদি কেউ মেনে না নেই তাহলে জোর করে কেউ কাউকে দিয়ে অন্যায় কাজ করাতে পারে না। এই দেশ আমাদের এই মাটি আমাদের। তাতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক সকলকে সঠিক পথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া নাগরিকের কর্তব্য। দলের নেতা কর্মীরা যেমন ভেবে থাকে দেশের প্রতি তাদের দায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে, তেমনি দেশের প্রতিটা নাগরিকের দায়িত্ব -কর্তব্য নিয়ে ভাবতে হবে। দেশের সম্পদ ধ্বংস করে কখনো দেশকে ভালবাসা যায় না। দেশের জন্য সৃষ্টিশীল কাজ করতে হবে–দেশকে ভালবাসতে হলে। একটা গাছ কাটার আগে আর একটা গাছ রোপন করার মন মানসিকতা থাকতে হবে।
আজ আমাদের মধ্যে সঠিক ইতিহাসের পর্যালোচনার চর্চার বড়ই অভাব। এই ইতিহাস জানার অভ্যাসটা পরিবার থেকেই হওয়া দরকার। যারা ইতিহাস বিশারদ তাদেরকে বেশী বেশী সেমিনার এর আয়োজন করতে হবে / ইতিহাস সংক্রান্ত বই সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করতে হবে। শুধু ছাত্র-ছাত্রীরাই নয় সব শ্রেনীর মানুষদের সারাদিনে / রাতে যে কোন একটা সময় বই পড়ার অভ্যাস থাকা ভাল। তাতে মস্তিষ্কে বিবেকবোধটা বেশী জাগ্রত হবে। পরিবারে -সমাজে- রাষ্ট্রে বিশৃংঙ্খলমূলক কাজ থেকে বিরত থাকবে।
যারা শান্তিপ্রিয় কোনরকম নাশকতা মূলক কাজে অংশ নিচ্ছেন না দেশের প্রতি তাদের দায়িত্ব বেশী। যারা ধ্বংসমূলক কাজে অংশ নিচ্ছে তাদেরকে কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে  শুদ্ধ পথ পদর্শন করতে হবে। দেশের প্রতি নাগরিকের দায়িত্ব -কর্তব্য জাগ্রত করতে হবে। দেশের বেশীরভাগ নাগরিকরা যখন সচেতন হয়ে ধ্বংসমূলক কাজ থেকে দূরে থাকবেন, তখন বিভিন্ন দলের নেতারা তাদের ধ্বংসের রাজনীতির চিন্তা ত্যাগ করতে বাধ্য হবে। এতে দেশে সভ্য রাজনৈতিক গতিধারা বজায় থাকবে এবং মানুষ শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারবে।
যেহেতু আমাদের দেশে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী এবং সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। ”মানব ধর্ম শ্রেষ্ঠ ধর্ম” এ কথায় সকলকে বিশ্বাসী হওয়ার চর্চা করতে হবে। সকল ধর্মের মৌলবাদ চিন্তাকে পরিহার করে আমাদের  সকলকে সব ধর্মের ও সম্প্রদায়ের  মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা বাড়াতে হবে দেশের শন্তির জন্য এবং তা পালন করা দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।
পরিশেষে বলব ,সকল দল, মত, ধর্ম, বর্ন, সম্প্রদায় নির্বিশেষে আমরা সকলের কল্যান কামনা করব। এই অঙ্গীকার নিয়ে পথ চলে সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। কোন রকম অন্যায়কে আমরা প্রশ্রয় দিব না। মনে রাখব —

অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
 তব ঘৃনা তারে যেন তৃন সম দহে।

লেখক : কাজী কোহিনূর বেগম তিথি
kazitithi@gmail.com

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!